সুলতান সবুক্তগীন প্রসঙ্গে জন্ম, নামের অর্থ, প্রথম জীবন, শাসক সবুক্তগীন, সেনাপতি, মসনদ লাভ, রাজত্ব, সাম্রাজ্য সীমা, জয়পালের মৃত্যু ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
সুলতান সবুক্তগীন
শাসক | সবুক্তগীন |
জন্ম | ৯৪২ খ্রিস্টাব্দ |
বংশ | গজনভী বংশ |
রাজত্ব | ৯৭৭-৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ |
পুত্র | সুলতান মামুদ |
মৃত্যু | ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা :- গজনভী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সবুক্তগীন বা সেবুক তিগিন। তার সম্পূর্ণ নাম ছিল আবু মনসুর সবুক্তগীন। তার পুত্র ও উত্তরাধিকারী ছিলেন মামুদ গজনভী, যিনি গজনীর সুলতান মামুদ নামে ইতিহাসে খ্যাত।
সুলতান সবুক্তগীনের জন্ম
৯৪২ সালে তার জন্ম হয়। আধুনিক কাজাখস্তানের অন্তর্ভুক্ত সেতিসু অঞ্চলের বলখস বা অধুনা কিরগিজস্তানের বরস্কন অঞ্চলে তার জন্ম হয় বলে মনে করা হয়।
সবুক্তগীন নামের অর্থ
তুর্কি ভাষায় ‘সেবুক’ শব্দের অর্থ হল ‘প্রিয়’ ও ‘তিগিন’ বা ‘তেগিন’ শব্দের অর্থ ‘রাজপুত্র’ বা ‘শাহজাদা’। ‘সেবুক তিগিন’ নামের অর্থ ‘প্রিয় শাহজাদা’। কিন্তু পরবর্তীতে আব্বাসীয় খলিফাদের আমলে ‘তেগিন’ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় তুর্কি সামরিক দাস। তার দাসজীবনে পাওয়া এই নামেই তিনি বিখ্যাত হন ও রাজত্ব পরিচালনা করেন।
সবুক্তগীনের প্রথম জীবন
সবুক্তগীন প্রথম জীবনে ছিলেন একজন দাস। পরবর্তীতে তিনি তার মালিক আলপ্তগীনের কন্যাকে বিবাহ করেন।
শাসক সবুক্তগীন
বুখারার সামানি সাম্রাজ্য-এর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রথমে আলপ্তগীন ও পরে তার জামাতা সবুক্তগীন স্বাধীনভাবে আধুনিক আফগানিস্তান -এর অন্তর্গত গজনির শাসক হয়ে ওঠেন। সবুক্তগিনের পুত্র মামুদ নিজেদের সম্পূর্ণ স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন।
সেনাপতি হিসেবে সবুক্তগীন
আলপ্তগীন বুখারায় ব্যর্থ হয়ে গজনিতে পালিয়ে আসেন ও জাবুলিস্তান দখল করে পুরো অঞ্চলের শাসক হয়ে বসেন। তার আস্থাভাজন সবুক্তগীনকে যুদ্ধে পারদর্শিতার কারণে তিনি তার সেনাপতির পদে উন্নিত করেন ও তার মেয়ের সাথে তার বিয়ে দেন।
সবুক্তগীনের মসনদ লাভ
ঐতিহাসিক ফিরিস্তার মতে আলপ্তগীনের মৃত্যুর পর তার ছেলে আবু ইশাক উত্তরাধিকারী মনোনীত হয়। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যে তিনিও মারা গেলে সামানি সম্রাট প্রথম মনসুর সবুক্তগীনকে গজনীর নতুন প্রশাসক হিসিবে নিয়োগ করেন।
সুলতান সবুক্তগীনের রাজত্ব
সবুক্তগীন ৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে গজনীর সিংহাসনে বসেন ও শাসক হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি ৯৭৭ থেকে ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
সবুক্তগীনের সাম্রাজ্য সীমা
সবুক্তগীনের আমলেই রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি পেয়ে উত্তরে বালখ, পশ্চিমে হেলমন্দ ও পূর্বে বর্তমান পাকিস্তান -এর অন্তর্ভুক্ত সিন্ধু উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছয়। বাগদাদের খলিফাও তাকে গজনীর শাসক বলে স্বীকার করে নেন।
সামানিদের কর্তৃত্ব স্বীকার
বাস্তবে হিন্দুকুশের দক্ষিণে এক বিরাট অঞ্চলের স্বাধীন শাসক হলেও সবুক্তগীন সামানিদের নামেই শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তিনি যে মুদ্রা তৈরি করেন, সেখানেও সামানি সম্রাটদের নামই লেখা ছিল।
জয়পালের আক্রমণ
- (১) লাহোর ও কাবুলের হিন্দুশাহি রাজা জয়পাল গজনী আক্রমণ করলে ৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে সবুক্তগীন কাবুলের কাছে লাগমনের যুদ্ধে তাকে পরাস্ত করেন। জয়পাল তাকে বিপুল ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হন।
- (২) জয়পাল নতুন করে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তুলে সবুক্তগীনের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। এই বাহিনীও কাশ্মীরের নীলম নদীর তীরে ৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে সবুক্তগীনের বাহিনীর কাছে পরাস্ত হয়।
সুলতান সবুক্তগীনের মৃত্যু
৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে একটি অভিযান শেষে বালখ থেকে গজনী ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সম্ভবত বর্তমান উজবেকিস্তানের তেরমিজে তার মৃত্যু হয়।
উপসংহার :- সবুক্তগীন তার পূর্বসুরী আলপ্তগীনের কাছ থেকে পাওয়া রাজ্য গজনীকে বিপুলভাবে শক্তিশালী করে তোলেন ও আয়তনে বহুগুণ বৃদ্ধি করেন। পরবর্তী গজনভি সাম্রাজ্যের ভিত তার হাতেই রচিত হয়।
(FAQ) সুলতান সবুক্তগীন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
গজনভী বংশের প্রতিষ্ঠাতা।
সুলতান মামুদ।
৯৪২ খ্রিস্টাব্দে।
শাহী রাজা জয়পালকে।
৯৭৭-৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ।