পশ্চিম বর্ধমান

পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রসঙ্গে অবস্থান, জনসংখ্যা, গঠনকাল, আসানসোল মহকুমা, আসানসোল মহকুমার শহর, দুর্গাপুর মহকুমা, দুর্গাপুর মহকুমার শহর, ঐতিহাসিক দিক, সদগোপ রাজাদের শাসন, আসানসোল, দুর্গাপুর, বিধানসভা কেন্দ্র, কয়লা খনি, যোগাযোগ, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানবো।

ভারতের পশ্চিম বর্ধমান জেলা

জেলাপশ্চিম বর্ধমান
গঠিত৭ এপ্রিল, ২০১৭
সদরআসানসোল
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
পশ্চিম বর্ধমান জেলা

ভূমিকা :- ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত বর্ধমান বিভাগের একটি জেলা পশ্চিম বর্ধমান। এই জেলার সদর হল আসানসোল। এটি মূলত কয়লা ও শিল্প প্রধান জেলা।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার অবস্থান

২৩.৬৮° উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৬.৯৮° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে পশ্চিম বর্ধমান জেলা অবস্থিত। সমুদ্র সমতল থেকে এর গড় উচ্চতা হল ৯৭ মিটার।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার জনসংখ্যা

ভারতের পশ্চিম বর্ধমান জেলার জনসংখ্যা প্রায় ২৯ লক্ষ। এখানে সাক্ষরতার হার ৭৮.৭৫ শতাংশ।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার গঠনকাল

পশ্চিমবঙ্গ সরকার আসানসোল ও দুর্গাপুর মহকুমা নিয়ে এই নতুন জেলা তৈরির প্রস্তাব দেয়। ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল এই জেলার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হয়।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল সদর মহকুমা

এই মহকুমায় ১০ টি থানা, বরাবনি, জামুড়িয়া, রাণীগঞ্জ ও সালানপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, ৪ টি পঞ্চায়েত সমিতি, ৩৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৮১ টি মৌজা, ১৬৫ টি জনবহুল গ্রাম, ১টি পৌরসংস্থা, রানীগঞ্জ, জামুরিয়া ও কুলটি পৌরসভা রয়েছে। মহকুমার সদর দফতর আসানসোলে রয়েছে।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার শহর

এই মহকুমার শহরগুলি হল চিত্তরঞ্জন, হিন্দুস্তান কেবলস শহর, ডোমোহনী, ভানোয়ারা, মাঝিরা, পাঙ্গাছিয়া, চরণপুর, কুনুস্তারা, তোপসী, নিমসা, চিনচুরিয়া, কেন্দা, পারসিয়া, রতিবাটি, চাপুই, জেমারি (জে কে নগর টাউনশিপ), বাঁশরা, বেলেবাটন, চেলাদ, মুরগাথৌল, আমকুলা, বকরনগর, এগারা, সাহেবগঞ্জ, রঘুনাথচাক, বল্লভপুর এবং কেন্দ্র খোট্টামদী।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল পৌর কর্পোরেশন

৩ জুন, ২০১৫ সালের কলকাতা গেজেট প্রজ্ঞাপন অনুসারে, কুলটি, রানীগঞ্জ এবং জামুরিয়া পৌরসভা অঞ্চলগুলি আসানসোল পৌর কর্পোরেশনের আওতাধীন করা হয়েছে।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর মহকুমা

এই মহকুমায় ৬ টি থানা, অন্ডাল, পান্ডবেশ্বর, ফরিদপুর-দুর্গাপুর ও কাঁকসা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, ৪ টি পঞ্চায়েত সমিতি, ২৭ টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৭১ টি মৌজা, ১৫১ টি জনবহুল গ্রাম, ১ টি পৌরসভা রয়েছে। এই মহকুমার সদর দুর্গাপুরে শহর।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর মহকুমার শহর

এই মহকুমার শহরগুলি হ’ল সিডুলি, খান্দ্রা, চক বাঁকোলা, উখড়া, মহিরা, দক্ষিণ খন্ড, পরশকোল, কাজোড়া, হরিশপুর, পলাশবান, দিগনালা, অন্ডাল, পূবড়া, মদনপুর, বাসকা, বিলপাহারী, রামনগর, ডালুরবান্দ, বৈদ্যনাথপুর, মহল, কোনারদিহি, নবগ্রাম, সঙ্করপুর, হরিপুর, ছোড়া, বহুলা, মন্দারবাণী, বনগ্রাম, নিরশা, নবঘনপুর, সরপী, ইছাপুর, অরা, গোপালপুর, বামুনার, আমলাজোড়া, কঙ্কসা, দেবিপুর, প্রয়াগপুর ও কেন্দ্র খোট্টামদী।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার ঐতিহাসিক দিক

পশ্চিম বর্ধমান জেলায় সদগোপ রাজাদের শাসন

দামোদর নদ ও অজয় নদের মাঝখানের অঞ্চলকে গোপপুম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এখানে সদগোপ রাজারা শাসন করেছিলেন। কাঁকসা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের শ্যামারপুর গড় এবং ইছাই ঘোষের দেউল তখনকার সময়কালের ধ্বংসাবশেষ।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার শহর আসানসোল

বরাকর, মাইথন থেকে পানাগড় পর্যন্ত বিস্তৃত পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মেট্রো নগরী আসানসোল।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার শহর দুর্গাপুর

দুর্গাপুর মহকুমায় দুর্গাপুর শহরাঞ্চলের ভৌগোলিক আয়তন ১২৭.১ বর্গ কি.মি.। ভৌগোলিক বিস্তৃতি ও আয়তনের বিচারে দুর্গাপুর পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ও ভারতের অন্যতম বৃহত্তম শিল্পাঞ্চল।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিধানসভা কেন্দ্র

ভারতের পশ্চিম বর্ধমান জেলার ৬ টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। এগুলি হল আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র, আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র, জামুরিয়া বিধানসভা কেন্দ্র, রানিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র, কুলটি বিধানসভা কেন্দ্র, বারাবনি বিধানসভা কেন্দ্র গঠিত। এই ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্রই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার কয়লা খনি

ভারতে প্রথম কয়লা উত্তোলন রানীগঞ্জ কয়লাখানিতে শুরু হয়। ১৭৭৪ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন সুমনার এবং গ্রান্ট হেইলি বর্তমানে ইথোরা নিকটবর্তী অঞ্চলে কয়লা পেয়েছিলেন। বর্তমানে এই অঞ্চল সালানপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার রেলইঞ্জিন কারখানা

  • (১) আসানসোলে একটি বৈদ্যুতিক রেল শেড এবং একটি ইএমইউ শেড আছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় অবস্থিত চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানা বা চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস ভারতের একটি ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ নির্মাণ কারখানা।
  • (২) এটি বিশ্বের বৃহত্তম লোকোমোটিভ উৎপাদক কারখানাগুলির অন্যতম। ১৯৪৭ সালে স্থাপিত এই কারখানাটি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী চিত্তরঞ্জন দাশের নামে নামাঙ্কিত।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা

ভারতের পশ্চিম বর্ধমান জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। যেমন –

(১) সড়কপথ

১৯ নং জাতীয় সড়ক পশ্চিম বর্ধমান জেলার সঙ্গে পূর্ব দিকে কলকাতা এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লিকে যুক্ত করেছে। ১৪ নং জাতীয় সড়ক এই জেলাকে দক্ষিণে বাঁকুড়া জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ও ওড়িশা রাজ্যের সঙ্গে এবং উত্তরে ফারাক্কা ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এছাড়া সড়কপথে জেলাটি ধানবাদ, বাঁকুড়া, পাটনা, হলদিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।

(২) রেলপথ

পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহর রেল পরিবহনের কেন্দ্রবিন্দু। আসানসোল রেলওয়ে বিভাগ বর্তমানে পূর্ব রেলওয়ে জোনের একটি অংশ। আসানসোল রেল বিভাগের স্টেশনগুলি হল অণ্ডাল, রাণীগঞ্জ এবং দুর্গাপুর।

(৩) আকাশপথ

পশ্চিম বর্ধমান জেলায় দুটি বিমানবন্দর রয়েছে। এই দুটি বিমানবন্দর হল দুর্গাপুর শহরের কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি দুর্গাপুর বিমানবন্দর নামেও পরিচিত। বার্ণপুর শহরে দামোদর নদের তীরে অবস্থিত ব্যক্তিগত বার্ণপুর বিমানবন্দর ইস্কো ইস্পাত মালিকানাধীনে রয়েছে।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব

ভারতের পশ্চিম বর্ধমান জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিজ্ঞানী বিকাশ চন্দ্র সিং, অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, গলফার অর্জুন অটওয়াল, সন্ন্যাসী স্বামী অশোকানন্দ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া, অভিনেত্রী মুনমুন দত্ত, গবেষক গিয়াসুদ্দিন দালাল, গায়ক মিকা সিং, ক্রিকেটার প্রয়াস রায় বর্মন, নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার দর্শনীয় স্থান

ভারতের পশ্চিম বর্ধমান জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হল শ্যামারূপা মন্দির, ইছাই ঘোষের দেউল, রাধেশ্যাম মন্দির, ডিয়ার পার্ক, নাচন পক্ষীরালয় ইত্যাদি।

উপসংহার :- প্রতিটি জেলাই একে অন্যের ভূমিরূপ, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে স্বতন্ত্র। প্রতিটি জেলার এই নিজস্বতাই আজ আমাদের বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে। সেই রকমই একটি জেলা হল পশ্চিম বর্ধমান।

(FAQ) পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন জেলা ভেঙ্গে পশ্চিম বর্ধমান জেলা গঠিত হয়?

বর্ধমান জেলা।

২. পশ্চিম বর্ধমান জেলা গঠিত হয় কখন?

৭ এপ্রিল ২০১৭ সালে।

৩. পশ্চিম বর্ধমান জেলার মহকুমার সংখ্যা কত?

দুটি, আসানসোল ও দুর্গাপুর।

৪. পশ্চিম বর্ধমান জেলার সদর কোথায় অবস্থিত?

আসানসোল।

Leave a Comment