মিশর দেশটি প্রসঙ্গে অবস্থান, সীমা, নামের উৎস, প্রাচীন সভ্যতা, রাজধানী, আয়তন ও জনসংখ্যা, শহর ও নগরী, ঐতিহাসিক দিক, টলেমীয় পর্ব, নেপোলিয়নের আক্রমণ, নীলনদ, জলবায়ু, বনভূমি, অর্থনৈতিক দিক, ভৌগোলিক দিক, সরকার ব্যবস্থা, ভাষা, ধর্ম ও খেলাধুলা সম্পর্কে জানবো।
মিশর
দেশ | মিশর |
মহাদেশ | আফ্রিকা |
রাজধানী | কায়রো |
ভাষা | আরবি |
রাষ্ট্রপতি | আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি |
প্রধানমন্ত্রী | মোস্তফা মাদবুলি |
ভূমিকা :- আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে ও এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত একটি আন্তঃমহাদেশীয় ভূমধ্যসাগরীয় রাষ্ট্র হল মিশর। দেশটির সরকারী নাম মিশর আরব প্রজাতন্ত্র।
অবস্থান
মিশর আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত।
সীমা
মিশরের পশ্চিমে লিবিয়া, দক্ষিণে সুদান, উত্তর-পূর্বে ইজরায়েল এবং ফিলিস্তাইন অধ্যুষিত গাজা উপত্যকার সীমান্ত রয়েছে। দেশটির উত্তরে ভূমধ্যসাগর এবং পূর্বে আকাবা উপসাগর ও লোহিত সাগর। এই আকাবা উপসাগরের অপর তীরে জর্দান এবং লোহিত সাগরের অপর তীরে সৌদি আরব অবস্থিত। ভূমধ্যসাগরের অপর তীরে গ্রিস, সাইপ্রাস ও তুরস্ক অবস্থিত।
নামের উৎস
প্রাচীন মিশরের ভাষায় দেশটির একটি নাম ছিল ‘কমেট’ বা কালো মাটির দেশ। নীল নদের বন্যার সাথে বাহিত উর্বর কালো মাটি যা মরুভূমির মাটি “deshret” অথবা “লাল জমি” থেকে আলাদা।
প্রাচীন সভ্যতা
আদিম যুগে মিশর সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সভ্যতা ছিল। মিশরে বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী ধারাবাহিক সভ্যতা অবস্থিত। নীল নদের তীরে গড়ে ওঠা এই সভ্যতা মিশরীয় সভ্যতা নামে পরিচিত
রাজধানী
১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক মিশরের রাজধানীর নাম কায়রো।
আয়তন ও জনসংখ্যা
মিশরের আয়তন প্রায় ১০,০১,৪৫০ বর্গকিমি। উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র মিশর। মিশরের জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশের তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র (নাইজেরিয়া ও ইথিওপিয়ার পরে) এবং সারা বিশ্বের ১৩তম সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র। দেশের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে ১০০ জন।
শহর ও নগরী
মিশরের বৃহত্তম নগরী কায়রোর বাইরে আলেকজান্দ্রিয়া, আল-জিজাহ, শুবরা আল-খায়মাহ, পোর্ট সাইদ ও সুয়েজ অন্যান্য প্রধান নগরী।
ঐতিহাসিক দিক
- (১) প্রায় ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই একটি সংহত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মিশর বিদ্যমান। আফ্রিকার সংযোগস্থলে সামরিক কৌশলগত স্থানে অবস্থান, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা এবং ভারত ও চীন -এর মধ্যকার বাণিজ্যপথের উপর অবস্থিত ছিল বলে এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়।
- (২) খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি মিশর দখল করে এবং এখানে নতুন নতুন ধর্ম ও ভাষার প্রবর্তন করে। মিশরের সমৃদ্ধ কৃষি সম্পদ, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অবস্থা এবং দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক ঐক্যের ফলস্বরূপ এখনও পুরনো ঐতিহ্য ও রীতিনীতিগুলি হারিয়ে যায়নি।
- (৩) ৬৪১ সালে আরব মুসলিমরা মিশরে আসলে মিশরের মানুষ দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তখন থেকেই মিশর মুসলিম ও আরব বিশ্বের একটি অংশ হয়ে ওঠে। আধুনিক মিশরের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলী।
- (৪) ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ সেনা মিশর দখল করে। এরপর প্রায় ৪০ বছর মিশর ইংল্যান্ড -এর উপনিবেশ ছিল। ১৯২২ সালে দেশটি একটি রাজতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা অর্জন করে। অবশ্য ব্রিটিশ সেনারা মিশরে থেকে যায়।
- (৫) ১৯৫২ সালে গামাল আব্দেল নাসেরের নেতৃত্বে একদল সামরিক অফিসার রাজতন্ত্র উৎখাত করে এবং একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে মিশর প্রতিষ্ঠা করে। নাসের ১৯৫৬ সালের মধ্যে মিশর থেকে সমস্ত ব্রিটিশ সেনাকে বহিস্কার দেন।
- (৬) ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি আনোয়ার আল সাদাতের নেতৃত্বে মিশর প্রথম জাতি হিসেবে ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েলের সাথে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। বর্তমানে মিশর সমগ্র আরব বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
টলেমীয় পর্ব
৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের ম্যাসিডোনিয়া রাজ্যের রাজা মহামতি আলেকজান্ডার মিশর আক্রমণ করেন। ম্যাসিডোনীয় জাতির লোকেরা প্রায় ৩০০ বছর ধরে দেশটি শাসন করে, যাকে টলেমীয় পর্ব বলা হয়।
নেপোলিয়নের আক্রমণ
১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স -এর সেনাপতি নেপোলিয়ন মিশর আক্রমণ করেন। কিন্তু উসমানীয় সাম্রাজ্য দ্রুত ক্ষমতা ফিরে পেতে সক্ষম হয়।
রাষ্ট্রপ্রধান নাসের
গামাল আব্দেল নাসের আরব সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা ছিলেন। তিনি ব্রিটিশদের কাছ থেকে অনেক শিল্প কারখানা ও সুয়েজ খালের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ সম্পন্ন করেন। তাঁর শাসনকালে মিশর ও ইজরায়েলের মধ্যে ১৯৫৬ ও ১৯৬৭ সালে যুদ্ধ হয়।
নীল নদ
মিশরের ভিতর দিয়ে বিশ্বের অন্যতম সুদীর্ঘ নীল নদ দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে পতিত হয়েছে। নীল নদের দুইপাশের উপত্যকাটি একটি সমতল নিম্নভূমি। এই উপত্যকার আয়তন প্রায় ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার।
জলবায়ু
মিশরে মূলত দুইটি ঋতু বিদ্যমান। অপেক্ষাকৃত শীতল বা নাতিশীতোষ্ণ শীতকাল এবং অত্যন্ত উত্তপ্ত গ্রীষ্মকাল। মিশরের জলবায়ু খুবই শুষ্ক ও রৌদ্রোজ্জ্বল। উপকূলীয় অঞ্চল ব্যতীত অন্যত্র বৃষ্টিপাত বিরল।
বনভূমি
মিশরের পূর্বের মরুভূমি ও সিনাই উপদ্বীপে কাঁটাগুল্ম, খর্বাকার মরু উদ্ভিদ ও ছোট লতাপাতা দেখা যায়। অল্প কিছু স্থানীয় বৃক্ষের প্রজাতির মধ্যে আকাসিয়া বৃক্ষ উল্লেখযোগ্য। নীল নদের উপকূলবর্তী অঞ্চলে খেজুর গাছ ও বহু জলজ উদ্ভিদ (ঘাস ও নলখাগড়া) জন্মায়।
বন্যপ্রাণী
পাহাড়ি ভেড়া ও ছাগল, গাজেল হরিণ, বামনাকার মরু শেয়াল, বুনো খরগোশ, খেঁকশিয়াল ও বেজি মিশরের বন্যপ্রাণীগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তীক্ষ্ণদন্তী, কীটপতঙ্গ, গিরগিটি ও সাপও সুলভ। মিশরে সারা বছর ধরেই বহু পাখি বাস করে অথবা আভিবাসনের পথে অতিথি পাখি হিসেবে কিছুদিন থেকে যায়।
অর্থনৈতিক দিক
- (১) মিশরের মুদ্রার হল মিশরীয় পাউন্ড। পাউন্ডকে ১০০ পিয়াস্ত্রেতে ভাগ করা যায়। উন্নয়নশীল রাষ্ট্র মিশরে মূলত একটি সমাজতান্ত্রিক হলেও আংশিকভাবে উন্মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। মিশরের অর্থনীতির তিন প্রধান খাত কৃষি, খনন ও শিল্পোৎপাদন।
- (২) দেশটি খনিজ তেল (পেট্রোলিয়াম), প্রাকৃতিক গ্যাস ও সোনা উত্তোলন করে। মিশর মূল্যবান অপরিশোধিত তেল, তুলাজাত পণ্য, বস্ত্র, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, রাসায়নিক দ্রব্য, লোহা ও ইস্পাত উৎপাদন করে।
- (৩) মিশরের শ্রমশক্তির এক-চতুর্থাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত। অর্থকরী শস্য হিসেবে মিশর তুলা ও ধান উৎপাদন করে এবং বিদেশে রপ্তানি করে অর্থোপার্জন করে। এছাড়া এখানে আখ, ভুট্টা, টমেটো, গম, আলু, কমলা, খেজুর ও আঙুরের চাষ হয়।
ভৌগোলিক দিক
মিশর দেশটি আফ্রিকার উত্তর পূর্ব কোণে অবস্থিত। দেশটির ভূমি খুবই উর্বর, যার ফলে প্রচুর শস্য উৎপাদিত হয়। এই কারণে মিশরকে কৃষির তৃণভূমি বলা হয়।
সরকার ব্যবস্থা
মিশর একটি আংশিক রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। দেশে একটি এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা আছে। দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য
মিশর দেশটি জাতিসংঘ, আরব লিগ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন, আফ্রিকান ঐক্য এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
মানুষের বসবাস
৯৯% অধিবাসী প্রাচীন মিশরের হামীয় জাতি এবং মধ্যযুগ থেকে অভিবাসনের মাধ্যমে আগত আরব জাতির লোকদের বংশধর। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে নুবীয়, ভারতীয় বেদে বা জিপসি, আর্মেনীয় ও গ্রিক জাতির নাম প্রণিধানযোগ্য।
ভাষা
মিশরের সরকারী ভাষা আরবি। এছাড়া ফরাসি, ইংরেজি ও বার্বার ভাষাগুলিও এখানে প্রচলিত। এখানে আর্মেনীয় ভাষা, গ্রিক ভাষা এবং নীল নুবীয় ভাষা প্রচলিত আছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।
ধর্ম
এখানকার সরকারী ধর্ম ইসলাম। জনগণের প্রায় ৯০%ই সুন্নি মতাবলম্বী মুসলমান। তবে প্রায় ১০% মিশরীয় নাগরিক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। এছাড়া মিশরে একটি ক্ষুদ্র ইহুদী সম্প্রদায়ও বাস করে।
খেলাধুলা
মিশরের জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। সাত বার আফ্রিকা কাপ অব নেশনস জয়ী এই দেশকে ফুটবলে সেরা আফ্রিকান দেশ বলা যায়।
উপসংহার :- পর্যটন শিল্প মিশরের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ পর্যটক গিজা শহরের কাছে অবস্থিত স্ফিংস, পিরামিডগুলি ও অন্যান্য প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভগুলি পরিদর্শন করতে মিশরে আগমন করে।
(FAQ) মিশর দেশটি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
আরবি ভাষা।
কায়রো।
আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি।
মোস্তফা মাদবুলি।