গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান প্রসঙ্গে ৪ মে’র আন্দোলন, চিনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা, কুয়োমিনতাং ও কমিউনিস্ট দলের বিরোধিতা, কমিউনিস্টদের শক্তি বৃদ্ধি, লং মার্চ, সিয়াং ফু’র ঘটনা, মাও সে তুঙ ও চীনা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার তাৎপর্য সম্পর্কে জানবো।
ইতিহাসে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান প্রসঙ্গে চীনে ৪ ঠা মে’র আন্দোলন, চীনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা, চীনে কমিউনিস্টদের শক্তি বৃদ্ধি, চীনের ইতিহাসে লং মার্চ, চীনা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মাও সে তুঙ-এর অবদান ও 1949 সালের 1 অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের প্রতিষ্ঠা লাভ সম্পর্কে জানব।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান
ঐতিহাসিক ঘটনা | গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান |
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা | ১৯২১ খ্রি |
লং মার্চ | ১৯৩৪ খ্রি |
প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা | ১ অক্টোবর ১৯৪৯ খ্রি |
প্রথম চেয়ারম্যান | মাও-সে-তুঙ |
প্রথম প্রধানমন্ত্রী | চৌ এন লাই |
ভূমিকা :- চিনে পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির আধিপত্যের ফলে সেখানে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও আধুনিক পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রবেশ ঘটে। ফলে চিনের শিক্ষিত শ্রেণি বহির্বিশ্বের ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিবেশী রাশিয়ায় বলশেভিক বা রুশ বিপ্লব-এর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে চিনের অনেক বুদ্ধিজীবী মার্কসীয় সাম্যবাদী দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। ক্রমে চিনের সর্বত্র কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রসার ঘটে এবং ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চিন’-এর উত্থান ঘটে। ঐক্যবদ্ধ গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের উত্থান আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের উত্থানের প্রেক্ষাপট
১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর কমিউনিস্ট নেতা মাও-সে-তুঙ এর নেতৃত্বে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চিন‘ -এর উত্থান ঘটে। গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের উত্থানের পিছনে যেসব বিষয় ক্রিয়াশীল ছিল সেগুলি হল –
(ক) ৪ মে’র আন্দোলন
ড. সান-ইয়াৎ-সেন ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে মাঞ্চু শাসনের অবসান ঘটিয়ে চিনে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত করেন। এই আন্দোলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতা
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে চিনের কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমরনায়কদের প্রভাব দারুণভাবে বৃদ্ধি পায়। উত্তর চিনে সমরনায়করা প্রায় স্বাধীনভাবে শাসন পরিচালনা করতে থাকে।
(২) প্যারিস সম্মেলনে বৈষম্য
এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এর পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের শান্তি সম্মেলন-এ চিনের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হলে সমগ্র চিনে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেন-তু-শিউ-এর ডাকে চিনের কয়েক হাজার ছাত্র ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেয়। এই ঘটনা ৪ ঠা মে আন্দোলন বা মে ফোর্থ মুভমেন্ট নামে পরিচিত। আন্দোলনে যোগদানকারী ছাত্ররা মার্কসীয় দর্শনের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।
(৩) শ্রমিকদের অংশগ্রহণ
৪ মে’র আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে চিনের শ্রমিক শ্রেণিও অংশগ্রহণ করে। কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন যে, এই আন্দোলন চিনে শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক লড়াইয়ের সূচনা করে। কমিউনিস্ট নেতা মাও-সে-তুঙ মনে করেন যে, ৪ মে’র আন্দোলন ছিল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও সামন্ততন্ত্রবিরোধী বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব। যাই হোক, এই আন্দোলন ছিল চিনে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শ প্রচারের প্রাথমিক সোপান।
(খ) চিনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের ঘটনায় চিনের শিক্ষিত সম্প্রদায় মার্কসীয় ভাবধারা সম্পর্কে কৌতূহলী হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) মার্কসীয় পাঠচক্র
চিনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লি-তা-চাও (Li-Ta-Chao), অধ্যাপক চেন-তু-শিউ (Ch’en-Tu-hsiu) এবং তাঁদের অন্যান্য সহকর্মীদের উদ্যোগে পিকিং, সাংহাই প্রভৃতি স্থানে মার্কসীয় দর্শন আলোচনার উদ্দেশ্যে পাঠচক্র গড়ে ওঠে। ক্রমে চিনের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কিছু কমিউনিস্ট গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল মার্কসিস্ট রিসার্চ সেন্টার।
(২) সাংহাই-এ সম্মেলন
১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১ মে সাংহাই-এ চিনের বিভিন্ন কমিউনিস্ট গোষ্ঠীগুলির এক কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রুশ কমিউনিস্ট পার্টির পরামর্শ এবং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মার্কসবাদী অধ্যাপক লি-তা-চাও এবং চেন-তু-শিউ-এর উদ্যোগে এই সম্মেলনে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা হয়।
(৩) কর্মসূচি
সূচনাপর্বে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির তিনটি কর্মসূচি ছিল –
- (i) চিনের রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা,
- (ii) চিনা সমরনায়কদের উচ্ছেদ,
- (iii) বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।
(গ) কুয়োমিনতাং ও কমিউনিস্ট বিরোধ
চিনে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পূর্বে কুয়োমিনতাং দলের যথেষ্ট প্রতিপত্তি ছিল। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল ·
(১) দুই দলের সুসম্পর্ক
ড. সান ইয়াৎ-সেন ছিলেন কুয়োমিনতাং দলের প্রধান এবং চিনা প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি। তাঁর আমলে চিনের কমিউনিস্টরা কুয়োমিনতাং দলের সদস্য হতে পারত এবং দুই দল ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় সমস্যার মোকাবিলা করত। এই সময় কুয়োমিনতাং দলের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করে।
(২) ঐক্যবদ্ধ চিন
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ড. সান ইয়াৎ-সেনের মৃত্যুর পর তাঁর বিশ্বস্ত অনুচর চিয়াং-কাই-শেক কুয়োমিনতাং দল ও সরকারের প্রধান হন। চিয়াং-কাই-শেক রুশ কমিউনিস্ট পার্টির সহায়তায় ও পরামর্শে কুয়োমিনতাং দলকে সুসংগঠিত করেন। তিনি রাশিয়া ও চিনা কমিউনিস্টদের সহায়তায় উত্তর চিনের সমরনায়কদের পরাজিত করে হ্যাংকাও, নানকিং প্রভৃতি অঞ্চল দখল করেন। এরপর তিনি ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে উত্তর চিনের রাজধানী পিকিং দখল করলে সমগ্র চিন ঐক্যবদ্ধ হয়। ঐক্যবদ্ধ চিনের রাজধানী হয় নানকিং।
(৩) দুই দলের বিরোধ
অবশ্য কুয়োমিনতাং ও কমিউনিস্ট দলের পারস্পরিক সহযোগিতা দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে দুই দলের মধ্যে নানা কারণে বিরোধ শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে চিয়াং-কাই-শেক সাম্যবাদী রাশিয়ার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন। চিনের সব উচ্চপদ থেকে কমিউনিস্টদের বিতাড়িত করা হয় এবং চিয়াং-এর নির্দেশে ক্যান্টন, নানকিং প্রভৃতি অঞ্চলে নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হয়। এতে বহু কমিউনিস্ট নিহত হয়। ১৯২৭-১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার কমিউনিস্ট প্রাণ হারায়।
(ঘ) কমিউনিস্টদের শক্তিবৃদ্ধি
চিয়াং-কাই-শেকের নেতৃত্বে কুয়োমিনতাং দল কমিউনিস্টদের ওপর তীব্র হত্যালীলা ও নির্যাতন চালালে তারা শহর ত্যাগ করতে থাকে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) গ্রামে মাও-এর প্রচার
কমিউনিস্টরা গ্রামাঞ্চলে আশ্রয় নেয় এবং গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করে। তরুণ কমিউনিস্ট নেতা মাও-সে-তুঙ এবং চু-তে গ্রামের কৃষকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। মাও-সে-তুঙ প্রচার করেন যে, যেহেতু চিনে এখনও শিল্পবিপ্লব ঘটেনি বা শিল্প শ্রমিকশ্রেণি গড়ে ওঠেনি, সেহেতু কৃষকরাই চিনের সর্বহারা এবং তাদের দ্বারাই এদেশে কমিউনিস্ট বিপ্লব ঘটবে।
(২) কমিউনিস্টদের প্রসার
চিনের কিয়াংসি প্রদেশে কমিউনিস্টদের প্রধান ঘাঁটি স্থাপিত হয়। এ ছাড়া ইয়াং-সি, হুনান, উত্তর ফুকিয়েন প্রভৃতি প্রদেশে তারা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এসব অঞ্চলে তারা জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ করে কৃষকদের মধ্যে জমি বণ্টন করে, খাল খনন করে এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে।
(৩) গৃহযুদ্ধ
গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের নিয়ে কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয়। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে মাও- সে-তুঙ ও চু-তে কৃষকদের নিয়ে কিয়াংসি প্রদেশে লালফৌজ’ গঠন করেন। এই অবস্থায় কমিউনিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে চিয়াং সেনাবাহিনী পাঠান। ফলে চিনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
(ঙ) ‘লং মার্চ’
চীনে লংমার্চ সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনাগুলি হল –
(১) কমিউনিস্টদের অবরোধ
চিনে গৃহযুদ্ধের সুযোগে জাপান চিনের মাঞ্চুরিয়া প্রদেশটি দখল করে জেহোল পর্যন্ত অগ্রসর হয়। জাপানের আগ্রাসন প্রতিরোধে কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে চিয়াং-কাই-শেক কমিউনিস্টদের নিধনে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি কমিউনিস্টদের প্রধান ঘাঁটি কিয়াং-সি অবরোধ করে তাদের নির্মূল করার চেষ্টা চালান (১৯৩৪ খ্রি.)।
(২) দীর্ঘ অভিযান
এই পরিস্থিতিতে মাও-সে-তুঙের নেতৃত্বে পরিবার-পরিজন-সহ প্রায় ১ লক্ষ কমিউনিস্ট সরকারি বাহিনীর অবরোধ ভেঙে দীর্ঘ ৬ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে দক্ষিণ চিন থেকে উত্তর-পশ্চিম চিনের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছায় এবং সেখানে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থান শেনসি প্রদেশে উপস্থিত হয়। তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর এবং শেষ হয়েছিল ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ অক্টোবর। এই ৩৭০ দিন পায়ে হেঁটে বহু পাহাড়পর্বত, নদনদী, সরকারি বাহিনীর আক্রমণ এবং প্রবল দুঃখদুর্দশা অতিক্রম করে মাত্র ৮ হাজার যাত্রী তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়। এই ঘটনা ইতিহাসে ‘লং মার্চ’ বা ‘দীর্ঘ যাত্রা’ নামে পরিচিত।
(৩) সচেতনতা বৃদ্ধি
দীর্ঘ ৬ হাজার মাইল যাত্রাপথে তারা ১১টি প্রদেশ, ৫টি তুষার শৃঙ্গ, ১৮টি গিরিশ্রেণি এবং ২৪টি নদী অতিক্রম করেছিল। ‘লং মার্চ’ নিছক একটি সামরিক অভিযান ছিল না। এটি ছিল একই সঙ্গে দেশকে, দেশের মানুষকে, দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও আরও অনেক কিছুকে নুতন করে আবিষ্কার করার অভিযান। এই অভিযানের মাধ্যমে কমিউনিস্টরা সমগ্র চিনের সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলে।
(চ) সিয়াং-ফু’র ঘটনা
এই ঘটনার বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) শেনসি প্রদেশে মাও-এর শাসন
লং মার্চের পর মাও-সে-তুঙ্ শেনসি প্রদেশে একটি প্রায়-স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর রাজধানী হয় সিয়াং-ফু। কমিউনিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে চিয়াং সেখানে সেনাবাহিনী পাঠান। এই সময় কমিউনিস্টরা কুয়োমিনতাংদের সঙ্গে যৌথভাবে জাপানি আক্রমণ প্রতিহত করতে চাইছিল। কিন্তু তাদের আবেদনে চিয়াং সাড়া দেন নি।
(২) চিয়াং অপহরণ
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে চিয়াং সিয়াং-ফুতে এলে চ্যাং-শিউ- লিয়াং নামে তাঁর জনৈক সেনাপতি তাঁকে অপহরণ করে (১২ ডিসেম্বর) আটকে রাখেন। পরে রাশিয়ার হস্তক্ষেপে তিনি মুক্তি পান (২৫ ডিসেম্বর) এবং কমিউনিস্টদের সঙ্গে যৌথভাবে জাপানের আক্রমণ মোকাবিলায় রাজি হন। এই ঘটনা ‘সিয়াং-ফু ঘটনা’ নামে পরিচিত। এই ঘটনা ছিল চিনে কমিউনিস্টদের অগ্রগতির আরও একটি পদক্ষেপ।
(ছ) মাও-সে-তুঙ ও চিনা প্রজাতন্ত্র
এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) যুদ্ধকালে সমঝোতা
জাপান ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে চিনের ওপর আবার আক্রমণ চালিয়ে বহু স্থান দখল করে নেয়। এই সময় কুয়োমিনতাং ও কমিউনিস্টদের মধ্যে সমঝোতা গড়ে ওঠে এবং তারা যৌথভাবে জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর সময়ও উভয় দলের এই ঐক্য বজায় ছিল।
(২) বিরোধ
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপান আত্মসমর্পণ করার পর উভয় দলের বোঝাপড়া নষ্ট হয় এবং তারা আবার সংঘাতে লিপ্ত হয়। মাও-সে-তুঙের নেতৃত্বে কমিউনিস্টরা একের পর এক চিনের বিভিন্ন ভূখণ্ড দখল করতে থাকে।
(৩) চিয়াং-এর পরাজয়
দুই দলের সংঘর্ষ ক্রমে তীব্রতর হতে থাকে। চিয়াং ও তাঁর অনুগামীরা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ফরমোজা বা তাইওয়ান দ্বীপে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং সেখানে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে।
(৪) প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা
কুয়োমিনতাংদের পরাজয়ের পর মাও-সে-তুঙ-এর নেতৃত্বে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর পিকিং-এ ‘জনগণের প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রজাতন্ত্রের প্রথম সভাপতি বা চেয়ারম্যান হন মাও-সে- তুঙ এবং প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন চৌ-এন-লাই।
চিনে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার তাৎপর্য
ঐতিহাসিক ফ্রিডম্যান বলেছেন যে, মাও- সে-তুঙের নেতৃত্বে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় শক্তি হিসেবে নয়া চিনের অভ্যুদয় আধুনিক ইতিহাস-এ এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যেমন –
(১) জনগণের গুরুত্ব
চিনের কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে সেখানকার জনগণ ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রিত সামন্ততন্ত্র ও পুঁজিবাদ ধ্বংস করে জনগণের প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, জনগণই হল শেষ কথা।
(২) নতুন যুগের সূচনা
১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর কমিউনিস্ট চিনের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে এক বক্তৃতায় মাও-সে-তুঙ বলেন যে, চিনের মানুষ আর কখনও দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবে না বা কোনো প্রকার বিদেশি হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবে না। সাম্যবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে চিনের ইতিহাসে এক যুগের সমাপ্তি ঘটল – শুরু হল এক নতুন যুগের, যে যুগের ইতিহাস হল সমাজতন্ত্রের পথে অগ্রগতির ইতিহাস।
উপসংহার :- মাও-সে-তুঙের নেতৃত্বে চিনে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে সে দেশে ব্যাপক অগ্রগতি শুরু হয়। চিন সার্বিক ক্ষেত্রে পৃথিবীর একটি অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র -এ পরিণত হয়। মাও-সে-তুঙ চীনে বিভিন্ন মতাদর্শের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতাকে সমর্থন করতেন। তার ভাষায়,
“শতফুল বিকশিত হোক, শত মতের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা চলুক।”
(FAQ) গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১ অক্টোবর ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মাও-সে-তুঙের নেতৃত্বে।
মাও-সে-তুঙ।
চৌ-এন-লাই।
১৯৩৪ সালের ১৬-ই অক্টোবর মাও-সে-তুঙের নেতৃত্বে পরিবার পরিজন সহ প্রায় এক লক্ষ কমিউনিস্ট সামরিক বাহিনীর অবরোধ ভেঙ্গে দীর্ঘ ৬ হাজার মেইল পথ অতিক্রম করে। দক্ষিন চীন থেকে উওর-পশ্চিম চীনের শেনসি প্রদেশে উপস্থিত হয়। ৩৭০দিন পায়ে হেঁটে সামরিক বাহিনীর আক্রমন অতিক্রম করে মাত্র ৮ হজার যাত্রী ২০-ই অক্টোবর গন্তব্যে পৌঁছান। এই ঘটনা চীনের ইতিহাসে ‘লং-মার্চ’ বা দীর্ঘ অভিযান নামে পরিচিত।
১৯২১ খ্রিস্টাব্দে।