অরন্ধন উৎসব প্রসঙ্গে অর্থ, বসন্ত পঞ্চমীতে অরন্ধন, মনসা পূজার দিন অরন্ধন, দেবী পক্ষের অপেক্ষা, প্রাচীন রীতি, বুড়োরান্না, মনসার ঘট স্থাপন, দেবীকে উৎসর্গ, আমিষ পদ, নিরামিষ পদ, উনুনের পূজা ও বর্তমানকালে গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
অরন্ধন উৎসব প্রসঙ্গে অরন্ধন দিবস, অরন্ধন শব্দের অর্থ, অরন্ধন উৎসব শুরু, অরন্ধন উৎসব পালনের দিন ও সময়সীমা, অরন্ধন দিবসের পরিকল্পনা, অরন্ধন উৎসবের তিথি, মনসা পূজার দিন অরন্ধন, অরন্ধন উৎসবের প্রাচীন রীতি, সরস্বতী পূজার দিন অরন্ধন উৎসব ও বর্তমানে অরন্ধন উৎসবের গুরুত্ব।
বাঙালির অরন্ধন উৎসব
উৎসব | অরন্ধন |
অর্থ | রান্না নিষিদ্ধ |
পালনকারী | বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় |
সময় | ভাদ্র সংক্রান্তি ও বসন্ত পঞ্চমী |
বিশেষ অনুষ্ঠান | মনসা পূজা ও সরস্বতী পূজা |
ভূমিকা :- ‘অরন্ধন’ বা ‘রান্নাপুজো’ ভারত -এর হিন্দুদের এক ঐতিহ্যবাহী পার্বণ বা উৎসব। মূলত পশ্চিমবঙ্গ -এর বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে এই পার্বণ পালিত হয়। আগের দিন রাত্রিতে রান্না করে সেই বাসি খাবার আচারবশত পরের দিন খাওয়ার রীতিই হল ‘অরন্ধন’।
অরন্ধন কথার অর্থ কি
অরন্ধণ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল, যে দিন রন্ধন বা রান্না নিষিদ্ধ। অর্থাৎ সেই দিন রান্না হয় না।
বসন্ত পঞ্চমীতে অরন্ধন
পশ্চিমবঙ্গে মাঘ মাসে শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী তথা সরস্বতী পূজার পরের দিন শীতলষষ্ঠীতে অরন্ধন উৎসব পালন করা হয়। এটিকে কোথাও কোথাও শিলনোড়া পূজার দিনও বলা হয়ে থাকে।
মনসা পূজার দিন অরন্ধন
- (১) ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসা পূজার দিনেও অরন্ধন উৎসব পালন করা হয়। মনসা পূজার অবিচ্ছেদ্য অংশই হল ‘অরন্ধন’ উৎসব। পশ্চিমবঙ্গের স্থানভেদে ভাদ্র মাসব্যাপী যে কোনো শনিবার বা মঙ্গলবারে এবং নাগপঞ্চমী হতে প্রতি পঞ্চমী তিথিতে মনসাদেবীর পূজা আরম্ভ হয়।
- (২) ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসাদেবী ও অষ্টনাগপূজা সমাপন ও ভাসান হয়। সেই উপলক্ষে আচারবশত সংক্রান্তিতে পালিত হয় ‘অরন্ধন’। একে ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়ার উৎসবও বলা হয়ে থাকে। ভাদ্র সংক্রান্তির আগের দিন রান্না করে সংক্রান্তিতে মা মনসাকে উৎসর্গ করে তবে খাওয়া হয়।
অরন্ধন উৎসবের পর দেবী পক্ষের অপেক্ষা
মূলত ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে করা অরন্ধন উৎসব হয় পিতৃপক্ষে। তারপর বাঙালি অপেক্ষা করে থাকে দেবীপক্ষের জন্য। দেবীপক্ষ এলেই বাঙ্গালীদের উৎসবের ঘনঘটা আবার শুরু হয়। বাঙালি আবার উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। তাই বলা যায় ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে পৃথিবীতে অরন্ধন উৎসব হল দুর্গাপুজোর আগে বাঙালিদের করা শেষ উৎসব।
অরন্ধন উৎসবের প্রাচীন রীতি
প্রাচীন রীতিতে তিথি অনুযায়ী, আশ্বিন মাস পড়লে তবেই সেই বাসি খাবার মুখে তুলতেন গৃহস্থেরা। যেহেতু ভাদ্র মাসের বিভিন্ন দিনে বা তিথিতে পূজার ব্যবস্থা আছে। এই পূজার ব্যবস্থা অনুযায়ী অরন্ধন কোথাও ইচ্ছারান্না, কোথাও বা ধরাটে রান্না বা আটাশে রান্না হিসাবেও পালিত হয়।
অরন্ধন উৎসবের অন্য নাম বুড়োরান্না
বিশ্বকর্মা পূজার দিন অরন্ধন পালিত হলে তাকে ‘বুড়োরান্না’ বলা হয়ে থাকে।
অরন্ধন উৎসবের দিন মনসার ঘট স্থাপন
হেঁশেলে বা পাকশালার উনানের গর্তই হল মা মনসার প্রতীক। হিন্দু গৃহিনীরা পরিবারের কল্যাণার্থে ও সর্পভয় থেকে পরিত্রাণ পেতে পাকশালের একস্থানে শালুক ও ফণিমনসা গাছের ডাল দিয়ে মনসার ঘট স্থাপন করেন।
অরন্ধন উৎসব উপলক্ষে দেবীকে উৎসর্গ
গোত্র ও অঞ্চল ভেদে মনসা পূজার পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কেউ মনসা দেবীর প্রতিমা বানিয়ে, আবার কেউ কেউ পঞ্চ সর্পের ফণাযুক্ত প্রতিমার পূজা করেন। পূজার আগের দিন রান্নাকরা খাবারের বিভিন্ন পদের কিছু অংশ সাজিয়ে দেবীকে উৎসর্গ করেন। তবে মরসুমের সেরা সবজি ও মাছ আরাধ্য দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করাই এই উৎসবের প্রধান রীতি।
অরন্ধন উৎসবে আমিষ পদ
বাসি খাবারের মধ্যে পান্তা ভাত উল্লেখযোগ্য। তবে বেশিরভাগ গৃহেই আমিষ রান্নার প্রচলন আছে। আমিষের মধ্যে মরসুমের ইলিশ, চিংড়ি মাছ অন্যতম। এছাড়া আরও ভিন্ন ধরণের মাছ থাকে তালিকায়।
অরন্ধন উৎসবে নিরামিষ পদ
যারা নিরামিষাসী তাদের বাড়িতে নিরামিষ রান্নাপূজা হয়। নিরামিষ পদের মধ্যে হল আলু, ছাঁচি কুমড়ো, কলা, পটল, নারকেল, বেগুন, কুমড়ো, কচুর শাক প্রভৃতির ভাজা, ছোলা-নারকেল দিয়ে কচু শাক সহ একাধিক শাক, মুগ ও খেসারির ডাল, চালতা-গুড় দিয়ে চাটনি, তালের বড়া, মালপোয়া ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
অরন্ধন উৎসবে একটানা আঁচ
এই উৎসবের সব রান্নাই করা হয় অল্প জলে, যাতে গরমে নষ্ট না হয়ে যায়। অরন্ধনের জন্য রান্নার সময় উনানের আঁচ সাধারণত একটানা জ্বলাই রীতি বা নিয়ম।
অরন্ধন উৎসব উপলক্ষে ধর্ম পরায়ণ রমণীদের ব্রতকথা পাঠ
বাংলার ধর্মপরায়ণ রমণীকুল পূজা বারব্রত উপলক্ষে উপবাসে থেকে পূজাসমাপনান্তে দেবীর ব্রতকথা পাঠ বা শ্রবণ করে থাকেন।
অরন্ধন উৎসব উপলক্ষে উনুনের পূজা
অরন্ধন বা রান্নাপুজোতে গৃহের উনুনকে শুদ্ধ করে পুজো করা হয় এবং সেই দিন কোনো রান্না হয় না। উনুনকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। এটি অরন্ধনের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।
বর্তমানকালে অরন্ধন উৎসবের গুরুত্ব
কর্ম ব্যস্ততার কারণে বর্তমানে অরন্ধন উৎসবের স্বাভাবিক মেজাজ ও রীতিনীতি অনেকটা শিথিল হয়েছে। তবে গ্রামাঞ্চল বা শহরতলিতে এখনও এই পার্বণ বা উৎসব ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়।
উপসংহার :- অরন্ধন বা রান্নাপূজা মূলত পশ্চিম বাংলার আদি বাসিন্দারাই পালন করেন। পূর্ববঙ্গীয় বাঙালি হিন্দুদের কাছে এই রীতির প্রচলন নেই।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “অরন্ধন” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) অরন্ধন উৎসব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি ও সরস্বতী পূজার সময়।
রান্না নিষিদ্ধ।
মনসা পূজা।
উনুনের।