সুকান্ত ভট্টাচার্য

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রসঙ্গে সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম, সুকান্ত ভট্টাচার্যের পিতামাতা, সুকান্ত ভট্টাচার্যের পারিবারিক ইতিহাস, সুকান্ত ভট্টাচার্যের শৈশব, সুকান্ত ভট্টাচার্যের শিক্ষা জীবন, সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখালেখির সূচনা, সুকান্ত ভট্টাচার্যের প্রথম কবিতা, সুকান্ত ভট্টাচার্যের পত্রিকা প্রকাশ, সুকান্ত ভট্টাচার্যের কর্মজীবন, গল্পদাদুর আসরে সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকান্ত ভট্টাচার্যের বহুমুখী প্রতিভা, রাজনীতি ও সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকান্ত ভট্টাচার্যের রচনা বৈশিষ্ট্য, সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যগ্ৰন্থ, সুকান্ত ভট্টাচার্যের গ্ৰন্থতালিকা ও সুকান্ত ভট্টাচার্যের মৃত্যু।

বাংলা সাহিত্যে মার্কসবাদী ধারায় বিশ্বাসী সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রসঙ্গে তরুণ বাঙালি কবি ও নাট্যকার সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছেলেবেলা, সুকান্ত ভট্টাচার্যের শিক্ষা, সুকান্ত ভট্টাচার্যের কর্মজীবন, সুকান্ত ভট্টাচার্যের রচনাবলী, সুকান্ত ভট্টাচার্যের উপাধি লাভ ও কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মৃত্যু সম্পর্কে জানব।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য

ঐতিহাসিক চরিত্রসুকান্ত ভট্টাচার্য
জন্ম১৫ আগস্ট ১৯২৬ খ্রি
জন্মস্থানকলকাতা
পিতানিবারণ চন্দ্র ভট্টাচাৰ্য 
মাতাসুনীতি দেবী
পেশাকবি, সাহিত্যিক
উল্লেখযোগ্য রচনাছাড়পত্র, পূর্বাভাস, ঘুম নেই
মৃত্যু১৩ মে ১৯৪৭ খ্রি
সুকান্ত ভট্টাচার্য

ভূমিকা :- কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন একজন তরুণ বাঙালি কবি এবং একই সাথে নাট্যকার। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ও প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাবতেন কৃষক, শ্রমিক ও সর্বহারাদের কথা। খুব কাছ থেকে তিনি দেখেছেন সাধারণ মানুষের দুর্বিষহ জীবন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকাজী নজরুল ইসলাম-এর মত, আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম

১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ই আগস্ট কলকাতার কালীঘাটে দাদুর বাড়িতে কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য জন্মগ্ৰহণ করেন।

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পরিবার

নাট্যকার ও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বাবা নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্য ছিলেন সারস্বতনামক একটি প্রকাশক ও লাইব্রেরীর মালিক। মা সুনীতি দেবী ছিলেন গৃহিণী। তিনি তার মা বাবার সাত পুত্রের মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয়। মনোমোহন, সুশীল, প্রশান্ত, বিভাস, অশোক এবং অমিয় ছিলেন অন্য ছয় পুত্র। মনোমোহন ছিলেন নিবারণ ভট্টাচার্যের প্রথম বিবাহের জ্যেষ্ঠ পুত্র। সুকান্ত মনোমোহন ও তাঁর স্ত্রী সরযূ দেবীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তাদের পরিবারেরই সন্তান পশ্চিমবঙ্গ-এর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

সুকান্ত ভট্টাচার্যের পারিবারিক ইতিহাস

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পরিবার ছিল আধুনিক বাংলাদেশ-এর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া গ্রামে। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ভাগ্যের সন্ধানে কলকাতায় এসে বেলেঘাটা এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। জাজন-জাজন ছিল পারিবারিক বৃত্তি।

নাট্যকার সুকান্ত ভট্টাচার্যের শৈশব

তার পরিবার আধুনিক বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া গ্রামে হলেও সুকান্ত তার শৈশব কাটিয়েছেন বাগবাজারের নিবেদিতা লেনে, তাদের বাড়িতে।

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সুকান্ত ভট্টাচার্যকে কলকাতার বেলেঘাটা নামক একটি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (কমলা বিদ্যামন্দির) ভর্তি করা হয়। তিনি শীঘ্রই একজন প্রতিভাধর ছাত্র হয়ে ওঠেন। শিক্ষকদের কাছে পছন্দের ছাত্র হয়ে উঠেছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। তিনি প্রচুর ছড়ার বই পড়তেন এবং মায়ের কাছে রামায়ণ ও মহাভারত পড়তেন। ১৯৪৫ সালে বেলেঘাটা দেশবন্ধু উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অংশগ্রহণ করে তিনি ব্যর্থ হন। তিনি যখন স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়েন। তিনি ছাত্রদের বিভিন্ন ধরনের লেখা ও ছবি নিয়ে একটি হাতে লেখা ম্যাগাজিন শুরু করেন যার নাম ছিল ‘সপ্তমিকা’। এইসব দেখে শিক্ষকরা বিশেষ করে সুকান্তের সাহিত্যকর্মকে উৎসাহিত করতেন।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখালেখির সূচনা

তার প্রথম ছোটগল্প প্রকাশিত হয় স্কুলের ছাত্র পত্রিকা সঞ্চয়-এ। পরবর্তীতে বিজন ভট্টাচার্য সম্পাদিত শিখা পত্রিকায় তাঁর আরেকটি গদ্য রচনা “বিবেকানন্দর জীবনী” প্রকাশিত হয়েছিল। সুকান্তের বয়স যখন মাত্র দশ বা এগারো বছর তখন ‘রাখাল ছেলে’ নামে একটি রূপক গান রচনা করেন। তিনি মধুমালতী এবং সূর্যপ্রনাম নামে দুটি গীতিমূলক কাব্য রচনা করেছিলেন।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত প্রথম কবিতা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই সুকান্ত কবিতা ছড়া লিখতে আরম্ভ করেন। সেই সময় তিনি ‘সঞ্চয়’ নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশ করেন। তাঁর লেখা কবিতা ওই সময় ‘শিখা’ নামে একটি পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছিল। ছাপাঅক্ষরে তার প্রথম প্রকাশিত রচনা ‘বিবেকানন্দের জীবনী’ প্রকাশিত হয়েছিল শিখা পত্রিকায়।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের গীতিচিত্র রচনা

নাট্যকার ও কবি সুকান্তের বয়স যখন মাত্র দশ-এগারাে বছর তখন ‘রাখাল ছেলে ’নামক একটি রূপক গীতি চিত্র রচনা করেন। এছাড়াও ‘মধুমালতী’ ও ‘সূর্যপ্রণাম‘ নামে দুটি গীতিচিত্রও রচনা করেছিলেন তিনি।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পত্রিকা প্রকাশ

বেলেঘাটা দেশবন্ধু হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় সুকান্ত ছাত্রদের লেখা ও ছবি নিয়ে হাতে লেখা একটি পত্রিকা বার করেন তার নাম ছিল ‘সপ্তমিকা‘। শিক্ষকেরা সুকান্তের সাহিত্য সাধনায় বিশেষ উৎসাহ দান করতেন। এর মধ্যে সুকান্ত ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টিতে যােগ দেন। সুকান্তের সাহিত্য সাধনায় দারুণ অনুরাগ ছিল। তার মধ্যেই তিনি নানা সমাজসেবামূলক কাজে হাত দিয়েছিলেন। ছােট ছােট ছেলেমেয়েদের কোচিং ক্লাস খুলে পড়াতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর সময় বিভীষিকাময় বিভ্রান্ত জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে সুকান্ত অনেক গান রচনা করেন।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের কর্মজীবন

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কমিউনিস্ট পার্টির কাগজ বিক্রি করতেন। এই কাগজ বিক্রি করতে গিয়ে অনেক বিপদে পড়েন তিনি। এই সময়ই তার সত্যিকারের কবি জীবন শুরু হয়। ভারতবর্ষ তখন পরাধীন। দেশের মানুষের দুঃখদুর্দশা ও অপমান বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন –

“অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি।

জন্মেই দেখি ক্ষুদ্ধ স্বদেশ ভূমি।।

এ দেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম।

অবাক পৃথিবী! সেলাম তোমাকে সেলাম।।”

এইসময় শুধু যুদ্ধ নয়, মানুষের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠল ব্রিটিশ সরকার ও তৎকালীন কিছু ধনী সমাজের সৃষ্ট অত্যাচারে। তার সাথে ছিল ঝড়, বন্যা ও পঞ্চাশের মহামারী। হাজার হাজার অসহায় মানুষ না খেতে পেয়ে রাস্তায় মারা গেল। ব্রিটিশ সরকার তাদের দিকে ফিরেও তাকায় নি। সেই সময় সুকান্তের কলম ঝলসে উঠল। তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে লিখলেন –

   “শােনরে মালিক, শােনরে মজুতদার

   তােদের প্রাসাদে জমা হলাে কত মৃত মানুষের হাড়

    আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই

    স্বজন হারানাে শশ্মশানে তোদের চিতা

     আমি তুলবই।”

বাঙালি কবি সুকান্ত তার সংক্ষিপ্ত জীবনকালের মধ্যে যা দেশকে দিয়ে গেছেন তা আজ সকলের কাছেই বিস্ময়। কিছুদিনের মধ্যে কিশাের বাহিনী নামে এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলেন। অনেক ছেলেমেয়ে এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য হয়েছিল। সুকান্ত এইসব ছেলেমেয়েদের স্বাধীনতার আদর্শে ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

কমিউনিস্ট পার্টির দৈনিক পত্রিকা ছিল ‘স্বাধীনতা‘। এই পত্রিকায় কিশাের সভা বিভাগের সম্পাদক ছিলেন সুকান্ত। কিশাের সভার সব ছড়াগুলিই ছিল সুকান্তের লেখা। সুকান্তের লেখা গান ‘রানার’ আমাদের সুপরিচিত। তিনি শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনে নিজেকে সামিল করেছিলেন। সুকান্তের ‘বিদ্রোহ’ কবিতাটি পড়ে আজও অনেকে অনুপ্রাণিত হন।

গল্পদাদুর আসরে সুকান্ত ভট্টাচার্য

১৯৪১ সালে সুকান্ত ভট্টাচার্য কলকাতা রেডিওর গল্পদাদুর আসরে যোগদান করেন৷ সেখানে প্রথমে তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন৷ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর সেই আসরেই নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে তাকে শ্রদ্ধা জানান৷ গল্পদাদুর আসরের জন্য সেই বয়সেই তার লেখা গান মনোনীত হয়েছিল। তার রচিত সেই গান সুর দিয়ে গেয়েছিলেন সেকালের অন্যতম সেরা গায়ক পঙ্কজ মল্লিক৷

সুকান্ত ভট্টাচার্যের বহুমুখী প্রতিভা

কবি সুকান্তকে আমরা কবি হিসেবেই জানি৷ কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যেমন কেবল মাত্র কবি ছিলেন না, সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে তার ছিলো অবাধ বিচরণ৷ তেমনি সুকান্তও ঐ বয়সেই লিখেছিলেন কবিতা ছাড়াও, গান, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ৷

ছন্দ প্রয়োগে অনবদ্য সুকান্ত ভট্টাচার্য

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছন্দ ও আবৃত্তি’ প্রবন্ধটি পাঠেই বেশ বোঝা যায় ঐ বয়সেই তিনি বাংলা ছন্দের প্রায়োগিক দিকটিই শুধু আয়ত্বে আনেন নি, সে নিয়ে ভালো তাত্ত্বিক দক্ষতাও অর্জন করেছিলেন৷

রাজনীতি ও সুকান্ত ভট্টাচার্য

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পঞ্চাশের মম্বন্তর (১৯৪৩), ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন৷ ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন৷ সেই বছর আকাল নামক একটি সংকলনগ্রন্থ তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়৷ কৈশোর থেকেই সুকান্ত যুক্ত হয়েছিলেন সাম্যবাদী রাজনীতির সঙ্গে৷ পরাধীন দেশের দুঃখ দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণ মুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন, শোষিত মানুষের কর্ম জীবন এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম তার কবিতার মূল প্রেরণা৷

সুকান্ত ভট্টাচার্যের রচনা বৈশিষ্ট্য

কবি সুকান্তের কবিতা বিষয়বৈচিত্র্যে ও লৈখিক দক্ষতায় অনন্য৷ সাধারণ বস্তুকেও তিনি কবিতার বিষয় করেছেন৷ বাড়ির রেলিং, ভাঙা সিঁড়ি উঠে এসেছে তার কবিতায়৷ সুকান্তের কবিতা সব ধরনের বাধা-বিপত্তিকে জয় করতে শেখায়৷ যাপিত জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণাকে মোকাবিলা করার সাহস সুকান্তের কবিতা থেকে পাওয়া যায়৷ তারুণ্যের শক্তি দিয়ে উন্নত শিরে মানুষের মর্যাদার জন্য মানুষকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান সুকান্তের কবিতায় পরিলক্ষিত হয়৷ সুকান্তের কবিতা সাহসী করে, উদ্দীপ্ত করে৷ তার বক্তব্যপ্রধান সাম্যবাদী রচনা মানুষকে জীবনের সন্ধান বলে দেয়৷

বাঙালি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যগ্ৰন্থ

মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত ভট্টাচার্য কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান দখল করে নিয়েছেন ৷ তার কবিতায় অনাচার ও বৈষ্যমের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ পাঠকদের সংকচিত করে তোলে৷ গণমানুষের প্রতি গভীর মমতা প্রকাশ ঘটেছে তার কবিতায়৷ তার রচনাবলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল ‘ছাড়পত্র’ (১৯৪৭), ‘পূর্বাভাস’ (১৯৫০), ‘মিঠেকড়া’ (১৯৫১), ‘অভিযান’ (১৯৫৩), ‘ঘুম নেই’ (১৯৫৪), ‘হরতাল’ (১৯৬২), ‘গীতিগুচ্ছ’ (১৯৬৫) প্রভৃতি৷ পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তার রচনাবলি প্রকাশিত হয়৷ সুকান্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পিসঙ্ঘের পক্ষে ‘আকাল’ (১৯৪৪) নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন৷

সুকান্ত ভট্টাচার্যের গ্ৰন্থতালিকা

ছাড়পত্র, আগামী, রবীন্দ্রনাথের প্রতি, চারাগাছ, খবর, ইউরোপ-এর উদ্দেশ্যে, প্রস্তুত, প্রার্থী, একটি মোরগের কাহিনী, সিঁড়ি, কলম, দুরাশা মৃত্যু, আগ্নেয়গিরি, ঠিকানা, লেনিন, অনুভব, কাশ্মীর, সিগারেট, দেশলাই কাঠি, বিরতি, চিল, চট্টগ্রামঃ ১৯৪৩, মধ্যবিত্ত’৪২, সেপ্টেম্বর’৪৬, ঐতিহাসিক, শত্রু এক, মজুরদের ঝড় (ল্যাংস্টন হিউজ), ডাক, বোধন, রানার, মৃত্যুজয়ী গান, কনভয়, ফসলের ডাকঃ১৩৫১, কৃষকের গান, এই নবান্নে, আঠারো বছর বয়স, হে মহাজীবন, ঘুম নেই (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), শুরুতেই, বিক্ষোভ, পয়লা মে-র কবিতাঃ১৯৪৬, পরিখা, সব্যসাচী, উদ্বীক্ষণ, বিদ্রোহের গান, অনন্যেপায়, অভিবাদন, জনতার মুখে ফোটে বিদ্যুৎবাণী, কবিতার খসড়া, আমরা এসেছি, একুশে নভেম্বরঃ১৯৪৬, দিন বদলের পালা, মুক্ত বীরদের প্রতি, প্রিয়তমাসু, ছুরি, সূচনা, অদ্বৈত, মণিপুর, দিকপ্রান্তে, চিরদিনের, নিভৃত (অনিশ্চিত পৃথিবীতে অরণ্যের ফুল), বৈশম্পায়ন, নিভৃত (বিষন্ন রাত প্রসন্ন দিন আনো), কবে, অলক্ষ্যে, মহাত্মাজীর প্রতি, পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশ্যে, পরিশিষ্ট, মীমাংসা, অবৈধ, ১৯৪১ সাল, রোমঃ ১৯৪৩, জনরব, রৌদ্রের গান, দেওয়ালী, পূর্বাভাস (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), হে পৃথিবী, সহসা, স্মারক, নিবৃত্তির পূর্বে, স্বপ্নপথ, সুতরাং, বুদ্বুদমাত্র, আলো অন্ধকার, প্রতিদ্বন্দ্বী, আমার মৃত্যুর পর, স্বতঃসিদ্ধ, মুহূর্ত (ক), মুহূর্ত (খ), তরঙ্গ ভঙ্গ, আসন্ন আঁধারে, পরিবেশন, অসহ্য দিন, উদ্যোগ, পরাভব, বিভীষণের প্রতি, ঘুম ভাঙার গান, হদিশ, দেয়ালিকা, প্রথমবার্ষিকী, তারুণ্য, মৃত পৃথিবী, দূর্মর, অভিযান নাটিকা (১৩৬০ বঙ্গাব্দ), অভিযান (১৩৫০ সাল), সূর্যপ্রনাম (১৩৪৮ সাল), বইয়ের শেষে সচিত্র মঞ্চ নির্দেশনা, মিঠে-কড়া (১৯৫১), অতি কিশোরের ছড়া, এক যে ছিল, ভেজাল, গোপন খবর, জ্ঞানী, মেয়েদের পদবী, বিয়েবাড়ির মজা, রেশনকার্ড, খাদ্য-সমস্যার সমাধান, পুরানো ধাঁধা, ব্ল্যাক-মার্কেট, পৃথিবীর দিকে তাকাও, সিপাহী বিদ্রোহ, আজব লড়াই, হরতাল (১৩৬৯ বঙ্গাব্দ), লেজের কাহিনী (সোভিয়েত, শিশুসাহিত্যিক ডি বিয়াঙ্কির ‘টেইলস’ গল্পের অনুবাদ), ষাঁড়-গাধা ছাগলের কথা, দেবতাদের ভয় (ব্যাঙ্গার্থক নাটিকা), রাখাল ছেলে, গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫), আকাল (১৯৪৪)।

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মৃত্যু

একাধারে বিপ্লবী ও স্বাধীনতার আপোসহীন সংগ্রামী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন কম্যুনিস্ট পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী৷ পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে নিজের শরীরের উপর যে অত্যাচারটুকু তিনি করেন তাতে তার শরীরে প্রথমে ম্যালেরিয়া ও পরে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৩ই মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলিকাতার ১১৯ লাউডট স্ট্রিটের রেড এড কিওর হোমে মৃত্যুবরণ করেন৷

স্বল্পকালীন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন মাত্র ২১ বছরের। আর তিনি লেখালেখি করেন মাত্র ৬-৭ বছর৷ সামান্য এই সময়ে নিজেকে মানুষের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন তিনি ৷ তার রচনা পরিসরের দিক থেকে স্বল্প অথচ তা ব্যাপ্তির দিক থেকে সুদূরপ্রসারী৷

উপসংহার :- সুকান্ত ভট্টাচার্য স্বল্প সময়ের জীবনে বাংলা সাহিত্যকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, জীবনানন্দ দাশ সহ সেই সময়ের বড় বড় কবির ভিড়ে তিনি হারিয়ে যান নি৷ নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন নিজ প্রতিভা, মেধা ও মননে৷ সুকান্ত তার বয়সিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছেন তার পরিণত ভাবনায়৷ ভাবনাগত দিক দিয়ে সুকান্ত তার বয়স থেকে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন৷


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “সুকান্ত ভট্টাচার্য” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) সুকান্ত ভট্টাচার্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম কবে হয়?

১৫ আগস্ট ১৯২৬ সালে।

২. সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মস্থান কোথায়?

কলকাতা।

৩. সুকান্ত ভট্টাচার্যের পিতার নাম কী?

নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্য।

৪. সুকান্ত ভট্টাচার্যের মায়ের নাম কী?

সুনীতি দেবী।

৫. সুকান্ত ভট্টাচার্য কী কাজ করতেন?

কমিউনিস্ট পার্টির কাগজ বিক্রি করতেন।

৬. সুকান্ত ভট্টাচার্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রচনাবলী উল্লেখ কর।

‘ছাড়পত্র’ (১৯৪৭), ‘পূর্বাভাস’ (১৯৫০), ‘ঘুম নেই’ (১৯৫০)।

৭. সুকান্ত ভট্টাচার্য কী রোগে মারা যান?

টিবি রোগে।

৮. সুকান্ত ভট্টাচার্যের মৃত্যু কবে হয়?

১৯৪৭ সালে ১৩ মে।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment