ঐতিহাসিক যুগ -এর সময়কাল, মিশর ও মেসোপটেমিয়ার দৃষ্টান্ত, আর্য সভ্যতার যুগ, ভারতে ঐতিহাসিক যুগ, ভারতে ঐতিহাসিক যুগের সূচনা সম্পর্কে জানবো।
প্রাচীন ঐতিহাসিক যুগ
বিষয় | ঐতিহাসিক যুগ |
বৈশিষ্ট্য | লিখিত বিবরণের অস্তিত্ব |
সূচনাকাল | আনুমানিক ৩০০০ খ্রিস্টপূর্ব |
প্রথম সূচনা | মিশর ও মেসোপটেমিয়া |
ভারত -এ সূচনা | আনুমানিক ৩২৬ খ্রীষ্টপূর্ব |
ভূমিকা :- লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন ও লিখিত বিবরণের অস্তিত্বকে ‘ঐতিহাসিক যুগের’ সূচনা হিসেবে ধরা হয়।
ঐতিহাসিক যুগের সময়কাল
সাধারণ ভাবে বলা হয় যে, পৃথিবীর সব দেশে একই সময়ে লিপি বা বর্ণমালার আবির্ভাব ঘটেনি। তাই সর্বত্র একই সময়ে ‘ঐতিহাসিক যুগের’ সূচনা হয়নি।
মিশর ও মেসোপটেমিয়ায় ঐতিহাসিক যুগের দৃষ্টান্ত
খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের কাছাকাছি সময় থেকেই মিশর, মেসোপটেমিয়া প্রভৃতি দেশে লিপির প্রচলন হয়েছিল এবং এগুলির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়েছে। এগুলি থেকেই এইসব দেশের রাজবংশ, রাজন্যবর্গ এবং সন-তারিখের মোটামুটি লিখিত বিবরণ পাওয়া যায়।
ঐতিহাসিক যুগ আর্য সভ্যতা
আর্য সভ্যতার যুগে বিশাল ও অনুপম সাহিত্য সৃষ্টি হলেও আর্যদের কোনো লিপিজ্ঞান ছিল না বলেই অনুমান করা হয়।
ঐতিহাসিক যুগে ভারতের প্রাচীনতম পাঠোদ্ধার লিপি
কারও কারও মতে প্রাচীন ভারতের শিলালিপিগুলির মধ্যে মৌর্য সম্রাট অশোক -এর শিলালিপিগুলিই (২৬০ খ্রিস্টপূর্বের পরবর্তী) হল প্রাচীনতম, যেগুলির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
ভারতে ঐতিহাসিক যুগ
অশোকের শিলালিপি পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়েছে বলে কেউ কেউ ভারতে ‘ঐতিহাসিক যুগের সূচনাকাল হিসেবে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতককে চিহ্নিত করে থাকেন।
ঐতিহাসিক যুগের সোহগোর তাম্রলিপি
আবার অনেকে সোহগোর তাম্রলিপিকে ভারতের ক্ষেত্রে প্রাচীনতম লিপি বলে মনে করেন। তাদের মতে এই লিপিটি অশোকের জন্মের পঞ্চাশ বছর পূর্বে রচিত।
ঐতিহাসিক যুগে বৌদ্ধ ও জৈন গ্ৰন্থ
উত্তর ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের পরবর্তীকালে বিভিন্ন বৌদ্ধ (গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তিত বৌদ্ধ ধর্ম) ও জৈন গ্রন্থ (মহাবীর প্রবর্তিত জৈন ধর্ম) রচিত হলে সেগুলি থেকে সমসাময়িক বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য জানা যায়।
ঐতিহাসিক যুগের সূচনাকাল সম্পর্কে ড. দিলীপ কুমার চক্রবর্তীর মত
কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলীপকুমার চক্রবর্তী ভারতের ঐতিহাসিক যুগের সূচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে আরও পিছিয়ে দেওয়ার পথে জোরালো সওয়াল করেছেন।
- (১) তিনি বলেছেন যে, “খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের আগে গাঙ্গেয় উপত্যকায় লিপি ছিল না এটা অবান্তর কথা হওয়াই স্বাভাবিক।
- (২) তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে পাণিনির ব্যাকরণ রচনা কি কখনও লিপি প্রচলনের পূর্বে হতে পারে।
- (৩) তাই কেউ কেউ মনে করেন যে, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের পরবর্তীকালেই ভারতে ঐতিহাসিক যুগের সূচনা হয়।
আধুনিক যুগের ইতিহাসের ভিত্তি
লিপির পাঠোদ্ধার ও সন তারিখ সমন্বিত ইতিহাস আধুনিক যুগের ইতিহাসের ভিত্তি।
ঐতিহাসিক যুগে ভারতের ইতিহাস রচনা
লিপির পাঠোদ্ধার না হওয়ার কারণে ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬৫০ অব্দ পর্যন্ত কালপর্বে সন-তারিখ সংবলিত কোনো ধারাবাহিক ইতিহাস রচনা করা সম্ভব হয়নি।
ভারতের কালানুক্রমিক ইতিহাস
ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ -এর মতে, ভারতের কালানুক্রম সংবলিত ইতিহাস জানা যায় ৬৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে। দাক্ষিণাত্যের ক্ষেত্রে আরও পরে।
ভারতে ঐতিহাসিক যুগের সূচনা
ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ -এর মতে, সকল দিক বিবেচনা করে ভারতে ঐতিহাসিক যুগের সূচনার সময়টি হল ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ -এর বছর থেকে।
(FAQ) ঐতিহাসিক যুগ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
যে যুগে লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন হয় এবং ইতিহাসের লিখিত বিবরণ পাওয়া যায়, তাকে ঐতিহাসিক যুগ বলা হয়।
আনুমানিক ৩২৬ খ্রীষ্টপূর্ব।
সম্রাট অশোকের।