সুলতান মামুদ প্রসঙ্গে জন্ম, পরিবার, সংস্কৃতি প্রিয়তা, খোরাসান দখল, সাম্রাজ্যের কর্তৃত্ব লাভ, ভারত অভিযান, সোমনাথ মন্দির লুন্ঠন, ঐতিহাসিকদের মন্তব্য ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানব
সুলতান মামুদ
ঐতিহাসিক চরিত্র | মামুদ |
জন্ম | ২ নভেম্বর, ৯৭১ খ্রি. |
পিতা | সবুক্তগীন |
রাজত্ব | ১০০২-১০৩০ খ্রি. |
ধর্ম | সুন্নী ইসলাম |
মৃত্যু | ৩০ এপ্রিল, ১০৩০ খ্রি. |
ভূমিকা :- গজনভি বা গজনী সাম্রাজ্য-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাসক ছিলেন ইয়ামিনউদ্দৌলা আবুল কাসেম মাহমুদ ইবনে সবুক্তগিন। সাধারণভাবে মামুদ গজনভি বা সুলতান মামুদ বা মাহমুদে জাবুলি নামে পরিচিত।
মামুদের জন্ম
৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে বর্তমান আফগানিস্তান -এর গজনী শহরে সুলতান মামুদ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সবুক্তগীন ছিলেন তুর্কি ক্রীতদাস এবং সেনাপতি, যিনি ৯৭৭ সালে গজনভী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
মামুদের পরিবার
মামুদের শৈশব সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। তিনি কাওসারি জাহান নামে এক আমিরজাদীকে বিয়ে করেন এবং মহম্মদ ও মাসুদ নামে তার পুত্র সন্তান ছিল।
সুলতান মামুদের সংস্কৃতি প্রিয়তা
সাহিত্য, কবিতা, শিল্পের প্রতি তার অনুরাগ ছিল। ফিরদৌসি ও অলবিরুনীদের মতো বিদ্বান ব্যক্তিদের তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেন। মহাকবি ফিরদৌসি তার শাহনামা কাব্যগ্রন্থ সুলতান মামুদকে উৎসর্গ করেন। অলবিরুনী ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতি কেন্দ্রিক গ্রন্থ তহকিক-ই-হিন্দ রচনা করেন।
মামুদের খোরাসান দখল
৯৯৪ সালে পিতা সবুক্তগীনের খোরাসান অভিযানে যোগদানের মাধ্যমে মামুদ রাজকার্যে অংশগ্রহণ শুরু করেন। তিনি সামানী শাসক দ্বিতীয় নূহের সহায়তায় খোরাসান অধিকার করেন। এই সময় বিভিন্ন অভ্যন্তরীন দ্বন্দে সামানী রাজবংশে খুবই অরাজকতা ছিল।
মামুদের ভ্রাতা ইসমাইলের মসনদ লাভ
- (১) ৯৯৭ সালে সবুক্তগীনের মৃত্যু হলে তার পুত্র ইসমাইল গজনভীর সুলতান হন। কিন্তু মামুদ ইসমাইলের চেয়ে বড় এবং অভিজ্ঞ হলেও বৈমাত্রেয় মায়ের প্রভাবে তিনি পিছিয়ে পড়েন।
- (২) মামুদের বৈমাত্রেয় মা ছিলেন সবুক্তগীনের পৃস্ঠপোষক আলপ্তগীনের কন্যা। এই কারণেই তার ভাই ইসমাইল প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ পান।
সুলতান মামুদের সাম্রাজ্যের কর্তৃত্ব লাভ
শীঘ্রই মামুদ বিদ্রোহ করেন এবং অন্য ভাই আবুল মুজাফ্ফারের সহায়তায় ইসমাইলকে পরাজিত করে গজনভী সম্রাজ্যের সর্বময় কতৃত্ব লাভ করেন। আবুল হাসান ইসফারাইনিকে তিনি মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন।
মামুদের ভারত অভিযান
হেনরী এলিয়টের মতে, সুলতান মামুদের ভারত অভিযান হয়েছিল ১৭ বার। কিন্তু এই ১৭টি অভিযানের বিস্তৃত বিবরণ জানা যায়নি। মানুদের ১২টি অভিযানের কথা বিশেষভাবে জানা যায়। তার এই অভিযানগুলি ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলে।
মামুদের সোমনাথ মন্দির লুন্ঠন
সোমনাথ মন্দির আক্রমণ বা অভিযান সুলতান মামুদের সতেরোটি ভারত অভিযানের মধ্যে অন্যতম। ১০২৬ খ্রিস্টাব্দে এটি তার ষোলতম অভিযান। বলা হয় যে, সুলতান মামুদ এই সোমনাথ মন্দির আক্রমণ করে দুই কোটি স্বর্ণমূদ্রাসহ প্রচুর ধনসম্পদ হস্তগত করতে পেরেছিলেন। কিছু হিন্দু ব্রাহ্মণ মনে করতেন সোমনাথ মন্দির জয় করা সুলতান মামুদের সাধ্যের বাইরে।
সুলতান মামুদ সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মন্তব্য
ঐতিহাসিক ড.ঈশ্বরী প্রসাদ বলেছেন যে, “সোমনাথ বিজয় মামুদের ললাটে নতুন বিজয়ের গৌরব সংযুক্ত করে।” ড. নাজিমের মতে, “সোমনাথ অভিযান ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম দুঃসাহসিক কার্য।”
সুলতান মামুদের মৃত্যু
১০৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল গজনীতে বা বর্তমান আফগানিস্তানে সুলতান মামুদ মৃত্যু বরণ করেন।
উপসংহার :- সুলতান উপাধিধারী প্রথম শাসক ছিলেন সুলতান মামুদ। তিনি আব্বাসীয় খিলাফতের আনুগত্য স্বীকার করে নিজের শাসন বজায় রাখেন। নিজ শাসনকালে তিনি ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন।
(FAQ) সুলতান মামুদ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
২ নভেম্বর, ৯৭১ খ্রিস্টাব্দে।
সবুক্তগীন।
১৭ বার।
গজনীর সুলতান মামুদ।
১০৩০ খ্রিস্টাব্দে।