দীপাবলি হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখদের ধর্মীয় উৎসব। দীপাবলির অর্থ ও প্রতীক, বিভিন্ন নাম, উৎসবের সূচনা, উৎসবের সমাপ্তি, দীপাবলি অনুষ্ঠান, পালনকারী দেশ, কালীপূজা, রামচন্দ্রের রাজ্যে প্রত্যাবর্তন, মহাভারতের বর্ণনা, মহাবীরের মোক্ষলাভ, শিখদের উৎসব পালন, আর্যসমাজের উদযাপন, দীপান্বিতা কালীপূজা, উৎসবের পাঁচ দিন, দেওয়ালি ও কালী পূজা এবং দেওয়ালি উৎসব সম্পর্কে জানবো।
হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখদের ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি
ধরণ | ধর্মীয় উৎসব |
পালনকারী | হিন্দু, শিখ , বৌদ্ধ ও জৈন |
উদযাপন | প্রদীপ ও মোমবাতি দিয়ে বাড়ি সাজানো, আতসবাজি, মিষ্টি ও উপহার বিতরণ |
পালন | প্রার্থনা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান |
শুরু | ধনতেরাস বা ধনত্রয়োদশী |
সমাপ্তি | ভাইফোঁটা |
ভূমিকা :- পাঁচ দিন-ব্যাপী উদযাপিত একটি হিন্দু ধর্মীয় উৎসব হল দীপাবলি বা দেওয়ালি। তবে জৈন, শিখ, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরাও এই সময়ে একই ধরনের উৎসব পালন করে থাকেন।
দীপাবলি নামের অর্থ ও প্রতীক
‘দীপাবলি’ নামটির অর্থ “প্রদীপের সমষ্টি”।এই দিন হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোটো মাটির প্রদীপ জ্বালেন। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক।
দীপাবলি উৎসবের বিভিন্ন নাম
এই উৎসব দীপাবলি বা দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দিপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও পরিচিত।
উত্তর ভারতের হিন্দুদের বিশ্বাস
বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে লক্ষ্মী আসেন বলে উত্তর ভারতীয় হিন্দুরা বিশ্বাস করেন।
দীপাবলি উৎসবের সূচনা
আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরাস অথবা ধনত্রয়োদশী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয়।
দীপাবলি উৎসবের সমাপ্তি
কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হয়।
দীপাবলি অনুষ্ঠান
নবরাত্রি উৎসব অথবা বাঙালিদের দুর্গোৎসব বা পূজা শেষ হওয়ার ১৮ দিন পর দীপাবলি শুরু হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বরের মধ্যে দীপাবলি অনুষ্ঠিত হয়।
দীপাবলি পালিত দেশ
দীপাবলি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মরিশাস, গায়ানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, সুরিনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিজিতে পালিত হয়। এই উৎসবের দিন গুলিতে সরকারি ছুটি থাকে।
কালিপূজা
হিন্দুদের কাছে, দীপাবলি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিন সব হিন্দুরা বাড়িতে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। বাংলা, আসাম, ওড়িশা ও মিথিলাতে এই দিনটি কালীপূজা হিসেবে উদ্যাপন করা হয়।
রামচন্দ্রের রাজ্যে প্রত্যাবর্তন
উত্তর ভারতীয় হিন্দুদের মতে দীপাবলির দিনেই রামায়ণ -এর শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের নির্বাসনের পর অযোধ্যায় ফিরে আসেন। নিজেদের পরমপ্রিয় রাজাকে ফিরে পেয়ে অযোধ্যাবাসী ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে সাজিয়ে তোলেন তাদের রাজধানীকে।
মহাভারতের বর্ণনা
মহাভারতে পাওয়া যায় যে বারো বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাত বাসের পর দীপাবলিতেই হস্তিনাপুরে ফিরে এসেছিলেন পাণ্ডবরা। সেই জন্য আলোর মালায় সাজানো হয়েছিল গোটা হস্তিনাপুরকে।
মহাবীরের মোক্ষলাভ
জৈন মতে ৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহাবীর দীপাবলির দিনেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেছিলেন।
শিখদের উৎসব পালন
১৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে শিখদের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ ও ৫২ জন রাজপুত্র দীপাবলির দিন মুক্তি পেয়েছিলেন বলে শিখরাও এই উৎসব পালন করেন।
আর্য সমাজের উৎযাপন
আর্য সমাজ এই দিনে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুদিন পালন করে। তারা এই দিনটি “শারদীয়া নব-শস্যেষ্টি” হিসেবেও পালন করেন।
দীপান্বিতা কালীপূজা
বাংলার দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই উৎসব সাড়ম্বরে আলোকসজ্জা সহকারে পালিত হয়। তবে এই পূজা প্রাচীন নয়। ১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধিগ্রন্থে এই পূজার সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়।
নদীয়ার কালী পূজার জনপ্রিয়তা
কথিত আছে, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতকে তার সকল প্রজাকে শাস্তির ভীতিপ্রদর্শন করে কালীপূজা করতে বাধ্য করেন। সেই থেকে নদিয়ায় কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে।
দীপাবলি উৎসবের প্রথম দিন
উৎসবের শুরুতে ধনতেরাসের দিন অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অর্থবর্ষের সূচনা হয়। লোকজন নতুন বর্তন, বাসন, গয়না প্রভৃতি কিনে থাকেন এই দিনে। তবে বেশির ভাগ বাঙালি ব্যবসায়ীদের অর্থবর্ষের সূচনা হয় পয়লা বৈশাখে।
দীপাবলি উৎসবের দ্বিতীয় দিন
- (১) দীপাবলি উৎসবের দ্বিতীয় দিনটিকে বলে ভূত চতুর্দশী। এই দিনে বাঙালিরা বাড়ির চোদ্দো কোণায় চোদ্দোটা প্রদীপ জ্বালিয়ে কালো মুছিয়ে আলোকিত করে তোলেন বাড়িটাকে। কথায় আছে যে এমনটা করলে ভূতপ্রেত পরিবার আর স্বজনদের কাছে ঘেঁষতে পারে না।
- (২) লোককথায় শোনা যায় যে এই প্রদীপসজ্জার মাধ্যমে পরিবারের পিতৃপুরুষদের অনুষ্ঠানে পদার্পণ করার জন্য নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়, যাতে তারা মায়ের বাৎসরিক আগমনে উপস্থিত হয়ে সবাইকে শুভাশীষ দিয়ে নিজেরা মায়ের আশীর্ব্বাদে মোক্ষ লাভ করবেন।
দীপাবলি উৎসবের তৃতীয় দিন
তৃতীয় দিন কার্তিক অমাবস্যায় উত্তর ভারতে লক্ষ্মী পূজা হয়। পশ্চিমবঙ্গে দারুণ জাঁকজমকে ঘটা করে পালন করা হয় কালীপূজা। অবশ্য সেদিন আদি পশ্চিমবঙ্গ বাসিন্দারা, ঘটিরা, বাড়িতে লক্ষ্মীর পূজাও করে থাকেন।
দীপাবলি উৎসবের চতুর্থ দিন
দীপাবলি উৎসবের চতুর্থ দিন কার্তিক শুক্লা প্রতিপদ। এই দিন বৈষ্ণবেরা গোবর্ধন পূজা করেন।
দীপাবলি উৎসবের পঞ্চম দিন
পঞ্চম দিন ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা। এই দিন বোনেরা তাদের ভাইদের জন্যে উপোস করে তাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে এবং কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করে।
দেওয়ালি ও কালী পূজা
কালীপুজোর দিন আর দেওয়ালির দিন পৃথকও হতে পারে।দেওয়ালির তারিখ একদিন পরে কিংবা আগেও পড়া সম্ভব। কালীপূজার লগ্ন অমাবস্যার মাঝরাত্রিতে ঠিক হয়, আবার দীপাবলির লক্ষ্মী পূজার লগ্ন নিশ্চিত করা হয় অমাবস্যার সন্ধ্যেতে, তাই পুজোর লগ্ন অনুযায়ী দুই পুজোর তারিখে মাঝে মাঝে অন্তর ঘটে থাকে।
দেওয়ালি উৎসব
দেওয়ালির দিনে প্রদীপের আলোয় বাড়ি-বাড়ি ঝকমক করে ওঠে। নানান রঙের বাজিতে আকাশটাও রীতিমত চকচক করে থাকে। দীপাবলি সারি-সারি প্রদীপের আলোকে স্বর্গের দেবতাকে মর্তের কুটিরে বরণ করে নেবার উৎসব।
উপসংহার :- প্রত্যেক সর্বজনীন আনন্দের উৎসব মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে উদযাপন করে।আলোকসজ্জার এই দিবস অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো জ্বালার দিন। ভেতরের বাহিরের সকল অজ্ঞতা ও তমসাকে দীপশিখায় বিদূরিত করার দিন দীপাবলি।
(FAQ) দীপাবলি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
প্রদীপের সমষ্টি।
পাঁচ দিন ধরে।
ধনতেরাস বা ধনত্রয়োদশী।
ভাই ফোঁটা।