ভগৎ সিং

বীর বিপ্লবী শহীদ ভগৎ সিং -এর জন্ম, পিতামাতা, শিক্ষা, নওজোয়ান ভারত সভায় যোগদান, হিন্দুস্তান রিপাবলিক অ্যাসোসিয়েশনে যোগদান, হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনে যোগদান, অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান, যুব আন্দোলনে যোগদান, লাহোরে বোমা বিস্ফোরণ, লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ, দিল্লি অ্যাসেম্বলিতে বোমা নিক্ষেপ, বিপ্লবীদের গ্ৰেপ্তার, লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা, ফাঁসির আদেশ, ফাঁসি কার্যকর, অমরজ্যোতি স্থাপন ও জনপ্রিয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবো।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামী ভগৎ সিং প্রসঙ্গে ভগৎ সিং এর জন্ম, ভগৎ সিং এর পিতামাতা, ভগৎ সিং এর পরিবারের সাথে রাজা রণজিৎ সিংহের যোগাযোগ, আর্য সমাজের সাথে ভগৎ সিং এর পরিবারের যোগাযোগ, গদর পার্টির সাথে ভগৎ সিং এর পরিবারের যোগাযোগ, ভগৎ সিং এর শিক্ষা, ভগৎ সিং এর নওজোয়ান ভারত সভায় যোগদান, হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনে ভগৎ সিং এর যোগদান, ভগৎ সিং কর্তৃক হিন্দুস্তান সোস্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন গঠন, অসহযোগ আন্দোলনে ভগৎ সিং এর যোগদান, লালা লাজপৎ রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ, দিল্লী অ্যাসেম্বলিতে ভগৎ সিং এর বোমা নিক্ষেপ, ভগৎ সিং ও বিপ্লবীদের নিয়ে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা, ভগৎ সিং এর ফাঁসির আদেশ ও ফাঁসি কার্যকর, জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ভগৎ সিং।

শহীদ ভগৎ সিং

ঐতিহাসিক চরিত্রভগৎ সিং
জন্ম২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ
প্রধান সংগঠনহিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন
আন্দোলনভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন
ধর্মশিখ
মৃত্যু২৩ মার্চ, ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ
ভগৎ সিংহ

ভূমিকা:- ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবীছিলেন ভগৎ সিংহ। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী বিপ্লবী। ভারত -এর জাতীয়তাবাদিরা তাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে শ্রদ্ধা করে।

ভগৎ সিংহের জন্ম

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের লায়ালপুর জেলার বাঙ্গার নিকটস্থ খাতকর কালান গ্রামের এক সান্ধু জাট পরিবারে ভগৎ সিংহ জন্মগ্রহণ করেন।

ভগৎ সিংহের পিতামাতা

তার পিতার নাম সর্দার কিসান সিংহ সান্ধু ও মায়ের নাম বিদ্যাবতী।ভগতের নামের অর্থ “ভক্ত”।

রাজা রঞ্জিত সিংহের সাথে পরিবারের যোগ

অতীতে এই পরিবারের কোনো কোনো সদস্য পাঞ্জাবের মহারাজা রঞ্জিৎ সিংহ -এর সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন।

আর্যসমাজের সাথে ভগৎ সিংহের পরিবারের যোগ

ভগতের ঠাকুরদাদা অর্জুন সিংহ ছিলেন দয়ানন্দ সরস্বতীর হিন্দু সমাজ সংস্কার আন্দোলন আর্যসমাজ -এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

গদর পার্টির সাথে ভগৎ সিংহের পরিবারের যোগ

ভগতের বাবা ও দুই কাকা অজিত সিংহ ও স্বরণ সিংহ কর্তার সিং সরভ গ্রেওয়াল ও হরদয়াল নেতৃত্বাধীন গদর পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অজিত সিংহের নামে একটি মামলা দায়ের করা হলে তিনি পারস্যে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। অন্যদিকে ১৯২৫ সালের কাকোরি ট্রেন ডাকাতির ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ১৯২৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর স্বরণ সিংহের ফাঁসি হয়।

ভগৎ সিংহের শিক্ষা

  • (১) ভগতের বাবা তাকে আর্যসমাজি বিদ্যালয় দয়ানন্দ অ্যাংলো-বৈদিক স্কুলে ভর্তি করেন। কিশোর বয়সে তিনি লাহোরের ন্যাশনাল কলেজে পড়াশুনা আরম্ভ করেন।
  • (২) তিনি পাঞ্জাব লেখক দ্বারা রচিত অনেক কবিতা এবং সাহিত্য পাঠ করেন এবং তার পছন্দের কবি ছিলেন আল্লামা ইকবাল।
  • (৩) ভগত সিং মার্কসবাদী সাহিত্য, লিও তলস্তয়, বাকুনিন, আপটম সিনক্লেয়ার ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ নজরুল গভীর মনযোগের সাথে পাঠ করেছিলেন।

নওজোয়ান ভারত সভায় ভগৎ সিংহের যোগদান

বাল্য বিবাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং ‘নওজাওয়ান ভারত সভা’ (ভারত যুব সভা)-এর সদস্য হন। এই সংস্থায় ভগৎ সিং এবং তার বিপ্লবী সহকর্মীরা যুবকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

হিন্দুস্থান রিপাবলিক অ্যাসোসিয়েশনে ভগৎ সিংহের যোগদান

ইতিহাস শিক্ষক প্রফেসর বিদ্যালংকরের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে ভগৎ হিন্দুস্তান রিপাবলিক অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত হন। এখানে রামপ্রসাদ বিসমিল, চন্দ্রশেখর আজাদ এবং আসফাক উল্লা খানের মত বিশিষ্ট নেতারা ছিলেন।

হিন্দুস্তান সোস্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন গঠন

তিনি হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের (এইচআরএ) সঙ্গে যুক্ত হয়ে মেধা, জ্ঞান ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতায় অচিরেই এই সংগঠনে নেতায় পরিণত হন। তিনি সংগঠনটিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে এটিকে হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনে (এইচএসআরএ) রূপান্তরিত করেন।

অসহযোগ আন্দোলনে ভগৎ সিংহের যোগদান

মাত্র তেরো বছর বয়সে ভগৎ মহাত্মা গান্ধীঅসহযোগ আন্দোলন -এ যোগ দেন। এই সময় তিনি প্রকাশ্যে ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরোধিতা করেন এবং তার সরকারি স্কুলবই ও বিলিতি স্কুল ইউনিফর্ম পুড়িয়ে ফেলেন।

যুব আন্দোলনে ভগৎ সিংহের যোগদান

চৌরিচৌরা ঘটনায় গণ-হিংসার কারণে কয়েকজন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হলে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। এতে হতাশ হয়ে ভগৎ যুব আন্দোলন -এ (বিপ্লবী) যোগ দেন এবং সশস্ত্র বিপ্লবের পন্থায় ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করার কথা প্রচার করতে থাকেন।

প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় জয়ী ভগৎ সিং

১৯২৩ সালে ভগৎ সিং পাঞ্জাব হিন্দি সাহিত্য সম্মেলন কর্তৃক আয়োজিত প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছিলেন।

লাহোরে বোমা বিস্ফোরণে গ্রেপ্তার ভগৎ সিং

১৯২৬ সালের অক্টোবর মাসের নবরাত্রিতে লাহোরে বোমা বিস্ফোরিত এবং ভগৎ সিং এই বোমা বিস্ফোরণে জড়িতদের দায়ে গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতারের পাঁচ সপ্তাহ পর তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

ভগৎ সিং কর্তৃক বন্দীদের সমানাধিকারের দাবি

তাকে এবং তার সংগঠনকে নৈরাজ্যবাদী আখ্যা দেওয়া হলে তিনি ক্ষুরধার যুক্তিতে তা খন্ডন করেন। জেলে ভারতীয় ও ব্রিটিশ বন্দীদের সমানাধিকারের দাবিতে ৬৪ দিন টানা অনশন চালিয়ে তিনি সমর্থন আদায় করেন।

সম্পাদক ভগৎ সিং

১৯২৮ সালের অক্টোবর মাসে ‘কৃতি কিষান পার্টি’ একই পতাকাতলে সমগ্র ভারতের বিভিন্ন বিপ্লবী নেতারা একটি সভায় মিলিত হয়েছিল। ভগৎ সিং ওই সভার সম্পাদক ছিলেন।

লালা রাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ

স্কটের আদেশে সাইমন কমিশন বিরোধী মিছিলে যোগদানকারী প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায় -এর হত্যার প্রতিশোধে ভগৎ সিংহ তাকে মারতে গিয়ে ব্রিটিশ পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট মিস্টার স্যান্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করেন।

দিল্লি অ্যাসেম্বলিতে বোমা নিক্ষেপ

৮ এপ্রিল, ১৯২৯ সালে ভগত সিংও বটুকেশ্বর দত্ত অ্যাসেম্বলির ভেতর অধিবেশন চলাকালে দুটি বোমা নিক্ষেপ করেন। এই ঘুমান নিক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল পাবলিক সেফটি বিলের বিরোধিতা করা, কাউকে হত্যা করা নয়।এরপর তারা দুজনেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

বিপ্লবীদের গ্রেপ্তার

এরপর শুরু হয় ব্যাপক গ্রেপ্তার‌।একে একে গ্রেপ্তার করা হয় শুকদেব, রাজগুরু, যতীন দাস প্রমুখ বিপ্লবীদের।যতীনদাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কলকাতায়। তারপরই তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লাহোরে।

লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই জুলাই শুরু হয় লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা। প্রধান আসামী ভগৎ সিং, শুকদেব, বটুকেশ্বর দত্ত, রাজগুরু, যতীনদাস প্রমুখ বিপ্লবীবৃন্দ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য -এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং স্যান্ডার্স হত্যা।

ভগৎ সিংহের ফাঁসির আদেশ

১৯৩০ সালের ৭ই অক্টোবর ৩ ব্রিটিশ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত এক বিশেষ ট্রাইবুনাল ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরুকে অপরাধী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দেয়।

ভগৎ সিংহের ফাঁসি কার্যকর

১৯৩১ সালের ২৩ শে মার্চ ভগৎ সিং,সুখদেব ও রাজগুরুর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

অমরজ্যোতি স্থাপন

বর্তমান পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার হুসেনিওয়ালা গ্রামে এই তিন বিপ্লবীকে দাহ করে শতদ্রু নদীতে তাদের ভস্ম ফেলে দেওয়া হয়। এই হুসেনিওয়ালা গ্রামে এই তিন বীর শহীদ বিপ্লবীদের নামে ২০১৬ সালে অমরজ্যোতি স্থাপন করা হয়।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ভগৎ সিং

বীপ্লবী ভগৎ সিংকে নিয়ে ২০০২ সালে নির্মিত হয় অজয় দেবগন অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্র দ্য লিজেন্ড অব ভগৎ সিং।

উপসংহার:- ভগৎ সিংহের দৃষ্টান্ত শুধুমাত্র ভারতীয় যুবসমাজকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধই করেনি, ভারতে সমাজতন্ত্রের উত্থানেও প্রভূত সহায়তা করেছিল।ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়ে, ভারতবর্ষে ইনকিলাব জিন্দাবাদ মহামন্ত্রের উদ্‌গাতা বীর বিপ্লবী ভগৎ সিং ভারতবাসীর হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ভগৎ সিং” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) ভগৎ সিংহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ইনকিলাব জিন্দাবাদ মন্ত্রের সৃষ্টিকর্তা কে?

ভগৎ সিংহ।

২. লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ভগৎ সিংহ কাকে হত্যা করেন?

পুলিশ সুপার সন্ডার্সকে।

৩. দিল্লির অ্যাসেম্বলিতে বোমা নিক্ষেপ করেন কারা?

ভগৎ সিংহ ও বটুকেশ্বর দত্ত।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment