ভারত-চীন যুদ্ধ

ভারত-চীন যুদ্ধ প্রসঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ, মিত্রতা অপরিহার্য, হিন্দি চীনি ভাই ভাই, সম্পর্কের অবনতি, তিক্ত সম্পর্ক, ভারত-চীন যুদ্ধ, যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া ও ভারতের অভ্যন্তরে তার প্রভাব সম্পর্কে জানবো।

১৯৬২ সালে ভারত -চিন যুদ্ধ বা চিন-ভারত যুদ্ধ প্রসঙ্গে ভারত-চিন যুদ্ধের সময়কাল, ভারত-চিন যুদ্ধের প্রথম পর্ব, ভারত-চিন যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব, বান্দুং সম্মেলন, বান্দুং সম্মেলনে চিনের প্রতিনিধি, ভারত-চিন যুদ্ধ , জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর উদ্যোগ, হিন্দি-চিনি ভাই ভাই, চিন-ভারত সম্পর্কের অবনতি, তিব্বত নিয়ে ভারত-চিন যুদ্ধের সূচনা, তিক্ত সম্পর্ক, ভারত-চিন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া, ভারত-চিন যুদ্ধের তাৎপর্য।

১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধ

ঐতিহাসিক যুদ্ধভারত-চীন যুদ্ধ
সময়কাল১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ
ভারতের প্রধানমন্ত্রীজওহরলাল নেহরু
চীনের প্রধানমন্ত্রীচৌ-এন-লাই
ভারত-চীনা সীমাম্যাকমোহন লাইন
ভারত-চীন যুদ্ধ

ভূমিকা:- এশিয়ার দুই সুপ্রাচীন দেশ ভারতচীন -এর সম্পর্ক অতি প্রাচীন ও বন্ধুত্বপূর্ণ। ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে।

ভারত-চীন সম্পর্কের প্রথম পর্ব (১৯৪৯-৫৯ খ্রিঃ)

ভারত চীন সম্পর্কের প্রথম পর্বের গুরুত্বপূর্ণ দিক গুলি হল –

(১) গণপ্রজাতন্ত্রী চীন

১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মাও-সে-তু-এর নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি চীনের গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করে এবং ১৯৪৯-এর ১লা অক্টোবর চীনে কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। চীনের নতুন নামকরণ হয় গণ-প্রজাতান্ত্রিক চীন।

(২) ভারতের স্বীকৃতি

চিয়াং-কাইশেক পরিচালিত জাতীয়তাবাদী সরকারের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারত সর্বপ্রথম ‘গণ-প্রজাতন্ত্রী’ সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি জানায় (৭ই ডিসেম্বর, ১৯৪৯ খ্রিঃ)।

(৩) ভারতের দাবি

পশ্চিমি শক্তিবর্গ যখন চিয়াং-কাইশেকের নেতৃত্বাধীন তাইওয়ান-কে জাতিপুঞ্জ -এ চীনের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে সোচ্চার, ভারত তখন তার বিরোধিতা করে জাতিপুঞ্জের অভ্যন্তরে ও বাইরে গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনকে চীনের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করার দাবি জানায়।

(৪) একত্রে কাজ

প্রথম এক দশক (১৯৪৯-৫৯ খ্রিঃ) গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ছিল যথেষ্ট হৃদ্যতাপূর্ণ । পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু মনে করেছিলেন যে বিদেশী ঔপনিবেশিক সরকার দ্বারা নিপীড়িত এবং দারিদ্র-পীড়িত দুই দেশ এশিয়ার মুক্তির জন্য একত্রে কাজ করবে।

(৫) মিত্রতা অপরিহার্য

নেহরু বলেন যে, “গণপ্রজাতন্ত্রী সাম্যবাদী চীনের আত্মপ্রকাশ সুদূর প্রাচ্য ও বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্যে পরিবর্তন এনেছে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ভারত ও চীন উভয়ের স্বার্থে, এশিয়ার স্বার্থে এবং বিশ্বশান্তির স্বার্থে ভারত ও চীনের মিত্রতা অপরিহার্য।

(৬) সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ

চীন-ভারত মিত্রতার ক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রদূত সর্দার কে. এম. পানিক্করের ভূমিকাও ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে কোরীয়া সংকট বা কোরিয়া যুদ্ধ শুরু হলে চীন ও রাশিয়া মার্কিন আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করে। পরে চীন এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ভারত চীনের পাশে দাঁড়ায়। এর ফলে চীন-ভারত সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।

(৭) তিব্বত দখল

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে চীনের সেনাবাহিনী তিব্বত দখল করলে এক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। তিব্বতে চীনা আধিপত্য স্থাপন ভারতের জাতীয় স্বার্থের অনুকূল ছিল না। ভারতের উত্তর সীমার নিরাপত্তা অনেকাংশে তিব্বতের রাজনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল ছিল। যাই হোক, এতে দুই পক্ষের মধ্যে সাময়িক তিক্ততা সৃষ্টি হলেও সম্পর্কের কিন্তু কোন অবনতি ঘটে নি।

(৮) চীন-ভারত চুক্তি

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাই ভারতে আসেন এবং ২৯শে এপ্রিল চীন ও ভারতের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুসারে ভারত তিব্বতের ওপর চীনের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়। তিব্বতে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও তীর্থযাত্রীদের অধিকার স্বীকৃত হয়।

(৯) অতিরাষ্ট্রিক অধিকার ত্যাগ

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার-সূত্রে ভারত চীনে যে-সব অতি-রাষ্ট্রীয় অধিকার পেয়েছিল ভারত তা পরিত্যাগ করতে সম্মত হয়। চীন-ভারত দু’পক্ষই জওহরলাল নেহরুর বিখ্যাত পঞ্চশীল -এর ওপর ভিত্তি করে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণে সম্মত হয়।

(১০) হিন্দি-চীনি ভাই ভাই

দুই দেশ একত্রে এশিয়ার সংহতি ও বিশ্বশান্তি রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। ১৯৫৪-র অক্টোবর মাসে। জওহরলাল নেহরু চীন ভ্রমণে যান। চীন-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হয় – ধ্বনি ওঠে “হিন্দি চীনি ভাই ভাই।”

(১১) বান্দুং সম্মেলন

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া-আফ্রিকার জোটনিরপেক্ষ দেশগুলির সম্মেলনে চীন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা ঘোষণা করে জওহরলালের পাশে দাঁড়ায়।

চীন-ভারত সম্পর্কের দ্বিতীয় পর্ব

চীন-ভারত সম্পর্কের দ্বিতীয় পর্বের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(ক) সম্পর্কের অবনতি

১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে চীন-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটতে শুরু করে এবং তা ১৯৬২-তে প্রকাশ্য যুদ্ধে পরিণতি লাভ করে। এর মূলে কয়েকটি কারণ ছিল। যথা –

(১) আকসাই চীনে সড়ক নির্মাণ
  • (i) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে চীনে প্রকাশিত বিভিন্ন মানচিত্রে বিস্তীর্ণ ভারতীয় এলাকা চীনের অন্তর্ভুক্ত বলে দেখানো হতে থাকে। ভারত এই ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই জানান যে পূর্ববর্তী কুয়ো-মিন-তাং সরকারের আমলে তৈরি ঐ সব মানচিত্র গুরুত্বহীন, যা শীঘ্রই সংশোধন করা হবে।
  • (ii) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে চীন সরকার আকসাই চীনের জনবিরল অঞ্চলের মধ্য দিয়ে তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে সিনকিয়াং পর্যন্ত একটি রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করে। কুয়েনলুন ও কারাকোরাম – এই দুই পর্বতশ্রেণীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত আকসাই চীন অঞ্চলকে ভারত নিজ ভূখণ্ড বলেই মনে করত।
  • (iii) এই অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণের অর্থ হল ভারতের প্রায় ১২ হাজার বর্গমাইল ভূখণ্ডের ওপর চীনা আধিপত্য স্থাপিত হওয়া। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার এই সড়ক তৈরির ব্যাপারে আপত্তি জানালে চীন ‘ম্যাকমোহন লাইন’-এর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
(২) ম্যাকমোহন লাইন
  • (i) চীন বলে যে, ম্যাকমোহন নির্দেশিত ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত “ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অপকীর্তির সাক্ষ্য” বহন করছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত বা ভারত-চীন-তিব্বত সীমানা সুনির্দিষ্ট করার উদ্দেশ্যে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ভারতের সিমলাতে ভারত, চীন ও তিব্বতের মধ্যে এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়।
  • (ii) এই বৈঠকে ভারত সরকারের বিদেশ সচিব স্যার আর্থার হেনরী ম্যাকমোহন ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত চিহ্নিত করে একটি মানচিত্র পেশ করেন। এই সীমান্ত ম্যাকমোহন রেখা বা ‘McMohan line’ নামে পরিচিত। এই মানচিত্রে তিব্বত ও আকসাই চীনের অনেক এলাকাই ভারতে চলে আসে।
  • (iii) ক্ষুব্ধ চীন সিমলা বৈঠক ত্যাগ করে। এর কয়েক সপ্তাহ পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় ভারত- চীন-তিব্বত সীমান্ত সমস্যা ধামাচাপা পড়ে যায়। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে চীন ঘোষণা করে যে, ম্যাকমোহন রেখা সঠিক নয় এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের পুনর্বিন্যাস অপরিহার্য।
(৩) তিব্বত সমস্যা
  • (i) ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিব্বতে চীনের বিরুদ্ধে এক ব্যাপক বিদ্রোহ দেখা দেয়। চীন অভিযোগ করে যে, তিব্বতের বিদ্রোহীদের সঙ্গে কালিম্পং-এ অবস্থিত ভারতীয় সেনাদের যোগাযোগ আছে। ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
  • (ii) এর কিছুদিন বাদে কিছু অনুচর-সহ দলাই লামা কালিম্পং-এ একটি সভা করলে ১৯৫৯-এর মার্চ মাসে চীন তিব্বতীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গে কালিম্পং-এ অবস্থানরত ভারতীয় সেনাবাহিনীর যোগাযোগের অভিযোগ উত্থাপন করে। দলাই লামা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন।
  • (iii) ভারত সরকার চীনকে জানায় যে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ভারত সরকার যে-কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় দিতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে চীনকে এই কথাও জানিয়ে দেয় যে, দলাই লামাকে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না।
  • (iv) তার সত্ত্বেও দলাই লামাকে ভারতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করার অনুমতি দেওয়া হয়, যেখানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের তীব্র নিন্দা করেন। চীন সরাসরি অভিযোগ করে যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিয়া’ (CIA) ও দলাই লামা-র চীন-বিরোধী ষড়যন্ত্রে ভারতের মদত আছে। ভারত অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
(৪) তিক্ত সম্পর্ক
  • (i) এরপর চীন-ভারত সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। চীন ম্যাকমোহন রেখা পরিবর্তনের দাবি জানাতে থাকে এবং বলে যে, চীন কখনই ম্যাকমোহন রেখা মেনে নেয় নি এবং ভারত ও ব্রহ্মদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদে এ সম্পর্কে কিছু বলেও নি।
  • (ii) তিব্বতের বিদ্রোহে ভারতের ভূমিকা সীমান্ত পুনর্বিন্যাসের প্রশ্নটিকে অনিবার্য করে তুলেছে। ইতিমধ্যে সীমান্তের নানা স্থানে চীনাদের ছোটোখাটো আক্রমণ চলতে থাকে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬২-র মধ্যে প্রায় ৩০টি স্থানে চীনারা ভারত সীমান্ত লঙ্ঘন করে।
(৫) মীমাংসার উদ্যোগ

সমস্যাগুলি মীমাংসার জন্য সরকারি-বেসরকারি স্তরে নানা আলাপ- আলোচনা চলে। যেয়ন –

  • (i) এই ব্যাপারে আলোচনার জন্য ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই দিল্লীতে আসেন। প্রধানমন্ত্রী নেহরু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে.সি. পন্থ, অর্থমন্ত্রী মোরারজী দেশাই এবং ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ডঃ রাধাকৃষ্ণাণ -এর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা চলে। যদিও আলোচনা ফলপ্রসূ হয় নি।
  • (ii) এর কিছুদিন বাদে ব্রহ্মদেশের রাজধানী রেঙ্গুনে দুই দেশের উচ্চ পদাধিকারীরা মিলিত হন, কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয় নি।
  • (iii) প্রখ্যাত দার্শনিক বারট্রাণ্ড রাসেল দু’পক্ষকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেন। তাও ফলপ্রসূ হল না।
  • (iv) বিশিষ্ট গান্ধীবাদী নেতা ও ‘চীন-ভারত মৈত্রী সংঘের’ প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি পন্ডিত সুন্দরলাল দু’পক্ষকে বিবাদ মিটিয়ে নেবার পরামর্শ দেন। এই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়।

(খ) চীন-ভারত যুদ্ধ

  • (১) এই অবস্থায় দু’পক্ষই বিতর্কিত সীমান্তের ২০০০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে সেনা সমাবেশ করতে থাকে। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে অক্টোবর চীন ভারতের নেফা (NEFA) ও লাদাখের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করে। ভারতের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
  • (২) ভারতীয় বাহিনী পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয় এবং চীনা সেনাদল ভারতের অনেক ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপরেই আকস্মাৎ ১৯৬২-র ২১শে নভেম্বর চীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে এবং ভারতীয় ভূখণ্ড ত্যাগ করে ম্যাকমোহন লাইনের উত্তরে চলে যায়।

(গ) জোটনিরপেক্ষ দেশ গুলির উদ্যোগ

চীন-ভারত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জোট নিরপেক্ষ ছয়টি দেশ-বার্মা (বর্তমান মায়নমার), সিংহল (শ্রীলঙ্কা), ইন্দোনেশিয়া, কাম্পুচিয়া, ঘানা ও সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে।

(ঘ) কলম্বো প্রস্তাব

১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯শে জানুয়ারি কলম্বো- তে মিলিত হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তারা কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। এই প্রস্তাব ‘কলম্বো প্রস্তাব’ নামে খ্যাত। প্রথমে দুই দেশই এই প্রস্তাব মেনে নিলেও, পরে চীন অসম্মত হয়।

(ঙ) প্রতিক্রিয়া

  • (১) চীন-ভারত সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়া ছিল গুরুত্বপূর্ণ। চীন-ভারত বিরোধের ফলে উভয় দেশই তাদের নিজ নিজ রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। জওহরলালের জোট নিরপেক্ষ নীতির অসারতা প্রমাণিত হয়।
  • (২) ভারতের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন পাকিস্তান চীনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। চীন পাকিস্তানের কাশ্মীর-সংক্রান্ত সকল দাবিকে সমর্থন জানায় এবং পাকিস্তান আজাদ কাশ্মীরের বেশ কিছু অংশ চীনের হাতে তুলে দেয়।
  • (৩) চীনের অগ্রগতি রোধে ব্যর্থ ভারত পশ্চিমি দেশগুলির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে আমেরিকা, ইংল্যান্ড সহ বহু দেশ সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। রাশিয়া মুখে নিরপেক্ষতার কথা বললেও মিগ-২১ যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতকে সাহায্য করে।

(চ) অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব

ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এর প্রভাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। চীন-ভারত সংঘর্ষকালে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির অধিকাংশই  – কংগ্রেস, জনসংঘ, সোসালিস্ট পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টির একাংশ সরকারের চীন-বিরোধী নীতির প্রতি সমর্থন জানায়। কমিউনিস্ট পার্টির অপর একটি অংশ মনে করে যে চীন-ভারত সীমানা সুস্পষ্ট নয়।

উপসংহার:- চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যর্থতার জন্য তদানীন্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভি. কে. কৃষ্ণমেননকে পদচ্যুত করা হয় এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী যশোবন্ত রাও চ্যবন বা ওয়াই. বি. চাবন। বলা বাহুলা, নানা টালবাহানার পর বর্তমান চীন-ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ভারত-চীন যুদ্ধ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) ভারত-চীন যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভারত-চীন যুদ্ধ কখন হয়?

১৯৬২ সালে।

২. ভারত-চীন যুদ্ধের সময় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কে ছিলেন?

ভি. কে. কৃষ্ণমেননকে।

৩. ভারত-চীন যুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু।

অন্যান্য ঐতিহাসিক যুদ্ধগুলি

Leave a Comment