সাম্রাজ্য

সাম্রাজ্য প্রসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্য, সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক কাঠামো, ট্যাসিটাসের মন্তব্য, আক্কাদীয় সাম্রাজ্য, আসিরিয় সাম্রাজ্য, মিশরীয় সাম্রাজ্য, মিডিয়ান সাম্রাজ্য, আকিমেনীয় সাম্রাজ্য, মগধ সাম্রাজ্য, ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্য, রোমান সাম্রাজ্য, হান সাম্রাজ্য, মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য , ইসলামীয় সাম্রাজ্য, অটোমান সাম্রাজ্য, মুঘল সাম্রাজ্য, সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানব

সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্য

ঐতিহাসিক ঘটনাসাম্রাজ্য
প্রথম সাম্রাজ্যআক্কাদীয় সাম্রাজ্য
দীর্ঘকালীন ও সর্ববৃহৎরোমান সাম্রাজ্য
মিশরীয় সাম্রাজ্যপ্রাচীন মিশর
মগধ সাম্রাজ্যপ্রাচীন ভারত
ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যপ্রাচীন গ্ৰিস
হান সাম্রাজ্যচিন
সাম্রাজ্য

ভূমিকা :- প্রাচীন কালের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদগুলি থেকে পরবর্তীকালে যথাক্রমে মহাজনপদ, রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, বৃহৎ সাম্রাজ্য প্রভৃতির উদ্ভব ঘটে। রাষ্ট্রের এরূপ আয়তন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্য

  • (১) প্রাচীন কালে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন উপজাতিগোষ্ঠী বসবাস করত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপজাতির সদস্যরা রক্তের সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ জ্ঞাতির নেতৃত্ব মেনে নিয়ে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিল। আবার কখনো-কখনো কোনো বীর যোদ্ধা তার শক্তির দ্বারা কোনো অঞ্চলের বাসিন্দাদের ওপর আধিপত্য কায়েম করে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
  • (২) তবে এভাবে উপজাতীয় জীবনে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রের আয়তন ছিল ক্ষুদ্র। এই ক্ষুদ্রায়তন রাষ্ট্রগুলি পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। অর্থাৎ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পূর্বে সাম্রাজ্যবাদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল।
  • (৩) প্রাচীনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যে অসংখ্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেগুলি প্রতিষ্ঠার অন্যতম পূর্বশর্ত ছিল সাম্রাজ্যবাদী নীতি। যেমন প্রাচীন ভারতে মৌর্য শাসকদের সাম্রাজ্যবাদী নীতির ফলেই বৃহৎ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছিল।
  • (৪) ভারতে হর্ষঙ্ক, শৈশুনাগ, নন্দ ও মৌর্য বংশের শাসকদের ধারাবাহিক সাম্রাজ্যবাদী নীতির ফলেই ষোড়শ মহাজনপদের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনপদগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে মগধ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছিল।

সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক কাঠামো

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, একটি সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক কাঠামো সুনির্দিষ্ট রূপ লাভ করে প্রধানত দুটি পদ্ধতিতে। যথা –

  • (১) সামরিক শক্তির দ্বারা অন্য রাজ্যের ভূখণ্ড দখল করে সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটানো ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং
  • (২) বার্ষিক কর আদায়, বশ্যতা আদায় প্রভৃতির মাধ্যমে অন্য রাজ্যের উপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন।

সাম্রাজ্য সম্পর্কে ট্যাসিটাসের মন্তব্য

এজন্য ইতিহাসবিদ ট্যাসিটাস বিদ্রুপ করে বলেছেন, “To plunder, to slaughter, to steal, these things they misname empire; and where they make a wilderness, they call it peace.”

সুদূর অতীতের সাম্রাজ্য

পৃথিবীতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বহু প্রাচীন। যেমন  –

(১) আক্কাদীয় সাম্রাজ্য

আজ থেকে প্রায় ৬০০০ বছর পূর্বে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব চতুর্বিংশ শতকে মহান সারাগনের নেতৃত্বে মেসোপটেমিয়ায় ইউফ্রেটিস-টাইগ্রিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বৃহৎ আক্কাদীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলে জানা যায়। সম্ভবত এটিই পৃথিবীর প্রথম সাম্রাজ্য।

(২) অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য

প্রাচীন অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে গড়ে উঠেছিল এবং তা প্রায় ১৪০০ বছর অস্তিত্বশীল ছিল।

(৩) মিশরীয় সাম্রাজ্য

প্রাচীন মিশরে তৃতীয় থুটমোসের নেতৃত্বে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতকে বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল।

(৪) মিডিয়ান সাম্রাজ্য

কিছুকাল পর গ্রিস-এর প্রতিবেশী পার্সিয়া অঞ্চলে প্রথম মিডিয়ান সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল।

(৫) আকিমেনীয় সাম্রাজ্য

পরবর্তীকালে গ্রিসে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর-রাষ্ট্রের উৎপত্তি হলেও প্রতিবেশী পার্সিয়া অঞ্চলে আকিমেনিয় সাম্রাজ্য (৫৫০-৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সুবিশাল এই সাম্রাজ্যে বিভিন্ন জাতির সহাবস্থান ঘটেছিল। মিশর, মেসোপটেমিয়া, থ্রেস, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়ার বৃহদংশ এবং গ্রিসের অংশবিশেষ আকিমেনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে চলে গিয়েছিল।

পরবর্তীকালের সাম্রাজ্য

এরপর পরবর্তীতে আরও বহু সাম্রাজ্যের উৎপত্তি হয়। যেমন –

(১) মগধ সাম্রাজ্য

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের পরবর্তীকালে প্রাচীন ভারতে শক্তিশালী মহাজনপদ মগধ অন্যান্য জনপদগুলিকে দখল করে সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল।

(২) ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্য

এই যুগে প্রাচীন ইউরোপ-এ দ্বিতীয় ফিলিপ ও তৃতীয় আলেকজান্ডার-এর নেতৃত্বে ম্যাসিডন প্রতিবেশী গ্রিক পলিস বা নগর-রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিবেশী অঞ্চল দখল করে সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের পরবর্তীকালে ভারত এবং ইউরোপে বৃহৎ সাম্রাজ্যের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। অর্থাৎ ইতিহাসবিদ ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার ভারতের ক্ষেত্রে যে যুগকে রাজকীয় ঐক্যের যুগ’ বা ‘The Age of Imperial Unity’ বলে অভিহিত করেছেন তা ইউরোপের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য হতে পারে।

(৩) রোমান সাম্রাজ্য

পরবর্তীকালে ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের উপর ইউরোপে রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়। রোমান সাম্রাজ্য ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক দীর্ঘকালীন ও সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে ইউরোপে যে সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তার পশ্চিম অংশের ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে পতন হলেও পূর্ব অংশ ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অস্তিত্বশীল ছিল।

(৪) হান সাম্রাজ্য

২০৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চিনে গড়ে ওঠা হান সাম্রাজ্যও ছিল এক সুবৃহৎ ও দীর্ঘকালীন সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্য ৪০০ বছরের বেশি সময় অস্তিত্বশীল ছিল।

(৫) মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য

প্রাচীন ভারতে গড়ে ওঠা খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের মৌর্য সাম্রাজ্য (৩২৪-১৮৭/১৮৫ খ্রিস্টপূর্ব) এবং গুপ্ত সাম্রাজ্য (খ্রিস্টীয় ২৭৫ থেকে ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি) ছিল সুবৃহৎ সাম্রাজ্য।

(৬) ইসলামীয় সাম্রাজ্য

খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে পবিত্র খলিফাগণ আরবকে কেন্দ্র করে এক সুবৃহৎ ইসলামীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

(৭) অটোমান সাম্রাজ্য

তুর্কি মুসলিমরা চতুর্দশ শতকে সুবিশাল অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা (১২৯৯ খ্রি.) করেছিল যা ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টিকেছিল।

(৮) মোগল সাম্রাজ্য

ভারতে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় যা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টিকেছিল।

(৯) আধুনিক যুগের সাম্রাজ্য

আধুনিক যুগেও রাশিয়ার পিটার দ্য গ্রেট, ফ্রান্স-এর নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ও তৃতীয় নেপোলিয়ন সুবিশাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা

ইংরেজি empire-এর বাংলা প্রতিশব্দ হল ‘সাম্রাজ্য’। ইংরেজি empire শব্দটি লাতিন শব্দ imperium থেকে এসেছে যার অর্থ হল ‘শক্তি’ বা ‘কর্তৃত্ব’। ‘সাম্রাজ্য’ বা empire-এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। যেমন  –

  • (১) সাধারণভাবে ‘সাম্রাজ্য’ বলতে রাজতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্রের অন্তর্গত একজন সম্রাট বা সম্রাজ্ঞীর অধীনস্থ এমন বিস্তৃত ভূখণ্ড বা বিভিন্ন রাজ্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রকে বোঝায় যা রাজ্যের চেয়ে সুবিস্তৃত হবে, যেখানে সর্বদা বিভিন্ন জাতি বা সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস থাকবে এবং সেইসব জাতি বা সম্প্রদায়কে শাসন করার উদ্দেশ্যে সম্রাটের একটি সুনির্দিষ্ট শাসন-কাঠামো থাকবে। অর্থাৎ কোনো শক্তিশালী রাজতান্ত্রিক বা অভিজাততান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠীর অধীনস্থ সুবৃহৎ রাষ্ট্রকে ‘সাম্রাজ্য’ বলা যায়।
  • (২) অন্যভাবে বলা যায়, সাম্রাজ্য হল কোনো শাসকের নেতৃত্বাধীন সেই ভৌগোলিক অঞ্চল যে অঞ্চল সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় সীমানার প্রসার ঘটায়।
  • (৩) আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, যখন কোনো ভূখণ্ডের শাসক ‘সম্রাট’ উপাধি ধারণ করেন তখন তার অধীনস্থ রাষ্ট্রকে ‘সাম্রাজ্য’ বলা যেতে পারে। ফ্রান্সের প্রথম নেপোলিয়ন ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করলেও তিনি ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘সম্রাট’ উপাধি গ্রহণ করেন। ফলে ফ্রান্স তখন সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।
  • (৪) রাজনৈতিক ধারণা অনুসারে, সাম্রাজ্য বলতে ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃত বিভিন্ন রাজ্য ও জাতির ঐক্যবদ্ধ একক বোঝায় যেখানে শাসনকার্য পরিচালনা করে কোনো রাজতন্ত্র (সম্রাট বা সম্রাজ্ঞী) অথবা কয়েকজনের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী।
  • (৫) সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে The Oxford English Reference Dictionary-তে শাসক ও শাসিতের ব্যবধানের উপর গুরুত্ব দিয়ে লেখা হয়েছে, “সাম্রাজ্য হল রাজনৈতিক ও সামরিক ভিত্তিতে গঠিত ভূখণ্ডের সেই জনসমষ্টি যারা সংস্কৃতিগতভাবে এবং জাতিগতভাবে শাসকগোষ্ঠীর থেকে পৃথক।”

সাম্রাজ্যের বৈশিষ্ট্য

প্রাচীনকালে গড়ে ওঠা সাম্রাজ্যগুলির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন –

(ক) সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসরণ

সাম্রাজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করা। সাম্রাজ্যের উত্থান এবং প্রসারে সাম্রাজ্যবাদই ছিল ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নীতি। মূলত সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসরণ করেই ইতিহাসের সুবৃহৎ সাম্রাজ্যগুলির উৎপত্তি ও প্রসার ঘটেছিল। কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্র বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনপদ, মহাজনপদ বা নগর-রাষ্ট্রের মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলি দখল করেই সুবৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল।

(খ) বৃহদায়তন

সাম্রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর বিশালায়তন। পূর্বেকার ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলি দীর্ঘকাল ধরে ধারাবাহিকভাবে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করার ফলে বহু রাষ্ট্রের অবলুপ্তি ঘটে। এই অবলুপ্ত রাষ্ট্রগুলির ভূখণ্ড দখল করে সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি পায়।

(গ) চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী প্রধান শাসক

সাম্রাজ্যের প্রধান শাসক বা সম্রাট রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। তিনি কখনো-কখনো নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে প্রচার করে সাধারণ প্রজাদের ওপর অতিরিক্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। রাষ্ট্র শাসনে জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো মূল্য থাকে না। স্বাভাবিক কারণেই সাম্রাজ্যের জনগণের প্রতিবাদ বা বিদ্রোহ করার অধিকার সম্রাট স্বীকার করেন না।

(ঘ) রাজ্য-জোট

সাম্রাজ্য হল কোনো একটি কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ কতগুলি রাজ্যের একটি জোট। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, মৌর্য সম্রাট অশোক-এর আমলে ৫টি রাজ্য বা প্রদেশের সমন্বয়ে বিশাল মৌর্য সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। এই পাঁচটি প্রদেশের নাম ছিল উত্তরাপথ, অবন্তী, ও দক্ষিণাপথ, প্রাচ্য ও কলিঙ্গ।

(ঙ) রাজতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্রের উপস্থিতি

সাম্রাজ্যের শাসন ক্ষমতা পরিচালিত হয় কোনো রাজতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্রের দ্বারা। রাজতন্ত্র সাধারণত বংশানুক্রমিক হয়। অর্থাৎ রাজা বা সম্রাটের মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারী সিংহাসন লাভ করেন।

(চ) বিভিন্ন জাতির অস্তিত্ব

সাম্রাজ্যে বিভিন্ন জাতির বসবাস থাকতে পারে। এর অধিকাংশই সম্রাট অর্থাৎ শাসকের জাতি থেকে আলাদা হয়। কিন্তু বিভিন্ন জাতির বসবাসের কারণে সাম্রাজ্যকে কখনোই আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে এক করে দেখা ঠিক নয়।

(ছ) উপাদানের বিভিন্নতা

সাম্রাজ্য বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এই উপাদানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিভিন্ন গোষ্ঠী, জাতি, সংস্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতি। সাম্রাজ্যের এই উপাদানগুলিতে বিভিন্নতা বা প্রভেদও থাকে।

উপসংহার :- প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, প্রাচীনকালে সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের ক্ষেত্রে যে রাজতন্ত্র বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল তা ছিল চরম রাজতন্ত্র। বর্তমানকালে ইংল্যান্ড-এ যে রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় তা হল নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র, চরম রাজতন্ত্র নয়।

(FAQ) সাম্রাজ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

পৃথিবীর প্রথম সাম্রাজ্য কোনটি কোনটি?

আক্কাদীয় সাম্রাজ্য

প্রাচীন ভারতে কোন মহাজনপদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে?

মগধ

পৃথিবীর ইতিহাসে দীর্ঘকালীন ও সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য ছিল কোনটি?

রোমান সাম্রাজ্য

আধুনিক কালে ফ্রান্সে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কে?

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট

Leave a Comment