কালীপূজা

হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব কালীপূজা প্রসঙ্গে দীপান্বিতা কালীপূজা, বিভিন্ন রূপ, দক্ষিণকালিকা, দেবীর আবির্ভাব, দেবীর মূর্তি, চামুণ্ডা, আলোকসজ্জা ও আতসবাজি, দীপাবলি উৎসব, লক্ষ্মীপূজা, রটন্তী ও ফলহারিণী কালীপূজা, বাংলায় কালীপূজার প্রবর্তক, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ভূমিকা, ব্যাপক জনপ্রিয়তা, বঙ্কিমচন্দ্রের লেখায়, পূজা অনুষ্ঠান, অর্ঘ্য উৎসর্গ, গৃহে পূজা, বলি প্রথা, শ্মশানকালীর পূজা, রামকৃষ্ণ ও বামাখ্যাপার পূজা, দশমহাবিদ্যার পূজা, আতসবাজি পোড়ানো, কালীঘাটের কালীপূজা, দক্ষিণেশ্বরে কালীপূজা, মহাভারতে উল্লেখ, অন্যান্য সময় কালীপূজা, দেবীর পীঠস্থান, অনার্য দেবী ও শ্যামাসঙ্গীত সম্পর্কে জানবো।

কালীপূজা প্রসঙ্গে দিপান্বীতা কালীপূজা, দেবী কালীর বিভিন্ন রূপ, দক্ষিণকালিকা, দেবীর আবির্ভাব, দেবীর মূর্তি, চামুণ্ডা, আলোকসজ্জা ও আতসবাজি, দীপাবলি উৎসব, লক্ষ্মীপূজা, রটন্তী ও ফলহারিনী কালীপূজা, বাংলায় কালীপূজার প্রবর্তক, কালীপূজা জনপ্রিয় করতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ভূমিকা, কালীপূজার ব্যাপক জনপ্রিয়তা, বঙ্কিমচন্দ্রের লেখায় কালীপূজা, কালীপূজার অনুষ্ঠান, অর্ঘ্য উৎসব কালীপূজা, গৃহস্থবাড়িতে কালীপূজা, কালীপূজায় বলিপ্রথা, শ্মশানকালী পূজা, রামকৃষ্ণ ও বামাক্ষ্যাপার কালীপূজা, কালীপূজায় আতসবাজি পোড়ানো, কালীঘাটে কালীপূজা, দক্ষিণেশ্বরে কালীপূজা, মহাভারতে কালীপূজার উল্লেখ, কালীপূজার ইতিহাস।

হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব কালীপূজা

উৎসবকালীপূজা
ধরণধর্মীয় উৎসব
পালনকারীবাঙালি হিন্দু
উদযাপনপূজার্চনা, আলোকসজ্জা ও আতসবাজি
সংঘটনবার্ষিক
সম্বন্ধদীপাবলি উৎসব
হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব কালীপূজা

ভূমিকা :- ভারত -এর হিন্দু দেবী কালীর পূজাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত একটি হিন্দু উৎসব কালীপূজা বা শ্যামাপূজা। প্রধানত বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে এই উৎসব উপলক্ষে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়।

দীপান্বিতা কালীপূজা

বাংলায় গৃহে বা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীপ্রতিমার নিত্যপূজা হয়ে থাকে।তবেকার্ত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত সাংবাৎসরিক দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়।

বিভিন্ন রূপ

বঙ্গীয় তন্ত্রসার, শ্যামারহস্য প্রভৃতি তন্ত্রে কালীর বিভিন্ন রূপের কথা বলা হয়েছে।যেমন – দক্ষিণ, সিদ্ধ, গুহ্য, ভদ্র, শ্মশান, রক্ষা ও মহাকালী।

দক্ষিণকালিকা

দক্ষিণকালিকা সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ব্যাপকভাবে পূজিত হন। তিনি চতুর্ভুজা, করালবদনা, মেঘকৃষ্ণবর্ণা, মুন্ডমালিনী, মুন্ডসমূহ থেকে নিঃসৃত রক্তধারায় রঞ্জিতা, ত্রিনয়না, শিববক্ষোপরি দন্ডায়মানা এবং শিবাকুলবেষ্টিতা। তাঁর দক্ষিণ হস্তদ্বয়ে থাকে খট্বাঙ্গ ও চন্দ্রহাস এবং বাম হস্তদ্বয়ে থাকে বর্ম ও পাশ, আর পরিধানে থাকে ব্যাঘ্রচর্ম।

দেবীর আবির্ভাব

কালীর আবির্ভাব সম্পর্কে বলা হয় যে, দেবাসুরের যুদ্ধে পরাজিত দেবগণের স্তুতিতে আদ্যাশক্তি ভগবতীর দেহকোষ থেকে দেবী কৌষিকী আবির্ভূত হন। তখন ভগবতীদেবী কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেন বলে তাঁর নাম হয় কালী বা কালিকা।

দেবীর মূর্তি

কালিকা দেবীর মূর্তিতে দেখা যায় চারটি হাত, তার মধ্যে এক হাতে খড়্গ, এক হাতে কাটা নরমুণ্ড, আর দুই হাতে দেখা যায় বরাভয় মুদ্রা ও আশীর্বাদ মুদ্রা।তাঁর গলায় নরমুণ্ডের মালা আর তার হাতে ধরা নরমুণ্ডের রক্ত পান করে তার বাহন শিয়াল।এলোকেশী দেবী শিবের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন।

চামুণ্ডা

দেবী কালিকা শুম্ভ-নিশুম্ভ নামে দুই দানবকে বধ করেন। তাদেরই দুই চেলা চন্ড ও মুন্ডকে বধ করায় দেবীর আর এক নাম হয় চামুন্ডা।

আলোকসজ্জা ও আতসবাজি

এই দিন আলোকসজ্জা ও আতসবাজির উৎসবের মধ্য দিয়ে সারা রাত্রিব্যাপী কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

দীপাবলি উৎসব

দীপান্বিতা কালীপূজার দিনটিতে ভারতের অন্যান্য জায়গায় দীপাবলি উৎসব পালিত হয়। এই দিন আলোকসজ্জায় ভরে ওঠে গৃহ প্রাঙ্গণ, মন্দির সর্বত্র।

লক্ষ্মীপূজা

সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই দিন লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হলেও বাঙালি, অসমীয়া ও ওড়িয়ারা এই দিন কালীপূজা করে থাকেন।

রটন্তী ও ফলহারিণী কালীপূজা

মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে রটন্তী এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে ফলহারিণী কালীপূজাও যথেষ্ট জনপ্রিয়।

বাংলায় কালীপূজার প্রবর্তক

সপ্তদশ শতকের নবদ্বীপের প্রথিতযশা তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়।

রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ভূমিকা

অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন।এই সময় রামপ্রসাদ সেনও আগমবাগীশের পদ্ধতি অনুসারে কালীপূজা করতেন।

ব্যাপক জনপ্রিয়তা

ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপূজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।বর্তমানে কালীপূজা বাংলায় দুর্গাপূজার মতোই এক বিরাট উৎসব।

বঙ্কিমচন্দ্রের লেখায়

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় -এর ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাসে দেখা যায় ডাকাতেরা রানি ভবানীর আদেশে ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে কালীপূজা করছেন।

পূজা অনুষ্ঠান

দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

অর্ঘ্য উৎসর্গ

দেবীকে ছিন্নমস্তক সহ বলির পশুর রক্ত, মিষ্টান্ন, অন্ন বা লুচি, মাছ ও মাংস উৎসর্গ করা হয়।

গৃহে পূজা

গৃহস্থবাড়িতে সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যমতে আদ্যাশক্তি কালীর রূপে কালীর পূজা হয়।

বলি প্রথা

দেবীর পূজায় ছাগ মেষ বা মহিষ বলির প্রথা রয়েছে।সুদূর অতীতে নরবলি দিয়েও কালীপূজা হত।

শ্মশানকালী পূজা

লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই কারণে কলকাতা সহ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামসহ শ্মশানকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

রামকৃষ্ণ ও বামাখ্যাপার পূজা

কোনো কোনো মণ্ডপে কালী ও শিবের মূর্তির সঙ্গে সঙ্গে বাংলার দুই বিখ্যাত কালীসাধক রামকৃষ্ণ পরমহংস ও বামাখ্যাপার মূর্তিও পূজিত হয়।

দশমহাবিদ্যার পূজা

কোথাও কোথাও কালীর সঙ্গে সঙ্গে দশমহাবিদ্যাও পূজিত হন। তন্ত্র মতে পূজিত প্রধান দশ জন দেবীর মধ্যে তিনিই প্রথম দেবী। দর্শনার্থীরা সারারাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে কালীপ্রতিমা দর্শন করেন।

আতসবাজি পোড়ানো

কালীপূজার রাতে গৃহে আলোকসজ্জা সাজানো হয় এবং আতসবাজি পোড়ানো হয়।

কালীঘাটের কালীপূজা

কলকাতার কালীঘাট মন্দিরে এই দিন দেবী কালীকে লক্ষ্মীরূপে পূজা করা হয়। হাজার হাজার ভক্ত এই দিন কালীঘাট মন্দিরে ভিড় করেন এবং দেবীর উদ্দেশ্যে বলি উৎসর্গ করেন।

দক্ষিণেশ্বরে কালীপূজা

দক্ষিণেশ্বর -এ অবস্থিত কলকাতার বিখ্যাত কালীমন্দির দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতেও কালীপূজা উপলক্ষে মহাসমারোহ হয়। এখানেই অতীতে রামকৃষ্ণ পরমহংস কালী আরাধনা করেছিলেন। সেই কারণে এই মন্দিরে কালীপূজা দেখতে প্রচুর পুণ্যার্থী ভিড় করেন।

মহাভারতে উল্লেখ

ভারতের প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতে কালীর উল্লেখ আছে।সেখানে যুদ্ধ এবং পশুদের আত্মা বহন করেন যিনি সেই তিনি কালরাত্রি কালী নামে পরিচিত।

অন্যান্য সময় কালীপূজা

শনি ও মঙ্গলবারে, অন্যান্য অমাবস্যায় বা বিশেষ কোনো কামনাপূরণের উদ্দেশ্যেও কালীর পূজা করা হয়।

দেবীর পীঠস্থান

পশ্চিমবঙ্গ -এর বীরভূম -এর তারাপীঠ এবং অসমের গৌহাটির কামাখ্যা মন্দির দেবীর অন্যতম উল্লেখযোগ্য পীঠস্থান।

অনার্য দেবী

কারও কারও মতে, কালী আদিতে ছিলেন অনার্যদেবী। কালীর রূপকল্পনা ও পরিবেশ অনার্যোচিত। তাছাড়া অধিকাংশ দেবদেবীর পূজা হয় দিনে, কিন্তু কালীর পূজা হয় রাতে। সম্ভবত লুণ্ঠন ও দস্যুতাপরায়ণ আদিম অধিবাসীরা রাত্রির অন্ধকারে লোকচক্ষুর অন্তরালে গুপ্ত বাসস্থানে এই পূজা করত।

শ্যামাসঙ্গীত

রামপ্রসাদ সেন, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ লেখা বহু শ্যামাসঙ্গীতের মূর্চ্ছনায় ভক্তদের মন জেগে ওঠে অপার ভাবের সাগরে।

উপসংহার :- বর্তমানে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বত্রই কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের দীপান্বিতা সবচেয়ে বিখ্যাত।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “কালীপূজা” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) কালীপূজা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক কে?

নবদ্বীপের প্রথিতযশা তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ।

২. বাংলায় কালীপূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন কে?

নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র।

৩. কালীপূজার দিন ভারতের অন্যান্য স্থানে কি উৎসব পালিত হয়?

দীপাবলি উৎসব।

৪. পশ্চিমবঙ্গের কোথাকার কালীপূজা জনপ্রিয়?

বারাসাত।

অন্যান্য উৎসবগুলি

Leave a Comment