ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি

ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি ও ইতিহাস চর্চার কেম্ব্রিজ দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানবো।

ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে ইতিহাস চর্চার যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, ইতিহাস চর্চার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি, ইতিহাস চর্চার জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, ইতিহাস চর্চার কেম্ব্রিজ দৃষ্টিভঙ্গি, ইতিহাস চর্চার সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও ইতিহাস চর্চার মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানব।

ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি

ঐতিহাসিক ঘটনাইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি
জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকযদুনাথ সরকার
মার্কসবাদী ঐতিহাসিকরামশরণ শর্মা
সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিকজেমস মিল
সাবঅলটার্ন স্টাডিজরণজিৎ গুহ
ইন্ডিয়া টুডেরজনী পাম দত্ত
ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি

ভূমিকা :- ইতিহাস রচনায় তথ্যের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য ছাড়া ইতিহাস হয় না। ঐতিহাসিক তথ্যকে কেন্দ্র করে যুগে যুগে ইতিহাস সম্পর্কে ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে এবং বিভিন্ন যুগের মানুষ বিভিন্নভাবে ইতিহাসের ব্যাখ্যা করেছেন।

ইতিহাস চর্চার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি

ইতিহাস রচনার সূচনায় মানুষ ধর্মীয় চিন্তাভাবনা নিয়ে ঘটনাবলির ব্যাখ্যা করত। সমগ্র মধ্যযুগ ধরেও ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ইউরোপ-এ পোপ ও ধর্মপ্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে কিছু চিন্তা করা সম্ভব ছিল না। মনে করা হত যে, সমগ্র জগৎ ও তার ঘটনাবলি স্বয়ং ঈশ্বরের ইচ্ছায় ও ঈশ্বর-কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) পারসি ধর্মমত

পারসি ধর্মমত অনুসারে, পৃথিবীতে সর্বদা সত্য ও অসত্যের মধ্যে লড়াই চলছে এবং শেষপর্যন্ত সত্যের জয়েই লড়াইয়ের অবসান ঘটবে।

(২) ইহুদি ধর্মমত

ইহুদি ধর্মমত অনুসারে, ইতিহাস কেবলমাত্র অতীত চর্চাই নয় – ইতিহাস হল ঈশ্বরের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ, কারণ, তিনি হলেন সমগ্র জগতের স্রষ্টা।

(৩) খ্রিস্টান ধর্মমত

খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্ব অনুসারে, ঈশ্বরের ইচ্ছাই হল সব এবং তাঁর ইচ্ছা অনুসারেই পৃথিবীর সকল কার্যাবলি নিয়ন্ত্রিত হয়।

(৪) অগাস্টিনের মত

খ্রিস্টীয় জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্ন্যাসী সেন্ট অগাস্টিন-এর মতে, সমগ্র বিশ্ব হল ‘সিটি অব গড’, ঈশ্বরের নির্দেশ পালন করাই হল সর্বাপেক্ষা পবিত্র কর্ম। তাঁর মতে, ইতিহাস হল ঈশ্বরের কার্যাবলির বিবরণ। খ্রিস্টান তত্ত্ব অনুসারে, বিশ্ব সীমাহীন শৃঙ্খলার অধীন।

(৫) র‍্যাঙ্কের অভিমত

আধুনিক ঐতিহাসিক র‍্যাঙ্কে-এর মতে, ইতিহাসের মধ্যেই ঈশ্বরের অবস্থান এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানুষরা অর্থাৎ ইতিহাস তৈরিতে যাঁরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন, তাঁরা হলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি।

(৬) ভারতীয় অভিমত

ভারতীয় ধারণায় ইতিহাস সম্পর্কে মহাপুরুষ বা শ্রেষ্ঠ মানবদের ভূমিকাকে স্বীকার করা হয়েছে। ভারতীয় পুরাকথায় বলা হচ্ছে যে, ধর্মের পতন ও অধর্মের সূচনা হলে সমাজ ও ধর্মকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের আবির্ভাব হয়।

(৭) আধুনিক অভিমত

জার্মানির দার্শনিক হেগেল-এর মতে, সব ইতিহাসই হল যুক্তিনিষ্ঠ এবং তাতে ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব বিদ্যমান। ঐতিহাসিক টয়েনবি-ও ইতিহাসের ধর্মীয় চিন্তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

ইতিহাস রচনার যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি

সাধারণত যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বলতে বোঝায় কোনো তথ্য বা ঘটনা যুক্তির নিরিখে বিচার করা এবং এর মাধ্যমে সত্যে উপনীত হওয়া। এই দৃষ্টিভঙ্গির বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) বিভিন্ন সমর্থক

ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বে যে সীমাহীন শৃঙ্খলার কথা বলা হয় প্রুধোঁ, ভলতেয়ার, কোঁৎ, বার্কলে, ডারউইন প্রমুখ এর বিরোধিতা করে ইতিহাসচর্চায় বিজ্ঞানসন্মত বা যুক্তিসম্মত পদ্ধতি গ্রহণ করার পক্ষে সওয়াল করেছেন।

(২) যুক্তির আশ্রয়

পঞ্চদশ শতকে ইউরোপে নবজাগরণ-এর সূত্রপাত ঘটার পরবর্তীকালে, বিশেষ করে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে ইতিহাসচর্চার এই যুক্তিবাদী বা বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটতে শুরু করে। এর ফলে ধর্মের বন্ধন থেকে ইতিহাসচর্চা মুক্তি পায়। যে-কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা বা অনুসন্ধান করতে গিয়ে মানুষ যুক্তির আশ্রয় নিতে শুরু করে। এই সময় থেকে মানুষ বুঝতে পারে যে, জাগতিক ঘটনাবলি ঈশ্বরের ইচ্ছা বা নিয়তির বিধান দ্বারা পরিচালিত হয় না।

(৩) মানবতাবাদী ঐতিহাসিক

সর্বপ্রথম ইতালির মানবতাবাদী ঐতিহাসিকরা এই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পগ্গিও, এসকোলির ইনোক ও অন্যান্য মানবতাবাদী ইতিহাসবিদগণ তথ্যের যুক্তিনিষ্ঠ বিচার করে প্রাচীন বিভিন্ন ঐতিহাসিক রচনা নতুন করে প্রকাশ করেন।

ইতিহাস রচনার সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি

উনিশ শতকে দুর্বল রাষ্ট্রগুলির ওপর উন্নত ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কাহিনি ইতিহাসচর্চায় সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) লক্ষ্য

অনেক পণ্ডিতই বলতে চান যে, ইতিহাস রচনায় সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের লক্ষ্য হল সামরিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, পোর্তুগাল, স্পেন প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশগুলি এশিয়া ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এর ফলে ইতিহাসবিদরাও তাঁদের রচনায় সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন এবং পরোক্ষে সাম্রাজ্যবাদকে সমর্থন করেন।

(২) ভারতে সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসচর্চা

পরাধীন ভারত-এ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা তাদের সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের হাতিয়ার হিসেবে আধুনিক যুগে ভারতে ইতিহাসচর্চা শুরু করে। ফলে জেমস মিল, জন স্টুয়ার্ট মিল, ভিনসেন্ট স্মিথ প্রমুখ সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিকরা ভারতে সর্বপ্রথম ইতিহাসচর্চা শুরু করেন।

(৩) উদাহরণ

সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ও পতন নিয়ে অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। প্রাচীন গ্রিস, রোম, ভারত প্রভৃতি দেশে প্রাচীন কাল থেকেই সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপ অব্যাহত ছিল। যেমন –

(i) ভারতে

ভারতে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, অশোক, হর্ষবর্ধন, কনিষ্ক, আলাউদ্দিন খলজি, আকবর প্রমুখ সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপের জন্য বিখ্যাত।

(ii) ইউরোপে

ইউরোপের ইতিহাসে ১৮১৫-১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ সাম্রাজ্যবাদের পতনের যুগ হিসেবে চিহ্নিত। এই কালপর্বের পরেই ইতালি, জার্মানি, জাপান প্রভৃতি দেশগুলি দুর্বল দেশের ওপর আধিপত্য স্থাপনে উদ্যোগী হয়।

(iii) আফ্রিকা ও চিনে

কালক্রমে আফ্রিকা ও চীন-এ ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের সম্প্রসারিত করতে উদ্যোগী হয়। রাশিয়া এশিয়ার উত্তরাংশে বিস্তারনীতি গ্রহণ করে। প্রথমদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ আফ্রিকা সম্পর্কে ইউরোপীয়দের কোনো ধারণা ছিল না, কিন্তু পরবর্তীকালে আফ্রিকার সম্পদ লুঠ করার উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় দেশগুলি আফ্রিকার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

(iv) বিশ্বযুদ্ধের কালে

প্রথম বিশ্বযুদ্ধদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর কারণ হল সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিকরা নিজেদের স্বার্থে ইতিহাসের কার্যকারণ ব্যাখ্যা করতে থাকেন। সুতরাং এ কথা বলা যেতেই পারে যে, একেবারে আদি যুগ থেকেই সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী চেতনার অস্তিত্ব আছে।

ইতিহাস চর্চার জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি

উনিশ শতক হল জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ও বিকাশের যুগ।  এই দৃষ্টিভঙ্গির বিভিন্ন দিকগুলি হল –

(১) গৌরবগাথা প্রচার

নিজ দেশের মহিমা ও গৌরবগাথা প্রচার এবং নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সাধারণ মানুষ, রাজনীতিক, কবি-সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিকরা তৎপর হয়ে ওঠেন। এই জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করেই উনিশ ও বিশ শতকে বিভিন্ন যুদ্ধ সংঘটিত হয়। দুটি বিশ্বযুদ্ধেরও অন্যতম কারণ হল জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় স্বার্থ। জাতীয় স্বার্থের তাগিদে বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা ঘটনাবলির এমন ব্যাখ্যা করতে থাকেন, যা অপর জাতির প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। ফলে যুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়।

(২) ভারতে জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চা

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতেও জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চার যথেষ্ট প্রসার ঘটে। ঐতিহাসিক ড. ইফরান হাবিব মনে করেন যে, জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চা হল একটি প্রশস্ত এবং বিশ্লেষণধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি মধ্যযুগের ভারত-ইতিহাসের ওপর তারাচাঁদের লেখা ‘Influence of Islam on Indian Culture’ গ্রন্থটিকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে দেখেছেন। ভারতে জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, আচার্য যদুনাথ সরকার প্রমুখ জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক।

ইতিহাস চর্চার মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি

ইতিহাসের মার্কসবাদী ব্যাখ্যার প্রবক্তা হলেন বিশিষ্ট জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কস। তিনি ইতিহাসের ঘটনাবলির বস্তুবাদী ব্যাখ্যা করেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) উৎপাদনের উপাদানের নিয়ন্ত্রক

তাঁর মতে যে শ্রেণি উৎপাদনের উপাদান নিয়ন্ত্রণ করে, সেই শ্রেণিই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সর্বেসর্বা। সামান্য সংখ্যক শক্তিশালী মানুষ অন্যান্য সকল শ্রেণির ওপর আধিপত্য বিস্তার করে আছে। এই শ্রেণিই রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। তাঁর মতে, এই সামান্য সংখ্যক শক্তিশালী মানুষের বিরুদ্ধে বর্তমান সংগ্রাম হল শ্রেণিসংগ্রাম।

(২) সর্বহারার আধিপত্য

মার্কসের মতে, একদিন এই শ্রেণিসংগ্রামের অবসান ঘটবে এবং পৃথিবীতে সর্বহারার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

(৩) ভারতে মার্কসবাদী ইতিহাসচর্চা

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়া টুডে গ্রন্থটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে ভারতের মার্কসবাদী ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত করেন ঐতিহাসিক রজনী পাম দত্ত। পরবর্তী সময়ে এই দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন সুশোভন সরকার, ডি. ডি. কোশাম্বী এবং বর্তমান কালের রোমিলা থাপার, রামশরণ শর্মা, সুমিত সরকার, ইরফান হাবিব প্রমুখ।

নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার দৃষ্টিভঙ্গি

নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার প্রবক্তারা বলতে চান যে, ইতিহাস কেবলমাত্র রাজা-মহারাজা, জমিদার বা ধনিক শ্রেণির কথা নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সাধারণ মানুষের ইতিহাস

ইতিহাসের মূল নায়ক হল সাধারণ মানুষ। তাঁদের মতে, শ্রমিক, কৃষক, সাধারণ খেটে- খাওয়া মানুষের আন্দোলন ও সুখ-দুঃখের কাহিনিই হল ইতিহাসের মূল উপজীব্য বিষয়। ঐতিহাসিক ব্যারিংটন মুর, এরিখ হবসবম, জর্জ রুদে, লাদুরি এই ব্যাপারে পথ দেখিয়েছেন।

(২) ভারতে নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা

ভারতে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ‘সাবঅলটার্ন স্টাডিজ’ নামে গ্রন্থ প্রকাশ করে ড. রণজিৎ গুহ নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা শুরু করেন। এ ছাড়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ভদ্র, জ্ঞান পাণ্ডে, গায়ত্রী চক্রবর্তী প্রমুখ ঐতিহাসিক নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ, বিরসার নেতৃত্বে মুণ্ডা বিদ্রোহ, রাওলাট আইন-বিরোধী আন্দোলন, চৌরিচৌরার ঘটনা, আগস্ট বা ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষজনের ভূমিকাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সমর্থকগণ তাদের আলোচনায় এই সব সাধারণ মানুষের ভূমিকার প্রতি আলোকপাত করেছেন। এই ধরনের ইতিহাসচর্চা কেবলমাত্র ভারতের ইতিহাসে নয়, সমগ্র বিশ্ব -এর ইতিহাসচর্চায় নবদিগন্তের সূচনা করেছে।

ইতিহাস চর্চার কেম্ব্রিজ দৃষ্টিভঙ্গি

ইতিহাসচর্চার আরও কয়েকটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কেম্ব্রিজ ও অক্সফোর্ডপন্থী ইতিহাসচর্চার বিশেষ একটি ধারা এগুলির মধ্যে অন্যতম। নেমিয়ার, গ্যালাহার, অনিল শীল, রজতকান্ত রায় প্রমুখ এই ধারায় ইতিহাস চর্চা করেন। এই ধারায় সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসচর্চার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যেতে পারে।

উপসংহার :- নির্দিষ্ট কোনো ঐতিহাসিক গোষ্ঠী বা দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্ভুক্ত না হয়েও অমলেশ ত্রিপাঠী, তপন রায়চৌধুরী, অশীন দাশগুপ্ত প্রমুখ স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইতিহাস চর্চা করেছেন। তাঁরা প্রগতিপন্থী নামে পরিচিত। সাম্প্রতিককালে পোস্টমডার্ন ইতিহাসচর্চার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, যদিও তা এখনও সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি।

(FAQ) ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সাবঅলটার্ন স্টাডিজ গ্রন্থটি কার লেখা?

ডঃ রনজিৎ গুহ।

২. ভারতে নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চা শুরু করেন কে?

ডঃ রনজিৎ গুহ।

৩. ভারতে  মার্কসবাদী ইতিহাস চর্চার সূত্রপাত করেন কে?

রজনী পাম দত্ত।

৪. ইন্ডিয়া টুডে কার লেখা?

রজনী পাম দত্ত।

৫. ভারতের দুজন জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকের নাম লেখ?

যদুনাথ সরকার ও ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার।

৬. ভারতে সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাস চর্চা শুরু করেন কারা?

জেমস মিল, জন স্টুয়ার্ট মিল, ভিনসেন্ট স্মিথ প্রমুখ।

Leave a Comment