বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য -এর জন্ম, বংশ পরিচয়, শিক্ষা, রাজনীতিতে যোগ, মন্ত্রীত্ব পদে দায়িত্ব, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব, সাহিত্য প্রেম, অবসর গ্রহণ, সম্মাননা ও তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানবো।

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্ম, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বংশ পরিচয়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পিতামাতার নাম, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিক্ষা জীবন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক জীবন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রীত্ব পদ, মুখ্যমন্ত্রী পদে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কৃতিত্ব, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অবসর গ্ৰহণ, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রতি সম্মাননা প্রকাশ, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবনী ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বর্তমান অবস্থা।

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

ঐতিহাসিক চরিত্রবুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
জন্ম১ মার্চ ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ
পরিচিতিপশ্চিমবঙ্গ -এর ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রী
মেয়াদ কাল৬ নভেম্বর ২০০০ – ১৩ মে ২০১১ খ্রিস্টাব্দ
পূর্বসূরীজ্যোতি বসু
উত্তরসূরীমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

ভূমিকা :- ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও বর্তমানে ভারত -এর কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) দলের পলিটব্যুরোর সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্ম

১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বংশ পরিচয়

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সেই পরিবারের এক বিখ্যাত মানুষ হলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। তিনি সম্পর্কে তার কাকা হন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিক্ষা

  • (১) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কলকাতার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে মানবিকী বিদ্যা নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন।
  • (২) ১৯৬৪ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা নিয়ে কলা শাখায় সাম্মানিক স্নাতক হন।
  • (৩) তিনি স্কুলজীবনে এন.সি.সি-তে যোগদান করেন। তাছাড়া কলেজ জীবনেও তিনি এন.সি.সি-র ক্যাডেট (নৌ শাখা) ছিলেন।

রাজনীতিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের যোগদান

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কলেজজীবনেই রাজনীতিতে যোগদান করেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন ঘটনার সাথে যুক্ত ছিলেন।

(১) মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা

তিনি পশ্চিমবঙ্গের উত্তাল খাদ্য আন্দোলনের সাথে সাথে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগদান করেন।

(২) যুব ফেডারেশনের সম্পাদক

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক হন, যা পরবর্তী কালে ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন রূপে আত্মপ্রকাশ করে।

(৩) বিধায়ক নির্বাচিত

তিনি ১৯৭৭ সালে কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৮২ সালে কংগ্রেসের প্রফুল্ল কান্তি ঘোষের কাছে ৭৮২ ভোট পরাজিত হন।

(৪) তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের দায়িত্ব

১৯৭৭-৮২ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মন্ত্রিসভায় তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই বিভাগই পরে তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ নামে পরিচিত হয়।

(৫) টানা পাঁচ বার জয়ী

তিনি ১৯৮৭ সালে তার নির্বাচনী কেন্দ্র পরিবর্তন করে যাদবপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই কেন্দ্র থেকে তিনি টানা পাঁচ বার জয়ী হন।

(৬) চূড়ান্ত পরাজয়

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি যাদবপুর কেন্দ্র থেকেই সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মণীশ গুপ্তের কাছে পরাজিত হন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

(৭) বিভিন্ন দায়িত্ব

তিনি সি. পি. আই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সি. পি. আই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সি. পি. আই (এম) পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রীত্ব পদ

রাজনৈতিক জীবনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।

  • (১) ১৯৮৭-৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, স্থানীয় শাসন, পৌর ও নগরোন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন।
  • (২) ১৯৯১-৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পুর ও নগর উন্নয়ন বিভাগের (অগ্নি নির্বাপণ পরিষেবা বাদে) ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
  • (৩) ১৯৯৪ সালে তিনি তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন।
  • (৪) ১৯৯৬ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র (আরক্ষা) বিভাগ, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
  • (৫) ১৯৯৯ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের উপ-মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
  • (৬)  ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর জ্যোতি বসু পদত্যাগ করলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
  • (৭) ২০০১ সালের ১৮ মে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গের ত্রয়োদশ বিধানসভার সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেনকরেন এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত ঐ পদে বহাল ছিলেন।

মুখ্যমন্ত্রী পদে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কৃতিত্ব

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজ্য জুড়ে শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের দিকে নজর দেন। নতুন আইটি নীতি আনয়নের পাশাপাশি রাজ্যে প্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন ঘটান।

ক্ষমতাচ্যুত বামফ্রন্ট সরকার

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কাণ্ডের জেরে ২০০৯ সালের লোকসভায় চূড়ান্ত খারাপ ফলের পর ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের কাছে ক্ষমতা হারায় বামফ্রন্ট।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাহিত্য প্রেম

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সাহিত্য প্রেমী মানুষ ছিলেন। তিনি বহু বিদেশী লেখকের লেখা, যেমন- পাবলো নেরুদা এবং গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। তছাড়া তিনি নিজেও বামপন্থা সম্বন্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অবসর গ্ৰহণ

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২০১৫ সালে রাজনৈতিক জীবন থেকে পাকাপাকিভাবে অবসর গ্ৰহণ করেন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রতি সম্মাননা প্রকাশ

২০২২ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কারে তার নাম মনোনীত হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বর্তমান অবস্থা

মুখ্যমন্ত্রীত্বের চেয়ার হারানোর পর থেকেই শারীরিক অসুস্থতা তাকে গ্রাস করতে থাকে। বর্তমানে প্রায় শয্যাশায়ী হয়েই দিন কাটছে তাঁর।

উপসংহার :- ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সত্তর শতাংশ আইটি শিল্পের উন্নয়ন ঘটান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মূলত এই কারণে উইপ্রো (Wipro) সংস্থার চেয়ারম্যান আজিম প্রেমজি তাঁকে দেশের সবথেকে দক্ষ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আখ্যা দেন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন মুখ্যমন্ত্রীর সময়কালে বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটে?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

২. বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পর কে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

৩. সুকান্ত ভট্টাচার্যের সাথে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কি সম্পর্ক ছিল?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাকা।

Leave a Comment