আজ আমরা মগধ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, রাজধানী, প্রথম ঐতিহাসিক রাজা, রাজধানী স্থানান্তর প্রভৃতি সম্পর্কে জানবো ।
শক্তিশালী মগধ সাম্রাজ্য
অবস্থান | বর্তমান বিহারের পাটনা ও গয়া |
প্রথম রাজবংশ | হর্যঙ্ক |
প্রথম রাজা | বিম্বিসার |
রাজধানী | রাজগৃহ, পাটলিপুত্র |
ভূমিকা :- মগধ প্রাচীন ভারত -এ ষোলটি মহাজনপদ বা অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। ষোলটি মহাজনপদের মধ্যে মগধ বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মৌর্য যুগে মগধ বৃহৎ সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।
মগধ রাজ্য বর্তমানের বিহারের পাটনা, গয়া আর বাংলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল।
মগধ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা
পুরাণ -এর বর্ণনা অনুযায়ী মগধ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল বৃহদ্রথের পুত্র আধা-পৌরাণিক রাজা জরাসন্ধ।
মগধের রাজধানী
রাজগৃহ ছিল মগধ -এর রাজধানী। তারপর পাটলিপুত্র রাজধানী হিসেবে গুরুত্ব লাভ করেছিল।
মগধের প্রথম ঐতিহাসিক রাজা
রাজা বিম্বিসার ছিলেন মগধের প্রথম ঐতিহাসিক রাজা। তিনি অঙ্গ দখল করেন।
রাজা অজাতশত্রু
বিম্বিসার তার পুত্র অজাতশত্রুর হাতে নিহত হন। অজাতশত্রু রাজা হলে কোশল -এর রাজা প্রসেনজিতের সংগে তার যুদ্ধ বেধে যায়। যুদ্ধে হেরে গিয়ে প্রসেনজিত মৈত্রী চুক্তি করে ও নিজের মেয়ের সঙ্গে অজাতশত্রুর বিয়ে হয়।
মগধের রাজধানী স্থানান্তর
অজাতশত্রু গঙ্গার ওপারে রাজ্য বিস্তার করার জন্য পাটলিপুত্রে রাজধানী স্থানারিত করেন। পাটলিপুত্রে তার নতুন দুর্গের সাহায্যে সহজেই লিচ্ছবি প্রজাতন্ত্র দখল করে ফেলেন।
কিংবদন্তি
কথিত আছে যে, অজাতশত্রু তার দু’ধরনের নতুন অস্ত্রের (গুলতি ও আচ্ছাদনযুক্ত রথ) সাহায্যে সহজেই সব যুদ্ধে জিতে যান।
মগধে নন্দ বংশের রাজত্ব
শিশুনাগ বংশের শেষ রাজা মহান্দীনের অবৈধ সন্তান মহাপদ্ম নন্দ নন্দ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সমস্ত ক্ষত্রিয় রাজাদের পরাজিত করে বিন্ধ্য পর্বত পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন।
ভারতের প্রথম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা
মগধকে কেন্দ্র বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য মহাপদ্ম নন্দকে ভারতের প্রথম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়।
মহাপদ্ম নন্দের সেনাবাহিনী
সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য মহাপদ্ম নন্দ দুই লক্ষ পদাতিক, ২০০০ অশ্বারোহী, ২০০০ রথ ও ৩০০০ হস্তীবিশিষ্ট সুবিশাল বাহিনী গড়ে তোলেন। প্লুটার্কের মতে তার বাহিনী আরো বড় ছিল।
নন্দ বংশের শেষ রাজা
মগধের নন্দ বংশের শেষ রাজা ছিলেন ধননন্দ। তিনি তার সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য সবসময় প্রস্তুত রাখতেন। যারা তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতো তাদেরকে কারাদণ্ড দিতেন।
কৌটিল্য ও ধননন্দ
আলেকজান্ডার -এর ভারত আক্রমণের সংবাদ পেয়ে ভারতকে রক্ষা করার জন্য তক্ষশীলা নগরীর আচার্য্য চানক্য বা কৌটিল্য গিয়েছিলেন মগধ সম্রাট ধননন্দ এর কাছে। চানক্যকে তিনি অপমান করে বের করে দেন রাজ্য থেকে।
চাণক্যের প্রতিজ্ঞা
চানক্য প্রতিজ্ঞা করেন এই পুরো ভারতে অন্য একছত্র সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি এক ক্ষত্রিয়কে অর্থশাস্ত্র, যুদ্ধনীতি, রাজনীতির জ্ঞান দেন এবং তাকে মগধের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য গড়ে তোলেন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় -এ।
মৌর্য সাম্রাজ্যের সূচনা
পরর্বতী কালে চানক্যর পরিকল্পনায় মগধের সেনাকে পরাজিত করে মগধের সম্রাট হয় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন চাণক্য। শুরু হয় মৌর্য সাম্রাজ্য -এর ইতিহাস।
মগধের রাজাদের সাথে ধর্মের যোগাযোগ
মহাবীর প্রবর্তিত জৈন ধর্ম -এর প্রতি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য অনুরাগী ছিলেন। আবার সম্রাট অশোক গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তিত বৌদ্ধ ধর্ম -এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
উপসংহার :- খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে মগধে হর্ষঙ্ক বংশ রাজত্ব শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত মগধকে কেন্দ্র করে এক সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।
(FAQ) মগধ সাম্রাজ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী মগধ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল বৃহদ্রথের পুত্র আধা-পৌরাণিক রাজা জরাসন্ধ।
রাজগৃহ ছিল মগধের প্রথম রাজধানী। পরে পাটলিপুত্রে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়।
বর্তমানের বিহারের পাটনা, গয়া আর বাংলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল মগধ।