মহাবীর (Mahavir)

মহাবীর (Mahavir) -এর জন্ম পরিচয়, বংশ পরিচয়, বিভিন্ন নাম, মহাবীরের সন্ন্যাস জীবন, দিব্যজ্ঞান লাভ, ভারত পরিভ্রমণ, অনুগামী রাজা, মহাবীর প্রচারিত জৈনধর্মের প্রধান নীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

জৈন ধর্মের শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীর প্রসঙ্গে তার জন্ম পরিচয়, জন্মস্থান, বংশ পরিচয়, তার বিভিন্ন নাম, তার প্রথম জীবন, সন্যাস জীবন, কঠোর তপস্যা, দিব্যজ্ঞান লাভ, ভারত পরিভ্রমণ, মোক্ষলাভ, মোক্ষস্থলে জলমন্দির, তার অনুরাগী রাজা, তার মূর্তিতত্ত্ব, জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে মহাবীর, তার প্রচারিত জৈন ধর্মমত, তার প্রচারিত জৈন ধর্মের প্রধান নীতি, তার প্রচারিত জৈন ধর্মের বৈশিষ্ট্য, ব্রত, তার দর্শনের মূল ভিত্তি, তার কথিত আত্মসংযম, তার প্রচারিত জৈন ধর্মে অহিংসা, তার মৌলিক শিক্ষা অনেকান্তবাদ, তার প্রচারিত জৈন ধর্মের প্রভাব, তার মৃত্যু ও জৈন ধর্মগ্ৰন্থ সম্পর্কে জানবো।

বর্ধমান মহাবীর (Bardhaman Mahavir)

মনীষীমহাবীর
জন্ম ৫৪০ খ্রিস্টপূর্ব, বৈশালীর কুন্দপুর গ্রামে
পিতা  সিদ্ধার্থ
মাতা   ত্রিশলা
পত্নী  যশোদা
কন্যাপ্রিয়দর্শনা
ধর্ম  জৈন ধর্ম
পূর্বসূরীপার্শ্বনাথ
প্রতীক সিংহ
মৃত্যু ৪৬৮ খ্রিস্টপূর্ব, বিহারের রাজগীরের পাবাপুরী
মহাবীরের পরিচয়

ভূমিকা :- বর্ধমান নামে পরিচিত শ্রী মহাবীর জৈন ২৪ তম বা শেষ তীর্থঙ্কর, যিনি জৈনধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। অনেকে মনে করেন যে তিনি গৌতম বুদ্ধ – এর সমসাময়িক পঞ্চম শতাব্দীতে বাস করতেন।

মহাবীরের জন্ম পরিচয় (Birth identity of Mahavir)

আনুমানিক ৫৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৈশালীর কুন্দপুর গ্রামে মহাবীর জন্মগ্রহণ করেন।

বর্ধমান মহাবীরের বংশ পরিচয় (The lineage of Bardhaman Mahavir)

মহাবীরের পিতা ছিলেন জ্ঞাত্রিক উপজাতির নেতা সিদ্ধার্থ এবং মাতা ছিলেন লিচ্ছবি বংশের রাজা চেতকের ভগিনী ত্রিশলা। অর্থাৎ তিনি ছিলেন ক্ষত্রিয় বংশের সন্তান।

মহাবীরের বিভিন্ন নাম (Different names of Mahavir)

  • (১) ছেলেবেলায় মহাবীরের নাম ছিল ‘বর্ধমান’ (‘যিনি বৃদ্ধি পান, বৃদ্ধিশীল’)। মহাবীরের জন্মের সময় তার রাজ্যের দ্রুত সমৃদ্ধি ঘটছিল বলে তার এই নামকরণ করা হয়।
  • (২) মহাবীর ছেলেবেলায় একাধিকবার বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। তাই তাকে ‘মহাবীর’ নামে অভিহিত করা হয়।
  • (৩) মহাবীরকে ‘জিন’ (‘আসক্তি, অহংকার, লোভ প্রভৃতি অন্তঃপ্রবৃত্তিগুলি যিনি জয় করেছেন’) নামেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে ‘জিন’ উপাধিটি ‘তীর্থঙ্কর’ নামের সমার্থক শব্দে পরিণত হয়ে যায়।
  • (৪) বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে মহাবীরকে ‘নিগন্থ জ্ঞাতপুত্ত’ নামে অভিহিত করা হয়। ‘নিগন্থ’ শব্দের অর্থ ‘যাঁর বন্ধন, পিছুটান বা রজ্জু নেই’। ‘জ্ঞাতপুত্ত’ শব্দটি তার ‘জ্ঞাত’ বা ‘নয়’ (প্রাকৃত) নামক বংশ-নামের দ্যোতক।
  • (৫) মহাবীরকে ‘শ্রমণ’ (‘অনুসন্ধানকারী’) নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।

বর্ধমান মহাবীরের প্রথম জীবন (Bardhaman Mahavir’s early life)

রাজপুত্র মহাবীর বিলাসব্যসনের মধ্যে বড়ো হয়েছিলেন।

  • (১) শ্বেতাম্বর ধর্মগ্রন্থ আচারাঙ্গ সূত্র-এর দ্বিতীয় অধ্যায় অনুযায়ী তার পিতামাতা ছিলেন পার্শ্বনাথের অনুগামী এবং জৈন সন্ন্যাসীদের গৃহস্থ ভক্ত।
  • (২) জৈন সম্প্রদায়গুলির মধ্যে তার বিবাহ প্রসঙ্গ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। দিগম্বর সম্প্রদায়ের মতে, মহাবীরের পিতামাতা চেয়েছিলেন, তিনি যেন যশোদাকে বিবাহ করেন। কিন্তু মহাবীর তাতে রাজি হননি।
  • (৩) আবার শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ের মতে, মহাবীর অল্প বয়সে যশোদাকে বিবাহ করেছিলেন এবং প্রিয়দর্শনা নামে তাদের একটি কন্যাসন্তানও ছিল।

মহাবীরের সন্ন্যাস জীবন (The ascetic life of Mahavir)

৩০ বছর বয়সে বর্ধমান মহাবীর রাজকীয় জীবনের সুখ পরিত্যাগ করে গৃহ ও পরিবার ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অনুসন্ধানে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন।

কঠোর তপস্যায় মহাবীর (Mahavir in severe penance)

তিনি অশোক বৃক্ষের নিচে কঠোর তপস্যা করেন এবং পোষাকপরিচ্ছদ সব পরিত্যাগ করেন। তাঁর কঠিন পরিস্থিতির বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় আচারাঙ্গ সূত্র গ্রন্থে।

বর্ধমান মহাবীরের দিব্যজ্ঞান লাভ (Bardhaman Mahavir gained divine wisdom)

সাড়ে ১২ বছর কঠোর তপস্যার পর ৪৩ বছর বয়সে একটি শাল গাছের তলায় মহাবীর ‘কেবল জ্ঞান’ (সর্বজ্ঞতা বা অনন্ত জ্ঞান) প্রাপ্ত হন।

মহাবীরের ভারত পরিভ্রমণ (Mahavir’s journey to India)

দিব্যজ্ঞান লাভের পর ৩০ বছর মহাবীর সারা ভারত পরিভ্রমণ করেন এবং নিজের দর্শন শিক্ষা দেন। জৈন বিশ্বাস অনুসারে, মহাবীরের ১৪০০০ সন্ন্যাসী, ৩৬০০০ সন্ন্যাসিনী, ১৫৯০০০ শ্রাবক বা গৃহস্থ এবং ৩১৮০০০ শ্রাবিকা বা গৃহস্থ নারী অনুগামী ছিল।

বর্ধমান মহাবীরের অনুগামী রাজা (Bardhaman is a follower king of Mahavir)

তার অনুগামী রাজন্যবর্গের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মগধ -এর রাজা শ্রেণিক বা বিম্বিসারঅজাতশত্রু, বিদেহের রাজা চেতক, মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, কলিঙ্গ রাজ খারবেল প্রমুখ।

মহাবীরের মোক্ষলাভ (Mahavir’s Salvation)

জৈনরা বিশ্বাস করেন যে, ৪৬৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৭২ বছর বয়সে পাবাপুরীতে (অধুনা বিহারে অবস্থিত) মহাবীর মোক্ষ (জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি) লাভ করেন।

মহাবীরের মোক্ষ স্থলে জল মন্দির (Jal Mandir at Mahavir’s Moksha Sthal)

মহাবীর যেখানে মোক্ষ লাভ করেছিলেন বলে মনে করা হয় বর্তমানে সেখানে জল মন্দির নামে একটি জৈন মন্দির রয়েছে।

মহাবীরের মূর্তিতত্ত্ব (Iconography of Mahavir)

মহাবীরকে সাধারণত উপবিষ্ট বা দণ্ডায়মান অবস্থায় চিত্রিত করা হয়। তার নিচে থাকে তার প্রতীক সিংহ।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে মহাবীর (Mahavir in popular culture)

মহাবীরের জীবন অবলম্বনে মহাবীর : দ্য হিরো অফ ননভায়োলেন্স নামে একটি সচিত্র ছোটোদের গল্প রচিত হয়েছে।

জৈন ধর্মমত ও মহাবীর (Jain religion and Mahavir)

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন -এর ফলে প্রচলিত বৈদিক ধর্ম-এর বিরুদ্ধে যেসব ধর্মমতের উদ্ভব হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল জৈন ধর্ম।

জৈনধর্মে তীর্থঙ্কর ও মহাবীর (Tirthankara and Mahavir in Jainism)

  • (১) জৈনধর্মে একজন তীর্থঙ্করকে (নদী পারাপারের কর্তা বা শিক্ষক ঈশ্বর) একটি ‘তীর্থে’র প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়। ‘তীর্থ’ হল জন্ম ও মৃত্যুর অনন্ত সমুদ্রের (যাকে ‘সংসার’ বলা হয়) মধ্যে দিয়ে পারাপারের জন্য সৃষ্ট একটি অগভীর পথ।
  • (২) জৈন ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, বিশ্ব কালচক্রের প্রত্যেক অর্ধে চব্বিশ জন তীর্থঙ্কর জীবকে কৃপা করেন। মহাবীর হলেন ‘অবসর্পিণী’র (বর্তমান অধোগামী কালপর্যায়) শেষ তীর্থঙ্কর।
  • (৩) খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর বিশিষ্ট দিগম্বর সন্ন্যাসী সামন্তভদ্র মহাবীরের ‘তীর্থ’টিকে ‘সর্বোদয়’ (বিশ্বজনীন উন্নতি) নামে চিহ্নিত করেছেন।

জৈনধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মহাবীর নয় (Mahavir is not the founder of Jainism)

মহাবীরকেই সাধারণভাবে জৈনধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। জৈনধর্মে তার পূর্বসূরিদেরও স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং তাকে ২৪ তম বা শেষ তীর্থঙ্কর মনে করা হয়। তাছাড়া ২৩ তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ ছিলেন একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব।

মহাবীর প্রচারিত জৈনধর্মের প্রধান নীতি (The main principles of Jainism propagated by Mahavir)

জৈনধর্মের প্রধান নীতি গুলি হল –চতুর্যাম, পঞ্চমহাব্রত, ত্রিরত্ন প্রভৃতি।

(১) চতুর্যাম

২৩ তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ প্রচারিত সত্যবাদিতা, অহিংসা, অচৌর্য ও অপরিগ্ৰহ – এই চারটি নীতি একত্রে জৈনধর্মে চতুর্যাম নামে পরিচিত।

(২) পঞ্চমহাব্রত

পার্শ্বনাথের চতুর্যাম নীতির সাথে মহাবীর ব্রহ্মচর্য নীতি পালনের উপদেশ দেন। এর ফলে চতুর্যাম পরিনত হয় পঞ্চমহাব্রত -এ।

(৩) ত্রিরত্ন

বর্ধমান মহাবীর মুক্তিলাভ বা সিদ্ধশীল হওয়ার জন্য মহাবীর তিনটি নীতি পালনের নির্দেশ দেন। – সৎ বিশ্বাস, সৎ জ্ঞান ও সৎ আচরণ। এগুলি জৈনধর্মে ত্রিরত্ন নামে পরিচিত।

মহাবীরের প্রচারিত জৈনধর্মের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Jainism propagated by Mahavir)

জৈনধর্মের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সর্বপ্রাণবাদ ও কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন।

(১) সর্বপ্রাণবাদ

জৈনরা প্রাণের ব্যাপক অস্তিত্বে বিশ্বাসী। এই ধর্মে ইট, পাথর, নদীনালা, পাহাড়পর্বত প্রভৃতি সবকিছুতেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে বলে মনে করা হয়।

(২) কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন

মহাবীরের মতে মনকে বিশুদ্ধ রাখার জন্য উপবাস, অহিংসা, কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন ও কঠোর তপস্যা খুবই প্রয়োজন।

বর্ধমান মহাবীরের জৈনধর্মে ব্রত (Vow in Jainism of Bardhaman Mahavir)

মহাবীরের শিক্ষা অনুসারে প্রত্যেকটি জীবের পবিত্রতা ও আত্মমর্যাদা রয়েছে। তাই একজন যেমন নিজের পবিত্রতা ও আত্মমর্যাদার প্রতি অন্যের সম্মান আশা করেন, তেমনি তার উচিত অন্যের পবিত্রতা ও আত্মমর্যাদাকে সম্মান করে চলা।

(১) অহিংসা

জৈনধর্মে অহিংসাকেই প্রথম ও প্রধান ব্রত মনে করা হয়। জৈন ধর্মগ্রন্থ তত্ত্বার্থসূত্র অনুসারে, জীবনীশক্তি বিজাভিত হয় হিংসার প্রতি আসক্তি থেকে।

(২) সত্য

মিথ্যাচার না করা ও মিথ্যা কথা না বলাই উচিত। জৈন ধর্মগ্রন্থ সর্বার্থসিদ্ধি অনুসারে, জীবের কষ্টদায়ক এমন কিছুই প্রশংসার যোগ্য নয়, তা সে সত্য ঘটনাই হোক, বা অন্য কিছু।

(৩) অস্তেয় (চুরি না করা)

যদি কোনও কিছু যথাযথ রূপে দান করা না হয়, তবে তা গ্রহণ করা উচিত নয়।

(৪) ব্রহ্মচর্য (ইন্দ্রিয়-সংযম)

যৌন প্রবৃত্তিগুলিকে স্থায়ী ও কঠোরভাবে দমন করা।

(৫) অপরিগ্রহ (অনাসক্তি)

অন্তঃপ্রবৃত্তি (পছন্দ, অপছন্দ) ও বাহ্য প্রবৃত্তির (সম্পত্তি) প্রতি অনাসক্তি।

মহাবীরের দর্শনের মূল ভিত্তি (The basic foundation of Mahavir’s philosophy)

বর্ধমান মহাবীরের দর্শনে আটটি মূলভিত্তি (বিশ্বাসের নীতি), তিনটি অধিবিদ্যা (দ্রব্য, জীব, ও অজীব),এবং পাঁচটি নৈতিক আদর্শ বর্তমান। এগুলির উদ্দেশ্য জীবনের মান উন্নত করা।

জৈনধর্মে মহাবীর কথিত আত্মসংযম (In Jainism, Mahavir is said to be self-restraint)

মহাবীর বলেছিলেন যে, সামাজিক শান্তি, নিরাপত্তা ও একটি বুদ্ধিদীপ্ত সমাজ পেতে হলে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়কেই আত্ম-সংযম অভ্যাস করতে হবে।

বর্ধমান মহাবীর প্রচারিত জৈনধর্মে অহিংসা (Non-violence in Jainism preached by Bardhaman Mahavir)

মহাবীর প্রচার করেছিলেন যে, অহিংসা হল সর্বোচ্চ নৈতিক আদর্শ।

  • (১) মহাবীর মনে করতেন যে, কষ্ট কেউই পছন্দ করে না। তাই সকল জীবের প্রতি অহিংসা প্রদর্শনই কর্তব্য।
  • (২) মহাত্মা গান্ধী বলেন যে, বিশ্বের কোনও ধর্মই অহিংসার আদর্শকে এত গভীরভাবে ও এত পদ্ধতিগতভাবে আলোচনা করেনি, যতটা জৈনধর্ম প্রত্যেক মানুষের জীবনে অহিংসার প্রয়োগ সংক্রান্ত যোগ্যতার কথা আলোচনা করেছে।
  • (৩) অহিংসার মহৎ আদর্শটি মানুষের দ্বারা কার্যকর করা হয়েছিল এই জগতে ও তার বাইরে তাদের জীবনের সমাপ্তি অর্জন করার জন্য।
  • (৪) অহিংস বিষয়ে জৈনধর্ম অবশ্যই সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে এবং মহাবীরকে এই বিষয়ে সর্বোচ্চ কৃতিত্ব দিয়ে সম্মান জানানো উচিত।

মহাবীরের মৌলিক শিক্ষা অনেকান্তবাদ (Mahavir’s basic teachings are monotheistic)

  • (১) মহাবীরের অপর একটি মৌলিক শিক্ষা ছিল ‘অনেকান্তবাদ’ (দৃষ্টিভঙ্গির বহুত্ববাদ ও বিভিন্নতা)। জৈন দার্শনিক ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মহাবীর ‘অনেকান্ত’ ধারণাটির প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন।
  • (২) মহাবীর আত্মার প্রকৃতিকে দুইভাবে ব্যাখ্যা করেন। মূল বস্তুর দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মার প্রকৃতিকে নিত্য বলেছেন এবং অন্যদিকে আত্মার আকার ও পরিবর্তনশীলতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটিকে তিনি ক্ষণস্থায়ী বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

মহাবীরের মৃত্যুর পর জৈনধর্মাবলম্বীদের বিভাগ (Division of Jains after Mahavir’s death)

বর্ধমান মহাবীরের মৃত্যুর পর তাঁর শিষ্যরা বস্ত্র পরিধান বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। – দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর।

(১) দিগম্বর

ভদ্রবাহুর নেতৃত্বে একদল জৈন মহাবীরের আদর্শ অনুসারে নিজেদের পরিধান-বস্ত্র ত্যাগ করে দাক্ষিণাত্যে মহাবীরের উপদেশাবলী প্রচার করে। এদের দিগম্বর বলা হয়।

(২) শ্বেতাম্বর

স্থূলভদ্রের নেতৃত্বে একদল জৈন শ্বেত বস্ত্র পরিধান করে উত্তর ভারতে মহাবীরের ধর্মীয় বাণী প্রচার করেন। এরাই শ্বেতাম্বর নামে পরিচিত।

জৈন ধর্মগ্রন্থ (Jain scriptures)

জৈন ধর্মের বাণীগুলি প্রথম দিকে মুখে মুখে প্রচারিত হত। পরবর্তীতে তা গ্ৰন্থাকারে লেখা হয়।

(১) কল্পসূত্র

ভদ্রবাহু রচিত ‘কল্পসূত্র’ হল জৈনদের প্রথম লিখিত গ্ৰন্থ। এই গ্ৰন্থে ১৪ টি পর্বে মহাবীরের জীবনী বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

(২) দ্বাদশ অঙ্গ

স্থূলভদ্রের উদ্যোগে পাটলিপুত্র -এ অনুষ্ঠিত প্রথম জৈন সংগীতিতে (৩০০ খ্রিস্টপূর্ব) জৈনধর্মের উপদেশগুলি ১২ টি খণ্ডে সংকলিত হয়। এটি ‘দ্বাদশ অঙ্গ’ বা ‘সিদ্ধান্ত’ নামে পরিচিত।

(৩) দ্বাদশ উপাঙ্গ

গুজরাটের বলভীতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জৈন সংগীতিতে ‘দ্বাদশ অঙ্গ’-এর সাথে আরও ১২ টি অনুশাসন যোগ করা হয়। প্রাকৃত ভাষায় রচিত এই অনুশাসনগুলি ‘দ্বাদশ উপাঙ্গ’ নামে পরিচিত।

(৪) অন্যান্য গ্ৰন্থ

পরবর্তীতে সংস্কৃত ভাষায় রচিত ‘জৈন কল্পসূত্র’, ‘জৈন ভাগবতী সূত্র’, ‘পরিশিষ্ট পার্বণ, প্রভৃতিও উল্লেখযোগ্য জৈন গ্ৰন্থ।

মহাবীর প্রচারিত জৈন ধর্মের প্রভাব (Influence of Jainism propagated by Mahavir)

জৈনধর্ম ভারতের ইতিহাসে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে।

(১) অহিংসার আদর্শ

বৈদিক ধর্মের আড়ম্বর সর্বস্বতার বিরুদ্ধে জৈনধর্ম অহিংসার আদর্শ প্রচার করে।

(২) সামাজিক সাম্য

জৈনধর্ম বৈদিক বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে সামাজিক সাম্য তুলে ধরে।

(৩) আঞ্চলিক ভাষার বিকাশ

প্রাকৃত ও অর্ধ-মাগধী ভাষায় জৈনধর্ম প্রচারিত হওয়ার ফলে তামিল, তেলুগু, কন্নড়, গুজরাটি প্রভৃতি আঞ্চলিক ভাষার অগ্ৰগতি ঘটে।

(৪) বাণিজ্যের বিকাশ

জৈনধর্মের উত্থানের ফলে ব্যবসাবাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।

(৫) শিল্পকলার উন্নতি

জৈন মন্দিরগুলি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতে স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলার উন্নতি ঘটে। খণ্ডগিরি ও উদয়গিরি পাহাড়, রাজস্থানের আবু পাহাড়, ইলোরা প্রভৃতি স্থানের জৈন মন্দিরগুলি এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার :- মহাবীরের মতে কোনও সৃষ্টিকর্তা দেবতা নেই, আর অস্তিত্বেরও আদি ও অন্ত নেই। তার মতে জ্ঞানলাভ হল আত্ম-অন্বেষণ ও আত্মসংযমের ফল।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “মহাবীর (Mahavir)” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর (Mahavir is the founder of Jainism) সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভগবান মহাবীর কবে কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন?

বৈশালীর কুন্দপুর গ্রামে।

২. মহাবীরের মৃত্যু কোথায় হয়?

পাবাপুরীতে।

৩. মহাবীর কোথায় দেহত্যাগ করেন?

পাবাপুরীতে।

৪. মহাবীরের মৃত্যু সাল কত?

আনুমানিক ৪৬৮ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ।

৫. মহাবীর কে ছিলেন?

জৈন ধর্মের ২৪ তম বা শেষ তীর্থঙ্কর এবং জৈন ধর্মের শ্রেষ্ঠ প্রচারক।

৬. মহাবীর কোন বংশে জন্মগ্রহণ করেন?

ক্ষত্রিয় বংশে।

৭. মহাবীর কার কাছে সন্ন্যাস ধর্ম গ্ৰহণ করেন?

গোসাল।

৮. মহাবীর কোথায় মারা যান?

পাবাপুরীতে।

৯. মহাবীরের প্রথম শিষ্য কে ছিলেন?

গৌতম স্বামী।

Leave a Comment