এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত জাপান দেশটি প্রসঙ্গে অবস্থান, নামকরণ, জনসংখ্যা, রাজধানী, ঐতিহাসিক দিক, ভৌগোলিক দিক, জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য, সামরিক দিক, রাজনৈতিক দিক, অর্থনৈতিক দিক, প্রশাসনিক বিভাগ, বৈদেশিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবো।
জাপান দেশটি প্রসঙ্গে জাপানের অবস্থান, জাপানের নামকরণ, জাপানের জনসংখ্যা, জাপানের রাজধানী, জাপানের ইতিহাস, জাপানের ভৌগোলিক দিক, জাপানের জলবায়ু, জাপানের জীববৈচিত্র্য, জাপানের রাজনীতি, জাপানের রাজা, জাপানের বর্তমান সম্রাট নারুহিতো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী, জাপানের প্রশাসনিক বিভাগ, জাপানের অর্থনীতি, জাপানের সামরিক দিক, উন্নত দেশ জাপান, জাপানের সংবিধান, মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জাপানের আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য, জাপানের যোগাযোগ ব্যবস্থা, জাপানের খেলাধুলা, জাপানের ধর্ম, জাপানের সংস্কৃতি।
এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত জাপান
ঐতিহাসিক স্থান | জাপান |
রাজধানী | টোকিও |
ভাষা | জাপানি |
রাজা | নারুহিতো |
প্রধানমন্ত্রী | ফুমিও কিশিদা |
ভূমিকা:- পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হল জাপান। বর্তমানে জাপান একটি স্বাধীন রাজতন্ত্রী দেশ। জাপানকে প্রায়শই “উদীয়মান সূর্যের দেশ” বলে অভিহিত করা হয়।
জাপানের অবস্থান
জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে উত্তর-পূর্ব এশিয়া মহাদেশের একটি দেশ। ভৌগোলিক অবস্থান ৩৫° উত্তর – ১৩৬° পূর্ব।
জাপানের নামকরণ
- (১) ইংরেজি জাপান শব্দটি সম্ভবত এসেছে জাপানি নাম নিহন-এর আদি মান্ডারিন চীনা বা উ চীনা উচ্চারণ থেকে। জাপানি ভাষায় এই শব্দটির উচ্চারণ নিপ্পন বা নিহন। জাপানি জাতি নিজেদের বলে নিহনজিন এবং নিজেদের ভাষাকে বলে নিহঙ্গ।
- (২) মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এর শেষ পর্যন্ত জাপানের পোষাকি নাম ছিল দাই নিপ্পন তেইকোকু বা মহান জাপান সাম্রাজ্য। বর্তমানে নিপ্পন-কোকু বা নিহন-কোকু নামদুটি রাষ্ট্রের পোষাকি নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- (৩) নিচি অক্ষরটির অর্থ “সূর্য” বা “দিন” এবং হন অক্ষরটির অর্থ “ভিত্তি” বা “উৎস”। একসঙ্গে অর্থ “সূর্যের উৎস” বা “সূর্যোদয়”। এই অক্ষরযুগলের অর্থ থেকেই জাপানের জনপ্রিয় পাশ্চাত্য বর্ণনা “সূর্যোদয়ের দেশ” ধারণাটি এসেছে।
জাপান দেশটির প্রসার
এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে ওখোৎস্ক সাগর থেকে দক্ষিণ পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান পর্যন্ত প্রসারিত।
জাপানের চারটি বৃহত্তম দ্বীপ
জাপান একটি যৌগিক আগ্নেয়গিরীয় দ্বীপমালা। এই দ্বীপমালাটি ৬,৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। জাপানের বৃহত্তম চারটি দ্বীপ হল হোনশু, হোক্কাইদো, ক্যুশু ও শিকোকু। এই চারটি দ্বীপ জাপানের মোট ভূখণ্ডের ৯৭% এলাকা নিয়ে গঠিত।
জাপানের জনসংখ্যা
এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত জাপানের জনসংখ্যা ১২৬ মিলিয়নের বেশি। জনসংখ্যার হিসেবে এটি বিশ্বের দশম বৃহত্তম রাষ্ট্র।
জাপানের রাজধানী
এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯.১ মিলিয়ন। এই শহরটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার দ্বিতীয় বৃহত্তম মূল শহর। টোকিও ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্য নিয়ে গঠিত বৃহত্তর টোকিও অঞ্চলের জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মহানগরীয় অর্থনীতি।
জাপানের ঐতিহাসিক দিক
- (১) পুরাতাত্ত্বিক গবেষণার ফলে জানা গিয়েছে যে উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগেও জাপানে জনবসতির অস্তিত্ব ছিল। জাপানের প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে রচিত চীনা ইতিহাস গ্রন্থগুলিতে।
- (২) জাপানের ইতিহাসে অন্যান্য বিভিন্ন অঞ্চলের প্রভাব দেখা যায়। এই দেশের ইতিহাসে প্রথমে চীনা সাম্রাজ্যের প্রভাব পড়েছিল। তারপর একটি বিচ্ছিন্নতার যুগ কাটিয়ে এই দেশের ইতিহাসে পড়ে পশ্চিম ইউরোপের প্রভাব।
- (৩) দ্বাদশ শতাব্দী থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত শোগুন নামের সামরিক সামন্ত-শাসকরা সম্রাট উপাধিতে জাপান শাসন করেছিলেন। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাপান এক দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার পর্যায়ে প্রবেশ করে।
- (৪) ১৮৫৩ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পাশ্চাত্যের সামনে জাপানকে খুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিলে সেই বিচ্ছিন্নতার যুগের অবসান ঘটে। প্রায় দুই দশক আভ্যন্তরিণ বিবাদ ও বিদ্রোহ চলার পর ১৮৬৮ সালে মেইজি সম্রাট রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হন এবং জাপান সাম্রাজ্য ঘোষিত হয়। এই সাম্রাজ্যে সম্রাট জাতির দিব্য প্রতীকের সম্মান পান।
- (৫) উনিশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং বিশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাপান প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ, রুশ-জাপান যুদ্ধ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এ জয়লাভ করে। এই ক্রমবর্ধমান সামরিক যুগে জাপান নিজ সাম্রাজ্যের পরিধি বিস্তৃত করে।
- (৬) ১৯৩৭ সালের দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ ১৯৪১ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি বর্ধিত অংশে পরিণত হয়। ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়।
- (৭) ১৯৪৭ সালে সংশোধিত সংবিধান গ্রহণের পর জাপান একটি এককেন্দ্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত হয়। এই ব্যবস্থায় সম্রাটের পাশাপাশি কোক্কাই নামে একটি নির্বাচিত আইনসভাও গঠিত হয়।
জাপানের ভৌগোলিক দিক
- (১) জাপান ভূখণ্ডের ৭৩ শতাংশই বনভূমি, পার্বত্য অঞ্চল এবং কৃষি, শিল্প বা গৃহনির্মাণের অনুপযোগী। এই কারণে উপকূলীয় জনবসতি অঞ্চলগুলি অত্যন্ত ঘন বসতিপূর্ণ। জাপান বিশ্বের সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ দেশগুলির অন্যতম।
- (২) জাপানে ১০৮টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে। বিশ শতকে আরও কয়েকটি নতুন আগ্নেয়গিরির উদ্ভব হয়। এই দেশে প্রতি শতাব্দীতেই বিধ্বংসী ভূমিকম্প এবং তার ফলে সুনামি ঘটে থাকে।
- (৩) প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলায় অবস্থিত হওয়ার কারণে জাপানে প্রায়শই ভূমিকম্প ও সুনামির ঘটনা ঘটে। উন্নত বিশ্বের মধ্যে জাপানই সর্বোচ্চ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিপদসঙ্কুল দেশ।
এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত জাপানের জলবায়ু
- (১) জাপানের জলবায়ু প্রধানত নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। তবে উত্তর থেকে দক্ষিণে জলবায়ুর মধ্যে বিরাট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। জাপানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলি ছয়টি প্রধান জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যে বিভাজিত হয়েছে।
- (২) হোক্কাইডো, জাপান সাগর, কেন্দ্রীয় উচ্চভূমি, সেতো অন্তর্দেশীয় সাগর, প্রশান্ত মহাসাগর ও র্যু ক্যু দ্বীপপুঞ্জ। সর্ব উত্তরে অবস্থিত অঞ্চল হোক্কাইডোতে আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ু দেখা যায়।
- (৩) জাপানে শীতকাল দীর্ঘ ও শীতল এবং গ্রীষ্মকাল খুব উষ্ণ থেকে শীতল। এখানে ভারি বৃষ্টিপাত দেখা যায় না। তবে দ্বীপগুলি শীতকালে গভীর তুষারের চাদরে আচ্ছাদিত হয়ে যায়।
জাপানের জীববৈচিত্র্য
- (১) জাপানে নয়টি বনাঞ্চলীয় পরিবেশ রয়েছে। এগুলিতে দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু ও ভূগোল প্রতিফলিত হয়। র্যু ক্যু ও বোনিন দ্বীপপুঞ্জে দেখা যায় ক্রান্তীয় আর্দ্র দীর্ঘপত্রী বন। প্রধান দ্বীপপুঞ্জের মনোরম জলবায়ু অঞ্চলে দেখা যায় নাতিশীতোষ্ণ দীর্ঘপত্রী ও মিশ্র বন।
- (২) উত্তরের দ্বীপপুঞ্জগুলির শীতল অঞ্চলগুলিতে দেখা যায় নাতিশীতোষ্ণ সরলবর্গীয় বন। জাপানে বন্যপ্রাণীর ৯০,০০০ প্রজাতি দেখা যায়। এগুলির মধ্যে বাদামি ভাল্লুক, জাপানি ম্যাকাক, জাপানি র্যােককুন কুকুর ও জাপানি জায়েন্ট স্যালাম্যান্ডার উল্লেখযোগ্য।
- (৩) জাপানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীগুলিকে রক্ষা করার জন্য জাপানে অনেকগুলি জাতীয় উদ্যান স্থাপিত হয়েছে। সেই সঙ্গে এই দেশে ৩৭টি রামসার জলাভূমিও রয়েছে। এগুলির অসাধারণ প্রাকৃতিক মূল্যের জন্য ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকাভুক্ত হয়েছে।
জাপানের রাজনৈতিক দিক
- (১) জাপান একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। এখানে সম্রাটের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সংবিধান তাকে “রাষ্ট্র ও জনগণের ঐক্যের প্রতীক” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রকৃত ক্ষমতা প্রধানত প্রধানমন্ত্রী ও ডায়েটের অন্যান্য নির্বাচিত সদস্যদের হাতে ন্যস্ত থাকে। দেশের সার্বভৌমত্ব জাপানি জাতির হাতে ন্যস্ত। জাপানের বর্তমান সম্রাট হলেন নারুহিতো।
- (২) জাপানের আইনবিভাগ হল ন্যাশনাল ডায়েট। এটি টোকিওর চিয়োদায় অবস্থিত। ডায়েট একটি দ্বিকক্ষীয় আইনসভা। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস কক্ষটি ৪৮০ সদস্যবিশিষ্ট। এই কক্ষের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। এই কক্ষের মেয়াদ চার বছর বা ভেঙে না দেওয়া পর্যন্ত।
- (৩) দ্বিতীয় কক্ষ হাউস অফ কাউন্সিলরসের সদস্য সংখ্যা ২৪২। এই কক্ষের সদস্যরা জনগণের ভোটে ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন। দেশের ২০ বছর বা তার বেশি বয়স্ক নাগরিকদের সার্বজনীন ভোটাধিকার স্বীকৃত। সকল নির্বাচন গোপন ব্যালটে হয়। সামাজিক উদারনৈতিক ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ জাপান ও রক্ষণশীল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ডায়েটের প্রধান দুই দল।
- (৪) জাপানের প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। সদস্যদের মধ্যে থেকে ডায়েট কর্তৃক মনোনীত হওয়ার পর সম্রাট তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীই ক্যাবিনেটের প্রধান। তিনি রাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিযুক্ত বা পদচ্যুত করতে পারেন।
- (৫) ২০১২ সালের সাধারণ নির্বাচনে এলডিপির বিপুল জয়ের পর ২৬ ডিসেম্বর ইয়োশিহিকো নোদাকে অপসৃত করে শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি দেশের ৬ষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ছয় বছরের জন্য শপথ নেন। ২০২০ সালে শারীরিক অসুস্থতার জন্য শিনজো আবে পদত্যাগ করলে ইয়োশিহিদে সুগা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত জাপানের প্রশাসনিক বিভাগ
- (১) জাপান ৪৭টি প্রিফেকচার নিয়ে গঠিত। প্রত্যেকটি প্রিফেকচারের দায়িত্বে রয়েছেন একজন নির্বাচিত গভর্নর, আইনসভা ও প্রশাসনিক আমলাতন্ত্র। প্রিফেকচারগুলি আবার মহানগর, শহর ও গ্রামে বিভক্ত।
- (২) জাপানে বর্তমানে প্রশাসনিক সংযুক্তি ও পুনর্গঠন চলছে। এর মাধ্যমে অনেক মহানগর, শহর ও গ্রাম পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এই সংযুক্তির ফলে উপ-প্রিফেকচার প্রশাসনিক অঞ্চলগুলির সংখ্যা কমবে এবং সেইসঙ্গে প্রশাসনিক খরচও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জাপানের বৈদেশিক সম্পর্ক
- (১) জাপান জি-৮, অ্যাপেক, ও আসেয়ান প্লাস থ্রির সদস্য। জাপান পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনেও অংশগ্রহণ করে থাকে। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে ভারত -এর সঙ্গে জাপান নিরাপত্তা চুক্তি সাক্ষর করেছে।
- (২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-জাপান নিরাপত্তা জোট দেশের বিদেশনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ১৯৫৬ সাল থেকে রাষ্ট্রসংঘের সদস্য হিসেবে জাপান মোট ২০ বছরের মেয়াদে রাষ্ট্রসংঘ বা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য।
- (৩) প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে বিশেষ বিশেষ অঞ্চলের অধিকার নিয়ে জাপানের বিবাদ রয়েছে। দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের দখল নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে, লিয়ানকোর্ট রকসের দখল নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের দখল নিয়ে চীন ও তাইওয়ানের সঙ্গে এবং ওকিনোতোরিশিমার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের দখল নিয়ে চীনের সঙ্গে জাপানের বিবাদ রয়েছে।
জাপানের অর্থনৈতিক দিক
জাপান জাতিসংঘ, জি-৭, জি ৮ ও জি ২০ গোষ্ঠীগুলির সদস্য। এই রাষ্ট্রটি একটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্র। নামমাত্র মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদন অনুযায়ী জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ক্রয়ক্ষমতার সাম্য অনুযায়ী চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। এছাড়া জাপান বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম রপ্তানিকারক এবং পঞ্চম বৃহত্তম আমদানিকারক রাষ্ট্র।
জাপানের সামরিক দিক
সরকারিভাবে যুদ্ধ ঘোষনার অধিকার বর্জন করলেও এই দেশটি একটি আধুনিক সামরিক বাহিনী রেখেছে। এদেশের সামরিক বাজেট বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম সামরিক বাজেট। অবশ্য জাপানের সামরিক বাহিনীর কাজ হল আত্মরক্ষা ও শান্তিরক্ষা।
উন্নত দেশ জাপান
জাপান একটি উন্নত দেশ। এখানে জীবনযাত্রার মান ও মানব উন্নয়ন সূচক উচ্চ। সারা বিশ্বের মধ্যে এই দেশে গড় আয়ু সর্বাধিক এবং শিশু মৃত্যুর হার তৃতীয় সর্বনিম্ন। দেশীয় তরবার সূচকে জাপানের স্থান প্রথম। বিশ্বশান্তি সূচকে এই রাষ্ট্রের স্থান সর্বোচ্চ।
জাপানের যোগাযোগ ব্যবস্থা
- (১) জাপানের পরিবহন ব্যবস্থা অত্যাধুনিক এবং পরিবহন অবকাঠামো ব্যয়বহুল। জাপানে সড়ক নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়। জাপানে বামহাতি ট্রাফিক পদ্ধতি প্রচলিত। বড় শহরে যাতায়াতের জন্য নির্মিত সড়কসমূহ ব্যবহারের জন্য সাধারণত টোল নেওয়া হয়।
- (২) জাপানে বেশ কয়েকটি রেলওয়ে কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। এইসব রেল কোম্পানির মধ্যে জাপান রেলওয়েস গ্রুপ, কিনটেটসু কর্পোরেশন, সেইবু রেলওয়ে, কেইও কর্পোরেশন উল্লেখযোগ্য। এইসব কোম্পানি রেল পরিবহনকে আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে।
- (৩) জাপানে ১৭৩টি বিমানবন্দর রয়েছে। সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হল হানেদা বিমানবন্দর, এটি এশিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর। জাপানের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। জাপানের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর হল নাগোয়া বন্দর।
এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত জাপানের সংস্কৃতি
- (১) জাপানিরা অনবরত বিদেশি সংস্কৃতি গ্রহণ করে, সেই সঙ্গে রয়েছে তাদের নিজেদের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দি থেকে খ্রিস্টপূর্ব নবম শতাব্দি পর্যন্ত খেয়ার মাধ্যমে ইউরোপ ও এশিয়ার সংস্কৃতি জাপানে প্রবেশ করে।
- (২) পরবর্তীতে সুই রাজবংশ ও থাং রাজবংশের প্রভাবের ফলে চীনা সংস্কৃতি জাপানে প্রবেশ করে। এরপর দশম শতাব্দিতে জাপান ও অন্যান্য পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের সাথে যোগাযোগ কম হওয়ার কারণে জাপানে আসে তাদের নিজস্ব শৈলীর সংস্কৃতি।
- (৩) ষোড়শ শতাব্দির মধ্যভাগে ইউরোপের সংস্কৃতি জাপানে প্রবেশ করে তাদের সংস্কৃতির বিরাট পতন ঘটিয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দির পরে এডো যুগে পুনরায় আস্তে আস্তে জাপানের সংস্কৃতির উন্নয়ন হতে শুরু করে। মেইজি যুগে জাপানে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি প্রবেশ করে জাপানের সংস্কৃতির বিরাট পরিবর্তন আসে।
- (৪) ১৯২০ সালের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পাশ্চাত্য সংস্কৃতি বেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পর মার্কিন সংস্কৃতির প্রভাবে জাপানিদের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে জাপানে রয়েছে ১৪টি বিশ্ব ঐতিহ্য, তারমধ্যে ১১টি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং অবশিষ্ট ৩ টি প্রাকৃতিক ঐতিহ্য।
জাপানের ধর্ম
- (১) জাপানের প্রধান দুইটি ধর্ম হল শিন্তো ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম। প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের প্রাচীন উপাসনার বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী শিন্তো ধর্মের ভিত্তি। শিন্তো ধর্মে মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে কিছু বলা নেই বলে বৌদ্ধ ধর্ম ও শিন্তো ধর্ম বহু যুগ ধরে জাপানে সহাবস্থান করেছে।
- (২) অনেক ক্ষেত্রে শিন্তো উপাসনালয় এবং বৌদ্ধ মন্দিরগুলি প্রশাসনিকভাবে সংযুক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানেও বহু জাপানি দুই ধর্মই সমানভাবে অনুসরণ করে। শিন্তো ধর্ম ষোড়শ থেকে উনিশ শতকে বিস্তার লাভ করে। ষষ্ঠ শতকের পর থেকে বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তার লাভ করে।
জাপানের খেলাধূলা
এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত জাপানের জাতীয় খেলা হল সুমো এবং জুডো।
উপসংহার:- ১৮৫৪ সালের ৩১ মার্চ কমোডোর ম্যাথু পেরি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনী কানাগাওয়া সম্মেলনে জাপানকে বহির্বিশ্বের কাছে দ্বার উন্মুক্ত করতে বাধ্য করে। শোগুনের পদত্যাগের ফলে বোশিন যুদ্ধ শুরু হয় এবং সম্রাটের অধীনে নামমাত্র ঐক্যবদ্ধ কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র গঠিত হয়। বর্তমানে জাপান একটি সার্বভৌম দেশ।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “জাপান” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) জাপান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
টোকিও।
জাপানি।
নারুহিতো।
ফুমিও কিশিদা।
শিন্তো ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম।