ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর -এর জীবনী প্রসঙ্গে তার জন্ম ও বংশ পরিচয়, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ, বাংলা লিপির আবিষ্কার, শিক্ষাবিস্তারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা প্রভৃতি সম্পর্কে তুলে ধরা হল।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান, পিতা মাতার নাম, শিক্ষালাভ, বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ, পত্রিকা সম্পাদনা, বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা, সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপনা, বিধবা বিবাহ প্রবর্তনে তাঁর ভূমিকা, নর্মাল স্কুল প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান ও শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান সম্পর্কে জানুন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী

মনীষীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
জন্ম২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০
জন্মস্থানবীরসিংহ গ্রাম, হুগলি জেলা (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা)
পিতাঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
মাতাভগবতী দেবী
পত্নীদীনময়ী দেবী
সন্তাননারায়ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
ছদ্মনামকস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য, কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপো সহচরস্য
পেশালেখক, দার্শনিক, পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, অনুবাদক, প্রকাশক, সংস্কারক, মানবহিতৈষী
মৃত্যু ২৯ জুলাই ১৮৯১ (বয়স ৭০)
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ভূমিকা :- ঊনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর নামেই তিনি অধিক পরিচিত।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম পরিচয়

১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর (১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ আশ্বিন, মঙ্গলবার) বীরসিংহ গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় শর্মা জন্মগ্রহণ করেন। এই গ্রামটি অধুনা ভারত -এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত হলেও, তখন হুগলি জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

পন্ডিত বিদ্যাসাগরের বংশ পরিচয়

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পিতার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতার নাম ছিল ভগবতী দেবী। এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আদি নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার অন্তর্গত বনমালীপুর গ্রাম।

বীরসিংহ গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবন অতিবাহিত

ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় স্বল্প বেতনের চাকরি করতেন বলে বিদ্যাসাগরের শৈশব বীরসিংহ গ্রামে তার মা ও ঠাকুরমার সঙ্গে অতিবাহিত হয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষাজীবন

শিক্ষা ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র।

(১) বিদ্যাসাগরের পাঠশালা শিক্ষা

চার বছর নয় মাস বয়সে ঠাকুরদাস বালক ঈশ্বরচন্দ্রকে গ্রামের সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন। কিন্তু সনাতন বিশ্বাস বিদ্যাদানের চেয়ে শাস্তিদানেই অধিক আনন্দ পেতেন।

(২) আদর্শ শিক্ষক কালীকান্ত-এর সংস্পর্শে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

আট বছর বয়সে কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত পাঠশালায় ভর্তি হন বিদ্যাসাগর। তার চোখে কালীকান্ত ছিলেন আদর্শ শিক্ষক। কালীকান্তের পাঠশালায় তিনি সেকালের প্রচলিত বাংলা শিক্ষা লাভ করেছিলেন।

(৩) শিক্ষার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কলকাতা যাত্রা

১৮২৮ সালের নভেম্বর মাসে পাঠশালার শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পিতার সঙ্গে কলকাতায় আসেন বিদ্যাসাগর। তাদের সঙ্গে কলকাতায় এসেছিলেন কালীকান্ত ও চাকর আনন্দরাম গুটিও।

(৪) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ইংরেজি সংখ্যা গণনা

কথিত আছে যে, পায়ে হেঁটে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসার সময় পথের ধারের মাইল ফলকে ইংরেজি সংখ্যাগুলি দেখে তিনি সেগুলি অনায়াসেই আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন।

(৫) বিদ্যাসাগরের ব্যাকরণ শিক্ষা

১৮২৯ সালের ১ জুন সোমবার কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে ( যা বর্তমানে  সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল নামে পরিচিত) ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি।

(৬) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ইংরেজি শিক্ষা

ব্যাকরণ পড়ার সময় ১৮৩০ সালে সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণিতেও ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র।

(৭) প্রবেশিকা পরীক্ষায় বিদ্যাসাগরের সাফল্য

১৮৩১ সালের মার্চ মাসে বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য মাসিক পাঁচ টাকা হারে বৃত্তি এবং ‘আউট স্টুডেন্ট’ হিসেবে একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ ও আট টাকা পুরস্কার পান।

(৮) কাব্য শ্রেণীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রবেশ

তিন বছর ব্যাকরণ শ্রেণিতে পঠনপাঠনের পর বারো বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কাব্য শ্রেণিতে প্রবেশ করেন। সেই যুগে এই শ্রেণির শিক্ষক ছিলেন বিশিষ্ট পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার।

(৯) ইংরেজি পরীক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাফল্য

১৮৩৪ সালে ইংরেজির ছাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য ৫ টাকা মূল্যের পুস্তক পুরস্কার হিসেবে পান।

(১০) ইংরেজি পরীক্ষায় বিদ্যাসাগরের পুরস্কার অর্জন

১৮৩৫ সালে ইংরেজি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র হিসেবে পলিটিক্যাল রিডার নং ৩ ও ইংলিশ রিডার নং ২ পুরস্কার পান।

 (১১) অলংকার শ্রেণীতে বিদ্যাসাগরের প্রবেশ

পনেরো বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রবেশ করেন অলংকার শ্রেণিতে। অত্যন্ত কঠিন বিষয় হলেও এক বছরের মধ্যেই তিনি সাহিত্য দর্পণ, কাব্যপ্রকাশ ও রসগঙ্গাধর প্রভৃতি অলংকার গ্রন্থে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।

(১২)অলংকার পাঠে বিদ্যাসাগরের সাফল্য

১৮৩৬ সালে অলংকার পাঠ শেষ করেন। বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে রঘুবংশম্, সাহিত্য দর্পণ, কাব্যপ্রকাশ, রত্নাবলী, মালতী মাধব, উত্তর রামচরিত, মুদ্রারাক্ষস, বিক্রমোর্বশী ও মৃচ্ছকটিক গ্রন্থ পুরস্কার পান।

(১৩) বিদ্যাসাগরের মাসিক বৃত্তি বৃদ্ধি

১৮৩৭ সালের মে মাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও মদনমোহনের মাসিক বৃত্তি বেড়ে হয় আট টাকা।

(১৪) স্মৃতি শ্রেণীতে বিদ্যাসাগরের প্রবেশ

১৮৩৭ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্মৃতি শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেই যুগে স্মৃতি পড়তে হলে আগে বেদান্ত ও ন্যায়দর্শন পড়তে হত। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্রের মেধায় সন্তুষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে সরাসরি স্মৃতি শ্রেণিতে ভর্তি নেন।

(১৫) বেদান্ত শ্রেণীতে বিদ্যাসাগরের প্রবেশ

ত্রিপুরায় জেলা জজ পণ্ডিতের পদ পেয়েও পিতার অনুরোধে তা প্রত্যাখ্যান করে ভর্তি হন বেদান্ত শ্রেণিতে। শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতি সেই সময় বেদান্তের অধ্যাপক।

(১৬) বেদান্ত পাঠে বিদ্যাসাগরের সাফল্য

১৮৩৮ সালে বেদান্ত পাঠের পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং মনুসংহিতা, প্রবোধ চন্দ্রোদয়, অষ্টবিংশতত্ত্ব, দত্তক চন্দ্রিকা ও দত্তক মীমাংসা গ্রন্থ পুরস্কার পান।

(১৭) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক সংস্কৃত গদ্য রচনা

এই সময় সংস্কৃতে শ্রেষ্ঠ গদ্য রচনার জন্য ১০০ টাকা পুরস্কারও পেয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

(১৮) ন্যায় শ্রেণীতে ভর্তি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

১৮৪০-৪১ সালে ন্যায় শ্রেণিতে পঠনপাঠন করেন ঈশ্বরচন্দ্র। এই শ্রেণিতে দ্বিতীয় বার্ষিক পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে তিনি পুরস্কার পান।

(১৯) ন্যায় পরীক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাফল্য

বিশিষ্ট মনীষী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ন্যায় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে ১০০ টাকা, পদ্য রচনার জন্য ১০০ টাকা, দেবনাগরী হস্তাক্ষরের জন্য ৮ টাকা ও বাংলায় কোম্পানির রেগুলেশন বিষয়ক পরীক্ষায় ২৫ টাকা সহ সর্বমোট ২৩৩ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন।

পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কর্মজীবন

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সারাজীবনই কর্মময়।

(১) ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা সমাপ্ত হবার পর সেই বছরই ২৯ ডিসেম্বর মাত্র একুশ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান পণ্ডিতের পদে আবৃত হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়।

(২) সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

১৮৪৬ সালের ৬ এপ্রিল সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদকের ভার গ্রহণ করেন। তখন তার বয়স পঁচিশ বছর।

(৩) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি স্থাপন

১৮৪৭ সালে ঈশ্বরচন্দ্র  বিদ্যাসাগর স্থাপন করেন সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি নামে একটি বইয়ের দোকান।

(৪) পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রথম গ্ৰন্থ প্রকাশ

১৮৪৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয় হিন্দি বেতাল পচ্চিসী অবলম্বনে রচিত বিদ্যাসাগরের প্রথম গ্রন্থ বেতাল পঞ্চবিংশতি। প্রথম বিরাম চিহ্নের সফল ব্যবহার করা হয় এই গ্রন্থে।

(৫) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক ছাপাখানা স্থাপন

বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সম অংশীদারত্বে সংস্কৃত যন্ত্র নামে একটি ছাপাখানাও স্থাপন করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

(৬) অন্নদামঙ্গল কাব্য সম্পাদনায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  

নদিয়ার কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে সংরক্ষিত অন্নদামঙ্গল কাব্যের মূল গ্রন্থের পাঠ অনুসারে পরিশোধিত আকারে দুই খণ্ডে অন্নদামঙ্গল সম্পাদনা করেছিলেন বিদ্যাসাগর। এটিই সংস্কৃত যন্ত্র প্রেসের প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ।

(৭) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত কলেজের সম্পাদক পদ ত্যাগ

১৮৪৭ সালের ১৬ জুলাই কলেজ পরিচালনার ব্যাপারে সচিব রসময় দত্তর সঙ্গে মতান্তর দেখা দেওয়ায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

(৮) পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক বাঙ্গালার ইতিহাস গ্ৰন্থ প্রকাশ

১৮৪৯ সালে মার্শম্যানের হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল অবলম্বনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা করেন বাঙ্গালার ইতিহাস দ্বিতীয় ভাগ গ্ৰন্থটি।

(৯) ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেডরাইটার ও কোষাধ্যক্ষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

১৮৪৯ সালে র ১ মার্চ পাঁচ হাজার টাকা জামিনে মাসিক ৮০ টাকা বেতনে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে হেডরাইটার ও কোষাধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

(১০) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক সর্বশুভকরী সভা প্রতিষ্ঠা

বন্ধু ও হিতৈষীদের সহযোগিতায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কার আন্দোলনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন সর্বশুভকরী সভা।

(১১) পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনচরিত গ্ৰন্থ প্রকাশ

উইলিয়াম ও রবার্ট চেম্বার্স রচিত খ্যাতিমান ইংরেজ মনীষীদের জীবনী অবলম্বনে বিদ্যাসাগরের লেখা জীবনচরিত গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

(১১) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক সর্বশুভকরী পত্রিকা প্রকাশ

১৮৫০ সালের আগস্ট মাসে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সহযোগিতায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সর্বশুভকরী পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর প্রথম সংখ্যায় বাল্যবিবাহের দোষ নামে একটি বাংলা প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়।

(১২) সংস্কৃত কলেজের সাহিত্যের অধ্যাপক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

১৮৫০ সালের ৪ ডিসেম্বর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের কাজে ইস্তফা দিয়ে ৫ ডিসেম্বর সংস্কৃত কলেজে সাহিত্যের অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন।

(১৩) সংস্কৃত কলেজের অস্থায়ী সেক্রেটারি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

১৮৫১ সালের ৫ জানুয়ারি সাহিত্যের অধ্যাপকের পদ ছাড়াও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অস্থায়ী সেক্রেটারির কার্যভারও গ্রহণ করেন।

(১৪) সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

১৮৫১ সালের ২২ জানুয়ারি ১৫০ টাকা বেতনে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন বিদ্যাসাগর। এই সময় থেকেই সংস্কৃত কলেজে সেক্রেটারির পদ বিলুপ্ত হয়ে যায়।

(১৫) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বোধোদয় গ্রন্থ প্রকাশ

১৮৫১ সালের এপ্রিল মাসে রুডিমেন্টস অফ নলেজ অবলম্বনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত বোধোদয় পুস্তকটি প্রকাশিত হয়।

(১৬) পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক সংস্কৃত কলেজে রীতির সংস্কার

সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বভার নিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেন। পূর্বতন রীতি বদলে ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য ছাড়াও কায়স্থদের সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ করে দেন।

(১৭) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক সংস্কৃত কলেজে ছুটির দিন নির্ধারণ

রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির প্রথা প্রবর্তিত হয়। এর আগে প্রতি অষ্টমী ও প্রতিপদ তিথিতে ছুটি থাকত।

(১৮) সকলের জন্য সংস্কৃত কলেজের দ্বার উন্মোচন

১৮৫১ সালের ডিসেম্বর মাসে সংস্কৃত কলেজের দ্বার সকল বর্ণের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়।

(১৯) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপন

১৮৫৩ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে স্থাপন করেন অবৈতনিক বিদ্যালয়।

(২০) সংস্কৃত মহাকাব্যের সম্পাদনা

১৮৫৩ সালের জুন মাসে বিদ্যাসাগরের সম্পাদনায় কালিদাসের রঘুবংশম্ ও ভারবির কিরাতার্জ্জুনীয়ম্ প্রকাশিত হয়।

(২১) বোর্ড অফ একজামিনার্সের সদস্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

১৮৫৪ সালের জানুয়ারি মাসে ইংরেজ সিভিলিয়ানদের প্রাচ্য ভাষা শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ভেঙে বোর্ড অফ একজামিনার্স গঠিত হলে তার সদস্য মনোনীত হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

(২২) বিধবাবিবাহ বিষয়ক প্রথম পুস্তক

১৮৫৫ সালের জানুয়ারি মাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব প্রথম পুস্তক প্রকাশিত।

(২৩) শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় প্রকাশ

১৮৫৫ সালের এপ্রিল মাসে বাংলা নববর্ষের দিন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত যুগান্তকারী বাংলা শিশুপাঠ্য বর্ণমালা শিক্ষাগ্রন্থ বর্ণপরিচয় প্রকাশিত হয়।

(২৪) সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

১৮৫৫ সালের ১ মে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ ছাড়াও মাসিক অতিরিক্ত ২০০ টাকা বেতনে দক্ষিণবঙ্গে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদে নিযুক্ত হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

(২৫) নর্মাল স্কুল প্রতিষ্ঠা

১৮৫৫ সালের ১৭ জুলাই বাংলা শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধীনে ওই কলেজের প্রাতঃকালীন বিভাগে নর্মাল স্কুল স্থাপন করেন।

(২৬) মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা

১৮৫৫ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দক্ষিণবঙ্গের চার জেলায় একাধিক মডেল স্কুল বা বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপন করেন। নদিয়ায় পাঁচটি, বর্ধমান শহর -এ পাঁচটি, হুগলিতে পাঁচটি, মেদিনীপুর জেলায় চারটি বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপন করেন।

(২৭) বিধবাবিবাহ বিষয়ক দ্বিতীয় পুস্তক

১৮৫৫ সালের অক্টোবর মাসে বিধবা বিবাহ বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ করার পর্যাপ্ত শাস্ত্রীয় প্রমাণ সহ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব দ্বিতীয় পুস্তক প্রকাশ করেন।

(২৮) বিধবাবিবাহ আইনসম্মত করার উদ্যোগ গ্রহণ

বিধবা বিবাহ আইনসম্মত করতে ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ সরকারের নিকট বহুস্বাক্ষর সংবলিত এক আবেদনপত্র পাঠান বিদ্যাসাগর। এছাড়াও তিনি বহু বিবাহ নিবারণ বিধির জন্য আবেদনপত্র পাঠান।

(২৯) কথামালা গ্ৰন্থ রচনা

১৮৫৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মাসে ঈশপের কাহিনি অবলম্বনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত কথামালা প্রকাশিত হয়।

(৩০) বিধবাবিবাহ আইন পাস

বিদ্যাসাগরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ১৮৫৬ সালের ১৬ জুলাই বিধবা বিবাহ আইনসম্মত হয়।

(৩১) প্রথম বিধবাবিবাহ

১৮৫৬ সালের ৭ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রথম বিধবা বিবাহ আয়োজিত হয়। পাত্র ছিলেন সংস্কৃত কলেজের কৃতি ছাত্র ও অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। পাত্রী ছিলেন বর্ধমান জেলার পলাশডাঙা গ্রামের অধিবাসী ব্রহ্মানন্দ মুখোপাধ্যায়ের দ্বাদশ বর্ষীয়া বিধবা কন্যা কালীমতী।

(৩২) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা সমিতির সদস্য

১৮৫৭ সালে স্থাপিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা সমিতির অন্যতম সদস্য তথা ফেলো মনোনীত হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়। এই সমিতির ৩৯ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ছয় জন ছিলেন ভারতীয়।

(৩৩) বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন

১৮৫৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৮৫৮ সালের মে মাস অবধি সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। মোট ১৩০০ ছাত্রীসংবলিত এই বিদ্যালয়গুলির জন্য তার খরচ হত মাসে ৮৪৫ টাকা।

(৩৪) সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ইস্তফা

১৮৫৮ সালের ৩ নভেম্বর শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তার সঙ্গে মতবিরোধ হলে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ ত্যাগ করেন।

(৩৫) সরকারের সাথে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সম্পর্ক ছিন্ন

প্রায় ৩৯ বছর বয়সে সরকারের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয়। যদিও নিজের কাজের জন্য সরকারের তরফ থেকে কোনও রূপ স্বীকৃতি বা পেনসন তিনি পান নি।

বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ

সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন।

বাংলা লিপির আবিষ্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তার। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার

বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন।

শিক্ষাবিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষা বিস্তারে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করেন।

(১) সোমপ্রকাশ পত্রিকা প্রকাশ

১৮৫৮ সালের ১৫ নভেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অবদানে প্রকাশিত সোমপ্রকাশ পত্রিকা দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত প্রথম পত্রিকা যাতে রাজনৈতিক বিষয় স্থান পেয়েছিল।

(২) গণশিক্ষার প্রসার

১৮৫৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গণশিক্ষার প্রসারে সরকারি অনুদানের জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলার রাজ্যপাল -এর (গভর্নরের) নিকট আবেদন করেন।

(৩) সীতার বনবাস রচনা

১৮৬০ সালের ১২ এপ্রিল ভবভূতির উত্তর রামচরিত অবলম্বনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ সীতার বনবাস প্রকাশিত হয়। কথিত আছে বইখানি তিনি রচনা করেছিলেন মাত্র চারদিনে।

(৪) মৌলিক গদ্য রচনা

বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক গদ্যরচনা ‘প্রভাবতী সম্ভাষন’ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এক অনন্য কীর্তি।

 (৫) ভ্রান্তিবিলাস রচনা

উইলিয়াম শেক্সপিয়র রচিত কমেডি অফ এররস্ অবলম্বনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা করেন বাংলা গ্রন্থ ভ্রান্তিবিলাস। কথিত আছে যে, মাত্র পনেরো দিনে তিনি এই ভাবানুবাদটি রচনা করেছিলেন।

(৬) বিজ্ঞান সভায় অর্থ দান

১৮৭০ সালের জানুয়ারি মাসে ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের বিজ্ঞান সভায় এক হাজার টাকা দান করেন বিদ্যাসাগর মহাশয়।

(৭) বিদ্যাসাগর কলেজ প্রতিষ্ঠা

১৮৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে স্থাপিত হয় মেট্রোপলিটান কলেজ। এই কলেজটিই বর্তমানে কলকাতার বিখ্যাত বিদ্যাসাগর কলেজ নামে অভিহিত।

নারীশিক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান

বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন নারীশিক্ষার বিস্তারের পথিকৃৎ। তিনি উপলব্ধি করেন যে, নারিজাতির উন্নতি না ঘটলে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয়।

(১) বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠা

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ড্রিংকওয়াটার বিটন উদ্যোগী হয়ে কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই প্রথম ভারতীয় বালিকা বিদ্যালয়। বিদ্যসাগসর ছিলেন এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক। এটি বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত।

(২) বর্ধমানে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান জেলায় মেয়েদের জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

(৩) স্ত্রী শিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনী প্রতিষ্ঠা

গ্রামাঞ্চলে নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলার বিভিন্ন জেলায় স্ত্রীশিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনী প্রতিষ্ঠা করেন।

(৪) ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে নদীয়া, বর্ধমান, হুগলী ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় ১৩০০ ছাত্রী এই স্কুলগুলিতে পড়াশোনা করত।

(৫) আর্থিক সহায়তার জন্য সরকারের কাছে আবেদন

পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ধারাবাহিক তদবিরের পর সরকার এই স্কুলগুলোর কিছু আর্থিক ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়।

(৬) ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা

নিজের মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিজ গ্রাম বীরসিংহে ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

বিশিষ্ট মনীষী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত গ্রন্থাবলি

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত গ্রন্থাবলি বিভিন্ন ভাবে আলোচনা করা যায়।

পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত শিক্ষামূলক গ্রন্থ

‘বর্ণপরিচয়’ (১ম ও ২য় ভাগ, ১৮৫৫), ‘ঋজুপাঠ’ (১ম, ২য় ও ৩য় ভাগ, ১৮৫১-৫২), ‘সংস্কৃৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা’ (১৮৫১)।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত অনুবাদ গ্রন্থ

বিশিষ্ট মনীষী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত বিভিন্ন অনুবাদমূলক গ্ৰন্থ গুলি হল –

(১) হিন্দি থেকে বাংলা

‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ (১৮৪৭)।

(২) সংস্কৃৃত থেকে বাংলা

শকুন্তলা‘ (১৮৫৪), ‘সীতার বনবাস’ (১৮৬০), ‘মহাভারতের উপক্রমণিকা’ (১৮৬০), ‘বামনাখ্যানম্’ (১৮৭৩)।

(৩) ইংরেজি থেকে বাংলা  

‘বাঙ্গালার ইতিহাস’ (১৮৪৮), ‘জীবনচরিত’ (১৮৪৯), ‘নীতিবোধ’ (১৮৫১), ‘বোধোদয়’ (১৮৫১), ‘কথামালা’ (১৮৫৬), ‘চরিতাবলী’ (১৮৫৭), ‘ভ্রান্তিবিলাস’ (১৮৬১)।

দয়ারসাগর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ইংরেজি গ্রন্থ

‘পোয়েটিক্যাল সিলেকশনস্’, ‘সিলেকশনস্ ফ্রম গোল্ডস্মিথ’, ‘সিলেকশনস্ ফ্রম ইংলিশ লিটারেচার’।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত মৌলিক গ্রন্থ

‘সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব’ (১৮৫৩), ‘বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদবিষয়ক প্রস্তাব’ (১৮৫৫), ‘বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদবিষয়ক প্রস্তাব’ (১৮৭১), ‘অতি অল্প হইল’ (১৮৭৩), ‘আবার অতি অল্প হইল’ (১৮৭৩), ‘ব্রজবিলাস’ (১৮৮৪), ‘রত্নপরীক্ষা’ (১৮৮৬), প্রভাবতী সম্ভাষণ (সম্ভবত ১৮৬৩), জীবন-চরিত (১৮৯১ ; মরণোত্তর প্রকাশিত), শব্দমঞ্জরী (১৮৬৪), নিষ্কৃতি লাভের প্রয়াস (১৮৮৮), ভূগোল খগোল বর্ণনম্ (১৮৯১ ; মরণোত্তর প্রকাশিত) প্রভৃতি।

পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পাদিত গ্রন্থ

অন্নদামঙ্গল (১৮৪৭), কিরাতার্জ্জুনীয়ম্ (১৮৫৩), সর্বদর্শনসংগ্রহ (১৮৫৩-৫৮), শিশুপালবধ (১৮৫৩), কুমারসম্ভবম্ (১৮৬২), কাদম্বরী (১৮৬২), বাল্মীকি রামায়ণ (১৮৬২), রঘুবংশম্ (১৮৫৩), মেঘদূতম্ (১৮৬৯), উত্তরচরিতম্ (১৮৭২), অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ (১৮৭১), হর্ষচরিতম্ (১৮৮৩) প্রভৃতি।

বাংলা সাহিত্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক গদ্যকার মনে করা হয়।

  • (১) বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আগমনের বহুপূর্বেই গদ্যরচনার সূত্রপাত ঘটেছিল। কিন্তু সেইসব গদ্য ছিল শিল্পগুণবর্জিত নীরস এবং অনেক ক্ষেত্রেই অসংলগ্ন বাক্যসমষ্টি।
  • (২) বিদ্যাসাগর সর্বপ্রথম বাংলা সাধু গদ্যের একটি মান্য ধ্রুবক নির্দেশনা করেন।
  • (৩) প্রয়োজনবোধে সাধু গদ্যে চলিত ভাষার গতিশীলতাও যুক্ত করেন বিদ্যাসাগর।
  • (৪) কল্পনা ও স্বকীয় পাণ্ডিত্যের সংমিশ্রণে যে গদ্যভাষার জন্ম তিনি দেন, তা ছিল সরস, সুমধুর, সুশ্রাব্য, ছন্দোময় ও গতিশীল। সেই অর্থে তিনি ছিলেন বাংলা গদ্যের নব জন্মদাতা – তিনি বাংলা আধুনিক গদ্যের জনক।
  • (৫) মান্য সাধু বাংলা গদ্যের শিল্পরূপটি ঠিক কিরকম হতে পারে, তার প্রথম আভাস পাওয়া গিয়েছিল, সংস্কৃত সাহিত্য থেকে অনূদিত বিদ্যাসাগরের বাংলা রচনাগুলিতে।
  • (৬) চিত্ররূপময়, কাব্যিক ও অলংকার বহুল গদ্যভাষার পাশাপাশি প্রয়োজন বোধে লৌকিক ভাষার আদর্শে দ্রুতগামী ও শ্লেষাত্মক গদ্যরচনা করতেও দেখা যায় বিদ্যাসাগরকে। ব্রজবিলাস তারই একটি উদাহরণ।
  • (৭) সংস্কৃত কাব্যসাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অসামান্য দখল ছিল। সংস্কৃত শব্দ ও পদবিন্যাসের শ্রুতিমাধুর্য ও গাম্ভীর্যকেই তিনি স্থান দিয়েছিলেন বাংলা গদ্যে, দুর্বোধ্যতা বা দুরুহতাকে নয়।
  • (৮) কাব্যিক ছন্দোময়তায় গদ্যকে দিয়েছিলেন এক ললিত সুডৌল রূপ।
  • (৯) গ্রহণ-বর্জনের অসামান্য ক্ষমতা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মধ্যে ছিল। তার মাধ্যমে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পাঠ্যপুস্তক গদ্যের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহারিক গদ্য ও সমকালীন সংবাদপত্রগুলির নিকৃষ্ট গদ্যনমুনা সব থেকেই ছেঁকে নিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় সাহিত্যগুণ।
  • (১০) ইংরেজি সাহিত্যের আদর্শে যতিচিহ্নের ব্যবহার করে বাংলা সাহিত্যে কালান্তর সূচনা করতেও পিছপা হননি বিদ্যাসাগর মহাশয়।
  • (১১)নিছক ব্যবহারিক বাংলা গদ্যকে উৎকৃষ্ট সাহিত্যিক গদ্যে বিবর্তিত করতে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রয়াস ব্যর্থ হয়নি। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন,

“বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যভাষার উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সুবিভক্ত, সুবিন্যস্ত, সুপরিচ্ছন্ন ও সুসংহত করিয়া তাহাকে সহজ গতি ও কর্মকুশলতা দান করিয়াছিলেন।”

বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়নে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভূমিকা

নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রবল সমর্থক ছিলেন তিনি। হিন্দু বিধবাদের অসহনীয় দুঃখ, তাদের প্রতি পরিবারবর্গের অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার গভীরভাবে ব্যথিত করেছিল তাকে।

  • (১) বিধবাদের মুক্তির জন্য তিনি আজীবন সর্বস্ব পণ করে সংগ্রাম করেছেন। হিন্দুশাস্ত্র উদ্ধৃত করে প্রমাণ করেছেন, যে লোকাচার ধর্মের নামে সমাজে প্রচলিত, আসলে তা ধর্মবহির্ভূত স্থবিরতার আচারমাত্র।
  • (২) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আন্দোলনের ফলেই ১৮৫৬ সালে সরকার বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা করেন।
  • (৩) শুধু আইন প্রণয়নেই ক্ষান্ত থাকেননি বিদ্যাসাগর মহাশয়। তার উদ্যোগে একাধিক বিধবা বিবাহের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। তার পুত্র নারায়ণচন্দ্রও এক ভাগ্যহীনা বিধবাকে বিবাহ করেন।
  • (৪) এই কাজের জন্য সেযুগের রক্ষণশীল সমাজ ও সমাজপতিদের কঠোর বিদ্রুপ ও অপমানও সহ্য করতে হয় বিদ্যাসাগরকে।
  • (৫) বিধবা বিবাহ প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বহুবিবাহের মতো একটি কুপ্রথাকে নির্মূল করতেও আজীবন সংগ্রাম করেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। প্রচার করেন বাল্যবিবাহ রোধের সপক্ষেও।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের চরিত্র

আদর্শ রূপায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর ছিলেন নির্মম, কঠোর ও আপোসহীন। তার চরিত্রের উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল। –

  • (১) বিবেকানন্দ ১৮৮৬ সালে বিদ্যাসাগর পরিচালিত মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনের বৌবাজার শাখার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। কিন্তু কর্তব্যকর্মে অবহেলার কারণে একমাসের মধ্যেই সেখান থেকে বরখাস্ত করা হয়।
  • (২) সে সময়ের বিখ্যাত বাগ্মী তথা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রগুরু বলে পরিচিত সুরেন্দ্রনাথকে তার অসুবিধার সময়ে চাকরি দিয়েছিলেন, কিন্তু সুরেন্দ্রনাথ -এর নিষ্ঠার অভাব দেখে তাঁকে চাকরি থেকে সরিয়েও দিয়েছিলেন।
  • (৩) বিদ্যালয় তহবিলে সামান্য গরমিল লক্ষ্য করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজের জামাই সূর্যকুমারকে স্কুলের দায়িত্ব থেকে এক কথায় অপসারিত করেন।
  • (৪) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন জানলেন পুত্র নারায়নচন্দ্র ‘যথেচ্ছাচারী ও কুপথগামী’ হয়েছেন তখন পুত্রের সাথে সমস্ত ‘সংস্রব ও সম্পর্ক’ পরিত্যাগ করেন। এই ধরণেরই মানুষ ছিলেন বিদ্যাসাগর।
  • (৫) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্র ছিল কঠোর ও কোমলের সংমিশ্রণ। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন প্রবল জেদী ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন।
  • (৬) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট মাথা নত করার থেকে কাজ থেকে অবসর নেওয়া শ্রেয় বলে মনে করতেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়।
  • (৭) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ইংরেজকেও প্রভুর দৃষ্টিতে দেখতেন না। তাদের সমস্ত অন্যায়ের প্রতিবাদে তার কণ্ঠরোধ করা সম্ভবপর হয় নি।
  • (৮) দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য সর্বদা তার হৃদয়ে সহানুভূতি পূর্ণ থাকত। তিনি দরিদ্রদের মনের ব্যথা অনুভবও করতে পারতেন। কেউ অর্থসংকটে পড়ে তার দরজায় এলে তিনি কখনোই তাকে শূন্য হাতে ফেরাতেন না।
  • (৯) বহু দরিদ্র ছাত্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অর্থে পড়াশোনা এবং খাওয়াপরা চালাত।
  • (১০) দুর্ভিক্ষের সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অন্নসত্র খুলে সকলকে দুই বেলা খাওয়াতেন। এজন্য কখনই তিনি লোকের দানের উপর নির্ভর করতেন না। সব খরচ নিজে দিতেন।
  • (১১) মাইকেল মধুসূদন বিদেশে ঋণগ্রস্ত হয়ে যখন তার কাছে অর্থসাহায্য চান, তখন তার নিজের কাছে অর্থ ছিল না। তিনি ধার করেও মাইকেলকে সাহায্য করেন।

দয়ার সাগর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

কার্মাটারে সাঁওতালদের সঙ্গে বাস করতে গিয়ে তিনি তাদেরই একজন হয়ে ওঠেন। দেশের আপামর দরিদ্রসাধারণ সংস্কৃত শাস্ত্রবিশারদ বিদ্যাসাগরকে জানত দয়ার সাগর নামে।

পরম মাতৃভক্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

মাতৃভক্তি ছিল তার চরিত্রে অন্যতম গুণ। মনে করা হয়, বিদ্যাসাগরের সংস্কার আন্দোলন ও মুক্তচেতনার নেপথ্যে জননী ভগবতী দেবীর বিশেষ প্রেরণা ছিল।

  • (১) বীরসিংহ গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মায়ের নির্দেশেই বিদ্যালয়, অবৈতনিক ছাত্রাবাস ইত্যাদি গড়েছিলেন।
  • (২) বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বিধবা বিবাহ প্রবর্তনেও তার মায়ের বিশেষ অবদান ছিল। তিনিই পুত্রকে আদেশ করেছিলেন, বিধবাদের দুঃখনিবৃত্তির বন্দোবস্ত করতে।
  • (৩) মায়ের ডাকেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একবার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ দামোদর নদ সাঁতরে পার হয়েছিলেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের তিরোধান

বাংলার নবজাগরণ -এর অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রয়াত হন ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই কলকাতার বাদুড়বাগানস্থ বাসভবনে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর ১০ মাস ৪ দিন।

মনীষী বিদ্যাসাগরের অসমাপ্ত আত্মজীবনী

মৃত্যুর পর ১৮৯১ সালের সেপ্টেম্বরে তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর চরিত প্রকাশ করেন পুত্র নারায়ণচন্দ্র বিদ্যারত্ন।

পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সম্মানে উদ্যোগ

বিদ্যাসাগরের সম্মানে একাধিক উদ্যোগ গৃহীত হয়।

  • (১) ১৯৮১ সালে মেদিনীপুর শহরে স্থাপিত হয় তার নামাঙ্কিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।
  • (২) ১৯৯২ সালে বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ শতবর্ষ উপলক্ষ্যে কলকাতা ও হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেতু দ্বিতীয় হুগলি সেতু “বিদ্যাসাগর সেতু” নামে উৎসর্গিত হয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্রায়ন

পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের লেখা অনুবাদিত গল্প অবলম্বনে তৈরী হয় ভ্রান্তিবিলাস চলচ্চিত্র।

উপসংহার :- বাঙালি সমাজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় আজও এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে তার স্মৃতিরক্ষায় স্থাপিত হয়েছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী কলকাতার আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সেতু তারই নামে উৎসর্গিত।

[FAQ] ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

২৬ শে সেপ্টেম্বর ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে।

২. ভ্রান্তিবিলাস কে রচনা করেন এটি কোন গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত হয়েছিল?

ভ্রান্তিবিলাস রচনা করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এটি শেকসপিয়ার রচিত কমেডি অব এররস গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত হয়েছিল।

৩. ঈশ্বরচন্দ্র কবে বিদ্যাসাগর উপাধি পান?

১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে।

৪. বোধোদয় গ্রন্থটি কার লেখা?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

৫. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছদ্মনাম কি কি?

কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য, কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপো সহচরস্য।

৬. সর্বশুভকরী পত্রিকার সম্পাদক কে?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

৭. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৃত্যু কবে হয়েছিল?

২৯ জুলাই ১৮৯১ (বয়স ৭০)।

৮. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম কি?

বোধোদয় ও বর্ণ পরিচয়।

৯. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পাদিত পত্রিকার নাম কি?

সর্বশুভকরী পত্রিকা।

১০. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পিতা ও মাতার নাম কি

পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভগবতী দেবী।

১১. সংস্কৃত প্রেস কে স্থাপন করেন?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

১২. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রকৃত নাম কি?

ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

১৩. হিন্দু বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করেন কে?

বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় লর্ড ক্যানিং।

১৪. বর্ণ পরিচয় কবে প্রকাশিত হয়?

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে।

১৫. নর্মাল স্কুল কে প্রতিষ্ঠা করেন?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

১৬. বর্ণ পরিচয় গ্রন্থ কে রচনা করেন?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

১৭. বিধবা বিবাহ আইন কবে পাস হয়?

১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment