আজ শক রাজা রুদ্রদামন -এর বাসস্থান, রাজত্বকাল, উপাধি, জনকল্যাণমূলক কাজ, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অবদান প্রভৃতি সম্পর্কে জানবো ।
শক রাজা রুদ্রদামন
ঐতিহাসিক চরিত্র | রুদ্রদামন |
পরিচিতি | প্রাচীন ভারত -এর শক রাজা |
রাজত্বকাল | ১৩০-১৫০ খ্রিস্টাব্দ |
রাজধানী | উজ্জয়িনী |
উপাধি | মহাক্ষত্রপ |
ভূমিকা :- পশ্চিম ক্ষত্রপ রাজবংশের একজন শক শাসক ছিলেন প্রথম রুদ্রদামন। তিনি ছিলেন রাজা চষ্টনের নাতি।
রুদ্রদামন সম্পর্কে উৎস
শক রাজা রুদ্রদামন সম্পর্কে জানতে প্রধান উপাদান হল তার নিজের উৎকীর্ণ জুনাগড় শিলালিপি।
রাজা রুদ্রদামনের আদি বাসস্থান
শক জাতির আদি বাসস্থান ছিল মধ্য এশিয়া। খ্ৰীষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যভাগে তারা আদি বাসভূমি ত্যাগ করে এবং ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে আসে।
উজ্জয়িনীতে রুদ্রদামনের রাজ্য স্থাপন
শকরা ভারতে প্রবেশ করে বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজ্য স্থাপন করে। শক জাতির এক শাখা উজ্জয়িনী নগরে রাজত্ব করত। এই শাখার নাম কর্দমক। চস্টন ছিলেন এই বংশের প্রথম শাসক।
রাজা রুদ্রদামনের রাজত্বকাল
শক রাজা প্রথম রুদ্রদামন ১৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন।
শক রাজা রুদ্রদামনের রাজধানী
অধিকাংশ পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে রুদ্রদামন উজ্জয়িনী থেকে রাজ্য শাসন করেছিলেন। তবে এর নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।
রুদ্রদামনের মহা-ক্ষত্রপ উপাধি
রুদ্রদামন রাজা হওয়ার পর তার রাজ্যকে শক্তিশালী করে মহা-ক্ষত্রপ উপাধি গ্রহণ করেন।
শ্রেষ্ঠ শাসকরূপে রুদ্রদামন
কার্দমক বংশের তথা পশ্চিম ভারতে শক-ক্ষত্রপদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন প্রথম রুদ্রদামন।
রুদ্রদামনের মুদ্রার অস্তিত্ব
রুদ্রদামন ব্যাপক ভাবে রৌপ্য মুদ্রার প্রচলন করেন। মহাক্ষত্রপকালীন সময়ে তার নামাঙ্কিত কিছু মুদ্রা পাওয়া গেছে।
রক্ষাকর্তা হিসেবে রুদ্রদামন
জুনাগড় শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, সমস্ত শ্রেণীর মানুষ তাকে রক্ষাকর্তা হিসাবে বিবেচিত করেছিল এবং তিনি নিজেই “মহাক্ষত্রপ” অভিধা গ্রহণ করেছিলেন।
জনকল্যাণকামী শাসক রুদ্রদামন
রুদ্রদামন রাজ্য বিজেতা হিসেবে যেমন খ্যাতি ছিল, তেমনি সুদক্ষ জনকল্যাণকামী শাসক হিসেবে তিনি যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
কার্দমক বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক রুদ্রদামন
টলেমি রচিত ভূগোলে চস্টনের নাম উল্লিখিত আছে। চস্টনের পৌত্র রুদ্রদামন ছিলেন কার্দমক বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক।
হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে রুদ্রদামনের ভূমিকা
জুনাগড় শিলালিপি থেকে রুদ্রদামনের রাজত্বকাল সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য জানা যায়। রুদ্রদামন কার্দমক বংশের হৃতগৌরব অনেকাংশে পুনরুদ্ধার করেন এবং মহাক্ষত্রপ উপাধি ধারণ করেন।
শক রাজা রুদ্রদামনের কর্তৃত্বাধীন অঞ্চল
জুনাগড় শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, মালব, গুজরাট, মাড়বার, উত্তর কোংকন, সিন্ধু উপত্যকা রুদ্রদামনের কর্তৃত্বাধীন ছিল।
যৌধেয়দের সাথে শক রাজা রুদ্রদামনের যুদ্ধ
রুদ্রদামনের গিরনার শিলালিপিতে বর্ণিত বর্তমান হরিয়ানায় তিনি যৌধেয় উপজাতিদের জয় করেছিলেন।
জুনাগড় শিলালিপির শক রাজা রুদ্রদামনের বর্ণনা
শক রাজা রুদ্রদামনের জুনাগড় শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, তিনি বলপ্রয়োগ করে যৌধেয়দের ধ্বংস করেছিলেন। কারণ, তারা আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেছিল।
সাতবাহনদের সাথে শক রাজা রুদ্রদামনের যুদ্ধ
জুনাগড় শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, রুদ্রদামন ‘দক্ষিণাপথ পতি’ গৌতমীপুত্র সাতকর্ণিকে দুইবার পরাজিত করেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে ‘অদূর আত্মীয়তার’ জন্য তাঁকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করেন নি। এই সাতকর্ণির প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে অনিশ্চয়তা আছে।
কুষাণদের সাথে শক রাজা রুদ্রদামনের যুদ্ধ
কুষাণ সম্রাট কনিষ্ক -এর কোনো বংশধরের কাছ থেকে তিনি নিম্ন সিন্ধু উপত্যকা জয় করেন।
শক রাজা রুদ্রদামনের জনকল্যাণমূলক কাজ
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য -এর সময় নির্মিত এবং সম্রাট অশোক -এর সময় সম্প্রসারিত সুদর্শন হ্রদটির সংস্কার সাধন করেন রুদ্রদামন।
শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে শক রাজা রুদ্রদামনের অবদান
জুনাগড় লেখতে বলা হয়েছে যে, শব্দ (ব্যাকরণ), অর্থ (রাজনীতি শাস্ত্র), গন্ধর্ব (সঙ্গীত) এবং ন্যায়ের (তর্কশাস্ত্র) উপর বিশেষ অধিকারের জন্য তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
শক রাজা রুদ্রদামনের অবন্তী দখল
রুদ্রদামন তার শিলালিপিতে অবন্তীর কোনো উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছিলেন যে তিনি পূর্ব এবং পশ্চিম আকারবন্তী (পূর্ব মালওয়া) জয় করেছেন। পশ্চিম আকারবন্তী অবন্তীকে বোঝায় না।
উপসংহার :- সম্ভবত ১৫০ খ্রিস্টাব্দের পরেও তিনি জীবিত ছিলেন। তার কার্যাবলী ও কৃতিত্ব পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, প্রাচীন ভারতের শ্রেষ্ঠ শক শাসকদের মধ্যে তিনি নিঃসন্দেহে অন্যতম।
(FAQ) শক রাজা রুদ্রদামন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
জুনাগড় শিলালিপিতে।
কার্দমক বংশের শ্রেষ্ট শাসক।
উজ্জয়িনী।