ভূত চতুর্দশী

হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব ভূত চতুর্দশী প্রসঙ্গে উদযাপনের দিন, গৃহস্থের নিয়ম, বিশেষ প্রথা, পুরাণের বর্ণনা, স্বর্গ ও নরকের দ্বার উন্মোচন, অশুভ শক্তির সংহার, মৃত পূর্বপুরুষদের পূজা, নিয়ম, চৌদ্দ শাক, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে চৌদ্দ শাক, স্মৃতিশাস্ত্রে চৌদ্দ শাকের উল্লেখ, আটার প্রদীপ, যমদেবের পূজা ও লোকাচার সম্পর্কে জানবো।

ভূত চতুর্দশী প্রসঙ্গে ভূত চতুর্দশী উদযাপনের দিন, ভূত চতুর্দশীতে গৃহস্থ বাড়ির নিয়ম, ভূত চতুর্দশীর দিন বিশেষ প্রথা, ভূত চতুর্দশী সম্পর্কে পুরাণের বর্ণনা, ভূত চতুর্দশী সম্পর্কে স্বর্গ ও নরকের দ্বার, ভূত চতুর্দশীর দিন অশুভ শক্তির বিনাশ, ভূত চতুর্দশীর দিন পূর্বপুরুষের পূজা, ভূত চতুর্দশী পালনের নিয়ম, ভূত চতুর্দশীর দিন চৌদ্দশাক খাওয়া, ভূত চতুর্দশীর দিন আটার প্রদীপ জ্বেলে রাখা, ভূত চতুর্দশীতে যমদেবের পূজা, ভূত চতুর্দশীতে লোকাচার।

হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব ভূত চতুর্দশী

উৎসবভূত চতুর্দশী
ধরণধর্মীয় উৎসব
পালনকারীবাঙালি হিন্দু
পূর্বদিনধনতেরাস
পরের দিনদীপান্বিতা কালীপূজা
সম্বন্ধদীপাবলি উৎসব
ভূত চতুর্দশী

ভূমিকা:- ভারত -এ একটি বাঙালি হিন্দু উৎসব হল ভূত চতুর্দশী। হিন্দু শকাব্দ অনুসারে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীর দিন অর্থাৎ দীপান্বিতা কালীপূজার আগের দিন ভূত চতুর্দশী পালন করা হয়।এই একই দিনে উত্তর ভারতে নরক চতুর্দশী বলে অপর একটি হিন্দু উৎসবও পালিত হয়।

ভূত চতুর্দশী উদযাপনের দিন

পাঁচ দিন ধরে চলা দীপাবলি উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ভূত চতুর্দশী পালিত হয়।

ভূত চতুর্দশীতে গৃহস্থ বাড়িতে পালনীয় নিয়ম

এই দিন বাঙ্গালী গৃহস্থের বাড়িতে চৌদ্দটি প্রদীপ জ্বালানো, চৌদ্দ রকম শাক একত্রে রান্না করে অন্নের সাথে খাওয়া হয়।

ভূত চতুর্দশীতে বিশেষ প্রথা

এই দিন ছেলেদের কপালের ডানে আর মেয়েদের কপালের বায়ে ঘি-তুলসীপাতা-কাজল ধারণের প্রথা রয়েছে।পশ্চিমী হ্যালোইন অনেকটা এর মত।

পুরাণের বর্ণনায় ভূত চতুর্দশী

দৈত্যরাজ বলি স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল দখল করলে অসুররা সবার উপর অত্যাচার শুরু করে। বলিকে থামানোর জন্য ভগবান বিষ্ণু বামন অবতারে বলির কাছে তিন পা জমি প্রার্থনা করেন। দৈত্যরাজ এতে রাজি হন। বামন অবতার দুই পা স্বর্গ ও মর্ত্যে আর তৃতীয় পা বলির মাথায় দিয়ে তাকে পাতালে পাঠিয়ে দেন। নিজের কথা রাখায় ও তাকে চিনেও দান দেওয়ায় বামন অবতার বলিকে প্রতি বছর পৃথিবীতে পূজা পাওয়ার আশীর্বাদ করেন।এরপর থেকে কালীপূজার আগের রাতে রাজা বলি পাতাল থেকে পৃথিবীতে পূজা নিতে আসেন। তার সাথে সহস্র ভূত, প্রেতাত্মা এবং অশরীরীও আসে।

ভূত চতুর্দশীর দিন স্বর্গ ও নরকের দ্বার উন্মোচন

পুরাণ অনুযায়ী মনে করা হয়, এই দিন স্বর্গ ও নরকের দ্বার কিছু ক্ষণের জন্য উন্মোচিত হয়। একই সঙ্গে বিদেহী আত্মা এবং স্বর্গত ব্যক্তিরা নেমে আসেন পৃথিবীতে।

ভূত চতুর্দশীর দিন অশুভ শক্তির সংহার

অন্য মতে চামুণ্ডা রূপে মা কালী এই দিন চৌদ্দখানা ভূতকে সাথে নিয়ে ভক্তের বাড়ি থেকে অশুভ শক্তিকে দূর করতে পৃথিবীতে আসেন।

ভূত চতুর্দশী উপলক্ষে মৃত পূর্বপুরুষদের পূজা

হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয় মৃত পূর্ব পুরুষরা আশ্বিন মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশীর দিন মর্ত্যে আসেন৷ তাদের আনন্দে রাখতে এবং অতৃপ্ত আত্মার অভিশাপ দূর করতে তাদের পূজা করা হয়।

ভূত চতুর্দশীর দিন পালনীয় বিশেষ কয়েকটি নিয়ম

  • (১) প্রথা অনুযায়ী চোদ্দ শাক খাওয়া হয় এবং চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো হয়। হিন্দু ধর্ম মতে মৃত্যুর মানব দেহ পঞ্চভূতে (ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-ব্যোম) বিলীন হয়ে পাঁচ উপাদানের মধ্যেই মিশে থাকেন।
  • (২) তাই প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা ১৪ রকমের শাক মৃত ১৪ পুরুষের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। ১৪ শাক ধোয়ার পর সেই বাড়ির প্রতিটি কোনে ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
  • (৩) প্রেত ও অশুভ শক্তি দূর করতে বাঙালি গৃহস্থরা এই দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকেন।

ভূত চতুর্দশীর দিন চৌদ্দশাক খাওয়া

বাংলার ঋতু প্রকোপ অন্য প্রদেশের থেকে বেশি হওয়ার জন্য আশ্বিন ও কার্ত্তিক মাস দুটিকে যমদংস্টা কাল বলা হত। এই সময় ওল, কেও, বেতো, কালকাসুন্দা, নিম, সরষে, শালিঞ্চা, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, পলতা, ঘেঁটু, হিঞ্চে, শুষুণি, শেলু এই চৌদ্দটি শাক একত্রে খাওয়া হয়।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে চৌদ্দ শাকের উল্লেখ

আয়ুর্বেদ মতে প্রাচীন বাংলায় চোদ্দো শাকগুলি ছিল পালং শাক, লাল শাক, শুষণি শাক, পাট শাক, ধনে শাক, পুঁই শাক, কুমড়ো শাক, গিমে শাক, মূলো শাক, কলমি শাক, সরষে শাক, নোটে শাক, মেথি শাক, লাউ শাক অথবা হিঞ্চে শাক।

স্মৃতি শাস্ত্রে চৌদ্দ শাকের উল্লেখ

বাংলার নব্য স্মৃতি শাস্ত্রকার রঘুনন্দনতার অষ্টবিংশতি তত্ত্বের অন্যতম গ্রন্থ ‘কৃত্যতত্ত্বে’ চোদ্দ শাকের উল্লেখ করেছেন। –

“ওলং কেমুকবাস্তূকং, সার্ষপং নিম্বং জয়াং।

শালিঞ্চীং হিলমোচিকাঞ্চ পটুকং শেলুকং গুড়ূচীন্তথা।

ভণ্টাকীং সুনিষন্নকং শিবদিনে খাদন্তি যে মানবাঃ,

প্রেতত্বং ন চ যান্তি কার্ত্তিকদিনে কৃষ্ণে চ ভূতে তিথৌ।”

ভূত চতুর্দশীর দিন আটার প্রদীপ নির্মাণ

ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী ভূত চতুর্দশীর দিন যমের নামে দীপদানের প্রথা প্রচলিত রয়েছে। এদিন যমের নামে আটার চার মুখী প্রদীপ বানিয়ে বাড়ির প্রবেশ দ্বারে রাখা হয়।

ভূত চতুর্দশীর দিন যমদেবের পূজা

রাতে প্রদীপে তেল দিয়ে চারটি বাতি জ্বালানো হয়। এর পর নিয়ম মেনে পুজো করার পর প্রদীপ জ্বালিয়ে দক্ষিণ দিকে মুখ করে মৃত্যুনাং দণ্ডপাশাভ্যাং কালেন শ্যাময়া সহ। ত্রয়োদশ্যাং দীপদানাৎ সূর্যজঃ প্রীয়ন্তা মম্ মন্ত্র জপ করে যমের পুজো করা হয়।এর ফলে অকাল মৃত্যু থেকে মুক্তি লাভ হয়।

ভূত চতুর্দশীতে লোকাচার

লোকাচার মতে, কালীপুজোর আগের দিন ১৪ শাক খেতে হয়। এর পাশাপাশি জ্বালাতে হয় ১৪ প্রদীপ। মনে করা হয় ১৪ শাক খেয়ে সন্ধেবেলা ১৪ প্রদীপ জ্বালালে দূরাত্মা ও অন্ধকার দূর হয়।

উপসংহার:- চতুর্দশীর ঠিক পরের দিনেই তো অমাবস্যার মহাঘোরা যামে শুরু হবে দেবী কালীর আরাধনা। উৎসবের সেই পরম মুহূর্তের প্রস্তুতিপর্বে নিজেকে শুদ্ধ না রাখলে চলে! চতুর্দশীর চোদ্দ প্রদীপে তো সেই আলোকময়ী দেবীরই আবাহন!


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ভূত চতুর্দশী” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) ভূত চতুর্দশী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. দীপাবলি উৎসবের দ্বিতীয় দিন বাঙালি হিন্দুরা কি উৎসব পালন করে?

ভূত চতুর্দশী।

২. ভূত চতুর্দশীর আগের দিন কি পালিত হয়?

ধনতেরাস।

৩. ভূত চতুর্দশীর পরের দিন কি পালন করা হয়?

দীপান্বিতা কালীপূজা।

অন্যান্য উৎসবগুলি

Leave a Comment