রামায়ণ

আদিকবি বাল্মীকি রচিত রামায়ণ মহাকাব্যের রচনা,মন হরণ, রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য, রামায়ণের কলেবর, সংস্করণ, বিষয়বস্তু, আদিকাণ্ড বা বালকাণ্ড, অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, লঙ্কাকান্ড, উত্তরকাণ্ড, রামায়ণের প্রক্ষিপ্ত অংশ, রামায়ণের রচনাকাল, রামায়ণে বর্ণাশ্রম, রামায়ণে বিবাহ, রামায়ণে নারীর সম্মান, রামায়ণে শিক্ষা ও রামায়ণের সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে জানবো।

বাল্মীকি রচিত রামায়ণ মহাকাব্য

রচয়িতাবাল্মীকি
কাণ্ড৭ টি
সর্গ৬৩৫
শ্লোক২৪০০০
প্রধান চরিত্ররাম, সীতা, লক্ষ্মণ
রামায়ণ মহাকাব্য

ভূমিকা :- বৈদিক সাহিত্য -এর পরেই ভারতবর্ষ -এ দুই বৃহদায়তন মহাকাব্যের আবির্ভাব হয়। এই মহাকাব্য দুটি হলো রামায়ণ ও মহাভারত। রামায়ণ মহাকাব্য রচনা করেছেন আদি কবি বাল্মীকি।

ভারতীয় জাতির হৃদয় জয়ে রামায়ণের অবদান

রামায়ণকে ভারতবর্ষের আদিকাব্য বলা হয়। এই কাব্যের বিষয়বস্তু এত রমণীয় ও বর্ণনা এতই মধুর ও করুণ যে এই কাব্যটি সমগ্র ভারতীয় জাতির হৃদয় জয় করেছে।

শোক থেকে শ্লোক

রামায়ণের সূচনা পর্বেই বলা হয়েছে যে, একদিন মহর্ষি বাল্মীকি শিষ্যদের সঙ্গে তমসা নদীর তীরে ভ্রমণ করছিলেন। তখনই এক ব্যাধের শরাঘাতে, নিহত ক্রৌঞ্চের বিরহে ক্রৌঞ্চবধূর করুণ ক্রন্দন শুনে ঋষি-হৃদয়ের উদ্‌বেলিত শোক শ্লোক ছন্দের রূপ পরিগ্রহ করে “শোকঃ শ্লোকত্বমাগতঃ”।

ঋষির অভিশাপ বাণী

ঋষি-কবির কণ্ঠ থেকে নিষ্ঠুর ব্যাধের উদ্দেশে উচ্চারিত হয় কঠোর অভিশাপ বাণী-

“মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।

যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।।”

অর্থাৎ, হে ব্যাধ, তুমি কামমোহিত ক্রৌঞ্চমিথুনের একটিকে হত্যা করেছো, তুমি কোনোদিন জনসমাজে প্রতিষ্ঠা পাবে না।

রামায়ণ রচনা

নিজের মুখ থেকে হঠাৎ বেরিয়ে আসা এই ছন্দবদ্ধ শ্লোকে বিস্মিত বাল্মীকি তারপর ব্রহ্মার আদেশে রামায়ণ রচনা করেন। অবশ্য এর পূর্বে দেবর্ষি নারদ এসে বাল্মীকিকে নরশ্রেষ্ঠ রামচন্দ্রের চরিত্রকথার সংকেত দেন।

মন হরণে রামায়ণের ভূমিকা

রামায়ণের ভাষা প্রাঞ্জল, সরস ও প্রসাদগুণসম্পন্ন। প্রকৃতির শোভাবর্ণনায়, চরিত্রচিত্রণে রামায়ণ আদর্শ। মাল্যবান পর্বতে ঋতুর আবর্তনে বর্ষার আগমনে প্রকৃতি মোহময়ীরূপে চিত্রিত হয়েছে। আর ধর্মজ্ঞ সত্যবাদী সর্বভূতহিতব্রত রাম বা পতিভক্তিপরায়ণা শুদ্ধচরিত্রা সীতা বা ভ্রাতৃভক্ত লক্ষ্মণ প্রভৃতির চরিত্রচিত্রণে রামায়ণ আপামর ভারতবাসীর মন হরণ করেছে।

রামায়ণ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রামায়ণের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছেন— “রামায়ণের প্রধান বিশেষত্ব এই যে, তাহা ঘরের কথাকেই অত্যন্ত বৃহৎ করিয়া দেখাইয়াছে। পিতা-পুত্রে, ভ্রাতায় ভ্রাতায়, স্বামী-স্ত্রীতে যে ধর্মের বন্ধন, যে প্রীতিভক্তির সম্বন্ধ, রামায়ণ তাহাকে এত মহৎ করিয়া তুলিয়াছে যে তাহা অতি সহজেই মহাকাব্যের উপযুক্ত হইয়াছে।”

রামায়ণ সম্পর্কে ওয়েবারের মন্তব্য

ওয়েবার (Weber) মনে করেন যে, সীতা মূলত কৃষির রূপক। রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধারের কাহিনি অনার্যগণের আক্রমণ থেকে আর্যগণের কৃষিভিত্তিক সভ্যতাকে রক্ষার কাহিনি মাত্র।

রামায়ণের কলেবর

রামায়ণ সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত। এই সাতটি কাণ্ড আবার পাঁচশো অধ্যায়ে বিভক্ত। এই মহাকাব্যে মোটামুটি ২৪,০০০ শ্লোক আছে।

রামায়ণের সংস্করণ

সংস্কৃত বইয়ের হস্তলিখিত পুথির স্বাভাবিক নিয়মানুসারে শ্লোকের পাঠভেদ, সংখ্যাভেদ ও ক্রমভেদ প্রচুর। এই বিচারে রামায়ণের তিনটি সংস্করণ পাওয়া যায় পশ্চিম ভারতীয় বা কাশ্মীরি সংস্করণ, বঙ্গদেশীয় সংস্করণ এবং দক্ষিণ ভারতীয় সংস্করণ।

রামায়ণের বিষয়বস্তু

বাল্মীকি রচিত রামায়ণ সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত‌। যথা – বালকাণ্ড বা আদিকাণ্ড, অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, লঙ্কাকাণ্ড বা যুদ্ধকাণ্ড এবং উত্তরকাণ্ড। প্রত্যেক কাণ্ড কতকগুলি সর্গে বিভক্ত। রামায়ণে মোট সর্গসংখ্যা হল ৬৩৫।

(১) রামায়ণের বালকাণ্ড বা আদিকাণ্ড

এই কাণ্ডে রামায়ণ রচনার ইতিহাস, দশরথের রাম, লক্ষ্মণ, ভরত ও শত্রুঘ্ন—এই চার পুত্রলাভ এবং তারপর তাদের বাল্যকালের বিবরণ থেকে শুরু করে মিথিলায় রামচন্দ্রের হরধনুভঙ্গ ও রামের বিবাহ পর্যন্ত সমস্ত ঘটনার আনুপূর্বিক বর্ণনা আছে।

(২) রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ড

এই কাণ্ডে রামচন্দ্রের যৌবরাজ্যে অভিষেকের আয়োজন, তারপর দশরথের পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কৈকেয়ীর প্রার্থিত বরে সীতা ও লক্ষ্মণের সঙ্গে রামের দণ্ডকারণ্যে বনবাসে যাওয়ার উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ভরতকে মামার বাড়ি থেকে আনা, পুত্রশোকে দশরথের মৃত্যু, রামকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভরতের চিত্রকূট পর্বতে যাওয়া এবং রামের পাদুকাকে সিংহাসনে স্থাপন করে ঋষিকল্প ভরতের রাজ্যপালন প্রভৃতিও বর্ণনা করা হয়েছে।

(৩) রামায়ণের অরণ্যকাণ্ড

এই কাণ্ডে দণ্ডকারণ্যে মুনিদের অনুরোধে রামের রাক্ষসবধ, লক্ষ্মণের হাতে রাবণের বোন শূর্পণখার নাক কান কাটা যাওয়া, রাবণের সীতাহরণ ও জটায়ুর মুখ থেকে সীতাহরণের বৃত্তান্ত শোনা প্রভৃতি ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।

(৪) রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড

এই কাণ্ডে দেখা যায়, রাম দক্ষিণাপথে যাত্রা করে কিষ্কিন্ধ্যায় উপস্থিত হন ও সুগ্রীবের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। তারপর সুগ্রীবের অগ্রজ বালীকে হত্যা করে রাম সুগ্রীবকে সিংহাসনে অভিষিক্ত করেন এবং সুগ্রীবের আদেশে মহাবীর হনুমান সীতার খোঁজে বের হন।

(৫) রামায়ণের সুন্দরকাণ্ড

এই কাণ্ডের বর্ণনীয় বিষয় হল হনুমানের সমুদ্রলঙ্ঘন, লঙ্কারাজ্যে অশোকবনে সীতাকে দর্শন ও অভিজ্ঞান প্রদর্শন, রাবণকে রামের তেজস্বিতার কথা বলে সীতাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য উপদেশ দান এবং লঙ্কার সমৃদ্ধি বর্ণনা।

(৬) রামায়ণের লঙ্কাকাণ্ড বা যুদ্ধকাণ্ড

লঙ্কাকাণ্ডেই রামায়ণের বর্ণনীয় বিষয়ের চরম পরিণতি। এই কাণ্ডে প্রথমেই রয়েছে সমুদ্রে সেতুবন্ধনের কথা। তারপর রয়েছে রাবণের ভাই বিভীষণের রামের পক্ষে যোগদান, রাক্ষসবাহিনীর সঙ্গে রাম, লক্ষ্মণ ও বানর সেনাদের ভীষণ যুদ্ধ এবং রাবণের সবংশে নিধন। এরপর সীতা উদ্ধার, সীতার অগ্নিপরীক্ষা, সীতাকে নিয়ে রামচন্দ্রের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন, রামের রাজ্যাভিষেক, অযোধ্যায় রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা এবং রামায়ণ পাঠের ফলশ্রুতিও এই কান্ডেই বর্ণনা করা হয়েছে।

(৭) রামায়ণের উত্তরকাণ্ড

এই কান্ডে রামের রাজ্যলাভের পরবর্তী ঘটনাগুলির বর্ণনা আছে। প্রজাদের মনে সীতার চরিত্র সম্পর্কে সংশয় দূর করার জন্য রামের সীতাকে পরিত্যাগ, বাল্মীকির আশ্রমে সীতার লব ও কুশ নামে যমজ পুত্রের জন্ম, বাল্মীকির কাছে লব-কুশের রামায়ণ গান শিক্ষা, রামের অশ্বমেধ যজ্ঞশালায় তাদের রামায়ণ গান করতে আসা, সীতাকে রাজধানী অযোধ্যায় ফিরিয়ে আনা এবং পুনরায় অগ্নিপরীক্ষার জন্য রামের আদেশ দানের পরই সীতার পাতাল প্রবেশ করা। এর পর রাজ্য বণ্টন, রাম প্রমুখের লোকান্তর গমন প্রভৃতি কাহিনি এই কাণ্ডে স্থান পেয়েছে।

রামায়ণের প্রক্ষিপ্ত অংশ

সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত রামায়ণকে যে আকারে আমরা এখন পাই তার সম্পূর্ণটাই কিন্তু কবি বাল্মীকির রচনা নয়। রামায়ণের প্রথম ও সপ্তম কাণ্ড পরবর্তী কালের সংযোজন। এই সংযোজিত অংশকেই প্রক্ষিপ্ত অংশ বলা হয়। যেসব কারণে রামায়ণের প্রথম এবং সপ্তম কাণ্ডকে প্রক্ষিপ্ত বলে মনে করা হয়, সেগুলি হল –

  • (১) প্রথম কাণ্ডের প্রথম সর্গে এবং তৃতীয় সর্গে পরপর দুটি বিষয়সূচি উল্লিখিত হয়েছে। প্রথম সূচি অনুসারে সপ্তম কাণ্ডের ঘটনাবলির উল্লেখ নেই। কিন্তু দ্বিতীয় সূচিতে প্রথম থেকে সপ্তম কাণ্ড পর্যন্ত সমস্ত ঘটনার উল্লেখ আছে। এর থেকে অনুমান করা যায় যে, মূল গ্রন্থের সঙ্গে উত্তরকাণ্ড সংযোজিত হয় পরবর্তী কালে এবং তার পরেই দ্বিতীয় সূচিটি সন্নিবিষ্ট হয়।
  • (২) বালিদ্বীপে পাওয়া রামায়ণে সপ্তম কাণ্ড অনুপস্থিত।
  • (৩) দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ কাণ্ড পর্যন্ত রামচন্দ্র অমিত পরাক্রমশালী পুরুষরূপে চিত্রিত। তিনি কোথাও দেবতা নন। কিন্তু প্রথম ও সপ্তম কাণ্ডে তিনি বিষ্ণুর অবতাররূপে চিত্রিত হয়েছেন।
  • (৪) প্রথম কাণ্ডে ঋষ্যশৃঙ্গ, বিশ্বামিত্র, অহল্যা এবং সপ্তম কাণ্ডে রাবণ, বৃত্র, হনুমান প্রভৃতি চরিত্র সম্পর্কে অনেক উপাখ্যান আছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ কাণ্ড পর্যন্তও নানা উপাখ্যান আছে। কিন্তু দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ কাণ্ডের উপাখ্যানগুলির যেমন পারস্পরিক সংলগ্নতা বজায় আছে, প্রথম কাণ্ডে ও সপ্তম কাণ্ডের উপাখ্যানগুলির মধ্যে তা অনুপস্থিত।
  • (৫) যুদ্ধকাণ্ডের শেষে রামায়ণ পাঠের ফলশ্রুতি বর্ণনা করা হয়েছে। সাধারণত কোনো গ্রন্থের শেষে সেই গ্রন্থপাঠের ফল ঘোষণা করা হয়। রামায়ণের ষষ্ঠ কাণ্ডে এই ফলশ্রুতির উল্লেখ মূল রামায়ণের সমাপ্তিবাক্য বলেই মনে হয়। ফলে সপ্তম কাণ্ড যে পরবর্তী কালের সংযোজন তা বলতেই হয়।
  • (৬) বালকাণ্ডের একটি শ্লোকে রামায়ণকে চব্বিশ হাজার শ্লোকে রচিত সম্পূর্ণ মহাকাব্যরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্করণে শ্লোকসংখ্যা বেশ কিছু বেশি। তাই প্রক্ষিপ্ত অংশ সংযোজনের সম্ভাবনা যুক্তিগ্রাহ্য হয়।
  • (৭) রামায়ণের বহু পুথির সাক্ষ্য থেকে আরও সন্দেহ জেগেছে যে, ষষ্ঠ কাণ্ডের অন্তর্গত সীতার অগ্নিপরীক্ষার বৃত্তান্তটিও পরবর্তী কালের সংযোজন।

রামায়ণের প্রক্ষিপ্ত অংশ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত

এই সমস্ত তথ্য থেকে মনে হয় যে, একসময় মূল রামায়ণ দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ এই পাঁচটি কাণ্ডে এবং ২৪,০০০ শ্লোকে সম্পূর্ণ ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে রামায়ণের বর্তমান লিখিত রূপ পরিগ্রহ করার সময় তাতে প্রথম ও সপ্তম কান্ড সংযোজিত হয় এবং অন্যান্য কাণ্ডেও কিছু পরিবর্ধন ঘটে।

রামায়ণের রচনাকাল

কোন সুদূর অতীতে রামায়ণ রচিত হয়েছিল তা নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা কঠিন। তাই রামায়ণের রচনাকাল -এর জন্য একটি বিস্তৃত কাল নির্ধারণ করাই যুক্তিযুক্ত।

রামায়ণে বর্ণাশ্রম

  • (১) সামাজিক জীবনের প্রারম্ভে বর্ণের বিভাজন গুণ-কর্ম অনুসারে করা হত। রামায়ণের যুগে মানুষ নিশ্চিতভাবে জাতিভেদে বিভক্ত হতে শুরু করে। বাল্মীকি ব্রাক্ষ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র এই চার বর্ণের বর্ণনা দিয়েছেন।
  • (২) ব্রাহ্মণের কার্য হল শিক্ষকতা, ক্ষত্রিয়ের কার্য রক্ষা। শ্রমের দ্বারা ধন ও অন্ন উৎপাদন হল বৈশ্যের কার্য। আর শূদ্রের কার্য হল অন্য বর্ণের সেবা।
  • (৩) রামায়ণে আশ্রমের সংখ্যাও নির্ধারণ করা হয়েছে। আশ্রম ৪টি হল ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস। ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত ব্রহ্মচর্য আশ্রম অবলম্বনীয়। এই আশ্রমে বিদ্যার্থীর দিনচর্যা ও বিদ্যাগ্রহণ করার ব্যবস্থা ছিল।
  • (৪) গার্হস্থ্য আশ্রমের বয়স ছিল ২৫ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত। তারপর ছিল বানপ্রস্থ আশ্রম। এর জন্য ৫০ থেকে ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। লোভ, মোহ, কাম, ক্রোধ পরিত্যাগ করে নগরের বাইরে তপস্যার জন্য চলে যেতেন বানপ্রস্থীরা। বনে পত্নীর সাথেও যেতে পারতেন।
  • (৫) তারপর ছিল সন্ন্যাস আশ্রম। এটি জীবনের চতুর্থ পর্যায়। ৭৫ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত এই আশ্রম নির্ধারিত হয়েছিল। এই আশ্রমে সংসার জগতের সব কিছু ভুলে বৈরাগী হয়ে পরমাত্মার সাথে বিলীন হয়ে যেতেন তাঁরা।

রামায়ণে বিবাহ

রামায়ণকালীন সমাজে আট প্রকার বিবাহ প্রচলিত ছিল। অন্য জাতির কন্যা বিবাহও চলত। অনুলোম বিবাহের উল্লেখ রামায়ণে পাওয়া যায়, যেমন উচ্চ জাতির পুরুষ ও নিম্ন জাতির কন্যার মধ্যে বিবাহ। সিন্ধু নামে যে মুনিকুমারকে দশরথ ভুলবশত হত্যা করেছিলেন তার পিতা বৈশ্য কিন্তু মাতা শূদ্র। ক্ষত্রিয় যযাতি আর দেবযানীর বিবাহ প্রতিলোম বিবাহের উদাহরণ। রাজপরিবারে স্বয়ংবর প্রথাও প্রচলিত ছিল। বাল্যবিবাহ প্রথা ছিল না বলেই মনে হয়।

রামায়ণে নারীর সম্মান

আদিকাব্য রামায়ণে স্ত্রী চরিত্রগুলি সমীক্ষা করলে এটি স্পষ্ট হয় যে, বিবাহের পূর্বে তাদের নিজেদের ঘরে সমুচিত শিক্ষা দেওয়া হলেছিল। মেয়েদের ব্যাবহারিক এবং নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হত। আর পাতিব্রতা ধর্মের স্থান ছিল সবচেয়ে ওপরে। ধার্মিক ক্রিয়াকলাপে তথা সামাজিক উৎসব-এও নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারতেন।

রামায়ণে শিক্ষা

রামায়ণের যুগে শিক্ষা প্রচারের কথা প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। রাজকুলের বালক অন্য কলার সাথে অস্ত্রশিক্ষা শিখতেন। বেদ অধ্যয়নও শিক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।

রামায়ণে সামাজিক মূল্যবোধ

মানুষের জীবনে সমস্ত কার্যকলাপের লক্ষ্য চারটি -ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। ধর্মের জ্ঞান নিয়ে তবেই অর্থ ও কামের উপভোগ করতে শিক্ষা দিয়েছে ভারতবর্ষ। আর সর্বশেষে মোক্ষ হচ্ছে তার অন্তিম লক্ষ্য। হিংসা-দ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, অন্যায় যুদ্ধের সাহায্যে স্বার্থসিদ্ধি ইত্যাদি থাকলেও প্রভুভক্তি, দাম্পত্য প্রেমের মহত্ত্ব, ভ্রাতৃভক্তি, কর্তব্যপরায়ণতা প্রভৃতিই যে সমাজের প্রধান অবলম্বনীয় গুণ তা রামায়ণ কাব্যে চিত্রিত হয়েছে।

উপসংহার :- রামায়ণ আদিকাব্য এবং বাল্মীকি আদিকবি – এই কথা কাব্যশাস্ত্রের ক্ষেত্রে সর্বজনমান্য হয়েছে।আর সামায়ণ মহাকাব্যের মূল উপজীব্য রস হল করুণ রস।

(FAQ) রামায়ণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভারতের দুটি মহাকাব্যের নাম কি ছিল?

রামায়ণ ও মহাভারত।

২. ভারতবর্ষের আদিকাব্য কাকে বলা হয়?

রামায়ণ।

৩. রামায়ণ কে রচনা করেন?

মহর্ষি বাল্মীকি।

৪. রামায়ণের শ্লোক সংখ্যা কত?

২৪০০০

৫. কটি কাণ্ডে রামায়ণ সমাপ্ত হয়েছে?

৭টি।

Leave a Comment