বাঁকুড়া জেলার মন্দির শহর বিষ্ণুপুর প্রসঙ্গে অবস্থান, জনসংখ্যা, ঐতিহাসিক দিক, মল্লভূম, প্রাচীন বিষ্ণুপুর রাজ্যের আয়তন, ভৌগোলিক অবস্থান, ভাষা, বিষ্ণুপুর মেলা, বিষ্ণুপুর উৎসব, দুর্গাপূজা ও বিষ্ণুপুরের শিল্প সম্পর্কে জানবো।
বাঁকুড়া জেলার ঐতিহাসিক শহর বিষ্ণুপুর প্রসঙ্গে বিষ্ণুপুরের অবস্থান, বিষ্ণুপুরের জনসংখ্যা, বিষ্ণুপুরের আয়তন, বিষ্ণুপুরের ঐতিহাসিক দিক, বিষ্ণুপুরের পূর্ব নাম, বিষ্ণুপুরের ভাষা, বিষ্ণুপুরের মেলা, বিষ্ণুপুরের উৎসব, বিষ্ণুপুরের দুর্গাপূজা, বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত শিল্প, বিষ্ণুপুরের শিল্প মেলা, বিষ্ণুপুরের দর্শনীয় স্থান।
মন্দির শহর বিষ্ণুপুর
ঐতিহাসিক স্থান | বিষ্ণুপুর |
জেলা | বাঁকুড়া |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ভারত |
পরিচিতি | মন্দির শহর |
ভূমিকা :- পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার মন্দির শহর বিষ্ণুপুর তার দুর্দান্ত ঐতিহ্য, গর্বিত সংস্কৃতি, উজ্জ্বল স্থাপত্য এবং পোড়ামাটির গল্প নিয়ে আমাদের স্বাগত জানায়।
বিষ্ণুপুর শহরের অবস্থান
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার অন্যতম শহর ও পৌরসভা এলাকা বিষ্ণুপুর।
বিষ্ণুপুর শহরের জনসংখ্যা
বিষ্ণুপুর শহরের জনসংখ্যা ৬০ হাজারেরও বেশি। এখানে নারী ও পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান। এখানে সাক্ষরতার হার ৬৯%।
মন্দির শহর বিষ্ণুপুরের ঐতিহাসিক দিক
- (১) সপ্তম শতক থেকে ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্ন পর্যন্ত প্রায় এক সহস্রাব্দ কাল বিষ্ণুপুরের ইতিহাস হিন্দু মল্ল রাজবংশের উত্থান ও পতনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।
- (২) বখতিয়ার খলজি হিন্দু রাজাদের হাত থেকে বাংলার শাসন অধিকার করে নেওয়ার আগে পর্যন্ত পাঁচ শতাব্দীকাল মল্ল রাজবংশ বিষ্ণুপুর শাসন করেছিল।
- (৩) মুর্শিদাবাদ -এর সুবাদাররা বীরভূম ও বর্ধমান -এর রাজাদের মতো বিষ্ণুপুরের রাজাদেরও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন নি। বর্ধমান রাজাদের শক্তিবৃদ্ধি হওয়ার পর বিষ্ণুপুর রাজবংশের অবক্ষয় শুরু হয়। মহারাজা কীর্তিচাঁদ বিষ্ণুপুর আক্রমণ করে এই অঞ্চলের একটি বিস্তৃর্ণ অঞ্চল নিজ জমিদারির অন্তর্ভুক্ত করেন।
মল্লভূম
বিষ্ণুপুর সংলগ্ন অঞ্চলটি অতীতে মল্লভূম নামে পরিচিত। এই রাজ্যের কেন্দ্রীয় এলাকা ছিল ছাতনা বাদে বর্তমান বাঁকুড়া থানা এলাকা, ওন্দা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর ও ইন্দাস।
প্রাচীন বিষ্ণুপুর রাজ্যের আয়তন
প্রাচীন বিষ্ণুপুর রাজ্যের আয়তন আরও বৃহৎ ছিল। উত্তরে সাঁওতাল পরগনার দামিন-ই-কোহ থেকে দক্ষিণে মেদিনীপুর, পূর্বে পূর্ব বর্ধমান -এর পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমে ছোটোনাগপুরের একটি অঞ্চলও এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
মন্দির শহর বিষ্ণুপুরের ভৌগোলিক অবস্থান
বিষ্ণুপুর শহরের অবস্থান গত অক্ষাংশ ২২.৩৮° উত্তর ও দ্রাঘিমাংশ হল ৮৮.২৭° পূর্ব। সমুদ্র সমতল থেকে শহরটির গড় উচ্চতা ৫৯ মিটার।
বিষ্ণুপুরের ভাষা
মন্দির শহর বিষ্ণুপুর শহরের প্রধান ভাষা বাংলা। এখানকার ৯০ ভাগ বেশি অধিবাসীর মাতৃভাষা বাংলা।
বিষ্ণুপুর মেলা
- (১) এখানকার বিষ্ণুপুর মেলা খুব বিখ্যাত। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে রাজ দরবারে এই মেলা অনুষ্ঠিত হত। পরে হাইস্কুলের মাঠে এবং তারপর এটি নন্দলাল মন্দিরের কাছে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
- (২) ২০১৮ সালের পর বিষ্ণুপুর মেলা সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে, যার পটভূমিতে অবস্থান করে বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দিরগুলি। ২০১৮ সালের এই মেলায় বালুচরী শাড়ির একটি ফ্যাশন শো আয়োজন করা হয়েছিল।
বিষ্ণুপুর উৎসব
মন্দির শহর বিষ্ণুপুরে সাম্প্রতিক সংযোজন হল বিষ্ণুপুর উৎসব। বিষ্ণুপুর মেলার পর অনুষ্ঠিত হয়। এখানে সংগীতের ‘বিষ্ণুপুর ঘরানা’ -এর ধ্রুপদী সংগীত উৎসব এবং নৃত্য উৎসব হয়। এই উৎসব ২০১২ সালের পরে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাসমঞ্চে আবার এই উৎসব শুরু হয়।
মন্দির শহর বিষ্ণুপুরের দুর্গাপূজা
বিষ্ণুপুরে আগস্ট মাসে একটি সাপের উৎসব, উল্টোরথ হয়। এখানে দুর্গা পূজা, কালী পূজা, দীপাবলী উদ্যাপন করা হয়। রাজবাড়ীর মৃন্ময়ী মার দুর্গা পূজা জনপ্রিয়। এই পূজা বাংলাদেশ, ওড়িশা ও ত্রিপুরা সহ সমগ্র বাংলা অঞ্চলের প্রাচীনতম দুর্গাপূজা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিষ্ণুপুর শহরের শিল্প
একসময় মল্লভূম নামে পরিচিত এই শহর কুটির শিল্প ও হস্তশিল্পের জন্যও বিখ্যাত। এই শহরে বেশকিছু পুরাতন শিল্প আজও তাদের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এই সব শিল্পের মধ্যে ‘দশাবতার তাস’, পোড়ামাটির শিল্পকর্ম, নারকেল খোলার দ্রব্য, শাঁখের গহনা, ঘর সাজাবার দ্রব্য, মাটির প্রতিমা, মাটির ‘হিংগলি পুতুল’,’বর-বউ’ পুতুল, মাটির ও কাঠেরপুতুল, শোলার টোপর, প্রতিমার সাজ, বেল খোলার মালা, সুন্দর কারুকার্য করা ঘট, বাটি ও লন্ঠন ইত্যাদি।
উপসংহার :- বিষ্ণুপুরের লন্ঠন শিল্পীদের অসাধারণ লন্ঠন শিল্প আজও লোকদের বিস্মিত করে। পিতলের বাসন শিল্পও বিষ্ণুপুরের একটি পরিচায়ক। তাছাড়া বিষ্ণুপুরের জগদ্বিখ্যাত বালুচরি শাড়ি তো আছেই।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বিষ্ণুপুর” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) বাঁকুড়া জেলার মন্দির শহর বিষ্ণুপুর সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
বালুচরি শাড়ি।
মল্লভূম।
বাঁকুড়া জেলা।
বিষ্ণুপুর।