রুশ বিপ্লব

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে সংঘটিত রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লবের কারণ, ফলাফল ও গুরুত্ব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল।

রাশিয়ায় সংঘটিত রুশ বিপ্লব প্রসঙ্গে রুশ বিপ্লবের সময়কাল, রুশ বিপ্লবের পটভূমি, রুশ বিপ্লবের সামাজিক কারণ, রুশ বিপ্লবের অর্থনৈতিক পটভূমি, রুশ বিপ্লবের সময় রাশিয়ার জার, রুশ বিপ্লবের কারণ, রুশ বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ, রুশ বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান, রুশ বিপ্লবের নেতৃত্বে বলশেভিক দল, রুশ বিপ্লবের বিপ্লবের জনক লেনিন, রুশ বিপ্লবে বলশেভিকদের ভূমিকা, রুশ বিপ্লবে লেনিনের ভূমিকা, রুশ বিপ্লবের বলশেভিকদের সাফল্যের কারণ, রুশ বিপ্লবের গুরুত্ব প্রভাব ও ফলাফল।

রাশিয়ার রুশ বিপ্লব

ঐতিহাসিক ঘটনারুশ বিপ্লব
সময়১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাস
স্থানরাশিয়ার পেট্রোগ্রাড শহর
নেতালেলিন (প্রধান), ট্রটস্কি
রুশ বিপ্লব

রুশ বিপ্লব কি?

এই রুশ বিপ্লব হল ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় সংঘটিত বলশেভিক বিপ্লব এবং অক্টোবর বিপ্লবের সমন্বিত রূপ ।

ভূমিকা :- বিংশ শতাব্দীর অন্যতম রাজনৈতিক ঐতিহাসিক ঘটনা রুশ বিপ্লব। রুশ বিপ্লব রোমানভ রাজবংশের সমাপ্তি এবং শতাব্দীর রাশিয়ান সাম্রাজ্য শাসনের অবসান ঘটায়।

রুশ বিপ্লবের নামকরণ

ইংরেজি অক্টোবর মাসে সংঘটিত রুশ বিপ্লব সাধারণ ভাবে “অক্টোবর বিপ্লব” নামে পরিচিত। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে নভেম্বর মাসে এই রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল বলে এটি “নভেম্বর বিপ্লব” নামেও পরিচিত।

রুশ বিপ্লবের পর্যায়

বিংশ শতকের রুশ বিপ্লবের তিনটি পর্যায় লক্ষ্য করা যায় –

  • (১) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম বিপ্লব ঘোষিত হয়। এর ফলে জারতন্ত্রের পতনের সূচনা হয়।
  • (২) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে রুশ পার্লামেন্টের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত ও বুর্জোয়া শ্রেণী ক্ষমতা দখল করে। ফলে জারতন্ত্রের পতন ঘটে।
  • (৩) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে বলশেভিক দল শ্রমিক শ্রেণীর সাহায্যে বুর্জোয়াদের বিতাড়িত করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।

রুশ বিপ্লবের পটভূমি

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লব ছিল রাশিয়ার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ।

(ক) রুশ বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ

বিংশ শতকের সূচনায় রাশিয়া ছিল একটি মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র। সেদিক থেকে রাশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা ছিল স্বৈরাচারী।

  • (১) রাশিয়ার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বা শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কোনও ভূমিকা ছিল না।
  • (২) জার শাসনাধীন রাশিয়ার সাধারণ মানুষের কোনও ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিল না।
  • (৩) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের প্রাক্কালে জারতন্ত্র একেবারে হীনবল হয়ে পড়ে এবং রাশিয়ার জাতীয় সমস্যাবলির সমাধান করা জারতন্ত্রের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না।
  • (৪) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের প্রাক্কালে সিংহাসনে আসীন জার দ্বিতীয় নিকোলাস ছিলেন দুর্বলচিত্ত এবং রানি জারিনা আলেকজাণ্ডার প্রভাবাধীন।
  • (৫) দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত রুশ শ্রমিক-কৃষকরাও নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দেশের বিভিন্ন অংশে আন্দোলন শুরু করে।
  • (৬) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পর জারের প্রধানমন্ত্রী পিটার স্টোলিপিন রাশিয়ায় এক সন্ত্রাসের শাসন কায়েম করেন, জনগণের পক্ষে যা মেনে নেওয়া মোটেই সম্ভবপর ছিল না।

(খ) রুশ বিপ্লবের পশ্চাতে দুর্বল অর্থনীতি

রুশ বিপ্লবের প্রাক্কালে রাশিয়ার অর্থনীতি ক্ষয়ীষ্ণু, অন্তঃসারশূন্য ও ফাঁপা হয়ে পড়েছিল।

  • (১) দেশের অভ্যন্তরে বহু একচেটিয়া মালিকানাধীন শিল্প গড়ে উঠেছিল। পিটসবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ব্যাপক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কারখানা গুলি একচেটিয়া ভাবে যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করে প্রচুর মুনাফা লুঠতরাজ।
  • (২) রাশিয়ার বিভিন্ন শিল্পে ব্রিটিশ, ফ্রান্স, জার্মান প্রভৃতি দেশের পুঁজির আধিপত্য ছিল। ফলে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৪০০ মিলিয়ন রুবেল।
  • (৩) গ্রামীণ অর্থনীতি ছিল কুলাক শ্রেণীভুক্ত মুষ্টিমেয় সমৃদ্ধশালী মানুষের হাতে। এই কারণে দেশের অভ্যন্তরে এক বৈপ্লবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

(গ) রুশ বিপ্লবের সময় সামাজিক অধঃপতন

তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত রাশিয়ার সামাজিক অবস্থা ছিল অতি শোচনীয়।

  • (১) সমাজের মুষ্টিমেয় অভিজাত সম্প্রদায় বিলাস-ব্যসনে দিন কাটাত।
  • (২) রাশিয়ার বিশাল কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী ছিল অবহেলিত।
  • (৩) প্রায় নগন্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে।

(ঘ) রুশ বিপ্লবের পূর্বে কৃষকদের অবস্থা

কৃষকদের শোচনীয় অবস্থা এবং ব্যাপক অসন্তোষ রুশ বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।

  • (১) এই সময় রাশিয়ার অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। কৃষকরা ছিল মীর -এর অধীন।
  • (২) জমির উপর মুক্ত ভূমি দাসদের কোনও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় নি। কিন্তু প্রাপ্ত জমির ক্ষতিপূরণ, সুদ এবং সরকার ও সামন্ত প্রভুদের কর মেটাতে তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।
  • (৩) রাশিয়ার কুলাক শ্রেণী অধিকাংশ জমি কিনে নেওয়ার ফলে ২০ লক্ষেরও বেশি কৃষক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়।
  • (৪) কুলাকদের অধীনে ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকরা ভূমিহীন মজুরে পরিণত হয়।

এইসব কারণে রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়।

(ঘ) রুশ বিপ্লব কালে শ্রমিকদের অবস্থা

রাশিয়ার কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের অবস্থা ছিল শোচনীয়।

  • (১) স্বল্প বেতনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, নানা অসুবিধার মধ্যে শ্রমিকদের কাজ করতে হত।
  • (২) শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার কোনও নিরাপত্তা ছিল না।
  • (৩) শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলা বা আন্দোলন করার কোনও অধিকার তাদের ছিল না।

(ঙ) রুশ বিপ্লবের পিছনে রুশিকরণ নীতির দায়িত্ব

জার শাসিত রাশিয়া পোল, ফিন, ইউক্রেনীয়, তুর্কি প্রভৃতি বিভিন্ন জাতির মানুষ বাস করত। রুশ সরকার এই অ-রুশ জনগণের উপর নানা ধরনের দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে।

(চ) রুশ বিপ্লবে দার্শনিক ও সাহিত্যকদের প্রভাব

রুশ বিপ্লবে দার্শনিক ও সাহিত্যকদের অবদান ছিল প্রচুর। মাক্সিম গোর্কি, ডস্টয়েভস্কি, তুর্গেনিভ, লিও তলস্তয় প্রমুখ সাহিত্যিক দেশবাসীর সামনে স্বৈরাচারী জারতন্ত্রের স্বরূপ তুলে ধরেন।

(ছ) রুশ বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে রাশিয়া বিপ্লবকে অনিবার্য করে তোলে। এই যুদ্ধ সম্পর্কে রুশ জনসাধারণের সামান্যতম কোনও আগ্ৰহ ছিল না।

রুশ বিপ্লবে বলশেভিকদের ভূমিকা

রাশিয়ার সংকটজনক পরিস্থিতিতে বলশেভিক দল দেশের বিভিন্ন স্থানে জনমত গঠন শুরু করে। তাদের উদ্যোগে নানা স্থানে শ্রমিক ধর্মঘট চলতে থাকে।

কেরেনেস্কি সরকার

আলেকজান্ডার কেরেনেস্কি প্রধানমন্ত্রী হয়ে বলশেভিকদের উপর দমন-পীড়নের নীতি গ্রহণ করেন। কিন্তু সামরিক প্রধান কর্নিলভের সাথে বিরোধে বলশেভিকরাই তাকে সাহায্য করে। ফলে বলশেভিকদের জনপ্রিয়তা ও প্রভাব প্রতিপত্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।

রুশ বিপ্লবের সূচনা

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ থেকে পেট্রোগ্রাড শহরের প্রায় ৮০-৯০ হাজার শ্রমিক বলশেভিকদের নেতৃত্বে ধর্মঘট ও মিছিল শুরু করে। এইভাবেই শুরু হয় রুশ বিপ্লব।

বলশেভিকদের ক্ষমতা দখল

৭ নভেম্বর (পুরোনো রুশ ক্যালেন্ডার অনুসারে ২৫ শে অক্টোবর) লেনিনের নির্দেশে ট্রটস্কির নেতৃত্বে লাল ফৌজ রাজধানী পেট্রোগ্রাডের সরকারি অফিস, ব্যাঙ্ক, রেল স্টেশন দখল করে।

সোভিয়েত সরকার প্রতিষ্ঠা

বলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করলে প্রধানমন্ত্রী কেরেনেস্কি আমেরিকায় পলায়ন করেন। ফলে লেনিনের রাষ্ট্রপতিত্বে সোভিয়েত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

রুশ বিপ্লবে লেনিনের ভূমিকা

বিশিষ্ট তাত্ত্বিক, দেশ নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ তথা লেনিন ছিলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের প্রধান নায়ক এবং বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা।

(১) শ্রমিক সংগঠন

১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে লেনিন পিটার্সবার্গে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলেন। এগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে তিনি ‘লিগ অব স্ট্রাগল ফর দি ইমানসিপেসন অব দি ওয়ার্কিং ক্লাস গঠন করেন (১৮৯৫)।

(২) ইসক্রা পত্রিকা

ইসক্রা কথার অর্থ স্ফুলিঙ্গ। এই পত্রিকার মাধ্যমে লেনিন মার্কসবাদী দর্শন ও বিপ্লব তত্ত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন রচনা প্রকাশ করতে থাকেন।

(৩) বলশেভিক দলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য

১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দলের অধিবেশনে বলশেভিক দলের উদ্দেশ্যে দুটি বক্তব্য তুলে ধরেন। –

  • (i) দলের বিভিন্ন শাখার কাজকর্মে নিয়োজিত সক্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যেই দলের সদস্যপদ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
  • (ii) দলের লক্ষ্য হল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব।

(৪) এপ্রিল থিসিস

১৬ এপ্রিল ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত ‘এপ্রিল থিসিস’ ঘোষণা করে বলেন যে, মার্চ বিপ্লবে জারতন্ত্রের পতন ঘটেছে মূলত বলশেভিকদের জন্যই। তাই রাষ্ট্র ক্ষমতা তাদেরই প্রাপ্য।

(৫) বলশেভিক বিপ্লব ও লেনিন

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর লেনিন পেট্রোগ্রাড শহরে বলশেভিক দলের সদস্যদের সাথে গোপন বৈঠক করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অগ্ৰসর হন। এর ফলে ৭ নভেম্বর রাশিয়ার অস্থায়ী সরকারের পতন ঘটে।

(৬) রুশ বিপ্লবের শ্রেষ্ঠ নায়ক লেনিন

লেনিনের নিষ্ঠা, ভাবাদর্শ, রণকৌশল ও কর্মপদ্ধতি ছিল অতুলনীয়। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে রাশিয়ায় বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। ঐতিহাসিক খ্রিস্টোফার হিল বলেন যে, _

” The Russian Revolution was Lenin’s revolution.”

রুশ বিপ্লবে বলশেভিকদের সাফল্যের কারণ

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবে বলশেভিকদের সাফল্যের মূলে নানা কারণ বিদ্যমান ছিল।

(১) জারতন্ত্রের দুর্বলতা

রুশ বিপ্লবের প্রাক্কালে জারতন্ত্র এক কঠিন সংকটাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়। এই সময় জারেরা ছিলেন দুর্বল, অপদার্থ ও অক্ষম।

(২) লুভভ ও কেরেনেস্কি সরকারের দুর্বলতা

প্রিন্স লুভভ ও কেরেনেস্কি সরকার প্রকৃত অর্থেই ছিল অতি দুর্বল। এই সরকার জনগণের কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষাই মেটাতে পারে নি। তাই কৃষক, শ্রমিক, সৈনিক সবাই ছিল এই সরকারের বিরুদ্ধে।

(৩) লেনিনের নেতৃত্ব

লেনিনের সুযোগ্য নেতৃত্ব রুশ জনতার হৃদয় জয় করে। তাঁর দল ‘শান্তি, রুটি ও জমি’ – র শ্লোগান দিয়ে শ্রমিক ও কৃষকদের মর্মমূলে পৌঁছে যায়।

(৪) আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়। তাই এই সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যস্ত ইউরোপীয় দেশগুলি জার সরকারের পক্ষ নিতে পারে নি।

(৫) প্রতি-বিপ্লবীদের দুর্বলতা

রুশ বিপ্লব বিরোধী শক্তিগুলির মধ্যে কোনও ঐক্য ছিল না। তাদের মতাদর্শ ও কর্মপন্থা ছিল বিভিন্ন ধরনের। তাদের মধ্যে এই মতভেদ বলশেভিকদের নানাভাবে সাহায্য করে।

(৬) স্থানীয় মানুষের সমর্থন

স্থানীয় মানুষ জনও বলশেভিক দলকে সমর্থন করেছিল।

রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লবের গুরুত্ব

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লব রাশিয়ার আভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে।

(ক) আভ্যন্তরীণ প্রভাব

রুশ বিপ্লব রাশিয়ার রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে এক সর্বাত্মক পরিবর্তনের সূচনা করে।

  • (১) রুশ বিপ্লবের ফলে জারের স্বৈরতন্ত্র, অভিজাত শ্রেণীর বিশেষ অধিকার ও গীর্জার প্রাধান্য লোপ করে রাশিয়ায় সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • (২) সমগ্ৰ বিশ্বের ইতিহাসে রাশিয়াতেই প্রথম সাম্যবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • (৩) উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়।
  • (৪) বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নিয়ে কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।
  • (৫) রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত অ-রুশ জাতিগুলিকে সমমর্যাদা ও সমান অধিকার দিয়ে রুশ জীবনের অঙ্গীভূত করা হয়।

(খ) রুশ বিপ্লবের আন্তর্জাতিক প্রভাব

কেবল রাশিয়ার অভ্যন্তরেই নয় – রাশিয়ার সীমানা অতিক্রম করে এই রুশ বিপ্লবের প্রভাব পৃথিবীর নানা দেশে পরিব্যাপ্ত হয়। অধ্যাপক ই. এইচ. কার বলেন যে,

“সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হলে বলশেভিক মতবাদ একটি বিশ্ব আন্দোলনে পর্যবসিত হয়।”

  • (১) বলশেভিক বিপ্লবের ফলে রাশিয়ার মতোই চেকোস্লোভাকিয়া, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি দেশে সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • (২) এই রুশ বিপ্লব সমাজব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে।
  • (৩) রাশিয়ার এই নভেম্বর বিপ্লবের ফলে জার্মানির হোহেনজোলার্ন রাজবংশ এবং অস্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গ রাজবংশের পতন ঘটে।
  • (৪) এই রুশ বিপ্লবের প্রভাবে বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদী মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়।
  • (৫) রুশ বিপ্লবের প্রেরণায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠে এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয়।
  • (৬) রুশ বিপ্লবের প্রভাবে ইতালি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি – এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলিতে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়।
  • (৭) রুশ বিপ্লবের প্রভাবে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ শ্রমিক কল্যাণমূলক আইন প্রবর্তন করে।

উপসংহার :- ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব রাশিয়ায় প্রথম কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করে এবং এইভাবে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে বিশ্ব ইতিহাসে রাশিয়া প্রথম বৃহৎ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “রুশ বিপ্লব” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) রুশ বিপ্লব হতে জিজ্ঞাস্য?

১. রুশ বিপ্লব কবে সংঘটিত হয়?

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে।

২. রুশ বিপ্লবের জনক কে?

লেলিন।

৩. রুশ বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন কে?

লেলিন।

৪. রুশ বিপ্লবের সময় রাশিয়ার জার কে ছিলেন?

তৃতীয় নিকোলাস।

অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি

Leave a Comment