উইলিয়াম শেকসপীয়ার

বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম শেকসপীয়ার প্রসঙ্গে তার জন্ম, পিতৃপরিচয়, বিবাহিত জীবন, লণ্ডন আগমন, লেখার সূত্রপাত, রচিত উপন্যাস, ছোট ও বড়ো গল্প, নাটক, প্রবন্ধ ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম শেকসপীয়ার

ঐতিহাসিক চরিত্রউইলিয়ম শেকসপীয়র
জন্ম২৩ এপ্রিল, ১৫৬৪ খ্রি:
পরিচিতিসর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার
উল্লেখযোগ্য নাটকম্যাকবেথ, হ্যমলেট
মৃত্যু২৩ এপ্রিল, ১৬১৬ খ্রি:
বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম শেকসপীয়ার

ভূমিকা :- বিশ্বের ইতিহাসে উইলিয়ম শেকসপীয়র এক বিস্ময়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার, যার সৃষ্টি সম্বন্ধে এত বেশি আলোচনা হয়েছে, তাঁর অর্ধেকও অন্যদের নিয়ে হয়েছে কিনা সন্দেহ। অথচ তাঁর জীবনকাহিনী সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানা যায় না বললেই চলে।

শেকসপীয়রের জন্ম

ইংল্যান্ড-এর ইয়র্কশায়ারের অন্তর্গত এভন নদীর তীরে স্ট্রীটফোর্ড শহরে এক দরিদ্র পরিবারে শেকসপীয়র জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় চার্চের তথ্য থেকে যা জানা যায় তাতে অনুমান তিনি সম্ভবত ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন।

নাট্যকার শেকসপীয়রের পিতৃপরিচয়

তাঁর পিতা জন শেকসপীয়রের। তার মা মেরী ছিলেন আর্ডেন পরিবারের সন্তান। শেকসপীয়র তাঁর As you like it নাটকে মায়ের নামকে অমর করে রেখেছেন।

শেকসপীয়রের বিবাহিত জীবন

আঠার বছর বয়সে শেকসপীয়র বিবাহ করেন তাঁর চেয়ে ৮ বছরের বড় এ্যানি হাতওয়েকে। বিবাহের কয়েক মাসের মধ্যে এ্যানি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। তার নাম রাখ্য সুসানা। এর দু’বছর পর দুটি যজম সন্তানের জন্ম হয়। ছেলে হ্যামলেট মাত্র ১ বছর বেঁচে ছিল।

নাট্যকার শেকসপীয়রের নানান কাজকর্ম

শোনা যায় সংসার নির্বাহের জন্য তাঁকে নানান কাজকর্ম করতে হত। একবার ক্ষুধার জ্বালায় স্যার টমাসের একটি হরিণকে হত্যা করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়াতে তিনি পালিয়ে আসেন লন্ডনে। কিন্তু এই কাহিনী কতদূর সত্য সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়ে যায়।

শেকসপীয়রের লন্ডনে আগমন

তবে যে কারণেই হোক তিনি স্ট্রীটফোর্ড ত্যাগ করে লন্ডন শহরে আসেন। সম্পূর্ণ অপরিচিত শহরে কাজের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে পেশাদারী রঙ্গমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। নাট্যজগতের সাথে এই প্রত্যক্ষ পরিচয়ই তাঁর অন্তরের সুপ্ত প্রতিভার বীজকে ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত করে তোলে।

নাট্যকার শেকসপীয়রের নাটক লেখার সূত্রপাত

নাট্য সম্পাদনা কাজ করতে করতেই শেকসপীয়র অনুভব করলেন দর্শকের মনোরঞ্জনের উপযোগী ভাল নাটকের একান্তই অভাব। সম্ভবত মঞ্চের প্রয়োজনেই শেকসপীয়রের নাটক লেখার সূত্রপাত। ঠিক কখন, তা অনুমান করা কঠিন।

শেকসপীয়রের প্রথম নাটক রচনা

সুদীর্ঘ গবেষণার পর প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে, তা থেকে অনুমান করা হয় যে তাঁর নাটক রচনার সূত্রপাত ১৫৯১ থেকে ১৫৯২ সাল। এই সময় তিনি রচনা করেন তাঁর ঐতিহাসিক নাটক হেনরি VI-এর তিন খণ্ড। নাটক রচনার ক্ষেত্রে এগুলি যে তার হাতেখড়ি তা সহজেই অনুমান করা যায়। কারণ এতে শেকস্পীয়রের প্রতিভার সামান্যতম পরিচয় নেই। এর পরের বছর লেখা নাটক রিচার্ড থ্রি (Richard III) অনেকাংশে উন্নত।

নাট্যকার শেকসপীয়রের শহরে প্লেগ

১৫৯২ সালে ইংল্যান্ডে ভয়াবহ প্লেগ রোগ দেখা দিয়েছিল। তখন প্লেগের অর্থ নিশ্চিত মৃত্যু। দলে দলে মানুষ শহর ছেড়ে পালাতে আরম্ভ করল। অনিবার্যভাবে রঙ্গশালাও বন্ধ হয়ে গেল।

শেকসপীয়রের কাব্য রচনা

নাটক লিখবার তাগিদ নেই; শেকসপীয়র রচনা করলেন তাঁর দুটি কাব্য, ভেনাস ও অ্যাডোনিস এবং দি রেপ অফ্‌ লুক্রি। এই দুটি দীর্ঘ কবিতাই তিনি সাদমটনের আর্লকে উৎসর্গ করেন।

লর্ড চেম্বারলিনের নাট্যগোষ্ঠীতে শেকসপীয়রের যোগদান

কবি নাট্যকার হিসাবে শেক্সপীয়রের খ্যাতি ক্রমশই চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তাদের দলভূক্ত হবার জন্য তাঁর কাছে আমন্ত্রণ আসছিল। তিনি লর্ড চেম্বারলিনের নাট্যগোষ্ঠীতে যোগ দিলেন (১৫৯৪)।

শেকসপীয়রের কালজয়ী নাটক রচনা

এই সময় থেকে শেক্সপীয়রের হাত থেকে বার হতে থাকে এক একটি অবিস্মরণীয় নাটক টেমিং অব দি সু, রোমিও জুলিয়েট, মার্চেন্ট অব ভেনিস, হেনরি ফোর, জুলিয়াস সিজার, ওথেলো, হ্যামলেট। তাঁর শেষ নাটক রচনা করেন ১৬১৩ সালে হেনরি এইট।

বিরাট সম্পত্তির অধিকারী শেকসপীয়র

একদিন যিনি তস্করের মত স্ট্রীটফোর্ড ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন, সেখানেই বিরাট সম্পত্তি কিনলেন। ইতিপূর্বে লন্ডন শহরেও একটি বাড়ি কিনেছিলেন। সম্ভবত ১৬১০ সাল পর্যন্ত এই বাড়িতেই বাস করেছিলেন শেক্সপীয়র।

অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শেক্সপীয়র

শুধু নাটক নয়, কবি হিসাবেও তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিদরে অন্যতম। তাঁর প্রতিটি কবিতাই এক অপূর্ব কাব্যদ্যুতিতে উজ্জ্বল। দুটি কাব্য এবং ১৫৪টি সনেট তিনি রচনা করেছেন।

শেকসপীয়রের প্রথম কাব্য

কবি শেকসপীয়রের প্রথম কাব্য ভেনাস এবং অ্যাডোনিস। মানুষের অন্তরে দেহগত যে কামনার জন্ম সাহিত্যে তার প্রকাশ ঘটেছে নবজাগরণ বা রেনেসাঁ উত্তর পূর্বে। একদিকে দেহগত কামনা অন্য দিকে সৌন্দর্যের প্রতি আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়ে উঠেছে ভেনাস এবং অ্যাডোনিসে।

শেকসপীয়রের ভেনাস এবং অ্যাডোনিস কাব্যের বর্ণনা

  • (১) কিশোর অ্যাডোনিসের সৌন্দর্যে মুগ্ধ ভেনাস। তার যৌবনে রক্তের স্পন্দন। সে সমস্ত মন প্রাণ সত্ত্বা দিয়ে পেতে চায় অ্যাডোনিসকে। পূর্ণ করতে চায় তার দেহমনের আকাঙ্ক্ষা।
  • (২) কিন্তু পুরুষ কি শুধুই নারীর দেহের মধ্যে পরিপূর্ণ তৃপ্তি পেতে পারে? সে যেতে চায় বন্য বরাহ শিকার করতে। চমকে ওঠে ভেনাস। মনের মধ্যে জেগে ওঠে শঙ্কা যদি কোনো বিপদ হয় তার প্রিয়তমের।
  • (৩) সে বলে ওঠে, বরাহ… সে যখন ক্রুদ্ধ হয় তার দুই চোখ জ্বলে ওঠে জোনাকির মত যেখানেই সে যাক তার দীর্ঘ নাসিকায় সৃষ্টি করে কবর।….. যদি সে তোমাকে কাছে পায়… উৎপাদিত তৃণের মতই উপড়ে আনবে তোমার সৌন্দর্য।
  • (৪) তবুও শিকারে যায় অ্যাডোনিস। দুর্ভাগ্য তার, বন্য বরাহের হিংস্র আক্রমণে ছিন্ন হয়ে যায় তার দেহ। হাহাকার করে ওঠে ভেনাস। প্রিয়তমের মৃত্যুর বেদনায় সমস্ত অন্তর রক্তাক্ত হয়ে ওঠে।

শেকসপীয়রের নাটকের বিভাগ

নাট্যকার শেকসপীয়রের নাটকগুলির মধ্যে রয়েছে কমেডি, ঐতিহাসিক নাটক, ট্রাজেডি, রোমাঞ্চ। রচনার কাল অনুসারে শেকসপীয়রের নাটকগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

  • (১) প্রথম ভাগের বিস্তার ১৫৮৮ থেকে ১৫৯৫ সাল পর্যন্ত। এই পর্বের উল্লেখযোগ্য নাটক রিচার্ড থ্রি, কমেডি অব এররস, টেমিং অফ দি সু, রোমিও জুলিয়েট।
  • (২) ১৫৯৬ থেকে ১৬০৮ সময়কালে রচিত হয়েছে তাঁর শ্রেষ্ঠ চারখানি ট্রাজেডি – হ্যামলেট, ওথেলো, কিং লিয়ার, ম্যাকবেথ।
  • (৩) শেষ পর্বে যে পাঁচখানি নাটক রচনা করেন তার মধ্যে দুটি অসমাপ্ত, তিনখানি সমাপ্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দি টেম্পেস্ট।

শেকসপীয়রের কমেডি নাটক

নাট্যকার শেক্সপীয়রের উল্লেখযোগ্য কমেডি হল লাভস নেভার লস্ট, দি টু জেন্টলম্যান অফ ভেরোনা, দি টেমিং অফ দি সু, কমেডি অফ এররস, এ মিড সামার নাইটস ড্রিম, মার্চেন্ট অফ ভেনিস, ম্যাচ অ্যাডো অ্যাবাইট নাথিং, টুয়েলফথ নাইট, অ্যাজ ইউ লাইক ইট। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি বাদ দিলে সমস্ত নাটকগুলিই এক অসাধারণ সৌন্দর্য উজ্জ্বল। প্রতিটি চরিত্রই জীবন্ত, প্রাণবন্ত, সজীবতায় ভরপুর।

শেকসপীয়রের শ্রেষ্ঠ তিনটি কমেডি

নাট্যকার শেকসপীয়রের বিখ্যাত কমেডিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কমেডি হল, দি মার্চেন্ট অফ ভেনিস (The Merchant of Venice) I শেকসপীয়রের শ্রেষ্ঠ তিনটি কমেডি হল অ্যাজ ইউ লাইক ইট, টুয়েলথ নাইট, মার্চ এ্যাডো এবাউট নাথিং।

শেকসপীয়রের কমিডিতে মানব জীবন

এই কমেডিগুলির মধ্যে মানব জীবন এক অসামান্য সৌন্দর্যে প্রস্ফুটিত হয়ে আছে। হাসি কান্না আনন্দ সুখ দুঃখ মজার এক আশ্চর্য সংমিশ্রণ ঘটেছে এই নাটকগুলির মধ্যে। নাটকের সেই সমস্ত পাত্র-পাত্রী যারা সকল অবস্থার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে, অন্যকে ভালবেসেছে, তারাই একমাত্র জীবনে সুখী হতে পেরেছে।

শেকসপীয়রের কমিডিতে নারী চরিত্র

এই কমেডির নায়িকারা সকলেই আদর্শ চরিত্রের। অন্যের প্রতি তারা সহৃদয়। পরের জন্য তারা দ্বিধাহীন চিত্তে নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দেয়। একদিকে তারা করুণাময়ী অন্যদিকে তারা বুদ্ধিমতী, শেকসপীয়রের কমেডিতে নারী চরিত্রের শ্রেষ্ঠত্বের কাছে পুরুষের চরিত্র ম্লান হয়ে যায়।

বিস্ময় চরিত্র শেকসপীয়রের ঐতিহাসিক নাটক

ইতিহাসের প্রতি শেকসপীয়রের ছিল গভীর আগ্রহ। একদিকে ইংল্যান্ডের ইতিহাস অন্যদিকে গ্রীক ও রোমান ইতিহাসের ঘটনা থেকেই তিনি তার ঐতিহাসিক নাটকগুলিকে অসাধারণ পর্যায়ে উন্নীত করেছে। ঐতিহাসিক নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রিচার্ড থ্রি, হেনরি ফোর, জুলিয়াস সীজার, অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রা

শেকসপীয়রের সৃষ্টি আশ্চর্য চরিত্র

হেনরি ফোর নাটকের এক আশ্চর্য চরিত্র ফলস্টাফ, রাজবিদূষক, সে অফুরন্ত প্রাণরসের উৎস। তার চরিত্রের নানান দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের মনকে কেড়ে নেয়। এমন আশ্চর্য চরিত্র বিশ্বসাহিত্য বিরল।

নাট্যকার শেকসপীয়রের জুলিয়াস সীজার নাটক

  • (১) জুলিয়াস সীজার শেকসপীয়রের আরেকটি বিখ্যাত নাটক। এই নাটকের মুখ্য চরিত্র সীজার, ব্রুটাস এবং অ্যান্টনি। রোম-এর নেতা জুলিয়াস সীজার যুদ্ধ জয় করে দেশে ফিরেছেন। চারদিকে উৎসব। সীজারও উৎসবে যোগ দিতে চলেছেন। সাথে বন্ধু অ্যান্টনি।
  • (২) হঠাৎ পথের মাঝে এক দৈবজ্ঞ এগিয়ে এসে সীজারকে বলে, আগামী ১৫ই মার্চ আপনার সতর্ক থাকবার দিন। সীজার দৈবজ্ঞের কথার গুরুত্ব দেন না। কিন্তু দেশের একদল অভিজাত মানুষ তার এই খ্যাতি ও গৌরবে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। তারা সীজারের প্রিয় বন্ধু ব্রুটাসকে উত্তেজিত করতে থাকে।
  • (৩) সীজারের এই অপ্রতিহত ক্ষমতা যেমন করেই হোক খুন করতেই হবে। না হলে একদিন সীজার সকলকে ক্রীতদাসে পরিণত করবে। কিন্তু ব্রুটাস কোনো ষড়যন্ত্রে যোগ দিতে চাইছিলেন না। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীর দল নানাভাবে ব্রুটাসকে প্ররোচিত করতে থাকে।
  • (৪) মানসিক দিক থেকে দুর্বল ব্রুটাস শেষ পর্যন্ত অসহায়ের মত ষড়যন্ত্রকারীদের ইচ্ছার কাছেই আত্মসমর্পণ করেন। ১৫ই মার্চ সেনেটের অধিবেশনের দিন। সকল সদস্যরা সেই দিন সেনেটে উপস্থিত থাকবে। কিন্তু আগের রাতে বারংবার দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন সীজারের স্ত্রী ক্যালপুনিয়া। তার নিষেধ সত্ত্বেও বীর সীজার সেনেটে রায়।
  • (৫) সুযোগ বুঝে বিদ্রোহীর দল একের পর এক ছোরা সীজারের দেহে বিদ্ধ করে। শেষ আঘাত করে ব্রুটাস। প্রিয়তম বন্ধুকে বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখে আর্তনাদ করে ওঠে সীজার, ব্রুটাস তুমিও! সীজারের মৃত্যুতে উল্লাসে ফেটে পড়ে ষড়যন্ত্রকারীর দল। শুধু একজন প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে, সে অ্যান্টনি।
  • (৬) প্রকাশ্য রাজপথে দাঁড়িয়ে জনসাধারণের কাছে সীজারকে হত্যার কারণ বিশ্লেষণ করে ব্রুটাস। তার বক্তৃতায় মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে জনগণ। তারা ব্রুটাসের জয়ধ্বনি করে ভুলে যায় সীজারের কথা।
  • (৭) ব্রুটাস চলে যেতেই বক্তৃতা শুরু করে অ্যান্টনি। সে সুকৌশলে সীজারের প্রতি জনগণের ভালবাসা জাগিয়ে তোলে। তাদের কাছে প্রমাণ করে সীজার একজন মহান মানুষ, তাকে অন্যায়ভাবে ব্রুটাস ও অন্যরা হত্যা করেছে।

শেকসপীয়রের ওথেলো নাটক

  • (১) তুর্কীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ওথেলোকে পাঠনো হল সাইপ্রাসে। তাঁর অনুগামী হল ডেসডিমোনা, বেসিও, ইয়াগো ও তার বৌ এমিলিয়া। যুদ্ধে জয়ী হয় ওথেলো। তাঁর সম্মানে আনন্দ উৎসব হয়। রাত গভীর হতেই নগর রক্ষায় বেসিওর ওপর দিয়ে ডেসডিমোনার শয়নকক্ষে যায় ওথেলো।
  • (২) ইয়াগো এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। বেসিওকে মদ খাইয়ে মিথ্যা গণ্ডগোল সৃষ্টি করে। তারই জন্য তাকে কর্মচ্যুত করে ওথেলো। দুঃখে অনুশোচনায় ভেঙে পড়ে বেসিও। ইয়াগো তাকে বলে ডেসডিমোনার কাছে গিয়ে অনুরোধ করতে। স্ত্রীর কথা শুনলে কখনোই ফেলতে পারবে না।
  • (৩) বেসিও যায় ডেসডিমোনার কাছে। গোপনে ওথেলো ইয়াগোকে ডেকে বলে দুজনের মধ্যে গোপন প্রণয় আছে। ওথেলোর মনের মধ্যে সন্দেহের বীজ জেগে ওঠে। ওথেলো ডেসডিমোনাকে একটি মন্ত্রপূত রুমাল দিয়েছিল। ডেসডিমোনা কখনো সেই রুমালটি নিজের হাতছাড়া করত না।
  • (৪) একদিন ডেসডিমোনার কাছ থেকে রুমালটি হারিয়ে গিয়েছিল। তা কুড়িয়ে নিয়ে এমিলিয়াকে দিল। ইয়াগো দিল বেসিওকে। ডেসডিমোনার কাছে রুমাল না দেখে ওথেলোর সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়। তারই সাথে ওথেলোর মনকে আরো বিষাক্ত করে তোলে ইয়াগো।
  • (৫) ক্রোধে আত্মহারা হয়ে ওথেলো ঘুমন্ত ডেসডিমোনাকে গলা টিপে হত্যা করে। তারপরই আসল সত্য প্রকাশ পায়। ইয়াগোকে বন্দী করা হয় আর ওথেলো নিজেকে বুকে ছুরিবিদ্ধ করে আত্মহত্যা করে। বীর ওথেলোর এই মৃত্যু আমাদের সমস্ত অন্তরকে ব্যথিত করে তোলে।

নাট্যকার শেকসপীয়রের ম্যাকবেথ নাটক

  • (১) শেকসপীয়রের আর একখানি বিখ্যাত নাটক ম্যাকবেথ। শেকসপীয়রের ট্র্যাজিডির সব নায়িকার মধ্যেই যে মহিয়সী রূপের প্রকাশ দেখতে পাই, লেডি ম্যাকবেধের মধ্যে তা পাই না। ম্যাকবেথ সাহসী বীর কিন্তু মানসিক দিক থেকে কিছুটা দুর্বল, তাই স্ত্রীর কথায় সে চালিত হয়।
  • (২) লেডি ম্যাকবেথের প্ররোচনায় সে খুন করে তার রাজাকে। তারপর সিংহাসন অধিকার করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের মৃত্যুবরণ করতে হয়। লেডি ম্যাকবেথের চরিত্রের মধ্যে পাপের পূর্ণ প্রকাশ ঘটলেও তার চরিত্রের অসাধারণ দৃঢ়তা, অদম্য তেজ, দৃপ্ত ভঙ্গি, অরাজের মনোবল আমাদের মুগ্ধ করে। তার প্রতিটি কাজের পেছনে ছিল এক উচ্চাশা। কোনো নীচতার স্পর্শ নেই সেখানে।

শেকসপীয়রের হ্যামলেট নাটক

  • (১) শেকসপীয়রের প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে তাঁর হ্যামলেট নাটকে। এক আশ্চর্য চরিত্র এই হ্যামলেট। সে মানুষের চির রহস্যের, কখনো তার উন্মাদের ভাব, কখনো উচ্ছ্বাস, কখনো আবেগ, এরই সাথে ঘৃণা, বিদ্বেষ, ক্রোধ, প্রতিহিংসা। তার চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব যুগ যুগ ধরে পাঠককে বিভ্রান্ত করে তোলে।
  • (২) তাই বোধহয় নাট্যকার বার্টনাডশ কৌতুক করে বলেছিলেন ডেনমার্কের ঐ পাগল ছেলেটা কি করে তাঁর ভোঁতা তলোয়ার দিয়ে পৃথিবীটাকে জয় করে ফেলল, ভাবতে ভাবতে আমার দাড়ি পেকে গেল।
  • (৩) ডেনমার্কের যুবরাজ হ্যামলেট। সবেমাত্র পিতার মৃত্যু হয়েছে। মা তারই কাকাকে বিবাহ করেছে। পিতার মৃত্যুতে শোকাহত হ্যামলেট একদিন রাতে তার কয়েকজন অনুচর দুর্গপ্রকার পাহারা দিতে দিতে দেখতে পায় হ্যামলেটের পিতার প্রেতমূর্তি।
  • (৪) হ্যামলেট পিতার সেই প্রেতমূর্তির সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে। সেই প্রেমমূর্তি তাকে বলে তার বাগানে ঘুমাবার সময় তারই ভাই (হ্যামলেটের কাকা) কানের মধ্যে বিষ ঢেলে দেয় আর তাতেই তার মৃত্যু হয়। হ্যামলেট যেন এই মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়।
  • (৫) হ্যামলেট বুঝতে পারে তার পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। সে উন্মাদের মত হয়ে ওঠে। তার প্রিয়তমার ওফেলিয়ার সাথে অবধি এমন আচরণ করে যা তার স্বভাববিরুদ্ধ। নিজের অজান্তে ওফেলিয়ার পিতা পলোনিয়াসকে হত্যা করে। মানসিক আঘাতে বিপর্যন্ত ওফেলিয়া আত্মহত্যা করে। আর হ্যামলেট আত্মদ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে।
  • (৬) সে শুধু তার পিতার হত্যাকারীকেই হত্যা করতে চায় না, সে চায় রাজপ্রাসাদের সব পাপ কলুষতা দূর করতে। ষড়যন্ত্রের জাল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। হ্যামলেটের কাকা তাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করতে চায়। কিন্তু সেই বিষ পান করে মারা যান হ্যামলেটের মা।
  • (৭) ক্রুদ্ধ হ্যামলেট তরবারির আঘাতে হত্যা করে কাকাকে। কিন্তু নিজেও বিষাক্ত ছুরির ক্ষতে নিহত হয়। হ্যামলেটের এই মৃত্যু এক বেদনাময় গভীর অনুভূতির স্তরে নিয়ে যায়।

শেকসপীয়রের শেষ পর্যায়ে লেখা নাটক

নাট্যকার শেকসপীয়রের শেষ পর্যায়ের লেখাগুলি ট্রাজেডি বা কমেডি থেকে ভিন্নধর্মী। রোমাঞ্চ, মেলোড্রামা, বিচিত্র কল্পনার এক সংমিশ্রণ ঘটেছে এই সব নাটকে। সিমবেলি, উইন্টার্সটেল, টেমপেস্ট উল্লেখযোগ্য।

অবসর জীবনে শেকসপীয়র

এরপর তিনি অবসর জীবন যাপন করবার জন্য চিরদিনের জন্য লন্ডন শহরের কলকোলাহল, প্রিয় রঙ্গমঞ্চ ত্যাগ করে চলে যান স্ট্রীটফোর্ডে। একটি মাত্র নাটক ছাড়া এই পর্বে আর কিছুই লেখেন নি।

শেকসপীয়রের মৃত্যু

১৬১৬ সালের ২৩ শে এপ্রিল বাহান্নতম জন্মদিনে তাঁর মৃত্যু হল। আগের দিন একটি নিমন্ত্রিত বাড়িতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে মদ্য পান করেন। শীতের রাতে পথেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর সুস্থ হয়ে ওঠেনি শেক্সপীয়র। জন্মদিনেই পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিলেন।

উপসংহার :- সবচেয়ে বিস্ময়ের, শেক্সপীয়র তার নাটকের প্রায় প্রতিটি কাহিনী ধার করেছেন এবং উত্তরণ ঘটিয়েছেন এক অসাধারণত্তে। ক্ষুদ্র দীঘির মধ্যে এনেছেন সমুদ্রের বিশালতা।

(FAQ) বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম শেকসপীয়ার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার কে ছিলেন?

শেকসপীয়র।

২. শেকসপীয়রের জন্ম কখন হয়?

১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে এপ্রিল।

৩. শেকসপীয়রের জন্ম কোন দেশে?

ইংল্যান্ডে।

৪. শেকসপীয়রের দুটি উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম লেখ?

ম্যাকবেথ, হ্যামলেট।

৫. শেকসপীয়রের মৃত্যু কখন হয়?

২৩ এপ্রিল, ১৬১৬ সালে।

Leave a Comment