পূর্ব বর্ধমান

পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রসঙ্গে অবস্থান, আয়তন ও জনসংখ্যা, প্রশাসনিক বিভাগ, ভাষা, উৎসব, মেলা, প্রধান শহর ও প্রশাসনিক দপ্তর, উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ও দর্শনীয় স্থানগুলি সম্পর্কে জানবো।

পূর্ব বর্ধমান জেলা

জেলাপূর্ব বর্ধমান
গঠিত৭ এপ্রিল, ২০১৭
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
পূর্ব বর্ধমান জেলা

ভূমিকা :- ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত বর্ধমান বিভাগের একটি জেলা হল পূর্ব বর্ধমান জেলা। ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল পূর্বের বর্ধমান জেলা বিভক্ত হয়ে পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা গঠিত হয়।

পূর্ব বর্ধমান জেলার অবস্থান

২৩ ডিগ্ৰি ৫৩ মিনিট উত্তর থেকে ২২ ডিগ্ৰি ৫৬ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮ ডিগ্ৰি ২৫ মিনিট পূর্ব থেকে ৮৭ ডিগ্ৰি ৫৬ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলা অবস্থিত।

পূর্ব বর্ধমান জেলার আয়তন ও জনসংখ্যা

পূর্ব বর্ধমান জেলার আয়তন ৫৪৩২.৬৯ বর্গ কিমি। বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষের কাছাকাছি।

পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রধান শহর ও প্রশাসনিক দপ্তর

পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রধান শহর এবং প্রশাসনিক সদর দফতর হল বর্ধমান শহর

পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রশাসনিক বিভাগ

পূর্ব বর্ধমান জেলা চারটি মহকুমা নিয়ে গঠিত। কালনা মহকুমা, কাটোয়া মহকুমা, বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমা ও বর্ধমান সদর দক্ষিণ মহকুমা। শহর বর্ধমান হল এই জেলার সদর দপ্তর।

পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাষা

বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার বেশিরভাগ মানুষের ভাষা বাংলা, এছাড়া সাঁওতালি এবং হিন্দিতেও অনেকে কথা বলে।

পূর্ব বর্ধমান জেলার উৎসব

‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’ বাংলা প্রবাদটি এই জেলার প্রচুর উৎসবকে নির্দেশ করে। বাঙালি হিন্দুদের দ্বারা পালিত দুর্গাপূজা বা সারদোৎসব জেলার প্রধান উৎসব। এছাড়া কালী পূজা, সরস্বতী পূজা, হোলি বা দোলযাত্রা, রথ-যাত্রা, রাখীবন্ধন, ইদ-উল-ফিতর, মহরম, বড়দিন, গুড ফ্রাইডে, গুরু নানক গুরুপুরব, বুদ্ধ পূর্ণিমা, মহাবীর জয়ন্তী, ধর্মরাজের গাজন এবং শিবের গাজন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

পূর্ব বর্ধমান জেলার মেলা

  • (১) পূর্ব বর্ধমান জেলায় অসংখ্য মেলা বসে। মঙ্গলকোট থানার দধিয়ায় মকর সংক্রান্তির সময় এক মাসব্যাপী মেলা বসে। মহা শিবরাত্রির সময় বাবলাদিহিতে একটি নাঙ্গতেশ্বর শিব মেলা হয়। রাম নবমীর সময় আউসগ্রাম থানার কৈরাপুরে এক সপ্তাহব্যাপী মেলা বসে।
  • (২) বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনে করুইতে শিবের গাজন উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়। বাংলা ফাল্গুন মাসে কুসুমগ্রামে, নেরোদিঘি এবং সুটাতে পীরের মেলা উদযাপিত হয়। সাঁওতালরা আশ্বিন নবমীর সময়ে বৈদ্যপুরে মেলার আয়োজন করে।
  • (৩) কেতুগ্রাম থানার সিতাহাটিতে বাংলার ভাদ্র মাসে ভাদু উৎসব চলাকালীন একটি মেলার আয়োজন করা হয়। জেলার প্রধান শহর বর্ধমানে আরও অনেক মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

পূর্ব বর্ধমান জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

পূর্ব বর্ধমান জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন –

(১) রাসবিহারী বসু

ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা রাসবিহারী বসু এই জেলার মানুষ। তিনি ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৫ শে মে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলায় অবস্থিত তাঁর পৈতৃক গ্রাম সুবলদহে জন্মগ্রহণ করেন।

(২) কমলাকান্ত ভট্টাচার্য

বাঙালি সাধক শাক্ত কবি এবং যোগী কমলাকান্ত পূর্ব বর্ধমান জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম।

(৩) রাজশেখর বসু

বাঙালি লেখক, রসায়নবিদ এবং অভিধানবিদ রাজশেখর বসু এই জেলারই মানুষ। তিনি তার ছদ্মনাম পরশুরাম দ্বারা বেশি পরিচিত।

(৪) হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায়

ভারতীয় সাংবাদিক এবং দেশপ্রেমিক হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় পূর্ব বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। নীল বিদ্রোহ -এর বিরুদ্ধে তার ভূমিকা অসামান্য।

(৫) বটুকেশ্বর দত্ত

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্ত পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ থানার ওয়ারি গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন।

(৬) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

বিখ্যাত বাঙালি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার অধিবাসী।

(৭) অন্যান্য ব্যক্তি

পঞ্চদশ শতকের বাঙালি কবি মালাধর বসু, মধ্য যুগের বাঙালি কবি ঘনরাম চক্রবর্তী, বাঙালি পন্ডিত দুলাল তর্কবাগীশ, বাঙালি কবি এবং লেখক প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় প্রমুখ পূর্ব বর্ধমান জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি।

পূর্ব বর্ধমান জেলার দর্শনীয় স্থান

পূর্ব বর্ধমান জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হল – কার্জন গেট, সর্বমঙ্গলা মন্দির, শের আফগানের সমাধি, কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির, ১০৮ শিবমন্দির, জলটুঙ্গীর চাঁদনী পার্ক, ভাল্কিমাচান, কালনা রাজবাড়ী মন্দির, অট্টহাস সতী পীঠ মন্দির, রমনাবাগান – প্রাণিবিদ্যা পার্ক, কৃষক সেতু ও দামোদর নদ, খ্রিস্টান গির্জা,খাজা আনোয়ার বেড় (নবাব বাড়ি), গোলাপবাগ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ঝুলন্ত রেলওয়ে ওভার ব্রিজ, টাউন হল, কৃষ্ণসায়র ইকোলজিকাল উদ্যান, কৃষ্ণচন্দ্রজী মন্দির, নব কৈলাশ মন্দির, শ্রী গৌরাঙ্গ মন্দির, মাধাইতলা আশ্রম প্রভৃতি।

উপসংহার :- প্রতিটি জেলার নিজস্বতাই আজ আমাদের বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে। সেরকমই একটি জেলা হল পূর্ব বর্ধমান। পশ্চিমবঙ্গের ‘ধানের ভান্ডার’ বলা হয়ে থাকে পূর্ব বর্ধমান জেলাকে। এই জেলায় উৎপাদিত গোবিন্দভোগ চাল তার সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত।

(FAQ) পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. পশ্চিমবঙ্গের ধানের ভাণ্ডার বলা হয় কোন জেলাকে?

পূর্ব বর্ধমান।

২. কোন জেলার সীতাভোগ ও মিহিদানা বিখ্যাত?

পূর্ব বর্ধমান।

৩. পূর্ব বর্ধমান জেলা গঠিত হয় কখন?

২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল।

৪. পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রধান শহর ও প্রশাসনিক দপ্তর কোথায় অবস্থিত?

বর্ধমান।

Leave a Comment