ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থান গান্ধার -র অবস্থান, ইতিহাস, ধর্মীয় অর্থনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হল । খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে কোনাে কেন্দ্রীয় রাজশক্তি ছিল না। ভারতে কোনাে অখণ্ড সর্বভারতীয় রাষ্ট্র এই সময় ছিল না। একটা অখণ্ড রাষ্ট্রের পরিবর্তে ছিল যােলটি রাজ্য বা যােড়শ মহাজনপদ।
ষোড়শ মহাজনপদ গান্ধার প্রসঙ্গে গান্ধার রাজ্যের অবস্থান, গান্ধার রাজ্যের রাজধানী, গান্ধার রাজ্যের অস্তিত্ব, আলেকজান্ডারের গান্ধার দখল, গ্ৰেকো-বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্র গান্ধার, মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ ধর্মের কেন্দ্র গান্ধার, গান্ধার শিল্প, বাণিজ্য পথ রূপে গান্ধার, বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত গান্ধার রাজ্য, মুসলিম শাসনে গান্ধার, গান্ধার রাজ্যে প্রস্তর যুগের অস্তিত্ব, গান্ধার রাজ্যের পুরুষপুর নগর, রামায়ণে গান্ধার রাজ্যের উল্লেখ, মহাভারতে গান্ধার রাজ্যের উল্লেখ, গান্ধার শিল্পের সন্ধান, গান্ধার রাজ্যের প্রধান শহর, গান্ধার রাজ্যের নগরী তক্ষশীলা ও পুষ্কলবতী, কৌটিল্য ও গান্ধার রাজ্য, মেগাস্থিনিসের বর্ণনায় গান্ধার রাজ্য, অশোক ও গান্ধার রাজ্য, কণিষ্ক ও গান্ধার শিল্প এবং কলহনের বর্ণনায় গান্ধার রাজ্য।
ষোড়শ মহাজনপদ:- যেমন – কাশী, কোশল, অঙ্গ, মগধ, বৃজি, মল্ল, চেদি, বৎস্য, কুরু, পাঞ্চাল, মৎস, শূরসেন, অশ্মক, অবন্তী, গান্ধার এবং কম্বোজ।
মহাজনপদ: গান্ধার
ঐতিহাসিক বিষয় | গান্ধার মহাজনপদ |
পরিচিতি | অন্যতম ষোড়শ মহাজনপদ |
অবস্থান | বর্তমান পাকিস্তান ও আফগানিস্থান -এর কিছু অংশ |
স্থায়ীত্ব কাল | প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ–৫৩৫ খ্রিস্টাব্দ |
রাজধানী | পুষ্কলাবতী (বর্তমানে চারসদ্দা) এবং তক্ষশীলা, এবং পরে পেশাওয়ার (পুরুপুরা) |
ভূমিকা :- আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কাবুল ও সোয়াত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন ইন্দো-আর্য রাজ্য ছিল গান্ধার। এটি প্রাচীন ভারত -এর ১৬টি মহাজনপদের মধ্যে একটি।
গান্ধার রাজ্যের অবস্থান
মূলত উত্তর পাকিস্তান এবং পূর্ব আফগানিস্তানই ছিল সেদিনের গান্ধার, আজ যা ইতিহাস।
অন্যতম ষোড়শ মহাজনপদ গান্ধার
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে উত্তর ভারতের অন্যতম ষোড়শ মহাজনপদ ছিল গান্ধার রাজ্য।
গান্ধার রাজ্যের রাজধানী
হেলেনীয় সময় কালে রাজ্যটির রাজধানী ছিল চরসদ্দা। কিন্তু পরে ১২৭ খ্রিষ্টাব্দে মহান কুষাণ সম্রাট কণিষ্ক দ্বারা রাজধানী পেশওয়ার শহরে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
গান্ধার রাজ্যের অস্তিত্ব
ঋগ্বেদ -এর (১৫০০-১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) সময় থেকে গান্ধারের অস্তিত্ব ছিল, পাশাপাশি জরাথুস্ট্রীয় আবেস্তায় এটি অহুর মজদা দ্বারা নির্মিত পৃথিবীর ষষ্ঠ সবচেয়ে সুন্দর জায়গা ভাক্করুত্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
আলেকজান্ডারের গান্ধার দখল
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে আকিমেনীয় সাম্রাজ্য গান্ধার রাজ্যকে অধিকৃত করে। ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিস -এর মহান আলেকজান্ডার গান্ধার রাজ্য জয় করে।
গ্রেকো-বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্র গান্ধার
পরবর্তীকালে এটি মৌর্য সাম্রাজ্য -এর অংশ হয়ে ওঠে এবং তারপর ইন্দো-গ্রিক রাজত্বের অংশ হয়ে ওঠে। ইন্দো-গ্রীক রাজবংশের অধীনে গ্রেকো-বৌদ্ধধর্মের জন্য গান্ধার ছিল একটি প্রধান কেন্দ্র।
মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ ধর্মের কেন্দ্র গান্ধার
প্রাচীন রাজ্য গান্ধার মধ্য এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্ম -এর বিস্তারের কেন্দ্রীয় স্থান ছিল। এটি ব্যাক্ট্রিয়ান জরাথুস্ট্রবাদ এবং হিন্দুধর্মেরও কেন্দ্র ছিল।
গান্ধার শিল্প
গান্ধার শিল্প স্থানীয় ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। এটি কুষাণ সাম্রাজ্য -এর অধীনে প্রথম শতাব্দী থেকে পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যে তার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।
বাণিজ্য পথরূপে গান্ধার
গান্ধার “এশিয়ার পারাপারের রাস্তা হিসেবে উদিত হয়ে” বাণিজ্য পথকে সংযুক্ত করে এবং বিভিন্ন সভ্যতার সাংস্কৃতিক প্রভাব গুলি গ্রহণ করে।
বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত গান্ধার রাজ্য
ইসলাম ধর্ম এই অঞ্চলে রাজত্ব করতে শুরু করার পূর্বে অষ্টম থেকে নবম শতাব্দী পর্যন্ত রাজ্যটি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল। একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় বৌদ্ধধর্মের প্রভাব স্থির ছিল।
মুসলিম শাসনে গান্ধার
১০০১ খ্রিষ্টাব্দে গাজনির মামুদ জয়লাভের পর গান্ধার নামটি অদৃশ্য হয়ে যায়। মুসলিম আমলে লাহোর থেকে বা কাবুল থেকে অঞ্চলটি পরিচালিত হত। মুঘল আমলে এটি কাবুল প্রদেশের একটি স্বাধীন জেলা ছিল।
গান্ধার রাজ্যের প্রস্তর যুগের অস্তিত্ব
গান্ধারে পাথরের সরঞ্জাম ও পুড়ে যাওয়া হাড়সহ প্রাগৈতিহাসিক যুগ -এর অন্তর্গত প্রস্তর যুগের মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই নিদর্শন মর্দানের নিকটবর্তী সাংহো অঞ্চলের গুহাগুলোতে আবিষ্কৃত হয়েছিল।
গান্ধার রাজ্যের পুরুষপুর নগর
আজ যেখানে পাকিস্তানের পেশোয়ার তখন সেখানেই ছিল গান্ধারের পুরুষপুর নগর। গান্ধার ছিল তক্ষশীলার মত সংস্কৃতির পীঠস্থান।
রামায়ণ মহাকাব্যে গান্ধার রাজ্যের উল্লেখ
রামায়ণ গান্ধার রাজ্যের উল্লেখ আছে। রামের ভ্রাতা ভরতের বংশধর অম্ভিকুমার ছিলেন গান্ধারের রাজা।
মহাভারত মহাকাব্যে গান্ধার রাজ্যের উল্লেখ
মহাভারতে গান্ধার রাজ্যের উল্লেখ আছে। ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী গান্ধারী এই রাজ্যের রাজ্যকন্যা বলে তাকে গান্ধারী বলা হয়। গান্ধার রাজ শকুনির কূটচালের পরিণতিই হল মহাভারত।
গান্ধার শিল্পের সন্ধান
পাহাড়ে ঘেরা গান্ধারের আনাচে কানাচে, পেশায়ারে, কাবুলের কাছে বেগরাম এবং হাভ শহরে, বর্তমান কাশ্মীরের হারোয়ানে এবং পাঞ্জাবের তক্ষশীলায় আজও বহু গান্ধার শিল্প-এর উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়।
গান্ধার রাজ্যের প্রধান শহর
গান্ধারের মূল শহরগুলো ছিল পুরুষপুর (পেশোয়ার), তক্ষশীলা এবং পুষ্কলবতী। প্রথমদিকে পুষ্কলবতী ছিল গান্ধারের রাজধানী যা পরবর্তীকালে পেশোয়ারে সরিয়ে নেওয়া হয়। কাবুল নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল পুষ্কলবর্তী। ধর্মীয় আচার আচরণ মেনে এখনো কাবুল নদীর তীরে মৃতদেহ কবরের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আবার তক্ষশীলা নামটি রামায়ণে পাওয়া যায়।
গান্ধার রাজ্যের নগরী তক্ষশীলা ও পুষ্কলবতী
রামায়ণ অনুসারে ভরতের দুইপুত্র তক্ষ ও পুষ্কল এই গান্ধার রাজ্যে এসে দুটি নগরী পত্তন করেছিলেন। তাদের নামানুসারে নগরী দুটির নাম রাখা হয় তক্ষশীলা ও পুষ্কলবতী।
কৌটিল্য ও গান্ধার রাজ্য
পারস্য সম্রাটের রাজত্বকালে পাণিনি ও অর্থশাস্ত্র গ্ৰন্থের রচয়িতা কৌটিল্য গান্ধার রাজ্যে এসেছিলেন।
মেগাস্থিনিসের বর্ণনায় গান্ধার রাজ্য
৩০৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রীকবীর সেলুকাস গান্ধারের দক্ষিণে আফগানিস্তান পর্যন্ত সামাজ্য বিস্তার করেন। গ্রীকদূত মেগাস্থিনিস -এর সময় তার ইন্ডিকা গ্ৰন্থ থেকে গান্ধার সম্পর্কে জানা যায়।
অশোক ও গান্ধার রাজ্য
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য -এর পৌত্র রাজা অশোক গান্ধার থেকেই নিজের জীবন শুরু করেছিলেন বলে জানা যায়।
কনিষ্ক ও গান্ধার শিল্প
কুষাণ রাজ কনিষ্কের সময় (১২৮-১৫১খ্রিস্টাব্দ) গান্ধারের শিল্প কলায় যে উন্নতি হয়েছিল তার পতন হয় মুসলিম দখলদার গজনির সুলতান মামুদের মাধ্যমে। এসময় বহু বৌদ্ধমূর্তি ধ্বংস করা হয়।
কলহনের বর্ণনায় গান্ধার রাজ্য
কাশ্মীরের কবি কলহন রচিত ‘রাজতরঙ্গিনী’ গ্ৰন্থেও গান্ধারের অনেক পুরোনো শিল্প ও স্থাপত্যের উল্লেখ আছে।
উপসংহার :- গান্ধারের স্থাপত্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য একসময় একে বলা হতো উত্তরের উদ্যান। কিন্তু এই সুন্দর নগরী মুসলিমদের দ্বারা ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ষোড়শ মহাজনপদ: গান্ধার” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) ষোড়শ মহাজনপদ: গান্ধার হতে জিজ্ঞাস্য?
তক্ষশীলা।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কাবুল ও সোয়াত নদীর তীরে।
গান্ধারী।