এশিয়া মহাদেশে উপনিবেশিক শাসনের প্রসার প্রসঙ্গে ভারতে উপনিবেশ স্থাপন, নেপালে উপনিবেশ স্থাপন, ব্রহ্মদেশে উপনিবেশ স্থাপন, আফগানিস্তানে উপনিবেশ স্থাপন, সিংহলে উপনিবেশ স্থাপন, ইন্দোনেশিয়ায় উপনিবেশ স্থাপন, মালয়ে উপনিবেশ স্থাপন, ইন্দোচিনে উপনিবেশ স্থাপন, শ্যামদেশে উপনিবেশ স্থাপন, ফিলিপিনস দ্বীপপুঞ্জ ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে উপনিবেশ স্থাপন সম্পর্কে জানবো।
এশিয়া মহাদেশে উপনিবেশিক শাসনের প্রসার
ঐতিহাসিক ঘটনা | এশিয়া মহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রসার |
ইংরেজ বাণিজ্য কুঠি | সুরাট, কলকাতা |
ফরাসি বাণিজ্য কুঠি | চন্দননগর, মাহে |
পলাশির যুদ্ধ | ১৭৫৭ খ্রি |
বক্সারের যুদ্ধ | ১৭৬৪ খ্রি |
সগৌলির সন্ধি | ১৮১৬ খ্রি |
ভূমিকা :- পোর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুন ৪টি জাহাজ নিয়ে সামুদ্রিক অভিযান শুরু করেন। তিনি ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ মোজাম্বিকে পৌঁছোন। এরপর তিনি মালয়, ভারত-এর মালাবার অঞ্চল প্রভৃতি স্থানে অবতরণ করেন। এসব অঞ্চলের মশলা ইউরোপ-এর বণিকরা ইউরোপে অন্তত ২০০ থেকে ২৫০ গুণ বেশি দামে বিক্রি করত।
লাভজনক ব্যবসা
এরূপ লাভজনক ব্যবসায় আকৃষ্ট হয়ে পোর্তুগিজ, ডাচ বা ওলন্দাজ, ইংরেজ, ফরাসি, দিনেমার প্রভৃতি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক জাতিগুলি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা প্রথমে এসব দেশে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করে এবং ধীরে ধীরে এসব দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে নেয়।
এশিয়া মহাদেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা
এভাবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ইউরোপীয়, শক্তিগুলির উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ইউরোপীয় শক্তিগুলির উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।
এশিয়া মহাদেশের ভারত ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হল ভারত। অষ্টাদশ শতকে ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপিত হয়। সাম্রাজ্যবাদের যুগে ভারতের নিকটবর্তী ও প্রতিবেশী অন্যান্য যে সব রাষ্ট্রে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলি হল নেপাল, ব্রহ্মদেশ, আফগানিস্তান, সিংহল প্রভৃতি।
এশিয়া মহাদেশের ভারতে উপনিবেশ স্থাপন
পোর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে জলপথে ভারতের পশ্চিম উপকূলে কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছোন। ভাস্কো-দা-গামার ভারতে আসার ফলে ইউরোপীয়রা ভারতে আসার জলপথের কথা জানতে পারে। এরপর থেকে ইউরোপের পোর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ইংরেজ, ফরাসি, দিনেমার প্রভৃতি বণিক জাতি জলপথে ভারতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আসতে শুরু করে। তারা প্রথমে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্য কুঠি প্রতিষ্ঠা করে বাণিজ্যিক কাজকর্ম শুরু করে। এই বাণিজ্য কুঠিগুলি হল –
(১) ভারতে পোর্তুগিজ বাণিজ্যকুঠি
বোম্বাই, কোচিন, দিউ, সালসেট, বেসিন, হুগলি ইত্যাদি ছিল পোর্তুগিজ বাণিজ্যকুঠি।
(২) ওলন্দাজ বাণিজ্যকুঠি
পুলিকট, সুরাট, নেগাপট্টম, কোচিন, চুঁচুড়া, কাশিমবাজার, পাটনি ইত্যাদি ছিল ওলন্দাজ বাণিজ্যকুঠি।
(৩) ইংরেজ বাণিজ্যকুঠি
সুরাট, আগ্রা, আহম্মদ নগর, ব্রোচ, মাদ্রাজ, কলকাতা ইত্যাদি ছিল ইংরেজ বাণিজ্যকুঠি।
(৪) ফরাসি বাণিজ্যকুঠি
সুরাট, মুসলিপট্টম, পন্ডিচেরি, কারিকল, মাহে, চন্দননগর ইত্যাদি ছিল ফরাসি বাণিজ্যকুঠি।
ভারতে উপনিবেশ স্থাপনে উদ্যোগ
- (১) ইউরোপীয় বণিকরা ভারতে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করলেও ঔরঙ্গজেব-পরবর্তী শাসকদের দুর্বলতা, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে ভারতে উপনিবেশ স্থাপনে উদ্যোগী হয়।
- (২) ইংরেজরা ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে, ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে বাংলার নবাব মিরকাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলা ও মুঘল বাদশাহর মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে শুধুমাত্র বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যাতেই নয়, অযোধ্যা ও দিল্লিতেও আধিপত্য বিস্তার করে।
- (৩) এরপর ফরাসিদের কর্ণাটকের তৃতীয় যুদ্ধ-এ (১৭৫৬-৬৩), ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে বিদরার যুদ্ধে ওলন্দাজদের পরাজিত করে ভারতে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় ইংরেজরা শক্তিশালী দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর অবসান ঘটায়।
- (৪) এরপর একে একে মহীশূর (১৭৯৯ খ্রি.), মারাঠা (১৮১৮ খ্রি.), শিখ (১৮৪৯ খ্রি.), অযোধ্যা (১৮৫৬ খ্রি.) প্রভৃতি জয় করে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার করে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপিত হয়।
এশিয়া মহাদেশের নেপালে উপনিবেশ স্থাপন
- (১) পশ্চিম হিমালয়ের গোরখা জাতি অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে ভারতের উত্তরে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত নেপাল জয় করে সেখানে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। শীঘ্রই রাজা পৃথ্বীনারায়ণের নেতৃত্বে নেপাল রাজ্যবিস্তারের চেষ্টা চালাতে থাকে।
- (২) লর্ড কর্নওয়ালিশ কার্কপ্যাট্রিক নামে জনৈক ব্রিটিশ প্রতিনিধিকে নেপালে পাঠিয়ে নেপালের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু দীর্ঘকাল নেপালের সঙ্গে ইংরেজ কোম্পানির শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হয় নি।
- (৩) ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে গোর্খারা ইংরেজ অধ্যুষিত বাটওয়াল ও শেওরাজ দখল করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধ (১৮১৪-১৬ খ্রি.) শুরু হয়। যুদ্ধে গোরখা বাহিনী পরাজিত হলে নেপাল ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সগৌলির সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হয়।
- (৪) সগৌলির সন্ধির দ্বারা সিকিম, সিমলা, মুসৌরি, নৈনিতাল, আলমোড়া প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চল-সহ বর্তমান কুমায়ুন ও গাড়োয়াল জেলা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
এশিয়া মহাদেশের ব্রহ্মদেশে উপনিবেশ স্থাপন
ভারতের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ব্রহ্মদেশ (বর্তমান মায়ানমার)-এর রাজা আলমপোয়া দক্ষিণ ব্রহ্ম বা পেগু ও ইরাবতী অঞ্চল জয় করে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। পরবর্তীকালে ব্রহ্মদেশের রাজা বোদাপায়া ও পাগিডোয়া ১৭৭৯ থেকে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সাম্রাজ্যের আরও প্রসার ঘটান। কিছুদিন পর ইংরেজরা ব্রহ্মদেশে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এর বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) প্রথম ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধ
ইংরেজরা প্রথম ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধে (১৮২৪- ২৬ খ্রি.) ব্রহ্মদেশের রাজা পাণিডোয়া-কে পরাজিত করে। ইংরেজ সেনাপতি ক্যাম্পবেল ব্রহ্মদেশের রেন ও প্রোম অধিকার করে।
(২) ইয়ান্দাবুর সন্ধি
শেষ পর্যন্ত ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মরাজ ইয়ান্দাবুর সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হন। এই সন্ধির দ্বারা – (ক) ব্রহ্মরাজ ব্রিটিশ কোম্পানিকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেন। (খ) কোম্পানি ব্রহ্মরাজের কাছ থেকে আরাকান ও টেনাসেরিম লাভ করে। (গ) ব্রহ্মরাজ আসাম, কাছাড় ও জয়ন্তিয়া অঞ্চলে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেন। (ঘ) কোম্পানি ব্রহ্মদেশে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুবিধা লাভ করে।
(৩) দ্বিতীয় ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধ
১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধে ব্রহ্মদেশের রাজা ইংরেজদের কাছে পরাজিত হন। এর ফলে ব্রহ্মদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্রিটিশদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। লর্ড ডালহৌসি পেগু বা দক্ষিণ ব্রহ্ম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
(৪) তৃতীয় ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধ
ব্রিটিশ সরকার তৃতীয় ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধে (১৮৮৫-৮৬ খ্রি.) ব্রহ্মদেশকে পরাজিত করে ব্রহ্মদেশের অবশিষ্টাংশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। এভাবে ব্রহ্মদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হয়।
এশিয়া মহাদেশের আফগানিস্তানে উপনিবেশ স্থাপন
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। কারণ, আফগানিস্তানে রুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলে ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হত। তাই ব্রিটিশ সরকার আফগানিস্তানে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে। এর বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ
১৮৩৯-৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে ইংরেজরা বিশেষ সুবিধা করতে পারে নি।
(খ) দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ
লর্ড লিটন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্তান আক্রমণ করলে দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধের (১৮৭৮-৮০ খ্রি.) সূচনা হয়। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আফগান আমির শের আলি রাশিয়ায় পালিয়ে যান। বিজয়ী ইংরেজ কোম্পানি শের আলির বিদ্রোহী পুত্র ইয়াকুব খানের সঙ্গে গণ্ডামাকের সন্ধি (১৮৭৯ খ্রি.) স্বাক্ষর করে।
(গ) গণ্ডামাকের সন্ধির শর্ত
এই সন্ধির দ্বারা –
- (১) আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ও সীমান্ত প্রদেশগুলিতে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে আফগান পররাষ্ট্রনীতির ওপর ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়।
- (২) কুররম, পিশিন ও শিবি জেলা ব্রিটিশরা লাভ করে।
- (৩) আফগানিস্তান অভিযানের সূত্র ধরে ইংরেজ সরকার খাইবার গিরিপথ, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও সীমান্তবর্তী কয়েকটি উপজাতীয় অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
এশিয়া মহাদেশের সিংহলে উপনিবেশ স্থাপন
ভারতের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত সিংহল বা শ্রীলঙ্কায় ডাচ বা ওলন্দাজদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে তারা সিংহল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে অ্যামিয়েন্সের সন্ধির দ্বারা সিংহল ইংল্যান্ড-এর অধিকারে আসে। ইংরেজরাই সিংহলে সর্বপ্রথম চা ও রবারের চাষ শুরু করে। সিংহল খুব শীঘ্রই ব্রিটিশদের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা
সাম্রাজ্যবাদের যুগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেসব দেশে বিদেশি ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ইন্দোনেশিয়া, মালয়, ইন্দোচিন, শ্যামদেশ, ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জ, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়ায় উপনিবেশ স্থাপন
জাভা, সুমাত্রা, বোর্ণিও এবং বালি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ইস্ট ইন্ডিজ বা ইন্দোনেশিয়া গঠিত। নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ডের ডাচ বা ওলন্দাজরা ইন্দোনেশিয়ায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তারা জাভায় প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করে এখানকার অর্থনৈতিক জীবনের ব্যাপক উন্নতি ঘটায়। তাদের শাসনাধীনে জাভার জনসংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়ে উপনিবেশ স্থাপন
মালয় ছিল টিন ও রবার উৎপাদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। মালয়ে প্রথমে পোর্তুগিজদের উপনিবেশ স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে ইংরেজরা ধীরে ধীরে সিঙ্গাপুরসহ সমগ্র মালয়ে নিজেদের আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত করে। এর ফলে সমগ্র সুদূর প্রাচ্যের বাণিজ্য একরকম ইংরেজ বণিকদের দখলে চলে যায়। বিভিন্ন কাঁচামাল রপ্তানিকারী মালয় একটি সমৃদ্ধ ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোচিনে উপনিবেশ স্থাপন
চিনের প্রতিবেশী ইন্দোচিন ছিল চিনের করদ রাজ্য। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে ইন্দোচিনে ফরাসি আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কালক্রমে তাদের প্রভাব সুবিস্তৃত হতে থাকে। ইন্দোচিনকে কেন্দ্র করে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে চিনের সঙ্গে ফরাসি ঔপনিবেশিকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চীন শেষ পর্যন্ত ইন্দোচিনে ফরাসি আধিপত্য মেনে নিতে বাধ্য হয়। উনিশ শতকের শেষদিকে কোচিন-চিন, কম্বোডিয়া, আন্নাম ও লাওস-এ ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্যামদেশে উপনিবেশ স্থাপন
ইন্দোচিন ও ব্রহ্মদেশের মধ্যবর্তী স্থানে শ্যামদেশ অবস্থিত। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স সমগ্র শ্যামদেশ দখল করতে না পারলেও এর কিছু কিছু অঞ্চল দখল করে সেখানে নিজেদের ঔপনিবেশিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জে উপনিবেশ স্থাপন
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জে প্রথমে স্পেন-এর এবং পরে আমেরিকার ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। –
(ক) স্পেনের আধিপত্য
স্পেনীয় শাসকরা এখানকার অধিবাসীদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করে। এখানে প্রায় ২০০ বছর স্পেনের আধিপত্য বজায় থাকে। দীর্ঘদিন পর স্পেনের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জের জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
(খ) আমেরিকার আধিপত্য
ফিলিপিন্সবাসীর বিদ্রোহের সুযোগে আমেরিকা সেখানে স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। স্পেনীয়রা পরাজিত হলে ফিলিপিন্সে মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। জনগণ মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কিন্তু মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে ফিলিপিন্সবাসীর বিদ্রোহ সফল হয় নি। ক্রমে সমগ্র ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জ মার্কিন অধিকারে চলে যায়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে উপনিবেশ স্থাপন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ দখল করে সেখানে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। এর পাঁচ বছর পর হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জসম্পূর্ণরূপে আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত হয়।
উপসংহার :- ঔপনিবেশিক দেশগুলি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রথমে বাণিজ্যকুঠি নির্মাণ করে তারপর ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে নেয়। এইভাবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ইউরোপীয় শক্তিগুলির উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা ও প্রসার লাভ করে।
(FAQ) এশিয়া মহাদেশে উপনিবেশিক শাসনের প্রসার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে।
কালিকট।
সুরাট ও কলকাতা।
পন্ডিচেরি ও চন্দননগর।
১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে নেপাল ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।