আজ সনাতন ধর্মের আদি উৎস ঋগ্বেদ -এর স্তর, ভাষা, রচনাকাল, সূক্ত, মন্ত্র, দেবতা, ঋগ্বেদে উল্লেখিত নদী, জনপদ, শাখা, ভাষ্য সম্পর্কে জানবো।
সনাতন ধর্মের আদি উৎস ঋগ্বেদ প্রসঙ্গে ঋগ্বেদে সনাতন ধর্মের মূল পাঠ, ঋগ্বেদের চারটি স্তর, ঋগ্বেদের মূল অংশ, ঋগ্বেদের ভাষা, ঋগ্বেদের রচনাকাল, ঋগ্বেদের রচয়িতা ঋষি, বর্তমানেও ব্যবহৃত ধর্মগ্ৰন্থ ঋগ্বেদ, ঋগ্বেদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, লৌহ যুগে ঋগ্বেদের সংকলন, ঋগ্বেদের মণ্ডল, ঋগ্বেদের সূক্ত, ঋগ্বেদের মন্ত্র বা ঋচা, ঋগ্বেদের দেবতা, ঋগ্বেদে উল্লিখিত নদী, ঋগ্বেদে বর্ণিত দশ রাজার যুদ্ধ, ঋগ্বেদে বিশ ও জন-এর উল্লেখ, ঋগ্বেদে জনপদের উল্লেখ, ঋগ্বেদে প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ, ঋগ্বেদে ভীষকের উল্লেখ, ঋগ্বেদের শাখা, ঋগ্বেদের আধুনিক ভাষ্য ও ব্যাখ্যা।
প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদ
ধর্ম | সনাতন ধর্ম |
ভাষা | বৈদিক সংস্কৃত |
যুগ | আনুমানিক ১৫০০-১২০০ খ্রিস্টপূর্ব |
অধ্যায় | ১০ টি মণ্ডল |
ভূমিকা :- প্রাচীন ভারত -এর বৈদিক সংস্কৃত স্তোত্রাবলির একটি সংকলন হল ঋগ্বেদ। বেদ -এর চারটি খণ্ড হল ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ।
সনাতন ধর্মের মূল পাঠ ঋগ্বেদ
ঋগ্বেদ সনাতন ধর্মের আদি উৎস। এটি বিশ্বের প্রথম গ্রন্থগুলির মধ্যে একটি, যা আজ পর্যন্ত কোনো না কোনো ভাবে সমাজে টিকে আছে। এই গ্রন্থই সনাতন ধর্মের মূল পাঠ।
ঋগ্বেদের চারটি স্তর
ঋগ্বেদ গ্রন্থটির চারটি স্তর লক্ষিত হয়। – সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ্।
ঋগ্বেদের মূল অংশ
ঋগ্বেদ সংহিতা অংশটি হল এই গ্রন্থের মূল অংশ। এই অংশের দশটি মণ্ডল-এ (খণ্ড) ১০২৮টি সূক্ত (স্তোত্র) সংকলিত হয়েছে এবং সব ক’টি সূক্তে মোট মন্ত্রের সংখ্যা ১০৫৫২।
ঋক
ঋগ্বেদে মন্ত্রগুলিকে “ঋক” বলা হয়, যার নামকরণ “ঋগ্বেদ” নামের অনুসারে করা হয়েছে।
ঋগ্বেদের প্রাচীনতম অংশ
দশটি মণ্ডলের মধ্যে দ্বিতীয় থেকে নবম মণ্ডল পর্যন্ত অংশটিই প্রাচীনতম। এই অংশে সংকলিত সূক্তগুলিতে বিশ্বতত্ত্ব ও দেবতাদের স্তবস্তোত্রাদি আলোচিত হয়েছে।
ঋগ্বেদের নবীনতম অংশ
অপেক্ষাকৃত নবীনতর প্রথম ও দশম মণ্ডল দু’টির সূক্তসমূহের আলোচ্য বিষয় হল দর্শন ও অনুমানমূলক প্রশ্নাবলি, সমাজে দানের মতো সদ্গুণাবলি, মহাবিশ্বের উৎপত্তি-সংক্রান্ত প্রশ্নাবলি এবং ঈশ্বরের প্রকৃতি।
ঋগ্বেদের ভাষা
ঋগ্বেদ হল বৈদিক সংস্কৃত ভাাষায় লিখিত প্রাচীনতম গ্রন্থ। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দ থেকে ঋগ্বেদের ধ্বনি ও পাঠ মৌখিকভাবে পরম্পরাগতভাবে প্রচলিত ছিল।
ঋগ্বেদের রচনাকাল
সাংস্কৃতিক ভাষাতত্ত্ব ও ভাষাবিজ্ঞান-সংক্রান্ত ইঙ্গিত থেকে বলা হয় যে, ঋগ্বেদ সংহিতার বৃহদংশ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে (বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চলে) রচিত হয়েছিল।
বর্তমানেও ব্যবহৃত ধর্মগ্ৰন্থ ঋগ্বেদ
ঋগ্বেদের কয়েকটি ঋক ও সূক্ত হিন্দু সামাজিক অনুষ্ঠান (বিবাহ) ও প্রার্থনার সময় পঠিত হয়। এই কারণে ঋগ্বেদ সম্ভবত পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ যা এখনও ব্যবহৃত হয়ে চলেছে।
ঋগ্বেদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব
ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই বইটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইরানি আবেস্তার স্তোত্রগুলি ঋগ্বেদের শ্লোকের অনুরূপ রয়েছে, যা অগ্নি, বায়ু, জল, সোম ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ভারতীয় দেবতার বর্ণনা করে।
লৌহযুগে ঋগ্বেদের সংকলন
ঋগ্বেদের যে পাঠটি আজ পাওয়া যায় সেটির মূল ভিত্তি লৌহ যুগ -এর একটি সংকলন। এই পাঠটি দশটি মন্ডলে বিভক্ত, যা বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন দৈর্ঘ্যে লেখা হয়।
ঋগ্বেদের মণ্ডল
ঋগ্বেদে মোট দশটি মণ্ডল আছে। এর মধ্যে কিছু মণ্ডল ছোট আবার কিছু বড়। কতগুলো সূক্ত মিলে মণ্ডল গঠিত হয়।
ঋগ্বেদের সূক্ত
সমগ্র ঋগ্বেদে ১০২৮ টি সূক্ত আছে। কতকগুলি মন্ত্র নিয়ে সূক্ত গঠিত হয়।
ঋগ্বেদের মন্ত্র বা ঋচা
প্রতিটি সুক্তে আছে মন্ত্র বা স্তোত্র বা ঋচা। সমগ্র ঋগ্বেদে মোট ১০৫৮০টি স্তোত্র রয়েছে।
ঋগ্বেদের দেবতা
ঋগ্বেদে তেত্রিশ প্রকার দেবতার উল্লেখ আছে। এই বেদে সূর্য, অগ্নি, ঊষা ও অদিতির মতো দেবতাদের বর্ণনা করা হয়েছে। ইন্দ্রকে সর্বমাত্য এবং সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঋগ্বেদে ইন্দ্রের প্রশংসায় ২৫০টি মন্ত্র আছে।
ঋগ্বেদে নদীর উল্লেখ
এই বেদে প্রায় ২৫টি নদীর কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী সিন্ধু। সরস্বতীকে সবচেয়ে পবিত্র নদী হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং গঙ্গা একবার ও যমুনা তিনবার ব্যবহার করা হয়েছে।
ঋগ্বেদে বর্ণিত দশ রাজার যুদ্ধ
এই বেদের সপ্তম মণ্ডলে সুদাস এবং দশজন রাজার মধ্যে যুদ্ধের (দশ রাজার যুদ্ধ) বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেটি পারুষ্নি (রাভি) নদীর তীরে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে সুদাস বিজয়ী হয়।
ঋগ্বেদে বিশ ও জনের উল্লেখ
প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদে বহু গ্রামের সমষ্টিকে ‘বিশ’ এবং বহু বিশের সমষ্টিকে ‘জন’ বলা হয়েছে। ঋগ্বেদে ‘জন’ ২৭৫ বার এবং ‘বিশ’ ১৭০ বার উল্লেখ করা হয়েছে।
ঋগ্বেদে জনপদ উল্লেখ
প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদে ‘জনপদ’ একটি বৃহৎ প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে একবারই উল্লেখ করা হয়েছে। জনগণের প্রধানকে বলা হত ‘রাজন’ বা রাজা।
ঋগ্বেদে প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ
‘বিদথ’ ছিল প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। ঋগ্বেদে ১২২ বার এর উল্লেখ করা হয়েছে। ‘সমিতি’ ৯ বার এবং ‘সভা’ ৮ বার উল্লেখ করা হয়েছে।
ঋগ্বেদে ভীষকের উল্লেখ
এই বেদে ‘ভীষক’কে দেবতাদের ডাক্তার বলা হয়েছে।
ঋগ্বেদের শাখা
ঋক্ বেদের ২১টি শাখার মধ্যে বর্ণিত প্রধান পাঁচটি শাখা হল শাকল, বাষ্কল, অশ্বলায়ন, শাংখায়ন, মাণ্ডুকায়ন।
ঋগ্বেদের ভাষ্য
প্রাচীনতম ভাষ্য কে লিখেছেন তা বলা মুশকিল, তবে সবচেয়ে বিখ্যাত উপলব্ধ প্রাচীন ভাষ্য হল সায়ণাচার্যের। এছাড়াও স্কন্দ স্বামী, মাধব ভট্ট, বেঙ্কট মাধব, ধানুষ্কায়জ্বা, আনন্দতীর্থ, আত্মানন্দ ঋগ্বেদের ভাষ্য রচনা করেন।
ঋগ্বেদের আধুনিক ভাষ্য ও ব্যাখ্যা
আধুনিক যুগে ঋগ্বেদ বোঝার জন্য স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী রচিত “ঋগ্বেদভাষ্যভূমিকা” -র নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ঋগ্বেদ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) ঋগ্বেদ হতে জিজ্ঞাস্য?
ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ।
ঋগ্বেদ।
ইন্দ্র।