বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল, তার কারণ, পটভূমি, বিভিন্ন শক্তির অংশগ্রহণ, প্রধান প্রধান তারিখ, ব্যবহৃত অস্ত্র ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধেরকারণ ও ফলাফল নিম্নে আলোচনা করা হল।
সর্বগ্রাসী প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
সময় | ১৯১৪-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ |
বিবাদমান পক্ষ | রাশিয়া, ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স বনাম জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি |
সূচনা | ৩০ শে জুলাই, ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ |
সমাপ্তি | ১১ ই নভেম্বর, ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ |
মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যেসব বিপর্যয় মূলক ঘটনাগুলি প্রত্যক্ষ করা যায় তার মধ্যে সবথেকে মর্মান্তিক ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
ভূমিকা :- প্রায় একশ বছর আগে ইউরোপ মহাদেশে সংঘটিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বদলে দেয় পৃথিবীর মানচিত্র, মানব সভ্যতার গতিপথে আনে আমূল পরিবর্তন। ১৯১৪ – ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বের আধুনিক ইতিহাস -এ এক অতি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ইতিপূর্বে এত ব্যাপক, ভয়াবহ ও সর্বগ্রাসী যুদ্ধ আর কখনও সংঘটিত হয় নি। জল, স্থল, অন্তরীক্ষ সর্বত্রই এই যুদ্ধ প্রসারিত হয় এবং বিশ্বের প্রতিটি দেশ কোনো না কোনও ভাবে এই যুদ্ধের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
কোনো দেশই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চায় নি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সর্বাত্মক চরিত্র সত্ত্বেও পৃথিবীর কোনোও দেশই কিন্তু এই যুদ্ধ চায় নি। ঐতিহাসিক সিডনি ব্রাডস ফে (Sydney Bradshaw Fay) -এর মতে,
“কোনও দেশই যুদ্ধ চায়নি।”
আলব্রেক্ট রেনে – কেরি (Albrecht Rene Carrie) বলেন যে,
“ইউরোপের দায়িত্বশীল নেতাদের অধিকাংশই জ্ঞানত এ ধরনের কোনোও যুদ্ধ চান নি।”
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কী এড়ানো যেত?
কোনও একপক্ষ একটু সংযত বা আপোসকামী হলেই হয়তো এই যুদ্ধ এড়ানো যেত। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কোনো পক্ষই নিজেদের সংযত করতে পারে নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই সংঘটিত হয় যুদ্ধ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ নিয়ে বিতর্ক
এই যুদ্ধের কারণ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্কের অন্ত নেই। আজ পর্যন্ত এ সম্পর্কে বহু গ্ৰন্থ ও প্রবন্ধ রচিত হয়েছে, বহু মতবাদ উচ্চারিত হয়েছে এবং নানারকম তর্কবিতর্ক চলেছে। অধ্যাপক জেমস জোলি বলেন যে,
“Any single explanation for the outbreak of war is likely to be too simple.”
শান্তির আড়ালে যুদ্ধের প্রস্তুতি
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে সেডানের যুদ্ধ -এর পর থেকে ইউরোপের ইতিহাসে যে ঘটনাবলীর সূত্রপাত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল তারই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। এই সময়ে (১৮৭০-১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ) ইউরোপে কোনও বড়ো যুদ্ধ সংঘটিত হয় নি ঠিকই, কিন্তু এই আপাত শান্তির আড়ালে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলতে থাকে।
সশস্ত্র শান্তির যুগ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তীব্র ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সমরাস্ত্র নির্মাণের প্রতিযোগিতা, পারস্পরিক সন্দেহ ও বিদ্বেষ এবং অতৃপ্ত জাতিয়তাবাদ ইউরোপের রাজনৈতিক পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে। এর ফলে যেকোনো সময় যুদ্ধ বেধে যেতে পারত। এই কারণে ১৮৭১-১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে অনেকেই সশস্ত্র শান্তির যুগ বলে অভিহিত করেছেন।
অযাচিত ও অভাবিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
- ঐতিহাসিক এ. জে. পি. টেলর বলেন যে, এই সময়ে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে উত্তেজনা থাকলেও, হঠাৎ করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারে নি।
- অধ্যাপক ডেভিড টমসন বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই যুদ্ধ ছিল অযাচিত ও অভাবিত এবং ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকে যে ঘটনাবলীর সূচনা হয়, এই যুদ্ধ ছিল তাঁরই চূড়ান্ত পরিণতি।”
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি
কোনও বড়ো ধরনের বিপ্লব বা যুদ্ধ কখনোই আকস্মিক ভাবে বা কোনও একটি কারণে ঘটতে পারে না। এর পিছনে থাকে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ও নানাধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণের সমাবেশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ বা পটভূমিগুলি হল-
(১) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রধান কারণ অতৃপ্ত জাতিয়তাবাদ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হল ইউরোপের আহত ও অতৃপ্ত জাতিয়তাবাদ। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ভিয়েনা সম্মেলন -এ জাতিয়তাবাদকে ভূলুণ্ঠিত করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়, পরবর্তী ১০০ বছরে ইউরোপে এক ভয়ঙ্কর অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
(ক) আলসাস-লোরেন সমস্যা
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে সেডানের যুদ্ধে জার্মানির কাছে ফ্রান্সের শোচনীয় পরাজয় এবং জার্মানি কর্তৃক ফ্রান্সের কয়লা ও লৌহ খনি সমৃদ্ধ আলসাস ও লোরেন দখল ফ্রান্স কখনোই ভুলতে পারে নি। এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এবং স্থান দুটি ফিরে পেতে ফ্রান্স সর্বদাই সচেষ্ট ছিল। তাছাড়া আলসাস-লোরেনের অধিবাসীরাও জার্মানির সাথে তাদের অন্তর্ভুক্তি মানতে পারে নি।
(খ) ট্রেনটিনো ও ট্রিয়েস্ট সমস্যা
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ঐক্যবদ্ধ হলেও ইতালি ছিল অসম্পূর্ণ। কারণ, তখনও ইতালীয় ভাষাভাষী ট্রেনটিনো ও ট্রিয়েস্ট নামক স্থান দুটি অস্ট্রিয়ার অধিকারে ছিল। ইতালির জনগণ এই স্থান দুটি পুনরুদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর ছিল। ঐতিহাসিক ল্যাংসাম বলেন যে, ‘অসম্পূর্ণ ইতালি‘ ছিল যুদ্ধের অন্যতম কারণ।
(গ) শ্লেজউইগ সমস্যা
শ্লেজউইগ জার্মানির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেখানকার ডেন অধিবাসীরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ছিল।
(ঘ) আয়ারল্যান্ড সমস্যা
আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক বন্ধন থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রামরত ছিল।
(ঙ) বুলগেরিয়া সমস্যা
বার্লিন চুক্তিতে বুলগেরিয়াকে ত্রিধা-বিভক্ত করায় বুলগাররা ক্ষুব্ধ হয়। তাছাড়া ম্যাসিডনিয়ার অধিকার নিয়ে গ্রিস, সার্বিয়া ও বুলগেরিয়ার দ্বন্দ্ব প্রবল আকার ধারণ করে।
(চ) রুমানিয়া সমস্যা
বার্লিন চুক্তিতে রুমানিয়ার কিছু অংশ রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় রুমানিয়রা ক্ষুব্ধ হয়।
(ছ) অস্ট্রিয়ার জাতিয়তাবাদী সমস্যা
অস্ট্রিয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত চেক, পোল প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে এককথায়, অতৃপ্ত জাতিয়তাবাদী আশা-আকাঙ্ক্ষা ইউরোপে এক যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করে।
(২) উগ্ৰ জাতিয়তাবাদ
উনবিংশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের শুরুতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এক ধরনের উগ্ৰ, স্বার্থপর ও সংকীর্ণ জাতিয়তাবাদের আবির্ভাব হয়। সব জাতিই নিজের দেশ ও জাতিকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতে থাকে এবং অন্যান্য জাতি ও দেশকে পদানত করে নিজ নিজ দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় অগ্ৰসর হয়। এই ভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে এক ধরনের বিদ্বেষ ও জাতিবৈরিতার সৃষ্টি করে। ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
(ক) জার্মান জাতিয়তাবাদ
জার্মান ঐতিহাসিক হেনরিখ ফন ট্রিটস্কি, বার্নহার্ডি প্রমুখ প্রচার করেন যে, জার্মানির টিউটনিক জাতিই হল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। জার্মান দার্শনিক হেগেল ঘোষণা করেন যে, রাষ্ট্রই ঈশ্বর এবং রাষ্ট্রের গৌরবে জাতির গৌরব। জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম বিশ্বে টিউটনিক জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন।
(খ) ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের জাতিয়তাবাদ
ইংরেজ লেখক হোমার লীগ অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেন। ক্লেমাঁসু, পয়েনকারী প্রমুখ ফরাসি নেতা ফরাসি ল্যাটিন জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করে ঘোষণা করেন যে, ল্যাটিন সভ্যতার সাথে টিউটনিক সভ্যতার সংঘর্ষ অনিবার্য।
(গ) অন্যান্য দেশের জাতিয়তাবাদ
কেবল ইংল্যান্ড, জার্মানি বা ফ্রান্স নয় – রাশিয়া, ইতালি, জাপান এবং পৃথিবীর অপরাপর দেশেও এই ধরনের উগ্ৰ ও সংকীর্ণ জাতিয়তাবাদ প্রচারিত হয়ে যুদ্ধের আবহাওয়া তৈরি করে।বিশিষ্ট ইংরেজ চিন্তাবিদ লর্ড অ্যাক্টন তাই জাতিয়তাবাদ একটি অবাস্তব ও অপরাধমূলক আদর্শ বলে অভিহিত করেছেন।
(৩) বাণিজ্যিক ও ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা
মার্কসবাদী ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ও ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ। শিল্পবিপ্লব -এর ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্পজাত পণ্যের উৎপাদন প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। তাই উদ্বৃত্ত পণ্যাদি বিক্রি, কারখানার জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ এবং সঞ্চিত পুঁজি বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে শিল্পপতি ও পুঁজিপতিরা উপনিবেশ বিস্তারের জন্য নিজ নিজ দেশের সরকারের উপর চাপ দিতে থাকে।
(৪) পরস্পর বিরোধী শক্তিজোট গঠন
উগ্ৰ জাতিয়তাবাদী মনোভাব, উপনিবেশ বিস্তার নিয়ে পারস্পরিক বিবাদ এবং ১৮৭০-১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে পরস্পর বিরোধী নানা শক্তি জোট গঠন এক পারস্পরিক সন্দেহ, বিদ্বেষ ও যুদ্ধময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
(ক) ত্রিশক্তি মৈত্রী কি
১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে ভিয়েনা শহরে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইতালির মধ্যে ত্রিশক্তি মৈত্রী সম্পাদিত হয়।
(খ) ত্রিশক্তি আঁতাত কি
১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া কাছাকাছি আসে এবং এর ফলে গড়ে ওঠে ত্রিশক্তি চুক্তি বা আঁতাত। এইভাবে সমগ্ৰ ইউরোপ দুটি মেরুতে বিভক্ত হয়ে যায়।
(৫) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অপর কারণ সামরিক প্রতিযোগিতা
পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাসের পরিবেশ থেকেই ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আত্মরক্ষার জন্য সমরসজ্জা ও সামরিক প্রতিযোগিতা শুরু করে, যা প্রথম মহাযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
(ক) জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রতিযোগিতা
জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম বিশ্ব জয়ের জন্য বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করলে ফ্রান্স আতঙ্কিত হয়। ফ্রান্স মনে করে জার্মানির শক্তি বৃদ্ধি পেলে আলসাস-লোরেন পুনরুদ্ধার হবে না। এর ফলে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে এক অন্তহীন সামরিক প্রতিযোগিতা চলতে থাকে।
(খ) বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা শুরু হয়। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্ৰহণ করে জার্মানি। ফ্রান্স ও রাশিয়াতেও অনুরূপ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ফলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
(গ) জার্মানি ও ইংল্যান্ডের নৌশক্তি বৃদ্ধি
১৮৯৭, ১৮৯৮ এবং ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি নতুন নৌ নির্মাণ নীতি গ্ৰহণ করে বড়ো ও মাঝারি পাল্লার যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন তৈরি করা শুরু করে। এর ফলে ইংল্যান্ড আতঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে উত্তর সাগর নৌবহর নামে নতুন একটি নৌবহর নির্মাণ শুরু করে। বলা বাহুল্য, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটি যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে।
(ঘ) অস্ট্রিয়া ও ইতালির প্রতিদ্বন্দ্বিতা
অস্ট্রিয়া তার পুরোনো স্থান গুলি পুনরুদ্ধার করতে পারে – এই আশঙ্কায় ইতালিও সামরিক দিক থেকে তৈরি হতে থাকে।
(ঙ) অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা
বলকান অঞ্চলে অস্ট্রো-রুশ প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য উভয় রাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি বৃদ্ধি পায়। এইভাবে সমগ্ৰ ইউরোপ এক বারুদের স্তূপে পরিণত হয়।
(৬) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কারণ হিসাবে সংবাদপত্রের ভূমিকা
প্রথম মহাযুদ্ধের নেপথ্যে সংবাদপত্রের ভূমিকাও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় একশ্রেণীর সংবাদপত্র মিথ্যা, বিকৃত ও দায়িত্বহীন সংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন শক্তির মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস বৃদ্ধি পেতে থাকে। এইভাবে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টি হয়।
(৭) আন্তর্জাতিক সংকট
বিভিন্ন কারণে যখন ইউরোপে এক উত্তেজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তখন কয়েকটি আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে।
(ক) মরক্কো সংকট
মরক্কো হল আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র। মরক্কোয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে বিরোধ শুরু ১৯০৪-১৯০৫) হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে এক চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্স মরক্কোয় জার্মানির বিশেষ অর্থনৈতিক স্বার্থ মেনে নেয় এবং জার্মানিও সেখানে ফ্রান্সের রাজনৈতিক স্বার্থকে স্বীকার করে নেয়।
(খ) আগাদির ঘটনা
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর রাজধানী ফেজ শহরে এক উপজাতি বিদ্রোহ দেখা দিলে ফরাসি নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার স্বার্থে ফরাসি সেনা ফেজ অধিকার করে। এই ঘটনায় জার্মানি ক্ষুব্ধ হয়ে আগাদির বন্দরে প্যান্থার নামক যুদ্ধ জাহাজ পাঠায়। শেষ পর্যন্ত মরক্কোয় ফরাসি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আগাদির সমস্যা সমাধান হলেও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
(গ) বলকান সংকট
বলকান সমস্যাকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় রাজনীতি জটিলতর রূপ ধারণ করে। বলকান অঞ্চলে রুশ স্বার্থ দীর্ঘদিনের। আবার অস্ট্রিয়া স্লাভ অধ্যূষিত বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা গ্রাস করলে সার্বিয়ার সাথে অস্ট্রিয়ার বিরোধ বাধে। এক্ষেত্রে রাশিয়া সার্বিয়াকে সমর্থন করে। এই ভাবে বলকান জাতীয়তাবাদ, অস্ট্রো-রুশ, অস্ট্রো-সার্বিয়া বিবাদ বলকান অঞ্চলকে এক জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করে।
(৮) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ
এই পরিস্থিতিতে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফ্রান্সিস ফার্দিনান্দ ও তার পত্নী সোফিয়া বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো শহরে এলে স্লাভ সন্ত্রাসবাদী সংস্থা ‘ব্ল্যাক হ্যান্ড‘ বা ‘ইউনিয়ন অব ডেথ‘-এর সদস্য ন্যাভরিলো প্রিন্সেপ রাজপথের উপর প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে তাদের হত্যা করে (২৮ জুন ১৯১৪ খ্রিঃ)। এই ঘটনা সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা
সেরাজেভো হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে অস্ট্রিয়া ও সার্বিয়ার যুদ্ধ (২৮ জুলাই ১৯১৪ খ্রিঃ) বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়। সার্বিয়া আক্রান্ত হলে রাশিয়া ৩০ জুলাই সার্বিয়ার পক্ষে সেনা সমাবেশ করে। অন্যদিকে জার্মানি অস্ট্রিয়ার পক্ষে সেনা সমাবেশ করে (৩১ জুলাই) এবং ১ আগস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে ও ৩ আগস্ট ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আবার ইংল্যান্ড ৪ আগস্ট জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এইভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হল – সংঘটিত হল ‘মানব ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বিয়োগান্ত নাটকের‘ (‘the most tragic drama of human history‘)।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিভিন্ন শক্তির অংশগ্রহণ
এই যুদ্ধে একদিকে ছিল ‘ট্রিপল আঁতাত‘ বা ‘ত্রিশক্তি চুক্তি‘-ভুক্ত ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া প্রভৃতি ২৩ ছোট বড় রাষ্ট্র। এরা মিত্রপক্ষ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ইতালি, রুমানিয়া, চিন, জাপান, পর্তুগাল এই পক্ষে যোগদান করে। অপরদিকে ছিল ‘ট্রিপল অ্যালায়েন্স’ বা ‘ত্রিশক্তি মৈত্রী‘ -ভুক্ত জার্মানি, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, বুলগেরিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রজোট, এরা অক্ষশক্তি বা কেন্দ্রীয় শক্তি নামে পরিচিত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার যোগদান
গোড়ার দিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকলেও ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধে মিত্রপক্ষে যোগদান করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহনে বিশ্বযুদ্ধ নতুন মোড় নেয়। যুদ্ধের শেষ বছরে জার্মানরা যখন চূড়ান্ত হামলা চালায় তখন যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এর ফলে ফ্রান্সের মাহনেতে জার্মানদের থামিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর সকালে জার্মানির যুদ্ধ বিরতিতে স্বাক্ষর করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইস্তফা দেয়। জার্মানির আত্মসমর্পণের মাধ্যমেই শেষ হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
প্যারিসের সম্মেলন
এই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ সালে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে আয়োজিত একটি সম্মেলনে ৩২টিরও বেশি দেশের কূটনীতিকরা যোগদান করেন।প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী মিত্রপক্ষ পরাজিত অক্ষশক্তির জন্য শর্তাবলী তৈরির উদ্দেশ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। এই প্যারিস শান্তি সম্মেলন বা ভার্সাই সম্মেলন -এর মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব ছিল গভীর ও সুদূর প্রসারী। মূলত ইউরোপীয় বিবাদ-বিসংবাদকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হলেও সমগ্ৰ বিশ্বই কোনো না কোনোভাবেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
(ক) লোকক্ষয়
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্ৰহণকারী ছয় কোটি সৈন্যের মধ্যে প্রায় এক কোটি ৩০ লক্ষ্য সৈন্য নিহত হয়। প্রতি তিন জনে একজন গুরুতর আহত হয়। চিরতরে পঙ্গু হয় ৭৯ লক্ষ। ২ কোটি ১০ লক্ষ সাধারণ মানুষ আহত হয়।
(খ) সম্পদের বিনাশ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ধন সম্পদের ক্ষতি ছিল মারাত্মক। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির প্রতিদিনের খরচ ছিল ২৪ কোটি ডলার। এই যুদ্ধের সর্বমোট ব্যয় ছিল ২৭ হাজার কোটি ডলার।
(গ) চারটি বৃহৎ সাম্রাজ্যের ধ্বংস
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর চারটি সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। রাশিয়ার রোমানভ সাম্রাজ্য ১৯১৭ সালে, জার্মান ও অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য ১৯১৮ সালে এবং অটোমান সাম্রাজ্য ১৯২২ সালে। এর মধ্যে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যকে খণ্ড খণ্ড করে ফেলা হয়।
(ঘ) স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, এস্তোনিয়া, রুমানিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, বোহেমিয়া প্রভৃতি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে।
(ঙ) জাতীয়তাবাদের জয়
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম ফল হল জাতীয়তাবাদী ভাবধারার বিস্তার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে (১৯১৯ খ্রি) জাতীয়তাবাদকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে আয়ারল্যান্ড, ভারত, চীন, মিশর, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।
(চ) গণতন্ত্রের প্রসার
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ভাবধারারও প্রসার ঘটে। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে পাঁচটি প্রজাতন্ত্র ছিল কিন্তু ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তার সংখ্যা হয় ১৬ টি। রাশিয়ায় বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় (১৯১৭ খ্রি)। অধ্যাপক ডেভিড টমসন বলেছেন যে,
“It was democracy which had won the war.”
(ছ) একনায়কতন্ত্রের উদ্ভব
বিশ্বযুদ্ধ শেষে জার্মানি, ইতালি, রাশিয়া, তুরস্ক, স্পেন প্রভৃতি দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যক্তিবিশেষের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়।
(জ) আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রসার
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিকতাবোধ বৃদ্ধি পায়। আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় (১৯২০ খ্রি) ‘লিগ অব নেশনস’ বা ‘জাতিসংঘ‘। এছাড়া এই সময় থেকেই ভীত-সন্ত্রস্ত ইউরোপ নিরস্ত্রীকরণ ও যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে শুরু করে।
(ঝ) নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাভ হয় নারী সমাজের। যুবক এবং সক্ষম পুরুষ সমাজ যুদ্ধে চলে যাওয়ায় সর্বত্র শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল। নারীসমাজ ঘর থেকে বেরিয়ে খেত-খামার, কল-কারখানা, দোকান, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বক্ষেত্রে দল বেঁধে প্রবেশ করে। ফলে নারীমুক্তি আন্দোলন জোরদার হয়। এই মহাযুদ্ধের পর নারীসমাজকে আর খাঁচায় বন্দী করা সম্ভব হল না। ফলে মানব ইতিহাসে এক নতুন উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হয়।
(ঞ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ববাসী মনে করেছিল যে, তাদেরকে আর কোনো যুদ্ধের অভিশাপ বহন করতে হবে না । কিন্তু লীগ অব নেশনস – এর ব্যর্থতা, ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে জার্মানিকে কোনঠাসা করে ফেলা এবং জার্মানিতে হিটলার ও ইতালিতে মুসোলিনির নেতৃত্বে ফ্যাসিজমের উত্থান আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) প্রেক্ষাপট তৈরি করে।
প্রধান প্রধান তারিখ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ৫ বছরের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং অপারেশন ছিল। যেমন –
- (ক) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুলাই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং রাশিয়া সার্বিয়ার পক্ষে যোগ দেয়।
- (খ) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট জার্মানি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে।
- (গ) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে গ্রেট ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে নৌ অবরোধ শুরু করে। ধীরে ধীরে সকল দেশের সেনাবাহিনীতে জনসংখ্যার সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু হয়।
- (ঘ) ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে জার্মানির পূর্বাঞ্চলে, আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডে বড় আকারের অপারেশন শুরু করে। একই বছর এপ্রিলের মধ্যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার শুরু হয়।
- (ঙ) ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে বুলগেরিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অপারেশন শুরু করে ।
- (চ) ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বিশেষত ব্রিটিশরা ট্যাঙ্ক ব্যবহার শুরু করে।
- (ছ) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লব -এর মাধ্যমে রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাস সিংহাসন থেকে সরে পড়েন এবং একটি অস্থায়ী সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর রাশিয়া যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ায়।
- (জ) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর সকালে জার্মানি মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে।
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র সমূহ
এই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিবাদমান দেশগুলোর দ্বারা বিভিন্ন নতুন নতুন অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়।
(ক) রাইফেল
বল্ট-অ্যাকশন রাইফেল, লেবেল এম ১৮৮৬, মাউজার জিউহর, ওয়েবলি এমকে ফোর, লি এনফিল্ড রাইফেল, স্প্রিংফিল্ড, মানলিচের কারকানো আর পিস্তলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ল্যুগার।
(খ) মেশিন গান
গার্ডনার মেশিন গান, হচকিস, লুইস গান, ম্যাক্সিম মেশিন গান, মাসচিনেনজিউহর, উইকারস মেশিন গান, ব্রউং মেশিন গান ।
(গ) সাঁজোয়া যান
মিলিটারি মোটর বাস, কমার অ্যাম্বুলেন্স,ফোর্ড মডেল টি প্যাট্রল কার, ডেনিস মিলিটারি লরি।
(ঘ) আর্টিলারি
হেভি আর্টিলারি, বিগ বার্থা, গ্রেনেড, হাউটজার, স্কোডা ৩০.৫, মিলস বম্ব
(ঙ) ট্যাঙ্ক
মার্ক ভি, মার্ক ৮ (লিবার্টি), লিটিল উইলি, মার্ক (মাদার) দি হুইপেট, কাররো ফিয়াট টিপো।
(চ) অন্যান্য
এছাড়াও বেয়োনেট, টর্পেডো, ধোঁওয়াবিহীন গান পাওডার, রাসায়নিক অস্ত্র, ওয়ারলেস কমিউনিকেশন ইত্যাদি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ একটি নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করে
উপসংহার : বিশ্ব মানচিত্রে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ একটি নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করে। এই যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বেশ কিছু ভাল ও খারাপ আবিষ্কারের সাথে পরিচিত হই। সব মিলিয়ে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ বিশ্ববাসীর সামনে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও অর্থনৈতিক দৈন্যতা তুলে ধরে।
(FAQ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হতে জিজ্ঞাস্য?
১৯১৪ থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ।
উদ্রো উইলসেন ।
১৯১৪ সালের ২৮শে জুন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফার্দিনান্দের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়।