মোহাম্মদ ঘুরির সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি প্রসঙ্গে খলজি উপজাতি, বাল্য জীবন, ভাগ্যান্বেষী সৈনিক, চাকরি লাগে ব্যর্থতা, চাকরি লাভ, জায়গীর লাভ, বিহার জয়, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস, কুতুবুদ্দিন আইবকের সাথে সাক্ষাৎ, সমসাময়িক বাংলার রাজা, নদিয়া অভিযান, প্রাসাদে প্রবেশ, লক্ষণ সেনের পলায়ন, রাজধানী স্থাপন, উত্তর বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠা, সেনাধ্যক্ষ, বখতিয়ারপুর, ফুলদিগ্রাম, রাজ্যের বিস্তার, তিব্বত অভিযান, অসুস্থতা ও মৃত্যু, সমাধি, মিনহাজ সিরাজের বর্ণনা সম্পর্কে জানবো।
ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি প্রসঙ্গে বখতিয়ার খলজির পরিচয়, বখতিয়ার খলজির শারীরিক আকৃতি, বখতিয়ার খলজির বাল্য জীবন, ভাগ্যান্বেষী সৈনিক বখতিয়ার খলজি, বখতিয়ার খলজির চাকরি ও জায়গির লাভ, বখতিয়ার খলজির বিহার জয়, বখতিয়ার খলজির নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস, মহম্মদ ঘুরি ও কুতুব উদ্দিনের সেনাপতি বখতিয়ার খলজি, বখতিয়ার খলজির বাংলা আক্রমণ, বখতিয়ার খলজির নদীয়া অভিযান, বখতিয়ার খলজির তিব্বত অভিযান, বখতিয়ার খলজির অসুস্থতা, বখতিয়ার খলজির মৃত্যু ও তার সমাধি।
ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি
ঐতিহাসিক চরিত্র | বখতিয়ার খলজি |
জন্ম | গরমশির |
পেশা | সেনাধ্যক্ষ |
উত্তরসূরি | শিরাণ খলজি |
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস | ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দ |
মৃত্যু | ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ |
সমাধি | পীরপাল দরগাহ, দক্ষিণ দিনাজপুর |
ভূমিকা:- মহম্মদ ঘুরির একজন তুর্কি-আফগান সেনাপতি ও প্রাথমিক দিল্লি সুলতানির সেনাপতি ছিলেন।তিনিই প্রথম মুসলিম হিসেবে বাংলা ও বিহার জয় করেছিলেন।বখতিয়ার খলজি নামেও তিনি সমধিক পরিচিত।
খলজি উপজাতির মানুষ বখতিয়ার খলজি
বখতিয়ার খলজি ছিলেন মুসলিম খলজি উপজাতির একজন সদস্য, যারা ২০০ বছর আগে তুর্কিস্তান থেকে আফগানিস্তান -এ এসে বসতি স্থাপন করে।
বখতিয়ার খলজির বাল্যজীবন
তিনি ছিলেন আফগানিস্তানের গরমশিরের (বর্তমানে দশতে মার্গ) অধিবাসী।তার বাল্যজীবন সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে মনে করা হয় দারিদ্রের পীড়নে তিনি স্বদেশ ত্যাগ করেন এবং নিজের কর্মশক্তির উপর নির্ভর করে অন্যান্য অধিবাসীদের ন্যায় ভাগ্যান্বেষণে বের হন।
ভাগ্যান্বেষী সৈনিক বখতিয়ার খলজি
তুর্কি বংশোদ্ভুত ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজি প্রাথমিক জীবনে একজন ভাগ্যান্বেষী সৈনিক ছিলেন।
চাকরি লাভে বখতিয়ার খলজির ব্যর্থতা
- (১) প্রথমেই তিনি গজনির সুলতান মহম্মদ ঘুরির সৈন্যবাহিনীতে চাকরির আবেদন করেও সফল হননি।খাটো দৈর্ঘ্য, লম্বা হাত এবং কুৎসিত চেহারার অধিকারী হওয়ায় সেনাধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
- (২) গজনিতে চাকরিলাভে ব্যর্থ হয়ে তিনি দিল্লিতে কুতুবউদ্দিন আইবক -এর দরবারে হাজির হন। এখানেও তিনি চাকরি পেতে ব্যর্থ হন।
বখতিয়ার খলজির চাকরি লাভ
পর পর দুবার চাকরি লাভে ব্যর্থ হয়ে তিনি বদায়ুন প্রদেশে গমন করেন। বদায়ুনের শাসনকর্তা মালিক হিজবর উদ্দিন বখতিয়ার খলজিকে নগদ বেতনে সেনাবাহিনীতে চাকরি প্রদান করেন।
বখতিয়ার খলজির জায়গির লাভ
এরপর তিনি অযোধ্যায় আসেন। অযোদ্ধার শাসনকর্তা হুসামউদ্দিন তাকে বর্তমান মির্জাপুর জেলার পূর্ব-দক্ষিণ কোণে অবস্থিত ভগবৎ ও ভিউলি নামক দুইটি পরগনার জায়গির প্রদান করেন।
বখতিয়ার খলজির বিহার জয়
- (১) তিনি একদিন এক প্রাচীরবেষ্টিত দুর্গের মতো স্থানে আসেন এবং আক্রমণ করেন। এই আক্রমণে তিনি প্রতিপক্ষের কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। দুর্গজয়ের পর তিনি দেখেন যে দুর্গের অধিবাসীরা প্রত্যেকেই মুণ্ডিতমস্তক এবং দুর্গটি বইপত্র দিয়ে ভরা।
- (২) জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি জানতে পারেন যে এটি একটি বৌদ্ধ বিহার। এটি ছিল ওদন্ত বিহার বা ওদন্তপুরী বিহার। সেই সময় থেকেই মুসলমানরা জায়গাটিকে বিহার বা বিহার শরিফ নামে ডাকে।
বখতিয়ার খলজি কর্তৃক নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস
১১৯৩ সালে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি ধ্বংস করার জন্য বখতিয়ার খলজিকে দায়ী করা হয়। সেখানে থাকা সকল ছাত্রদেরকেও সেই সময় হত্যা করা হয়।
কুতুব উদ্দিনের সাথে বখতিয়ার খলজির সাক্ষাৎ
বিহার জয়ের পর বখতিয়ার খলজি অনেক ধনরত্ন সহ কুতুবউদ্দিন আইবেকের সাথে সাক্ষাৎ করতে যান এবং কুতুব উদ্দিন কর্তৃক সম্মানিত হয়ে ফিরে আসেন।
বখতিয়ার খলজির আক্রমণের সময় বাংলার রাজা
তৎকালীন বাংলার রাজা লক্ষ্মণসেন বাংলার রাজধানী নদিয়ায় অবস্থান করছিলেন। কারণ, নদিয়া ছিল বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে সবচেয়ে সুরক্ষিত অঞ্চল।
বখতিয়ার খলজির নদীয়া অভিযান
অভিযানকালে বখতিয়ার খলজি ঝাড়খণ্ডের মধ্য দিয়ে এত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়েছিলেন যে তার সাথে মাত্র ১৭ জন সৈনিকই তাকে অনুসরণ করতে পেরেছিলেন।
বখতিয়ার খলজির নদীয়ার প্রাসাদে প্রবেশ
সেনাপতি বখতিয়ার খলজি সরাসরি রাজা লক্ষ্মণসেনের প্রাসাদদ্বারে উপস্থিত হন এবং দ্বাররক্ষী ও প্রহরীদের হত্যা করে প্রাসাদের ভিতরে প্রবেশ করেন।
বখতিয়ার খলজির আক্রমণে লক্ষ্মণসেনের পলায়ন
সেনাপতি বখতিয়ার খলজির আক্রমনে প্রাসাদের ভিতরে হইচই পড়ে যায় এবং লক্ষ্মণসেন দিগ্বিদিক হারিয়ে ফেলে প্রাসাদের পেছনের দরজা দিয়ে নৌপথে বিক্রমপুরে আশ্রয় নেন।
বখতিয়ার খলজির রাজধানী স্থাপন
খলজি নদিয়া জয় করে পরবর্তীতে লক্ষণাবতীর (গৌড়) দিকে অগ্রসহ হন এবং সেখানেই রাজধানী স্থাপন করেন। এই লক্ষণাবতীই পরবর্তীকালে লখনৌতি নামে পরিচিত হয়।
উত্তর বাংলায় বখতিয়ার খলজির অধিকার প্রতিষ্ঠা
গৌড় জয়ের পর বখতিয়ার খলজি আরও পূর্বদিকে বরেন্দ্র বা উত্তর বাংলায় নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন।
বখতিয়ার খলজির সেনাধ্যক্ষ
বখতিয়ারের সেনাধ্যক্ষদের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া যায়।এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুবেদার আউলিয়া খাঁ পূর্ব বঙ্গে (বাংলাদেশ), আলি মর্দান খলজি বরসৌলে এবং হুসামউদ্দিন ইওজ খলজি গঙ্গতরীর শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।
বখতিয়ার খলজির স্মরণে বখতিয়ারপুর নামকরণ
আউলিয়া খাঁ ১২০৬ সালে তার প্রিয় বন্ধু বখতিয়ার খলজিকে স্বরণীয় করে রাখতে তার নামে বর্তমান ভাওয়াল গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার বখতিয়ারপুর এলাকার নামকরণ করেছিলেন। যা বর্তমানে বক্তারপুর এলাকা হিসেবে পরিচিত।
ফুলদি গ্ৰাম
সুবেদার আউলিয়া খাঁর বংশধর সার্কেল ইন্সপ্যাক্টর অব পুলিশ মুন্সী মহম্মদ ছরওয়ার খাঁ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে ফুলহরী নাম পরিবর্তন করে ফুলদী নামে নামকরণ করেন।
বখতিয়ার খলজির রাজ্যের বিস্তার
বখতিয়ারের রাজ্য পূর্বে তিস্তা নদী ও করতোয়া নদী, দক্ষিণে পদ্মা নদী, উত্তরে দিনাজপুর জেলার দেবকোট হয়ে রংপুর শহর পর্যন্ত এবং পশ্চিমে পূর্বে অধিকৃত বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
বখতিয়ার খলজির তিব্বত অভিযান
তিনি তিন জন সেনাপতি ও প্রায় দশ হাজার সৈন্য সামন্ত নিয়ে লখনৌতি থেকে তিব্বতের দিকে রওনা দেন।কিন্তু সেখানে তিনি বিফল হয়ে ফিরে আসেন।
বখতিয়ার খলজির অসুস্থতা ও মৃত্যু
নানাবিধ চিন্তা এবং পরাজয়ের গ্লানির মানসিক চাপে বখতিয়ার অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। এর অল্প কিছুদিন পরে ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
বখতিয়ার খলজির মৃত্যু সম্পর্কে মিনহাজের বর্ণনা
ঐতিহাসিক মিনহাজ-উস-সিরাজের বর্ণনানুসারে, তিনি আলী মর্দান খলজি কর্তৃক ছুরিকাঘাতে নিহত হন।
বখতিয়ার খলজির সমাধি
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার নারায়ণপুরের পীরপাল দরগাহে তার সমাধিস্থল রয়েছে।
উপসংহার:- বখতিয়ার খলজির পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলায় মসজিদ, মাদ্রাসা এবং খানকাহ নির্মাণের মাধ্যমে ইসলামের নতুন আবাস স্থপিত হয়েছিল এবং তার আমিররা তার কাজকে অনুসরণ করেছিলেন।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বখতিয়ার খলজি” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) বখতিয়ার খলজি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
লক্ষ্মণসেন।
ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি।
তিব্বত অভিযান।