হিটলারের নাৎসি দল প্রসঙ্গে দলের নামকরণ, ফ্যুয়েরার সর্বেসর্বা, দলের বিভিন্ন শাখা, পতাকা দলীয় মুখপত্র ও জাতীয় সঙ্গীত সম্পর্কে জানবো।
হিটলারের নাৎসি দল
বিষয় | নাৎসি দল |
স্থান | জার্মানি |
সময় | প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কাল |
প্রধান নেতা | হিটলার |
যোগদান | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ |
মুখপত্র | পিপিলস অবজারভার |
ভূমিকা:- ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে হিটলার জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি বা জার্মান শ্রমিক দলে যোগ দেন। বাগ্মিতার জোরে হিটলার অল্পদিনের মধ্যেই এই দলের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হন। কিছু দিন পর এই দলের নতুন নামকরণ হয় ‘ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি’ বা নাৎসি দল।
নাৎসি দলের নামকরণ
হিটলারের ‘ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট’ দলকে সংক্ষেপে ‘নাৎসি’ দল বলা হত। জার্মানরা ‘ন্যাশনাল’ শব্দটির প্রথম দুটি অক্ষর যেভাবে উচ্চারণ করত তা থেকেই এই ‘নাৎসি’ সংক্ষিপ্তকরণ।
বিস্তৃত আলোচনা
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে হিটলারের সহকর্মী গটফ্রিড ফিডার যে পঁচিশ দফা কর্মসূচি প্রকাশ করেন তা থেকেই নাৎসি দলের উদ্দেশ্য ও মতবাদের পরিচয় পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে রচিত হিটলারের আত্মজীবনী ‘মেঁই ক্যাম্ফ’ গ্ৰন্থে এ সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা আছে।
ফ্যুয়েরার সর্বেসর্বা
নাৎসি মতানুসারে দলনেতা বা ‘ফ্যুয়েরার’ হলেন অভ্রান্ত। তাঁর প্রতি আনুগত্য ও বিনা প্রশ্নে তাঁর নির্দেশ পালন করাই হল দলের নীতি। তাদের মতে একমাত্র নাৎসি মতবাদই সঠিক, আর সব মতবাদ ভ্রান্ত। ফ্যুয়েরারের ইচ্ছা বা মতামত-বিরোধী যে কোনও চিন্তাধারাই হল জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। বিভিন্ন নাৎসি পত্র-পত্রিকায় এই ধরনের মতামতই সর্বদা প্রচার করা হত।
নাৎসি দলের বিভিন্ন শাখা
নাৎসি দলের বিভিন্ন শাখা ছিল। যেমন –
(১) স্টর্ম ট্রুপার্স
বেকার যুবকদের নিয়ে গঠিত আধা-সামরিক ঝটিকা বাহিনীকে বলা হত ‘স্টর্ম ট্রুপার্স’ (‘Storm Troopers’) বা জার্মান ভাষায় ‘Sturmabteilungen’। হিটলারের বিশ্বস্ত অনুচর এরনেস্ট রোমে-র নেতৃত্বে গঠিত এই বাহিনী নাৎসি দলের সভা-সমিতিগুলি পাহারা দিত এবং হামলা চালিয়ে অন্য দলের সভা ভেঙে দিত। এই দল বাদামি রঙের পোশাক পরত বলে তাদের ‘ব্রাউন শার্টস্’-ও বলা হত।
(২) এলিট গার্ডস
এই বাহিনীর উপরে ছিল ‘এলিট গার্ডস্’ বা জার্মান ভাষায় ‘শ্যুটস্ স্টাফেলন’ এরা কালো রঙের পোশাক পরত বলে এদের ‘ব্ল্যাক শার্টস’-ও বলা হত। এদের কাজ ছিল মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে নেতাদের জীবন রক্ষা করা। এছাড়া, এদের উপর নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার অর্পিত হত।
(৩) গেস্টাপো
এছাড়াও এই দলে ছিল ‘যুববাহিনী’, ‘নারীবাহিনী’, ‘গণ-আদালত’, ‘অ-সামরিক বন্দিশালা’ এবং ‘গেস্টাপো’ বা গুপ্ত পুলিশবাহিনী। ‘গেস্টাপো’ নাৎসি দলের বহু সমালোচনাকারীকে হত্যা করে। এই বাহিনীর প্রধান ছিলেন কুখ্যাত হিমলার।
(৪) পতাকা
নাৎসি পতাকা ছিল রক্তবর্ণ এবং তার মাঝে সাদা রঙ-এর মধ্যে শোভা পেত কালো স্বস্তিকা চিহ্ন। লাল রঙ ছিল ধনতন্ত্র-বিরোধিতা, সাদা জাতীয়তাবাদ এবং স্বস্তিকা আর্য রক্তের প্রতীক। দলের সব সদস্যকে স্বস্তিকা-চিহ্নিত বিশেষ পোশাক ব্যবহার করতে হত।
(৫) দলীয় মুখপাত্র
নাৎসি পার্টির দলীয় মুখপত্রের নাম ছিল ‘পিপলস্ অবজারভার’।
(৬) সঙ্গীত
নাৎসিদের দলীয় সঙ্গীত রচনা করেন হোর্স্ট ওয়েসেল নামে এক জার্মান যুবক এবং বিখ্যাত জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ ভাগনার রচিত ‘জাগ্রত জার্মানি’ সঙ্গীতটিকে জার্মানির জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেওয়া হয়।
উপসংহার:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির শোচনীয় অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হিটলার ও তার নাৎসি দলের প্রচারকার্য, সঙ্গীত ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর ফলে নাৎসি দল জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং হিটলার জার্মানির একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হন।
(FAQ) হিটলারের নাৎসি দল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
‘ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি’।
ফ্যুয়েরার অর্থাৎ হিটলার।
পিপিলস অবজারভার।
গেস্টাপো।