ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণ ও ফলাফল প্রসঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণ বা প্রেক্ষাপট হিসেবে বলশেভিক বিপ্লবের বিরোধিতা, হিটলারের প্রতি তোষণ নীতি, দ্বিতীয় রণাঙ্গনের প্রশ্ন, নেতৃত্বের পরিবর্তন, রুশ সম্প্রসারণ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে মতভেদ, জার্মানির ক্ষতিপূরণ, আণবিক বোমার গবেষণা এবং ঠান্ডা লড়াইয়ের ফলাফল বা প্রভাব হিসেবে সামরিক জোট গঠন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক বিরোধ, বার্লিন প্রাচীর ধূলিসাৎ, সোভিয়েত রাশিয়ার ভাঙ্গন ও একমেরুকরণ সম্পর্কে জানবো।
কোল্ড ওয়ার বা ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণ ও ফলাফল প্রসঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণ বা প্রেক্ষাপটে হিটলারের প্রতি তোষণ নীতি, রুশ সম্প্রসারণ, জার্মানির ক্ষতিপূরণ, দ্বিতীয় রণাঙ্গনের প্রশ্ন, ঠান্ডা লড়াইয়ের ফলে আন্তর্জাতিক বিরোধ, ঠান্ডা লড়াইয়ের ফলে সোভিয়েত রাশিয়ার ভাঙ্গন, ঠান্ডা লড়াইয়ের ফলে একমেরুকরণ ও ঠান্ডা লড়াইয়ের ফলে বার্লিন প্রাচীর ধূলিসাৎ সম্পর্কে জানব।
ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণ ও ফলাফল
ঐতিহাসিক ঘটনা | ঠাণ্ডা লড়াইয়ের কারণ ও ফলাফল |
সূত্রপাত | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এর পর |
বলশেভিক বিপ্লব | ১৯১৭ খ্রি |
ইয়াল্টা সম্মেলন | ১৯৪৫ খ্রি |
কোরিয়া যুদ্ধ | ১৯৫০ খ্রি |
সুয়েজ সংকট | ১৯৫৬ খ্রি |
কিউবা সংকট | ১৯৬২ খ্রি |
ভূমিকা :- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর পৃথিবীর বেশিরভাগ রাষ্ট্র আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি রাষ্ট্রজোট এবং সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত বা সমর্থকে পরিণত হয়। যুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতি এই দুই শক্তিজোটের দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়। দুই মহাশক্তিজোটের যুদ্ধ-পরবর্তী এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে দ্বি-পাক্ষিক রাজনীতি’ বা ‘দ্বিমেরুকরণ’ বলা হয়। যুদ্ধের পরবর্তীকালে উক্ত দুই শক্তিজোটের মধ্যে দীর্ঘকাল ঠান্ডা লড়াই চলতে থাকে।
ঠাণ্ডা লড়াই
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পরবর্তীকালে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট এবং সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না হলেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চলতে থাকে। প্রকৃত যুদ্ধের সূচনা না হলেও উভয়ের মধ্যে চলতে থাকা এই ছায়াযুদ্ধ বা যুদ্ধের পরিবেশকে ‘ঠান্ডা লড়াই’ নামে অভিহিত করা হয়।
ঠাণ্ডা লড়াইয়ের কারণ বা প্রেক্ষাপট
ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক ভিত্তি দায়ী ছিল, এরকম মনে করা অতি সরলীকরণ হবে। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনাও ঠান্ডা যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি করেছিল। এই কারণগুলি হল –
(ক) বলশেভিক বিপ্লবের বিরোধিতা
রাশিয়ার স্বৈরাচারী জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক বিপ্লব বা রুশ বিপ্লব শুরু হলে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান প্রভৃতি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি রাশিয়ার বিপ্লবকে সুনজরে দেখে নি। তারা বিপ্লবের সময় জারতন্ত্রের সমর্থনে রাশিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠায়। তা সত্ত্বেও বলশেভিক বিপ্লব সফল হয় এবং রাশিয়ায় সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপরও পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি রাশিয়ার সাম্যবাদী সরকারকে উপেক্ষা করে চলতে থাকে। ফলে পশ্চিমি দেশগুলির প্রতি রাশিয়ার মনে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়।
(খ) হিটলারের প্রতি তোষণ নীতি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এর পরবর্তীকালে একনায়কতান্ত্রিক শাসক হিটলার জার্মানির রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন। এই সময় ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স হিটলারের চেয়ে সাম্যবাদী রাশিয়াকে নিজেদের বড়ো শত্রু বলে মনে করত। এদিকে হিটলারও ছিলেন রাশিয়ার কমিউনিস্ট বা সাম্যবাদী শাসনের তীব্র বিরোধী। তাই ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স হিটলারের প্রতি তোষণ নীতি গ্রহণ করে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে হিটলারকে আরও প্ররোচিত করে।
(গ) দ্বিতীয় রণাঙ্গনের প্রশ্ন
- (১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় জার্মানির হিটলার ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণ করেন। হিটলারের আক্রমণের চাপে রাশিয়া নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় জার্মানির আক্রমণের চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে। রাশিয়া মিত্রশক্তির কাছে জার্মানির বিরুদ্ধে পশ্চিম ইউরোপ-এ একটি দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার প্রস্তাব দেয়।
- (২) কিন্তু মিত্রশক্তির সদস্য আমেরিকা ও ইংল্যান্ড দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার বিষয়ে অযথা টালবাহানা করে সময় কাটায়। কিছুদিন পর রাশিয়া তার নিজের শক্তিতে জার্মানির আক্রমণ প্রতিহত করার পর মিত্রপক্ষ পশ্চিম ইউরোপে জার্মানির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলে। আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের এরূপ আচরণে মিত্রশক্তির প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে রাশিয়ার মনে সন্দেহ তৈরি হয়।
(ঘ) নেতৃত্বের পরিবর্তন
- (১) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টের মৃত্যু হলে হ্যারি এস ট্রুম্যান পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এদিকে ইংল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনে উইনস্টন চার্চিল পরাজিত হন এবং শ্রমিক দলের নেতা ক্লেমেন্ট এটলি পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
- (২) আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের পূর্বতন রাষ্ট্রপ্রধানদের আমলে রাশিয়ার সঙ্গে ওই দুটি দেশের যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও বোঝাপড়া ছিল তা পশ্চিমি দেশ দুটির নেতৃত্বের পরিবর্তনের ফলে নষ্ট হয়ে যায়।
- (৩) প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, একসময় রাশিয়ায় কর্মরত সহকারী মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ কেন্নান এক টেলিগ্রাম বার্তায় জানান যে, সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃবৰ্গকে কোনোভাবেই বিশ্বাস করা যায় না, কেননা, তারা কট্টর মার্কস ও লেনিনপন্থী। এই অবস্থায় মার্কিন সামরিক দপ্তর পেন্টাগন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যানকে রাশিয়া সম্পর্কে কঠোর নীতি গ্রহণে উৎসাহী করে তোলে।
(ঙ) রুশ সম্প্রসারণ
- (১) বলশেভিক বিপ্লবের আগে থেকেই রাশিয়া নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে পূর্ব ইউরোপ ও বলকান অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির আধিপত্য হঠিয়ে রুশ সেনা এই সব দেশে প্রবেশ করে। যুদ্ধের পর রাশিয়া এই সব অঞ্চলে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়।
- (২) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ইয়াল্টা সম্মেলন-এ রুশ রাষ্ট্রপতি স্ট্যালিন আমেরিকা ও ইংল্যান্ডকে বুঝিয়ে দেন যে, রাশিয়া নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে পোল্যান্ড, রুমানিয়া প্রভৃতি প্রতিবেশী রাষ্ট্রে রাশিয়ার মিত্র সরকারের প্রতিষ্ঠা চায়। কিন্তু নতুন মার্কিন রাষ্ট্রপতি টুম্যান পূর্ব ইউরোপে রুশ সম্প্রসারণ মানতে রাজি ছিলেন না।
(চ) পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে মতভেদ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর অক্ষশক্তিভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে কীভাবে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করা হবে তা নিয়ে আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও চিন – এই পাঁচটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠন করা হয়। কাউন্সিলের প্রতিটি অধিবেশনেই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ-এর সঙ্গে অন্য চারটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের তীব্র মতভেদ দেখা দেয়। যেমন –
(১) ট্রিয়েস্ট নিয়ে বিরোধ
ট্রিয়েস্ট শহর-সহ সমগ্র অঞ্চলটি মলোটভ যুগোশ্লাভিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে চান। কিন্তু কাউন্সিলের পশ্চিমি মন্ত্রীরা ট্রিয়েস্টকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে একটি মুক্ত বন্দরে পরিণত করতে চান।
(২) ইতালির উপনিবেশ নিয়ে বিরোধ
রাশিয়া আফ্রিকায় অবস্থিত ইতালির উপনিবেশগুলি জাতিপুঞ্জ-এর অছি পরিষদের তত্ত্বাবধানে শাসন করার দাবি জানায়। কিন্তু ইংল্যান্ড নিজ স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার ভয়ে রাশিয়ার দাবির বিরোধিতা করে।
(ছ) জার্মানির ক্ষতিপূরণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করার জন্য জার্মানিকে অভিযুক্ত করে ইয়াল্টা সম্মেলনে (১৯৪৫ খ্রি.) জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যেমন –
(১) ক্ষতিপূরণ আদায়ে আমেরিকার অনীহা
কিছুদিন পর জার্মানির কাছ থেকে আমেরিকা ও ইংল্যান্ড ক্ষতিপূরণ আদায়ে আপত্তি জানায়। তাই রাশিয়া অভিযোগ করে যে, জার্মান সামরিক শক্তিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যেই ইঙ্গ-মার্কিন পক্ষ জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে চাইছে না।
(২) রাশিয়ার উদ্যোগ
এরপর রাশিয়া ইয়াল্টা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের ২০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার দাবি করে। ক্ষতিপূরণের অর্থ না পেয়ে রাশিয়া পূর্ব জার্মানি থেকে কলকারখানার যন্ত্রাংশ তুলে নিয়ে যায়। রাশিয়া পশ্চিমি শক্তিগুলির অধীনে থাকা জার্মানি থেকে ১/৪ অংশ ক্ষতিপূরণ দাবি করে। এর ফলে পশ্চিমি শক্তিগুলির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক যথেষ্ট তিক্ত হয়।
(জ) আণবিক বোমার গবেষণা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়াকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে আমেরিকা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আণবিক বোমা তৈরির এক পরিকল্পনা হাতে নেয়। আমেরিকা গোপনে এই বোমা তৈরি করায় আমেরিকার প্রতি রাশিয়ার সন্দেহ বৃদ্ধি পায়। এরপর জাপান-এর হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে আমেরিকা আণবিক বোমা বর্ষণ করলে রাশিয়া ক্ষুদ্ধ হয়।
ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব
ঠাণ্ডা লড়াই সমগ্ৰ বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিককে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির ওপর এর প্রভাব বেশি পড়েছিল। যেমন –
(১) সামরিক জোট গঠন
ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি সামরিক জোট প্রতিষ্ঠিত হয়।
(২) অস্ত্র প্রতিযোগিতা
ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ‘ন্যাটো’ শিবির এবং সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ‘ওয়ারশ চুক্তি’ শিবির পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামে। উভয় পক্ষই প্রচুর পরিমাণ পরমাণু অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য মজুবত করে রাখে।
(৩) আন্তর্জাতিক বিরোধ
পশ্চিমি জোট ও সমাজতান্ত্রিক জোটের মধ্যে উদ্ভূত ঠান্ডা লড়াইয়ের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকটি সংকট ঘনীভূত হয়। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কোরিয়া যুদ্ধ (১৯৫০ খ্রি.), ভিয়েতনাম যুদ্ধ (১৯৫৬-৭২ খ্রি.), সুয়েজ সংকট (১৯৫৬ খ্রি.), কিউবা সংকট (১৯৬২ খ্রি.) প্রভৃতি।
(৪) বার্লিন প্রাচীর ধূলিসাৎ
ঠান্ডা লড়াইয়ের ফলে বার্লিন প্রাচীর তৈরি হয়েছিল। আবার ঠান্ডা লড়াই-ই ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে এই প্রাচীর ধ্বংসে উদ্যোগ নিয়েছিল।
(৫) সোভিয়েত রাশিয়ার ভাঙন
ঠান্ডা লড়াইয়ে অংশ নিয়ে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ক্রমাগত অস্ত্রনির্মাণে এবং বিভিন্ন দেশকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আর্থিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া ভেঙে যায়।
(৬) স্বাধীনতা লাভ
ঠান্ডা লড়াই এবং এর ফলে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনে কয়েকটি বালটিক রাজ্য এবং পূর্বতন সোভিয়েত রাশিয়ার লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া-সহ বেশ কয়েকটি প্রজাতন্ত্র স্বাধীনতা লাভ করে।
(৭) একমেরুকরণ
ঠাণ্ডা লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সোভিয়েত রাশিয়ার পতন ঘটলে আমেরিকা পৃথিবীর একমাত্র শ্রেষ্ঠ শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ফলে দ্বিমেরু বিশ্বের অবসান ঘটে ও একমেরু বিশ্বব্যবস্থা অর্থাৎ একমেরুকরণ গড়ে ওঠে।
(৮) কমিউনিজমের পতন
রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক জোট পশ্চিমি জোটের বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছিল তাতে কমিউনিস্ট জোটের পরাজয় ঘটে। ফলে বহু দেশে ক্রমে কমিউনিস্ট প্রভাবের অবসান ঘটতে থাকে।
উপসংহার :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব রাজনীতিতে পরস্পর বিরোধী দুটি রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। এর একদিকে ছিল আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি রাষ্ট্রজোট অর্থাৎ প্রথম বিশ্ব এবং অন্যদিকে ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্ব। এই দুই রাষ্ট্রজোটের বিরোধের পরিণতিই হল ঠান্ডা লড়াই।
(FAQ) ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে।
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ।
১৯৬২ খ্রি।
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে।