হাতেখড়ি অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে সরস্বতী পূজা ও হাতেখড়ি, উদ্দেশ্য, হাতে খড়ি অনুষ্ঠান, বিদ্বান শিশু, বসন্ত পঞ্চমী, হাতেখড়ির ইতিহাস, বিশেষ গল্প ও হাতেখড়ির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানবো।
হিন্দুদের উৎসব হাতে খড়ি প্রসঙ্গে হাতে খড়ি অর্থ, হাতে খড়ি অনুষ্ঠান, হাতে খড়ি বিদ্যারম্ভ, হাতে খড়ি দেওয়ার নিয়ম, সরস্বতী পূজায় হাতে খড়ি, হাতে খড়ি দেওয়ার মন্ত্র, হাতে খড়ির উদ্দেশ্য, হাতে খড়ির ইতিহাস, হাতে খড়ির মাহাত্ম্য।
হাতেখড়ি উৎসব
উৎসব | হাতেখড়ি |
অর্থ | প্রথম লিখতে শেখার পাঠ |
তিথি | বসন্ত পঞ্চমী |
বিশেষ অনুষ্ঠান | সরস্বতী পূজা |
উদ্দেশ্য | শিশুর বিদ্যা অর্জন |
ভূমিকা :- ভারত -এ বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বন। বৈশাখ থেকে চৈত্র পর্যন্ত প্রতি মাসে কোনও না কোনও উৎসব আছেই। প্রত্যেক পুজোর আলাদা আলাদা গুরুত্ব এবং উপকারিতাও আছে। তেমনি সরস্বতী পুজোয় হাতেখড়ি দেওয়ার বিশেষ গুরুত্ব ও উপকারিতা আছে।
সরস্বতী দেবী
দেবী সরস্বতী হলেন বিদ্যার দেবী। তিনি আমাদের বিদ্যা দান করেন। আমরা বড়, ছোট সকলেই সরস্বতী পুজো করি ও নিজের নিজের প্রার্থনা জানাই। প্রায় প্রত্যেক বিদ্যা প্রতিষ্ঠানেই সরস্বতী পুজো হয়।
সরস্বতী পূজা ও হাতেখড়ি
সরস্বতী পুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িয়ে রয়েছে সাবেকি প্রথা হাতেখড়ি বা প্রথম লিখতে শেখার পাঠ। বাঙালি তথা হিন্দুধর্মালম্বীদের ঐতিহ্য হিসাবে সগর্বে আজও চলে আসছে হাতে খড়ির প্রথা। যেটি না হলে শিক্ষার শুরুই যে হয় না!
হাতেখড়ির উদ্দেশ্য কি
শিশুদের বিদ্যার সূচনা হওয়ার আগেই দেবী সরস্বতীর কৃপা লাভের উদ্দেশ্যে হাতেখড়ি দেওয়া হয়ে থাকে।
হাতেখড়ি অনুষ্ঠান
সন্তানদের বিদ্যার শুরু হওয়ার পূর্বেই সরস্বতী ঠাকুরের কাছে শুভ কামনা হেতু হাতেখড়ি দেওয়া হয়। পুরোহিত মহাশয় স্লেট ও খড়িকে পবিত্র করেন, এরপর নতুন জামা কাপড় পরিহিত জাতক বা জাতিকাকে মায়ের সামনে বসিয়ে প্রথম লেখা শেখানো হয়।
হাতেখড়ির মাধ্যমে বিদ্বান শিশু
স্নান সেরে পরিষ্কার বসন পরে স্লেট এবং খড়ি হাতে দেবী সরস্বতীর সামনে বসে প্রথম লেখা শেখানো হয় নব শিক্ষার্থীদের। এর দায়িত্বে থাকেন বাড়ির বড় কেউ। যেহেতু সরস্বতী বিদ্যা এবং জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তাই তাঁর পুজো করে তাঁকে সাক্ষী রেখে হাতেখড়ি দিলে শিশু হয়ে ওঠে বিদ্বান
বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে হাতেখড়ি
শুক্লা পঞ্চমী খুব শুভ দিন, শুভ দিনের একটা গুরুত্ব আছে সাফল্যের জন্য। তাই মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজার সময় শিশুদের হাতেখড়ি দেওয়া হয়।
হাতেখড়ির ইতিহাস
- (১) প্রাচীনকাল থেকে ভারত -এ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদ ও বেদাঙ্গ অর্থাৎ শিক্ষা, ছন্দ, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, জ্যোতিষ ও কল্প এই ছয়টি আনুষঙ্গিক শাস্ত্র অধ্যয়ন করতেন ও মেনে চলতেন। এই কল্পের অন্তর্গত গৃহসুত্রে জন্মের সময় থেকে মৃত্যুর পর পর্যন্ত ১০ টি বা ১৬ টি সংস্কারের বিবরণ আছে।
- (২) অজ্ঞাতসারে আজও হিন্দু ধর্ম, জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম -এর মানুষেরা এই সংস্কারের অনেকখানিই মেনে চলেন। এর অন্তর্গত একটি সংস্কার হল বিদ্যারম্ভ। ৫ বছর বয়সে উপনয়ন সংস্কারের পর গুরুগৃহে গিয়ে এই বিদ্যারম্ভ বা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হতো। এরই বর্তমান পরিবর্তিত রূপ হাতেখড়ি।
- (৩) হাতেখড়ি সকল শিশুর শিক্ষা শুরুর প্রারম্ভিক অনুষ্ঠান। পারিবারিক নিয়ম অনুযায়ী কেউ সরস্বতী পুজোর দিন, কেউ একদিন পরে মাকড়ী সপ্তমীর দিন, আবার কেউ শিশুর পাঁচ বছর বয়সে বাড়িতে বিশেষ পূজা দিয়ে হাতেখড়ি দেন।
হাতেখড়ি প্রসঙ্গে বিশেষ গল্প
হাতেখড়ি প্রসঙ্গে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি গল্প আছে, যেখানে গল্পকথক বা লেখক বাবার সঙ্গে পাঠশালায় গিয়ে মুসলমান গুরুমশাই এঁর কাছে তালপাতার উপর প্রথম লেখা শুরু করেন। সেই গুরুমশাই তাকে শিখিয়েছিলেন শ্রী শ্রী দুর্গা স্মরণম্ = ইলাহি ভরসা!
হাতেখড়ির মাহাত্ম্য
- (১) সরস্বতী দেবীর পুজো করে তাকে সাক্ষী রেখে হাতেখড়ি দিলে সেই জাতক বা জাতিকার প্রভূত বিদ্যালাভ হয় বলে আমাদের বিশ্বাস। সব কাজেরই একটা অনুশাসন থাকে। অনুশাসন না থাকলে ঠিকঠাক কোনও কাজ পরিচালনা করা যায় না। হাতেখড়ি দেওয়াটা একটা অনুশাসনের অঙ্গ।
- (২) হাতেখড়ি দেওয়া হল বিদ্যার প্রথম সোপান। হাতেখড়ির কারণে প্রত্যেক পরিবার বা ব্যক্তি পুস্তক বা বাদ্যযন্ত্রকে দেবতা বলে ভক্তি করেন। সেই জন্য পড়া, গীত বা বাদ্যের ঘরকে আমরা শিক্ষার মন্দির বলি।
- (৩) হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাদে অন্য ধর্মাবলম্বীরা সরস্বতী পুজো করেন না বা হাতেখড়ি দেন না। তবে তাদের শিক্ষা লাভ অবশ্যই হয়। কারণ, তারা বিদ্যা শুরু করার আগে দান ধ্যান বা অন্য কোনও প্রথার মাধ্যমে বিদ্যার দেবতা বা দেবীকে শ্রদ্ধাভক্তি জানায়।
উপসংহার :- আজও সরস্বতী পুজোর দিন শিশুদের হাতেখড়ি না হলে, তার শিক্ষার শুরুই হয় না বলে মনে করেন বেশিরভাগ বাঙালি। তাই বসন্ত পঞ্চমীর সকালে খড়ি ধরা ছোট্ট এক হাত স্লেটের ওপর লিখে চলেছে প্রথম ‘অ’ ‘আ’… এই দৃশ্য আজও বাঙালির কাছে বেশ পরিচিত।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “হাতেখড়ি” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) হাতেখড়ি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
বসন্ত পঞ্চমী।
সরস্বতী পূজা।
শিশুদের প্রথম লিখতে শেখার পাঠ।