বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচিতি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামাতা, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষা জীবন, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবাহিত জীবন, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মজীবন, সাহিত্য জগতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মপ্রকাশ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পত্রিকা সম্পাদনা, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরস্কার লাভ ও সম্মাননা।

জনপ্রিয় বাঙালি ভারতীয় সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামাতার নাম, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষা, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ হিন্দু হোটেল, আরণ্যক, চাঁদের পাহাড় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য রচনা সম্পর্কে জানব।

লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

ঐতিহাসিক চরিত্রবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম১২ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ খ্রি
পিতামাতামহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৃণালিনী দেবী
দাম্পত্যসঙ্গীগৌরী দেবী (১৯১৭-১৮), রমা দেবী (১৯৪০-৫০)
সন্তানতারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
পেশালেখক
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিপথের পাঁচালী, অপরাজিত, চাঁদের পাহাড়
মৃত্যু১ নভেম্বর, ১৯৫০ খ্রি

ভূমিকা:- বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতি, নান্দনিকতা, নিসর্গ এবং গ্রাম্য জীবনকে কেউ যদি সবচেয়ে নিখুঁতভাবে সাহিত্যে ফুটিয়ে তুলে থাকেন, তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। চরিত্রের উপস্থাপন, অতুলনীয় গদ্য আর দৈনন্দিন জীবনকে বাস্তবিকভাবে সাহিত্যে তুলে আনা থেকে ভাষার অপরূপ উপস্থাপন সবকিছু মিলিয়ে তার লেখা বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিঃসন্দেহে বলা যায় প্রকৃতির জীবন শিল্পী, বাংলা কথা সাহিত্যের ব্যাপ্তিতে যার তুলনা পাওয়া ভার।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচিতি

একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক ছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম

পশ্চিমবঙ্গ -এর উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া-মুরাতিপুর গ্রামে নিজের মামার বাড়িতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামাতা

প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তার পিতা। পাণ্ডিত্য এবং কথকতার জন্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতা শাস্ত্রী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। তার মায়ের নাম মৃণালিনী দেবী।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার

উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বনগাঁ’র নিকটে বারাকপুর গ্রামে তার পৈতৃক নিবাস ছিল। তবে তাদের আদি বাড়ি ছিল উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত পানিতর গ্রামে৷ তার প্রপিতামহ ছিলেন কবিরাজ। তিনি বনগাঁর নিকট বারাকপুর গ্রামে কবিরাজি করতে আসতেন৷

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষা জীবন

পিতার কাছেই বিভূতিভূষণের পড়ালেখায় হাতেখড়ি হয়। এরপর তিনি নিজের গ্রাম এবং অন্য গ্রামের কয়েকটি পাঠশালায় পড়াশোনা করেন। তারপর বনগ্রাম উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি খুব মেধাবী ছিলেন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স এবং ১৯১৬ সালে কলকাতা’র রিপন কলেজ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৮ সালে ওই কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষাতেও ডিস্টিংশনসহ পাশ করেন। এরপর তিনি এমএ ও আইন বিষয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু এরপর তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবাহিত জীবন

হুগলী জেলার জাঙ্গীপাড়ায় দ্বারকানাথ হাইস্কুলে পড়ানোর সময় ১৯১৯ সালে বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা গৌরী দেবীর সাথে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবাহ হয়। কিন্তু এক বছর পরই গৌরী দেবী মারা যান। স্ত্রীর শোকে তিনি কিছুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন। পরে ৩ ডিসেম্বর, ১৯৪০ সালে ফরিদপুর জেলার ছয়গাঁও নিবাসী ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে রমা দেবীকে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ের সাত বছর পর একমাত্র সন্তান তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম বাবলু।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মজীবন

তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন। গোরক্ষিণী সভার প্রচারক হিসেবে তিনি বাংলা, ত্রিপুরা ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। এরপর তিনি খেলাৎচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে সেক্রেটারি, গৃহশিক্ষক এবং তার এস্টেটের ভাগলপুর সার্কেলের সহকারী ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আবার কিছুদিন ধর্মতলার এক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তারপর তিনি যোগ দেন বনগাঁর নিকট গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশন স্কুলে। এই স্কুলেই তিনি মৃত্যু পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পত্রিকা সম্পাদনা

সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেন। তিনি চিত্রলেখা (১৯৩০) নামে একটি সিনেমা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তাছাড়া হেমন্তকুমার গুপ্তের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি দীপক (১৯৩২) পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গৌরীকুঞ্জ

তিনি তার বাড়িটির নাম ‘গৌরীকুঞ্জ’ রেখেছিলেন স্ত্রী গৌরী দেবীর নামে। আর তার বাড়ির সামনের রাস্তাটি অপুর পথ হিসেবে পরিচিত।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ

১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রবাসী পত্রিকার মাঘ সংখ্যায় উপেক্ষিতা নামে একটি গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত হয়।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলী

সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য রচনা গুলি হল নিম্নরূপ –

(১) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস

‘পথের পাঁচালি’ (১৯২৯), ‘অপরাজিত’ (১ম ও ২য় খণ্ড, ১৯৩২), ‘দৃষ্টিপ্রদীপ’ (১৯৩৫), ‘আরণ্যক’ (১৯৩৯), ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ (১৯৪০), ‘বিপিনের সংসার’ (১৯৪১), ‘দুই বাড়ি’ (১৯৪১), ‘অনুবর্তন’ (১৯৪২), ‘দেবযান’ (১৯৪৪), ‘কেদার রাজা’ (১৯৪৫), অথৈজল’ (১৯৪৭), ‘ইছামতি’ (১৯৫০), ‘অশনি সংকেত’ (অসমাপ্ত, বঙ্গাব্দ ১৩৬৬), ‘দম্পতি’ (১৯৫২)।

(২) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প-সংকলন

‘মেঘমল্লার’ (১৯৩১), ‘মৌরীফুল’ (১৯৩২), ‘যাত্রাবাদল’ (১৯৩৪), ‘জন্ম ও মৃত্যু’ (১৯৩৭), ‘কিন্নর দল’ (১৯৩৮), ‘বেণীদির ফুলবাড়ি’ (১৯৪১), ‘নবাগত’ (১৯৪৪), ‘তালনবমী’ (১৯৪৪), ‘উপলখন্ড’ (১৯৪৫), ‘বিধুমাস্টার’ (১৯৪৫), ‘ক্ষণভঙ্গুর’ (১৯৪৫), ‘অসাধারণ’ (১৯৪৬), ‘মুখোশ ও মুখশ্রী’ (১৯৪৭), ‘আচার্য কৃপালিনী কলোনি’ (১৯৪৮; ১৯৫৯ সালে ‘নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব’ নামে প্রকাশিত), ‘জ্যোতিরিঙ্গণ’ (১৯৪৯), ‘কুশল-পাহাড়ী’ (১৯৫০), ‘রূপ হলুদ’ (১৯৫৭,মৃত্যুর পর প্রকাশিত), ‘অনুসন্ধান’ (১৯৬০,বঙ্গাব্দ ১৩৬৬, মৃত্যুর পর প্রকাশিত), ‘ছায়াছবি’ (১৯৬০,বঙ্গাব্দ ১৩৬৬, মৃত্যুর পর প্রকাশিত), ‘সুলোচনা’ (১৯৬৩)।

(৩) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিশোরপাঠ্য

‘চাঁদের পাহাড়’ (১৯৩৮), ‘আইভ্যানহো’ (সংক্ষেপানুবাদ, ১৯৩৮), ‘মরণের ডঙ্কা বাজে’ (১৯৪০), ‘মিসমিদের কবচ’ (১৯৪২), ‘হীরা মাণিক জ্বলে’ (১৯৪৬), সুন্দরবনের সাত বৎসর (ভুবনমোহন রায়ের সহযোগিতায়, ১৯৫২)।

(৪) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রমণকাহিনী ও দিনলিপি

‘অভিযাত্রিক’ (১৯৪০), ‘স্মৃতির রেখা’ (১৯৪১), ‘তৃণাঙ্কুর’ (১৯৪৩), ‘ঊর্মিমুখর’ (১৯৪৪), ‘বনে পাহাড়ে’ (১৯৪৫), ‘উৎকর্ণ’ (১৯৪৬), ‘হে অরণ্য কথা কও’ (১৯৪৮)।

(৫) অন্যান্য রচনা

‘বিচিত্র জগত’ (১৯৩৭), ‘টমাস বাটার আত্মজীবনী’ (১৯৪৩), ‘আমার লেখা’ (বঙ্গাব্দ ১৩৬৮), প্রবন্ধাবলী, পত্রাবলী, দিনের পরে দিন ইত্যাদি।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র

সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহু উপন্যাস ও ছোট গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলি হল পথের পাঁচালী (১৯৫৫), অপরাজিত (১৯৫৬), আদর্শ হিন্দু হোটেল (১৯৫৭), অপুর সংসার (১৯৫৯), বাক্স বাদল (১৯৭০), নিশি পদ্ম (১৯৭০) ছোট গল্প হিঙ্গের কচুরি অবলম্বনে, অমর প্রেম (১৯৭২) ছোট গল্প হিঙ্গের কচুরি অবলম্বনে, নিমন্ত্রণ (১৯৭১), অশনি সংকেত (১৯৭৩), আলো (২০০৩) ছোট গল্প কিন্নরদল অবলম্বনে, দ্য ফেস্টিভ্যাল! তালনবমী (২০০৩), চাঁদের পাহাড় (২০১৩), সহজ পাঠের গপ্পো (কালার’স অফ ইনোসেন্স) (২০১৭) তাল নবমী গল্পের উপর ভিত্তি করে, অভিযাত্রিক (২০২১) অপরাজিত উপন্যাসের শেষ অংশের উপর ভিত্তি করে, আমাজন অভিযান (২০১৭) চাঁদের পাহাড়-এর মূখ্য চরিত্র শংকর-এর উপর ভিত্তি করে নির্মিত।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী

সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ভাগলপুরে কাজ করার সময় ১৯২৫ সালে ‘পথের পাঁচালী’ লেখা শুরু করেন। এই উপন্যাসটি লেখার কাজ শেষ হয় ১৯২৮ সালে। এটিই তার প্রথম এবং সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা। সাহিত্যিক ও সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় এই উপন্যাসটি পছন্দ করে বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশ করলে তা বিপুল জনপ্রিয় হয়। এই উপন্যাসে লেখকের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালী উপন্যাসের কাহিনীকে চলচ্চিত্রে রূপদানের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা করেছিলেন। পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রটি দেশী-বিদেশী প্রচুর পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছিল। পথের পাঁচালী উপন্যাসটি বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা এবং ইংরেজি ও ফরাসি সহ বিভিন্ন পাশ্চাত্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপরাজিতা

পথের পাঁচালী উপন্যাসের পর তিনি ‘অপরাজিত’ নামে উপন্যাস রচনা করেন। এটি ‘পথের পাঁচালির’ই পরবর্তী অংশ। সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাস নিয়েও দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যা খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই উপন্যাসে লেখকের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড়

সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড় একটি অনবদ্য অভিযানমূলক কাহিনী। এই কাহিনীর পটভূমি আফ্রিকা। ২০১৩ সালে বিখ্যাত চিত্রপরিচালক কমলেশ্বর মুখার্জী ‘চাঁদের পাহাড়’ কাহিনী অবলম্বনে বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এটি যথেষ্ট খ্যাতি লাভ করে।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য

নিভৃতচারী কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায় পল্লীর জীবন ও নিসর্গ রূপায়ণে বাংলার আবহমানকালের চালচিত্র ও মানবজীবনের অন্তর্লীন সত্তা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচনায় প্রকৃতি কেবল প্রকৃতিরূপেই আবির্ভূত হয় নি, প্রকৃতি ও মানবজীবন একীভূত হয়ে অভিনব রসমূর্তি ধারণ করেছে। মানুষ যে প্রকৃতিরই সন্তান এই এ সত্য তাঁর বিভিন্ন রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে। প্রকৃতির লতাপাতা, ঘাস, পোকামাকড় সবকিছুই গুরুত্বের সঙ্গে স্ব-স্বভাবে তাঁর রচনায় স্থান পেয়েছে। প্রকৃতির অনুপুঙ্খ বর্ণনার মধ্য দিয়ে বিভূতিভূষণ গভীর জীবনদৃষ্টিকেও তুলে ধরেছেন। তবে তাঁর রচনায় নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালির জীনবচিত্র ও সমকালের আর্থসামাজিক বাস্তবতাও সমভাবে উন্মোচিত হয়েছে। তাই বাংলা কথাসাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরে বিভূতিভূষণই সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় সাহিত্যিকের মর্যাদা পেয়েছেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ জীবন

প্রতিভাশালী লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ জীবনের কয়েকটি বৎসর তাঁর অতি প্রিয় পিতৃভূমি ব্যারাকপুর ও তাঁর ভালোবাসার শেষ চিহ্ন গৌরীকুঞ্জতে কাটিয়েছেন। এই সময়ে তিনি সাহিত্য চর্চায় যথেষ্ট শ্রীবৃদ্ধি করেছিলেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু

বর্তমান ঝাড়খন্ডের ঘাটশিলাতে, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর (১৭ই কার্তিক ১৩৫৭ বঙ্গাব্দ,বুধবার) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন দুপুরে সুবর্ণরেখা নদীর ওপরে ‘পঞ্চপাণ্ডব ঘাট’-এ তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরস্কার ও সম্মাননা

ইছামতী উপন্যাস -এর জন্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫১ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) অর্জন করেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার (লেখকের জন্মস্থান) পারমাদান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নাম লেখকের সম্মানার্থে রাখা হয়েছে ‘বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’।

বিভূতিভূষণ স্মৃতিঘাট

উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁর নিকটে টালিখোলা মোড়ের কাছে ইছামতী নদীর পাড়ে অবস্থিত বিভূতিভূষণ স্মৃতিঘাট। এখানে চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় বিভূতিভূষণের একটি প্রতিকৃতি আছে। এখানে একটি অতিথিশালা নির্মাণ করা হয়েছে। এর পাশেই আছে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ। এখনও ইছামতীর কলরব অনেক কথায় মনে করিয়ে দেয় সেই সব দিনের। শীতকালে এখানে অনেকেই বনভোজন করতে এসে থাকে।

উপসংহার:- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর যাপিত জীবনের জঠরযন্ত্রণা, দুই চোখে দেখা বিচিত্র ঘটনা, অর্জিত অভিজ্ঞতা – সবই মুখ থেকে কাগজে-কলমে স্থানান্তর করে গেছেন। তাই আজও একইভাবে সব শ্রেণির পাঠকের কাছে তিনি সমাদৃত হয়ে আছেন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম কখন হয়?

১২ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে।

২. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামাতার নাম কি?

মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৃণালিনী দেবী।

৩. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মস্থান কোথায়?

উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ঘোষপাড়া মুরাতিপুর গ্ৰামে।

৪. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির নাম কি?

গৌরীকুঞ্জ।

৫. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস কোনটি?

পথের পাঁচালী।

৬. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন কে?

সত্যজিৎ রায়।

৭. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু কখন হয়?

১ নভেম্বর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment