ভারতের চরমপন্থী নেতা লালা লাজপৎ রায় -এর জন্ম, পিতামাতা, শিক্ষা, কর্মজীবন, আর্যসমাজে যোগদান, জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান, কংগ্রেসের সমালোচনা, জাতীয় আদর্শের ভিত্তি, স্বাধীনতার গুরুত্ব, বঙ্গভঙ্গ রদের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড সফর, কংগ্রেসের ওপর চাপ সৃষ্টি, কৃষক আন্দোলন সংগঠন, গান্ধীর নীতিতে অসম্মতি, স্বরাজ্য দলে যোগদান, সাইমন কমিশন বয়কট মিছিলে যোগদান, গ্ৰন্থ রচনা ও তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামী লালা লাজপৎ রায় প্রসঙ্গে লালা লাজপৎ রায়ের জন্ম, লালা লাজপৎ রায়ের পিতামাতার নাম, লালা লাজপৎ রায়ের শিক্ষা, লালা লাজপৎ রায়ের কর্মজীবন, লালা লাজপৎ রায়ের আর্য সমাজের সাথে সংস্পর্শ, লালা লাজপৎ রায়ের জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান, বঙ্গভঙ্গ রদে লালা লাজপৎ রায়ের অবদান, কৃষক আন্দোলন সংগঠনে লালা লাজপৎ রায়ের ভূমিকা, লালা লাজপৎ রায়ের নির্বাসন, লালা লাজপৎ রায়ের স্বরাজ্য দলে যোগদান, লালা লাজপৎ রায়ের সাইমন কমিশন বয়কট মিছিলে যোগদান, লালা লাজপৎ রায়ের গ্ৰন্থ রচনা, লালা লাজপৎ রায়ের মৃত্যু ও তার প্রতি সম্মাননা।
লালা লাজপৎ রায়
ঐতিহাসিক চরিত্র | লালা লাজপৎ রায় |
জন্ম | ২৮ জানুয়ারি, ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দ |
পিতামাতা | মুনসি রাধা কৃষ্ণণ ও গুলাব দেবী |
পরিচিতি | ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী, চরমপন্থী নেতা |
মৃত্যু | ১৭ ডিসেম্বর, ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা:- ভারত -এ চরমপন্থী আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা এবং সুলেখক, বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও আর্য সমাজের সক্রিয় কর্মী ছিলেন লালা লাজপৎ রায়
লালা লাজপত রায়ের জন্ম
চরমপন্থী নেতা লালা লাজপত রায় ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
লালা লাজপত রায়ের পিতামাতা
তার পিতার নাম মুনসি রাধা কৃষ্ণণএবং মায়ের নাম গুলাব দেবী।
লালা লাজপত রায়ের কর্মজীবন
তিনি কিছু সময়কাল হরিয়াণার রোহতক এবং হিসার শহরে ওকালতি করেন।
লাল-বাল-পাল
বাল গঙ্গাধর তিলক ও বিপিন চন্দ্র পাল -এর সহিত তিনি লাল-বাল-পাল নামেই বিখ্যাত ছিলেন।
আর্য সমাজের সংস্পর্শে লালা লাজপত রায়
ছাত্রজীবনে তিনি ‘আর্য সমাজ’ নেতা গুরু দত্ত ও লালা হংসরাজের সংস্পর্শে আসেন এবং প্রাচীন আর্য বা বৈদিক সভ্যতা সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠেন।
আর্য সমাজে লালা লাজপত রায়ের যোগদান
১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘আর্য সমাজ’-এ যোগদান করেন এবংস্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী প্রবর্তিত ‘শুদ্ধি আন্দোলনের’ একজন শীর্ষস্থানীয় প্রবক্তা-রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
লালা লাজপত রায়ের সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের বাসনা
ম্যাৎসিনী, গ্যারিবল্ডী ও ইউরোপ -এর বিভিন্ন দেশের গুপ্ত সমিতির ইতিহাস পাঠ করে তার মনে সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের বাসনা জাগে।
জাতীয় কংগ্রেসে লালা লাজপত রায়ের যোগদান
১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের এলাহাবাদ অধিবেশনে প্রথম যোগদান করেন। জাতীয় কংগ্রেসের কার্যকলাপ ও আবেদন-নিবেদন নীতি অচিরেই তাঁকে হতাশ করে এবং তিনি এই প্রতিষ্ঠানের ওপর খড়্গহস্ত হয়ে ওঠেন।
জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন কংগ্রেস
তিনি মনে করতেন যে, কংগ্রেস আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের কোনও সম্পর্ক নেই। কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন যে, জনগণের মধ্যেই সার্বভৌমত্বের অবস্থান, জনগণের জন্যই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এবং জনগণের নামেই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।
লালা লাজপত রায়ের মতে দেশপ্রেমিক
তাঁর মতে কংগ্রেসনেতৃবৃন্দকে দেশপ্রেমিক বলা যায় না।কারণ, তাঁরা দেশের জন্য কোনও ত্যাগ স্বীকার করেননি।
কংগ্রেস অধিবেশনে যোগদানে বিরত লালা লাজপত রায়
তিনি বলেন যে কংগ্রেসের বাৎসরিক সমাবেশগুলি উচ্চশিক্ষিত ও বিত্তবান নেতাদের বৈভব ও গরিমা প্রচারের জন্যই অনুষ্ঠিত হয়। এই কারণেই ১৮৯৩ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কোনও কংগ্রেস অধিবেশনে যোগদান করেন নি।
কংগ্রেসের সমালোচনায় লালা লাজপত রায়
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের সমালোচনা করে তিনি লেখেন যে, কেবলমাত্র বক্তৃতা দিয়ে বা কতকগুলি প্রস্তাব পাশ করে রাজনৈতিক সংস্কার আদায় করা যাবে না।
রাজনৈতিক মর্যাদার অধিকারী জাতি
১৯০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বলেন যে, কোনও জাতিই রাজনৈতিক মর্যাদার অধিকারী হতে পারে না, যদি না সে অধিকার ‘ভিক্ষা’ ও ‘দাবির’ মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।
লালা লাজপত রায়ের জাতীয় আদর্শের ভিত্তি
তাঁর জাতীয় আদর্শের মূল ভিত্তি ছিল ভিক্ষানীতি বর্জন, জনগণের প্রতি আস্থা এবং ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণমুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতা—আত্মশক্তি ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে এই স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে।
লালা লাজপত রায়ের স্বাধীনতার গুরুত্ব
তিনি মনে করতেন যে, পৃথিবীর সকল সম্পদ জাতীয় মর্যাদা ও স্বাধীনতার তুলনায় অকিঞ্চিৎকর।
বঙ্গভঙ্গ রদের উদ্দেশ্যে লালা লাজপত রায়ের ইংল্যান্ড সফর
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব রদ করার উদ্দেশ্যে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ইংল্যান্ড -এ যান, এবং হতাশ হয়ে ফিরে এসে গণ-আন্দোলনের পথ ধরেন।
কংগ্রেসের ওপর লালা লাজপত রায়ের চাপ সৃষ্টি
তিনি “নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ” বা ‘স্বদেশী‘ ও ‘বয়কট‘ -এর পূর্ণ সমর্থক ছিলেন। জাতীয় কংগ্রেস যাতে স্বদেশী’ ও ‘বয়কটের’ আদর্শ গ্রহণ করে সেজন্য তিনি তিলকের সঙ্গে মিলিত হয়ে জাতীয় কংগ্রেসের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেন।
কংগ্রেস অধিবেশনে লালা লাজপত রায়ের মন্তব্য
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বারাণসী কংগ্রেসে তিনি বলেন যে, নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ দ্বারা ‘স্বরাজ’ অর্জন একটি আইন-সম্মত পন্থা। তাঁর উদ্যোগে পাঞ্জাবে বেশ কিছু স্বদেশী ব্যাঙ্ক, বিমা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়।
কৃষক আন্দোলন সংগঠনে লালা লাজপত রায়ের ভূমিকা
১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে সরকারের শোষণমূলক ভূমিরাজস্ব আইন ও চেনাব (চন্দ্রভাগা) খাল অঞ্চলে অতিরিক্ত করের বিরুদ্ধে তিনি এক প্রবল কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলন হিংসাশ্রয়ী হয়ে ওঠে। বিদ্রোহী কৃষকরা রাওয়ালপিণ্ডিতে ইংরেজদের বাংলো, বাগান, রেল লাইন, ডাকঘর, গীর্জা ধ্বংস করে।
লালা লাজপত রায়ের নির্বাসন
এই কৃষক আন্দোলনের নায়ক হিসেবে ৯ মে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে বার্মার মান্দালয় দুর্গে নির্বাসিত করা হয়। এর ফলে তিনি ‘বীরের সম্মান’ লাভ করেন।
হোমরুল লীগ অফ আমেরিকা প্রতিষ্ঠা
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এর সময় আমেরিকায় ছিলেন লালা লাজপত রাই। সেখানে ‘হোম রুল লিগ অফ আমেরিকা’র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
গান্ধী নীতিতে লালা লাজপত রায়ের অসম্মতি
১৯২০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে গান্ধীজির অহিংস অসহযোগ আন্দোলন -এর প্রস্তাব গৃহীত হয়। তিনি মনে-প্রাণে মহাত্মা গান্ধীর নীতি বা পন্থাকে মানতে পারেন নি।
স্বরাজ্য দলে লালা লাজপত রায়ের যোগদান
মতিলাল নেহরু ও চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে ‘স্বরাজ্য দল‘ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তাতে যোগ দেন।
সাইমন কমিশন বয়কট মিছিলে লালা লাজপত রায়ের যোগদান
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ‘সাইমন কমিশন‘বয়কট করার জন্য এক মিছিল পরিচালনার সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে এই বৃদ্ধ জননায়ক প্রাণ হারান।
পাঞ্জাব কেশরী লালা লাজপত রায়
তাঁর সংগ্রামী চরিত্রের জন্য তাঁকে ‘শের-ই-পাঞ্জাব’ বা ‘পাঞ্জাব কেশরী’ বা ‘পাঞ্জাবের সিংহ’ বলা হয়।
লালা লাজপত রায়ের গ্ৰন্থ রচনা
তিনি ‘দ্য স্টোরি অফ মাই ডিপোর্টেশন’, ‘আর্য সমাজ’, ‘দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা’, আ হিন্দুজ ইমপ্রেশন’, ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’, ‘আনহ্যাপি ইন্ডিয়া’, ‘ইংল্যান্ডস ডেবট টু ইন্ডিয়া’ ‘দি পলিটিক্যাল ফিউচার অব ইণ্ডিয়া’ নামের বইয়ের লেখক।
হিন্দি সাহিত্যের প্রতি লালা লাজপত রায়ের সেবা
লালা লাজপত রায় হিন্দী ভাষায় মধ্যযুগীয় হিন্দুত্ববাদী রাজা শিবাজী ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী রচনা করেন।
লালা লাজপত রায়ের মৃত্যু
সাইমন কমিশন বয়কটের মিছিলে আহত হয়ে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ
- (১) লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর ফলে সমগ্র দেশ উত্তেজিত হয়ে উঠে। চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগৎ সিং, রাজগুরু ও সুখদেব ও অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লালাজির মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা নেয়।
- (২) ১৯২৮ সনের ১৭ ডিসেম্বর এই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লালা’র মৃত্যুর প্রতিশোধ স্বরুপ ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার সন্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করে।
- (৩) সন্ডার্সকে হত্যা করার জন্য রাজগুরু, সুখদেব ও ভগত সিংকে ব্রিটিশ সরকারের কারাগার থেকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এই ভাবে ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন স্পন্দন সৃষ্টি হয়।
লালা লাজপত রায়কে সম্মাননা
১৯৫৯ সালে লালা লাজপত রায় ট্রাস্টের উদ্বোধন করেন পাঞ্জাবের একদল সমাজসেবী।২০১০ সালে, লালা লাজপত রায় পশুচিকিৎসা এবং প্রাণী বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে হরিয়ানা সরকার।
উপসংহার:- ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশনবয়কটের মিছিলে লাঠিচার্জ হলে তিনি গুরুতর আঘাত পান। তা সত্ত্বেও আন্দোলন থেকে সরেননি। বরং ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমার পিঠে যত আঘাত পড়ল আজ, তা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের কফিনের শেষ পেরেক।’’
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “লালা লাজপত রায়” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) লালা লাজপৎ রায় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
পাঞ্জাব কেশরী।
লালা লাজপত রায়, বাল গঙ্গাধর তিলক ও বিপিনচন্দ্র পাল লাল-বাল-পাল নামে পরিচিত।
ইয়ং ইন্ডিয়া।