অস্ট্রো-প্রাশিয়ার যুদ্ধ বা স্যাডোয়ার যুদ্ধ বা কোনিগ্ৰাৎসের যুদ্ধ বা সাত সপ্তাহের যুদ্ধের সময়কাল, বিবাদমান পক্ষ, যুদ্ধের পটভূমি হিসেবে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ, বিয়ারিৎসের গোপন চুক্তি, ইতালির ভূমিকা, যুদ্ধের সূচনা, প্রাশিয়ার সাফল্য, প্রাগের সন্ধি, প্রাগের সন্ধির শর্ত, যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্যের অবসান, প্রাশিয়া ও বিসমার্কের মর্যাদা বৃদ্ধি, রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দু পরিবর্তন, অস্ট্রিয়ার অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা প্রকাশ, ম্যাগি আরদের আংশিক স্বাধীনতা লাভ ও ইতালির ঐক্য সম্পন্ন সম্পর্কে জানবো।
স্যাডোয়ার যুদ্ধ প্রসঙ্গে স্যাডোয়ার যুদ্ধের সময়কাল, স্যাডোয়ার যুদ্ধে বিবাদমান পক্ষ, স্যাডোয়ার যুদ্ধের পটভূমি, স্যাডোয়ার যুদ্ধের সূচনা, স্যাডোয়ার যুদ্ধে প্রাশিয়ার সাফল্য, প্রাগের সন্ধি দ্বারা স্যাডোয়ার যুদ্ধের অবসান, প্রাগের সন্ধির শর্ত, স্যাডোয়ার যুদ্ধে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য খর্ব ও স্যাডোয়ার যুদ্ধের ফলাফল।
অস্ট্রো-প্রাশিয়ার যুদ্ধ বা স্যাডোয়ার যুদ্ধ বা কোনিগ্ৰাৎসের যুদ্ধ বা সাত সপ্তাহের যুদ্ধ
সময়কাল | ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ |
বিবাদমান পক্ষ | প্রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া |
ফলাফল | অস্ট্রিয়ার পরাজয় |
প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী | বিসমার্ক |
পরিস্থিতি | জার্মানির ঐক্য আন্দোলন |
ভূমিকা:- বিসমার্ক জানতেন যে, জার্মানি -র ঐক্যের জন্য অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অপরিহার্য। তাই তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন এবং ইউরোপীয় রাজনীতিতে অস্ট্রিয়াকে মিত্রহীন করতে সচেষ্ট হন।
স্যাডোয়ার যুদ্ধের পটভূমি
অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার মধ্যে সংঘটিত অস্ট্রো-প্রাশিয়া যুদ্ধ বা স্যাডোয়ার যুদ্ধের পটভূমি ছিল নিম্নরূপ। –
(১) ক্রিমিয়ার যুদ্ধ
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ -এ অস্ট্রিয়া রাশিয়া -র বিরুদ্ধাচরণ করায় রাশিয়া অস্ট্রিয়ার উপর ক্ষুব্ধ ছিল। অপরদিকে, পোল বিদ্রোহের সময় প্রাশিয়া রাশিয়াকে নানাভাবে সাহায্য করায় রাশিয়া আসন্ন অস্ট্রো-প্রাশিয়া যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়।
(২) বিয়ারিৎসের গোপন চুক্তি
১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে বিয়ারিৎসের গোপন চুক্তির মাধ্যমে স্থির হয় যে, এই যুদ্ধে ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন নিরপেক্ষ থাকবেন এবং বিনিময়ে ফ্রান্স জার্মানির কিছু ভূখণ্ড লাভ করবে।
(৩) ইতালির ভূমিকা
ইতালির ভেনেশিয়া অস্ট্রিয়ার দখলে ছিল। তাই স্থির হয় যে, এই যুদ্ধকালে ইতালি অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দিলে, ইতালিকে ভেনেশিয়া ফিরে পেতে সাহায্য করা হবে। এইভাবে বিসমার্ক রাশিয়া, ফ্রান্স ও ইতালিকে নিজ পক্ষে টেনে অস্ট্রিয়াকে মিত্রহীন করেন।
স্যাডোয়ার যুদ্ধের সূচনা
গ্যাস্টিনের চুক্তিভঙ্গের অজুহাতে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুন বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। এই যুদ্ধ মাত্র সাত সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিল। এই যুদ্ধ সাত সপ্তাহের যুদ্ধ বা স্যাডোয়ার যুদ্ধ বা কোনিগ্রাৎস-এর যুদ্ধ নামে পরিচিত।
প্রাশিয়ার সাফল্য
এই যুদ্ধে অস্ট্রিয়া শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। প্রাশিয়ার এই সাফল্যের জন্য দুই সেনানায়ক ফন মোল্টকি ও ফন রুম-এর রণকুশলতা, উন্নত অস্ত্রশস্ত্র – বিশেষত নব-আবিষ্কৃত উন্নত রাইফেলের ব্যবহার এবং সর্বোপরি রেলপথ ও টেলিগ্রাফের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর গতিশীলতা বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণের উল্লেখ করা যায়।
ভিয়েনায় উপস্থিত
অস্ট্রিয় বাহিনীর পশ্চাৎধাবন করে প্রাশিয় বাহিনী ভিয়েনার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। প্রাশিয়া-রাজ প্রথম উইলিয়ম ও তাঁর সেনাপতিরা ভিয়েনা দখলে উদগ্রীব হলেও বিসমার্ক তা হতে দেন নি।
প্রাগের সন্ধি
বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় আসেন এবং ২৩শে আগস্ট ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্রাগের সন্ধি দ্বারা এই যুদ্ধের অবসান ঘটে।
প্রাগের সন্ধির শর্ত
এই সন্ধির শর্তানুসারে,
- (১) ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে গঠিত জার্মান রাষ্ট্রসংঘের বিলুপ্তি ঘটে,
- (২) হ্যানোভার, হেসি, ক্যাসেল ও শ্লেজউইগ-হলস্টেন প্রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়,
- (৩) প্রাশিয়ার নেতৃত্বে উত্তর-জার্মান রাষ্ট্রসংঘ গঠিত হয় এবং
- (৪) ইতালি ভেনেশিয়া লাভ করে, ফলত ইতালির ঐক্য আন্দোলন এক ধাপ অগ্রসর হয়।
অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য খর্ব
এখানে বলে রাখা ভালো যে, এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে অস্ট্রিয়াকে কোনও রাজ্যাংশ হারাতে হয় নি, কেবল জার্মানির উপর প্রাধান্য থেকেই সে বঞ্চিত হয়েছিল।
স্যাডোয়ার যুদ্ধের ফলাফল
সমকালীন ইউরোপ -এর ইতিহাসে নানা কারণে স্যাডোয়ার যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক হ্যাজেন ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দকে প্রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও ইউরোপের ইতিহাসে যুগান্তকারী অধ্যায় বলে চিহ্নিত করেছেন।
(১) অস্ট্রিয়ার প্রাধান্যের অবসান
জার্মান ঐক্যের প্রধান শত্রু অস্ট্রিয়ার পরাজয়ে জার্মানির উপর থেকে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য বিলুপ্ত হয় এবং এর ফলে জার্মানির ঐক্যের পথ প্রশস্ত হয়।
(২) প্রাশিয়া ও বিসমার্কের মর্যাদা বৃদ্ধি
যুদ্ধে জয়লাভের ফলে প্রাশিয়ার আন্তর্জাতিক মর্যাদা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এবং জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিসমার্ক অপ্রতিহত হয়ে ওঠেন।
(৩) রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুর পরিবর্তন
অস্ট্রিয়ার পরাজয়ের ফলে মধ্য ইউরোপের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ভিয়েনা থেকে বার্লিনে স্থানান্তরিত হয়।
(৪) অস্ট্রিয়ার আভ্যন্তরীন দুর্বলতা প্রকাশ
যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে অস্ট্রিয়ার অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা সকলের কাছে প্রকট হয়ে ওঠে এবং বহু জাতি ও ভাষাভাষী মানুষকে নিয়ে গঠিত অস্ট্রিয় সাম্রাজ্য -এ বিরাট জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
(৫) ম্যাগিয়ারদের আংশিক স্বাধীনতা লাভ
অস্ট্রিয়াও উপলব্ধি করে যে, জাতীয়তাবাদকে স্বীকৃতি না দিলে অস্ট্রিয়াকে রক্ষা করা যাবে না। এই সময় অস্ট্রিয়ার অন্যতম প্রধান জাতিগোষ্ঠী ম্যাগিয়ার-দের আংশিক স্বাধীনতা দেওয়া হয় এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এর পূর্ব পর্যন্ত এই রাষ্ট্র অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি নামে পরিচিত ছিল।
(৫) ইতালির ঐক্য সম্পন্ন
অস্ট্রো-প্রাশিয়া বা স্যাডোয়ার যুদ্ধের মাধ্যমে ইতালি ভেনেশিয়া লাভ করে এবং তার ঐক্য সম্পন্ন হয়।
উপসংহার:- ফরাসি সীমান্তে প্রাশিয়ার মতো একটি শক্তিশালী রাজ্যের উত্থান ফরাসি স্বার্থ ও নিরাপত্তার পক্ষে অনুকূল ছিল না। এই কারণে ফরাসি জাতি স্যাডোয়ার যুদ্ধে অস্ট্রিয়ার পরাজয়কে নিজেদের পরাজয় বলে মনে করতে থাকে। এই যুদ্ধ ইউরোপের চিরাচরিত শক্তিসাম্যের পরিবর্তন ঘটায়।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “স্যাডোয়ার যুদ্ধ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) স্যাডোয়ার যুদ্ধ বা অস্ট্রো-প্রাশিয়ার যুদ্ধ বা কোনিগ্ৰাৎসের যুদ্ধ বা সাত সপ্তাহের যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়া।
প্রাগের সন্ধি।
অস্ট্রো-প্রাশিয়া যুদ্ধ, সাত সপ্তাহের যুদ্ধ, কোনিগ্ৰাৎসের যুদ্ধ।
এই যুদ্ধ সাত সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিল বলে একে সাত সপ্তাহের যুদ্ধ বলা হয়।
বিসমার্ক।