আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ

আজ আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ -এর সময়, তার ভারত আক্রমণের সময় ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা, আক্রমণের উদ্দেশ্য ও ফলাফল সম্পর্কে জানবো।

ম্যাসিডন রাজ্যের রাজা আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ প্রসঙ্গে আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময়কাল, আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় মগধের রাজা, আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় ভারতের রাজা, আলেকজান্ডারের ভারত অভিযান, আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সেনাপতি সেলুকাস, আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের কারণ, আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের ফলাফল, আলেকজান্ডারের ভারত ত্যাগ ও আলেকজান্ডারের মৃত্যু।

রাজা আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ

ঐতিহাসিক ঘটনাআলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ
পরিচিতিগ্রিস -এর ম্যাসিডন রাজ্যের রাজা
পিতাফিলিপ
ভারত অভিযান৩২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ

ভূমিকা :- পারস্য জয়ের পর শুরু হয় গ্রিসের ম্যাসিডন রাজ্যের তরুণ রাজা আলেকজান্ডার -এর ভারত আগ্রাসন। তিনি ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপ -এর পুত্র।

আলেকজান্ডারের পারস্য জয়

খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১ অব্দে তিনি পারস্য সাম্রাজ্য আক্রমণ ও জয় করে সাম্রাজ্যের পূর্বদিকে অগ্রসর হন। সেই সময় সিন্ধু নদ অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত পারস্য সাম্রাজ্যের সীমানা বিস্তৃত ছিল।

আলেকজান্ডারের আক্রমণের পূর্বে ভারতের অবস্থা

আলেকজান্ডারের ভারতবর্ষ আক্রমণের প্রাক্কালে উত্তর-পশ্চিম ভারত পরস্পরবিরোধী অনেকগুলি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। তাদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বহিরাক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভবপর ছিল না।

আলেকজান্ডার কর্তৃক আফগানিস্তান ও পারস্য দখল

খ্রিস্টপূর্ব ৩২৮ অব্দের মধ্যে সমগ্র পারস্য এবং আফগানিস্তান আলেকজান্ডারের দখলে এলে তিনি আরও পূর্বে অবস্থিত দেশগুলির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন।

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের উদ্দেশ্য

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য হল –

  • (১) বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাচ্য জয়ের পরিকল্পনা।
  • (২) ভারতের অপরিমিত সম্পদ আহরণ করা।
  • (৩) পারস্য জয়ের পর উত্তর-পশ্চিম ভারতে পারস্য সাম্রাজ্যের প্রদেশ গুলি জয় করার আগ্ৰহ।

আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের সূচনা

আলেকজান্ডার ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৩০০০০ সৈন্য নিয়ে হিন্দুকুশ পর্বতমালা অতিক্রম করে ভারত অভিযানের সূচনা করেন।

আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের সময় মগধের রাজা

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় মগধ রাজ্যের রাজা ছিলেন ধননন্দ

আলেকজান্ডারের তক্ষশীলায় প্রবেশ

৩২৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার সিন্ধু নদ অতিক্রম করে তক্ষশীলা রাজ্যে প্রবেশ করলে সেখানকার রাজা অম্ভি বিনাযুদ্ধে প্রচুর উপঢৌকন সহ তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

আলেকজান্ডারের প্রতি অন্যান্য রাজার প্রতিশ্রুতি

শুধুমাত্র অম্ভি নন, কোফিউস, সঞ্জয়, অশ্বজিৎ, শশীগুপ্ত প্রমুখ রাজন্যবর্গও আলেকজান্ডারকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন।

আলেকজান্ডার ও পুরুর মধ্যে হিদাস্পিসের যুদ্ধ

ঝিলাম ও চন্দ্রভাগা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের রাজা পুরু আলেকজান্ডারের গতিরোধ করেন। ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাদের মধ্যে হিদাস্পিসের যুদ্ধ হয়। পুরু পরাজিত হলেও আলেকজান্ডারের মিত্রে পরিণত হন।

আলেকজান্ডারের প্রত্যাবর্তন

পরবর্তীতে পরাজিত, বিধ্বস্ত এবং রণক্লান্ত সেনাবাহিনী দেশে প্রত্যাবর্তনে উণ্মুখ হয়ে পড়লে আলেকজাণ্ডার ভারত অভিযান বন্ধ করে গ্রিসে প্রত্যাবর্তন শুরু করেন।

আলেকজান্ডারের পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তান জয়

প্রত্যার্তনের পথে তিনি বেলুচিস্তান ও পাঞ্জাব অধিগত করেন। ঝিলাম নদী ও সিন্ধু নদের অন্তবর্তী সকল রাজ্য তার অধিগত হয়।

আলেকজান্ডারের ভারতে অবস্থান

ভারত ভূখণ্ডে আলেকজাণ্ডার প্রায় ১৯ মাস অবস্থান করেছিলেন। তিনি ভারত ত্যাগের পর প্রায় দুই বৎসরকাল তার বিজিত অঞ্চলসমূহে গ্রিক শাসন বজায় ছিল।

আলেকজান্ডারের মৃত্যু

ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পর খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে ব্যবিলনে আলেকজান্ডারের অকাল মৃত্যু (মাত্র ৩৩ বছর বয়সে) হয়।

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের পর মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা

আলেকজান্ডারের প্রত্যাবর্তনের পর চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য -এর নেতৃত্বে মৌর্য সাম্রাজ্য -এর প্রতিষ্ঠা পাঞ্জাবে গ্রিক শাসনের অবসান ত্বরান্বিত করে।

আলেকজান্ডারের ভারত জয়ের কৃতিত্ব অধরা

আলেকজান্ডার ভারতের মূল ভূখণ্ড দখল করতে পারেননি বলে তাকে ভারতবর্ষ বিজয়ের কৃতিত্ব দেওয়া হয় না।

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের প্রত্যক্ষ ফল

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের প্রত্যক্ষ ফল ছিল নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর।

  • (১) তাঁর অভিযানের ফলে ভারতে কয়েকটি গ্রিক উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল, যেগুলি গ্রিস ও ভারতের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।
  • (২) তিনি এই উপনিবেশ গুলি প্রাচ্য-প্রাশ্চাত্যের মিলন ক্ষেত্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই এই উপনিবেশ গুলি ধ্বংস হয়ে যায়।
  • (৩) এই কারণে অনেকেই আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণকে নিষ্ফল ঘটনা বলে অভিহিত করেন।

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের পরোক্ষ ফল

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের পরোক্ষ ফল ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

  • (১) গ্রিক সভ্যতা ও সংস্কৃতি ভারতে প্রবেশ করলে ভারতীয় মুদ্রা, বিজ্ঞান শিল্পকলা ও ধর্মের উপর গ্রিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
  • (২) গ্রিক ও রোমান শিল্পরীতির প্রভাবেই ভারতে গান্ধার শিল্প গড়ে ওঠে।
  • (৩) ভারতীয় নাটকে যবনিকা বা পর্দার ব্যবহার গ্রিক প্রভাবের ফল বলেই মনে করা হয়।
  • (৪) উত্তর-পশ্চিম ভারতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য গুলি জয় করে আলেকজান্ডার পরবর্তীতে মৌর্যদের এই অঞ্চলগুলি জয়ের পথ সহজ করে দেন।
  • (৫) আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ ও প্রত্যাবর্তনের পদগুলি ধরে গ্রিস ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক আদানপ্রদান শুরু হয়।
  • (৬) উত্তর-পশ্চিম উপমহাদেশ ও মগধের সাথে রেশম, মশলা ও সোনাকে কেন্দ্র করে গ্রিস তথা ইউরোপ -এর বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে।

উপসংহার :- আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে উপমহাদেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিজয়ী গ্রিকদের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও চিন্তাভাবনার সাথে পরিচিত হয়ে ওঠার সুযোগ পায়।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আলেকজান্ডারের সেনাপতির নাম কি?

সেলুকাস

২. আলেকজান্ডারের কোন দেশের শাসক ছিলেন?

গ্রিস।

৩. দ্বিতীয় আলেকজান্ডার নামে কে পরিচিত?

সুলতান আলাউদ্দিন খলজি

৪. আলেকজান্ডার কবে ভারত আক্রমণ করেন?

৩২৭-২৬ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে।

অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি

Leave a Comment