ইতালি

ইতালি দেশটি প্রসঙ্গে অবস্থান, সীমানা, জলবায়ু, জনসংখ্যা, রাজধানী, রেনেসাঁ, ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য, নামকরণ, প্রশাসনিক অঞ্চল, অর্থনীতি, খেলাধুলা, ইতিহাস, নবজাগরণের যুগ ও যোগাযোগ সম্পর্কে জানবো।

ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত ইতালি দেশটি প্রসঙ্গে ইতালির অবস্থান, ইতালির আয়তন, ইতালির জনসংখ্যা, ইতালির শহর, ইতালির সীমা, ইতালির জলবায়ু, ইতালির রাজধানী, ইতালির নামকরণ, নবজাগরণের যুগে ইতালি, ইতালির অর্থনীতি, ইতালির খেলাধুলা, ইতালির চিত্রশিল্পী, ইতালির ঐক্য আন্দোলন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালির যোগদান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইতালির যোগদান, ইতালির যোগাযোগ ব্যবস্থা।

নবজাগরণের জন্মভূমি ইতালি

ঐতিহাসিক স্থানইতালি
রাজধানীরোম
ভাষাইতালিয়
ধর্মরোমান ক্যাথলিক
রাষ্ট্রপতিসের্জো মাত্তারেল্লো
প্রধানমন্ত্রীজর্জিয়া মেলোনি
মুদ্রাইউরো
ইতালি

ভূমিকা :- পশ্চিম ইউরোপ -এর একটি প্রজাতান্ত্রিক সংসদীয় রাষ্ট্র হল ইতালি। ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত একটি দেশ। ইউরো অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এই দেশের মুদ্রা ইউরো। ইতালিতে সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু আছে।

ইতালি দেশের অবস্থান

ইতালি একটি ভূমধ্য দেশ দক্ষিণ ইউরোপে অবস্থিত। এটি পূর্ব উপকূলে অ্যাড্রিয়াটিক সাগর, পশ্চিমে টেররিয়ান সাগর বা ভূমধ্য সাগর এবং দক্ষিণে আইওনীয় সাগর দ্বারা বেষ্টিত

ইতালির সীমা

স্বাধীন দেশ ইতালির উত্তর সীমান্তে আল্পস পর্বতমালা সংলগ্ন ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও স্লোভেনিয়া অবস্থিত এবং দক্ষিণে সম্পূর্ণ ইতালীয় উপদ্বীপ, মেডিটারিয়ান সমুদ্র সংলগ্ন দুই মহাদ্বীপ সিসিলি ও সারদিনিয়া এবং আরো অনেক ছোট ছোট দ্বীপে পরিবেষ্টিত। সান মারিনো ও ভ্যাটিকান সিটি নামের দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ইতালির অধিভুক্ত।

ইতালির সীমানাক্ষেত্র

এই দেশের সীমানাক্ষেত্রটি প্রায় ৩,০১,৩৩৮ বর্গ কিমি (১,১৬,৩৪৬ বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

ইতালির জলবায়ু

ঋতুময় ইতালীয় জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। ইতালি তার ভূমধ্য জলবায়ু জন্য পরিচিত, যা প্রধানত উপকূলে পাওয়া যায়। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সাধারণত শীতল এবং আর্দ্র কিন্তু সাধারণত গ্রীষ্মকালে গরম।

ইতালির জনসংখ্যা

৬০ মিলিয়নের (সাড়ে ছয় কোটির উপরে) বেশি অধিবাসী সংবলিত ইতালি জনসংখ্যার দিকে ইউরোপে পঞ্চম ও বিশ্বে ২৩ তম জনবহুল দেশ।

ইতালি দেশের রাজধানী

ইতালির রাজধানী রোম (ইতালীয় শব্দে রোমা) শহর। পশ্চিমা সভ্যতায় রোমান সাম্রাজ্য -এর রাজনৈতিক কেন্দ্রস্থল হওয়ার কারণে এটিকে রাজধানী করা হয়।

রেনেসাঁর জন্মভূমি ইতালি

পরবর্তী শতাব্দীতে ইতালি রেনেসাঁ বা নবজাগরণ -এর জন্মভূমি হয়ে উঠে। ইতালির অখণ্ড আকারের পরবর্তীকালীন ইউরোপীয় বুদ্ধিদীপ্ত গতিবিধি ও চিন্তা ধারণা ব্যাপকভাবে উর্বরতা পায়।

ইতালির ইল রিসর্জিমেন্টো

রোমানোত্তর ইতিহাসে যদিও ইতালি অনেক রাজ্য ও নগরে বিভক্ত ছিলো। ১৮৬১ সালে সারদিনিয়া রাজ্য, দুই সিসিলিয়া রাজ্য, ডাচি অব মিলান একীভূত হয়, ইতিহাসের এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে, যা ‘ইল রিসর্জিমেন্টো’ (পুনরুত্থান) নামে পরিচিত।

ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় ইতালি

উনিশ শতকের শেষের দিকে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ইতালি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এর শাসন লিবিয়া, ইরিথ্রিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, আলবেনিয়া, ডোডেকানিস পর্যন্ত বর্ধিত হয়।

সদস্য দেশ হিসেবে ইতালি

ইতালি ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এটি ইউরোজোনেরও একটি অংশ। এছাড়াও ইতালির জি ৮, জি ২০ এবং ন্যাটোর সদস্যপদ রয়েছে। ইতালি অরগানাইজেশন ফর ইকনোমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন, কাউন্সিল অব ইউরোপ, ওয়েস্টার্ন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা ইউনাইটেড ন্যাশন্সের সদস্য।

ইতালি দেশের নামকরণ

ইতালিয়া নামের ব্যুৎপত্তিটির অনেক সংখ্যক পুর্বধারণা আছে এবং এর সমাধানের পথ নিয়ে ইতিহাসবিদরা ও ভাষাবিদরা বিস্তৃত ধারণা দিয়েছেন। যেমন –

  • (১) ইতালিয়া শব্দটি ল্যাটিন ইতালিয়া থেকে এসেছে, যার অর্থ ছোটো গবাদিপশুদের চারণভূমি। গ্রিক ইতিহাসবিদ ডাওনিসিয়াস লোককাহিনীর বরাত দিয়ে ইতালিকে ইটালুস আখ্যা দেন।
  • (২) এরিস্টটল ও থুকিডিডিসও একই মত দেন। ইতালি নামটি প্রকৃত অর্থে বর্তমান দক্ষিণ ইতালির জন্য প্রযোজ্য।

ইতালির প্রশাসনিক অঞ্চল

এই দেশের প্রধান প্রশাসনিক অঞ্চল গুলি হল লোম্বার্ডি, কাম্পানিয়া, তাসকেনি, থ্রিয়েস্তে।

ইতালির অর্থনীতি

১.৮ বিলিয়ন জিডিপি নিয়ে ইতালি ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম ও বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতি । ২০২০ সালের ইতালীয় অর্থনীতির জন্য জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস + ০.৪%।

ইতালি দেশের খেলাধূলা

  • (১) ইতালির সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। ইতালি ৪ বার ফিফা আয়োজিত বিশ্বকাপ জিতেছে। ফুটবলের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন খেলায় ইতালি অংশগ্রহণ করে থাকে।
  • (২) সান সিরো মিলান এ অবস্থিত ৭৫,০০০ আসনবিশিষ্ট ইতালির বৃহত্তম মাঠ। রোমে অবস্থিত ৭০,০০০ আসনবিশিষ্ট স্টাডিও ওলিম্পিকো ইতালির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাঠ।

ইতালির ইতিহাস

  • (১) দুই লক্ষ বছর আগের প্রাচীন প্রস্তর যুগ -এও (Paleolithic period) সমগ্র ইতালি জুড়ে আধুনিক সভ্য মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তাদশ থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে মাইসেনিয়ান গ্রিকরা ইতালির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে।
  • (২) ষষ্ট শতাব্দীতে বাইজান্টাইন সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান ওস্ট্রুগথদের হাত থেকে ইতালি পুনরায় জয় করেন। দ্বাদশ শতাব্দীতে উত্তর ইতালির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মিলান। রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সুবিধা নিয়ে সকল প্রজাতন্ত্র সক্রিয়ভাবে ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করেছিল।

নবজাগরণের যুগে ইতালি

  • (১) সংস্কৃতিক অর্জনের দিক দিয়ে মানবতা এবং রেনেসাঁ বা নবজাগরণে সাফল্যমন্ডিত হয় ইতালি। রেনেসাঁর সাহিত্য বিবেচনায় পেত্রার্ক, বোকাচ্চি (‘ডেকামেরন’ এর লেখক) বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।
  • (২) ইউরোপীয় চিত্রকলার পিছনে ইতালীয় রেনেসাঁর চিত্রকলা শতাব্দী ধরে প্রাধান্য বিস্তার করে। চিত্রকরদের মধ্যে মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, রাফায়েল, বোত্তিচেলি, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ইতালির ইতিহাসে নেপোলনীয় যুদ্ধ

আধুনিক সময়ে শুরুর দিকে ইতালির ইতিহাস ছিল বিদেশী শাসন ফলশ্রুতিতে ইতালীয় যুদ্ধ (১৪৯৪ থেকে ১৫৫৯ সাল)। নেপোলিনীয় (নেপোলিয়ন বোনাপার্ট) যুদ্ধের সময় (১৭৯৬-১৮১৪) দেশটির উত্তরাঞ্চল পুনর্গঠন করে ইতালির নতুন রাজ্য গঠন করা হয়। তখন এটি ছিল ফান্স সাম্রাজ্যের অধীন একটি রাষ্ট্র।

ভিয়েনা কংগ্রেসে ইতালি

অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ভিয়েনা সম্মেলন (১৮১৪ সাল) পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে এনেছিল যা ইতালির একীকরণের অংশ হিসেবে উপক্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খুব দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।

ইতালির ঐক্য আন্দোলন

ঐক্যবদ্ধ দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে ইতালির ঐক্য আন্দোলন শুরু হয়। কার্বোনারি আন্দোলন, ইয়ং ইতালি আন্দোলন, ম্যাৎসিনী, ক্যাভুরগ্যারিবল্ডীর সক্রিয় উদ্যোগে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ইতালি ঐক্যবদ্ধ হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালির যোগদান

১৯১৪-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালি যোগদান করে। মিত্রপক্ষে যোগদান করেও যুদ্ধশেষে ইতালি বঞ্চিত হয়।

ইতালিতে ফ্যাসিবাদী একনায়ক তন্ত্র

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মুসোলিনি ও তাঁর নাৎসি দল ইতালিতে ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। এই একনায়কতন্ত্রের সময়কাল ছিল ১৯২২-১৯৪৩ সাল পর্যন্ত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইতালির যোগদান

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মুসোলিনি তথা ইতালি যুদ্ধে যোগ দেয় নি। কিন্তু জার্মানিহিটলার -এর একের পর এক বিজয় লক্ষ্য করে মুসোলিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়।

ইতালির যোগাযোগ মাধ্যম

রোমের বৃহত্তম বিমানবন্দর লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ফিয়ামিকিনো বিমানবন্দর, মিলান মালপেন্সা বিমানবন্দর, ভেনিস মার্কো পোলো বিমানবন্দর প্রভৃতি ইতালির বিখ্যাত বিমানবন্দর।

উপসংহার :- ইতালি ইউরোপীয় ও পৃথিবীব্যাপী সামরিক, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কে বিশাল ভূমিকা পালন করে। ইউরোপীয় রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব দেশটিকে দিয়েছে আঞ্চলিক শক্তি।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ইতালি” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) ইতালি দেশটি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ইতালির রাজধানীর নাম কি?

রোম।

২. ইতালির দুজন বিখ্যাত সাহিত্যিকের নাম লেখ।

পেত্রার্ক ও বোকাচ্চিও।

৩. ইতালির দুজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর নাম লেখ।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ও রাফায়েল।

৪. ইতালির বর্তমান রাষ্ট্রপতি কে?

সের্জো মাত্তারেল্লো।

৫. ইতালির বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নাম কি?

জর্জিয়া মেলোনি।

অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানগুলি

Leave a Comment