আজ যজুর্বেদ -এর ভাষা, রচনাকাল, বিভাগ, প্রাচীনতম থেকে নবীনতম অংশ, মন্ত্র, অর্থ, শাখা, মন্ত্রসমূহের গঠন, গুরুত্ব প্রভৃতি সম্পর্কে জানবো।
বেদের অন্যতম অংশ যজুর্বেদ প্রসঙ্গে যজুর্বেদের ভাষা, যজুর্বেদের রচনাকাল, যজুর্বেদের বিভাগ – কৃষ্ণ যজুর্বেদ, শুক্ল যজুর্বেদ, যজুর্বেদের প্রাচীনতম অংশ, যজুর্বেদের মধ্যবর্তী অংশ, যজুর্বেদের নবীনতম অংশ, যজুর্বেদের আলোচ্য মন্ত্র, যজুর্বেদের অর্থ, যজুর্বেদের শাখা, যজুর্বেদের তৈত্তিরিয় সংহিতা, দক্ষিণ ভারতে কৃষ্ণ যজুর্বেদের প্রচলন, যজুর্বেদের মন্ত্র সমূহের গঠন, যজুর্বেদের শাখা শতপথ ব্রাহ্মণ, যজুর্বেদের উপনিষদ, যজুর্বেদের যুগে যজ্ঞানুষ্ঠানের প্রাধান্য বিস্তার ও যজুর্বেদের গুরুত্ব।
তৃতীয় বেদ যজুর্বেদ
পরিচিতি | চতুর্বেদের তৃতীয় বেদ |
রচনাকাল | আনুমানিক ১২০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্ব |
বিষয় | যাগযজ্ঞের নিয়মকানুন |
খণ্ড | ২ টি (কৃষ্ণ যজুর্বেদ ও শুক্ল যজুর্বেদ) |
ভূমিকা :- চার বেদের তৃতীয় যজুর্বেদ হল গদ্য মন্ত্রসমূহের বেদ। যজ্ঞের আগুনে পুরোহিতের আহুতি দেওয়ার ও ব্যক্তিবিশেষের পালনীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলির পদ্ধতি এই গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।
যজুর্বেদের ভাষা
যজুর্বেদ বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ।
যজুর্বেদের রচনাকাল
ঠিক কোন সময়ে যজুর্বেদ সংকলিত হয়েছিল তা জানা যায় না। তবে গবেষকদের মতে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ থেকে ১০০০ অব্দ নাগাদ, অর্থাৎ সামবেদ ও অথর্ববেদ সংকলনের সমসাময়িক কালে এই বেদও সংকলিত হয়।
যজুর্বেদের বিভাগ
যজুর্বেদ দুটি খণ্ডে বিভক্ত। কৃষ্ণ যজুর্বেদ ও শুক্ল যজুর্বেদ। ‘কৃষ্ণ’ শব্দের অর্থ ‘অবিন্যস্ত, অস্পষ্ট ও বিক্ষিপ্তরূপে সংকলিত’। অন্যদিকে ‘শুক্ল’ শব্দের অর্থ ‘সুবিন্যস্ত ও স্পষ্ট।’ কৃষ্ণ যজুর্বেদের চারটি ও শুক্ল যজুর্বেদের দুটি শাখা আধুনিক যুগে বর্তমান।
যজুর্বেদের প্রাচীনতম অংশ
যজুর্বেদ সংহিতার আদি ও প্রাচীনতম অংশটিতে ১৯৭৫টি মন্ত্র আছে। এগুলি ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলির ভিত্তিতে গ্রথিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ঋগ্বেদ থেকে গৃহীত। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ঋগ্বেদ থেকে স্বতন্ত্র।
যজুর্বেদের মধ্যবর্তী অংশ
যজুর্বেদের মধ্যবর্তী অংশে আছে বৈদিক সাহিত্য -এর দীর্ঘতম ব্রাহ্মণ শাস্ত্র শতপথ ব্রাহ্মণ।
তৃতীয় বেদ যজুর্বেদের নবীনতম অংশ
যজুর্বেদের নবীনতম অংশে আছে একাধিক প্রধান উপনিষদ। এগুলি হল বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ঈশ উপনিষদ, তৈত্তিরীয় উপনিষদ, কঠ উপনিষদ, শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদ ও মৈত্রী উপনিষদ।
যজুর্বেদের আলোচ্য মন্ত্র
যজ্ঞের আগুনে আহুতি দেওয়ার পদ্ধতি ও মন্ত্রগুলি যজুর্বেদে আলোচিত হয়েছে। সাধারণত যজ্ঞের আগুনে ঘি, শস্য, সুগন্ধী বীজ ও গোদুগ্ধ আহুতি দেওয়া হয়।
যজুর্বেদের অর্থ
‘যজুর্বেদ’ শব্দটি সংস্কৃত ‘যজুস্’ ও ‘বেদ’ শব্দদুটি থেকে এসেছে।
- (১) মনিয়ার-উইলিয়ামসের মতে, ‘যজুস্’ শব্দের অর্থ ধর্মানুশীলন, শ্রদ্ধানিবেদন, পূজা, যজ্ঞ, যজ্ঞে উচ্চারিত প্রার্থনা, পদ্ধতি, যজ্ঞের সময় অদ্ভুতভাবে উচ্চারিত নির্দিষ্ট মন্ত্র। ‘বেদ’ শব্দের অর্থ “জ্ঞান”।
- (২) জনসনের মতে, ‘যজুস্’ শব্দের অর্থ “যজুর্বেদে সংকলিত (প্রধানত) গদ্যে রচিত পদ্ধতি বা মন্ত্র, যেগুলি গোপনে উক্ত হয়।”
- (৩) মাইকেল উইটজেল ‘যজুর্বেদ’ শব্দটির অর্থ করেছেন, বৈদিক ক্রিয়াকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত “গদ্য মন্ত্রের জ্ঞানমূলক গ্রন্থ।”
তৃতীয় বেদ যজুর্বেদের শাখা
যজুর্বেদের অন্তর্গত শুক্ল যজুর্বেদের ১৬টি শাখার মধ্যে মধ্যণ্ডিন ও কান্ব – এই দুটি শাখাই এখন বর্তমান। কৃষ্ণ যজুর্বেদের সম্ভবত আনুমানিক প্রায় ৮৬টি শাখা ছিল, এর মধ্যে চারটি শাখা এখন বর্তমান।
যজুর্বেদের শাখা শুক্ল যজুর্বেদ
শুক্ল যজুর্বেদের সংহিতাটিকে বলা হয় বাজসনেয়ী সংহিতা। ‘বাজসনেয়ী’ শব্দটি এসেছে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের পৈত্রিক নাম ‘বাজসনেয়’ থেকে। যাজ্ঞবক্ল্য ছিলেন বাজসনেয়ী শাখার প্রতিষ্ঠাতা।
যজুর্বেদের শাখা কৃষ্ণ যজুর্বেদ
কৃষ্ণ যজুর্বেদের অধুনা বর্তমান চারটি শাখা হল তৈত্তিরীয় সংহিতা, মৈত্রয়ানী সংহিতা, কঠ সংহিতা ও কপিস্থল সংহিতা।
যজুর্বেদের শাখা তৈত্তিরীয় সংহিতা
শাখাগুলির মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত ও সর্বাধিক সুসংরক্ষিত শাখাটি হল তৈত্তিরীয় সংহিতা। কোনো কোনো মতে, এই শাখাটির প্রতিষ্ঠাতা যক্ষের শিষ্য তিত্তিরি। পাণিনি এই শাখাটির উল্লেখ করেছেন।
ভারতের দক্ষিণে কৃষ্ণ যজুর্বেদের প্রচলন
দক্ষিণ ভারত -এর মন্দিরগুলিতে কৃষ্ণ যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় শাখার প্রচলন বেশী দেখা যায়।
গদ্য ও পদ্যের মিশ্রণ কৃষ্ণযজুর্বেদ
কৃষ্ণ যজুর্বেদের প্রতিটি শাখার ব্রাহ্মণ অংশটি সংহিতা অংশের সঙ্গে মিশ্রিত। ফলে এটি গদ্য ও পদ্যের একটি মিশ্র রূপের জন্ম দিয়েছে, যা এটিকে অস্পষ্ট ও অবিন্যস্ত করে রেখেছে।
তৃতীয় বেদ যজুর্বেদের মন্ত্রসমূহের গঠন
যজুর্বেদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত মন্ত্রগুলি একটি বিশেষ ধরনের ছন্দে নিবদ্ধ। এই মন্ত্রগুলি সবিতা (সূর্য), ইন্দ্র, অগ্নি, প্রজাপতি, রুদ্র ও অন্যান্যদের আবাহন ও স্তুতি করা হয়েছে।
যজুর্বেদের শাখা শতপথ ব্রাহ্মণ
‘শতপথ ব্রাহ্মণ’ শব্দটির অর্থ ‘একশো পথের ব্রাহ্মণ’। যে ব্রাহ্মণদের এখন পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে এই ব্রাহ্মণটিই দীর্ঘতম।
যজুর্বেদের ব্রাহ্মণ সম্পর্কে স্টালের মতামত
স্টালের মতে শতপথ ব্রাহ্মণ হল “অনুষ্ঠান ও অন্যান্য বিষয়ে জটিল মতামতগুলির একটি যথার্থ বিশ্বকোষ বা বিশ্বভান্ডার।”
যজুর্বেদের উপনিষদ
ছয়টি প্রধান উপনিষদ যজুর্বেদের অন্তর্গত। এই উপনিষদগুলি হল বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ঈশ উপনিষদ, তৈত্তিরীয় উপনিষদ, কঠ উপনিষদ, শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদ ও মৈত্রী উপনিষদ।
যজুর্বেদের যুগে যজ্ঞানুষ্ঠানের প্রাধান্য বিস্তার
যজুর্বেদের যুগে ঋত্বিকদের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। ভক্তির চেয়ে যজ্ঞানুষ্ঠান সর্বস্ব হয়ে দাঁড়ায়। শুক্লযজুর্বেদের ষোড়শ অধ্যায়ে রুদ্রদেবতা একাধারে ভয়ংকর ও কল্যাণকর এবং সংহারক ও পালক।
ব্রাহ্মণ সাহিত্যের জনক কৃষ্ণ যজুর্বেদ
কৃষ্ণযজুর্বেদকে ব্রাহ্মণ সাহিত্যের জনক বলা হয়।
যজুর্বেদের গুরুত্ব
যজুর্বেদের সাহিত্যিক মূল্য না থাকলেও ধর্ম সম্বন্ধে গবেষণায়, মন্ত্র ও প্রার্থনাদির উৎপত্তি, তাৎপর্য এবং ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রের আলোচনায় এই বেদের চর্চা অপরিহার্য। এই বেদে বর্ণিত ‘পিণ্ডপিতৃযজ্ঞ’ পরবর্তীতে পিতৃশ্রাদ্ধাদিরূপে পরিণত হয়েছে।
উপসংহার :- যজুর্বেদের সময় থেকেই বর্ণভেদ ক্রমশঃ কঠোর হতে থাকে। আর্যরা অনার্য নারীদের বিবাহ করতেন। কৃষি সম্পদ বৃদ্ধি ও বণ্টনের সাথে সাথে সমাজে নারীদের স্থান পুরুষদের তুলনায় হীন হতে থাকে।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “যজুর্বেদ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) যজুর্বেদ হতে জিজ্ঞাস্য?
অধ্বার্য়ু।
কৃষ্ণ যজুর্বেদ ও শুক্ল যজুর্বেদ।
যজুর্বেদের।