আলাউদ্দিন খলজির চরিত্র প্রসঙ্গে ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় আচরণ, নিষ্ঠুরতা, ইসলামী রাজতন্ত্রে নির্দোষ আলাউদ্দিন, সতর্ক ও ধৈর্যশীল, নিজস্ব প্রতিভা, পারিবারিক জীবনে ব্যর্থতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, যোগ্যতা প্রর্দশন ও বাংলার সুলতান হওয়ার বাসনা সম্পর্কে জানবো।
আলাউদ্দিন খলজির চরিত্র
বিষয় | আলাউদ্দিন খলজির চরিত্র |
সুলতান | আলাউদ্দিন খলজি |
বংশ | খলজি বংশ |
প্রতিষ্ঠাতা | জালালুদ্দিন ফিরোজ খলজি |
উত্তরসূরি | কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি |
খলজি বিপ্লব | ১২৯০ খ্রি. |
ভূমিকা :- সুলতান জালালুদ্দিন খলজির জোষ্ঠ ভ্রাতা শিহাবুদ্দিন খলজির পুত্র ছিলেন আলাউদ্দিন খলজি। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল “আলি গুরশাস্প”। তিনি সিংহাসনে বসার পর ‘আলাউদ্দিন’ নাম গ্ৰহণ করেন।
ব্যক্তিত্ব
আলাউদ্দিন ছিলেন নিরক্ষর। কিন্তু তিনি অভিজ্ঞতা থেকে বহু শিক্ষা নেন। তিনি ছিলেন রণপণ্ডিত, কূটকৌশলী ও ঘোরতর উচ্চাকাঙ্খী। মোল্লা, উলেমা ও দরবেশ কাহাকেও তিনি বিশেষ গ্রাহ্য করতেন না।
ধর্মীয় আচরণ
যদিও তিনি ইসলাম ধর্মে আস্থাবান ছিলেন, তবুও তিনি ধর্মীয় আচরণ কঠোরভাবে পালন করতেন না। একমাত্র সুফীসন্ত শেখ নিজামুদ্দিন আওলিয়াকে তিনি আন্তরিক শ্রদ্ধা করতেন।
নিষ্ঠুরতা
- (১) আলাউদ্দিনের চরিত্রে নিষ্ঠুরতা ছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক অভিযোগ করেছেন। ভিনসেন্ট স্মিথের মতে “আলাউদ্দিন ছিলেন এক বর্বর স্বৈরশাসক (A savage tyrant)। যদিও তিনি গুজরাট সহ অন্য কিছু অঞ্চল জয় করেন, তার শাসনকাল বিভিন্ন দিক থেকে ছিল হীনতাযুক্ত।
- (২) ডঃ নিজামীর মতে, আলাউদ্দিন ছিলেন ধৈর্যশীল, সাবধানী, সাহসী, নির্মম এবং পরিকল্পনা প্রবণ”। তিনি তার স্নেহপ্রবণ পিতৃব্য জালালুদ্দিন খলজিকে চক্রান্ত করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন। তিনি জালালুদ্দিনের পুত্রদেরও নিহত করেন। এইভাবে তিনি তাঁর সিংহাসন নিষ্কন্টক করেন।
ইসলামী রাজতন্ত্রে নির্দোষ আলাউদ্দিন
তবে মধ্যযুগের ইসলামীয় রাজতন্ত্রে এরূপ হত্যা ছিল সাধারণ ঘটনা। সমকালীন লোকেরা এজন্য আলাউদ্দিনকে বিশেষ দোষী মনে করত এমন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। আলাউদ্দিনের সমকালীন কবি আমীর খসরু এবং তাঁর পরের লেখক ইসামী এজন্য আলাউদ্দিনকে অভিযুক্ত করেন নি। আলাউদ্দিনের জয়ের মধ্যে তারা আলাউদ্দিনের প্রতি ঈশ্বরের করুণা লক্ষ্য করেছেন।
সতর্ক ও ধৈর্যশীল
আলাউদ্দিন ছিলেন তার পরিকল্পনা রচনায় ও প্রয়োগে অত্যন্ত সতর্ক ও ধৈর্যশীল। এজন্যই তাঁর প্রতিপক্ষরা সর্বদা পরাস্ত হত। জালালুদ্দিন খলজির দুর্বল শাসন নীতির জন্য তরুণ খলজি মালিকদের অসন্তোষকে তিনি নিজ উচ্চকাঙ্খা পূরণের জন্য ব্যবহার করেন।
নিজস্ব প্রতিভা
শাসনকার্য পরিচালনা ও জনচরিত্রে তাঁর নিজস্ব প্রতিভা ছিল। তিনি প্রচার করতেন যে, তিনি যা করছেন তা “জনসাধারণের মঙ্গলের জন্য” (Service of the people)। তিনি নিজেও তা বিশ্বাস করতেন। এই বিশ্বাসকে আশ্রয় করে তিনি কাজ করতে অভ্যস্ত ছিলেন।
পারিবারিক জীবনে ব্যর্থতা
- (১) আলাউদ্দিনের পারিবারিক জীবন সুখের ছিল না। তাঁর পত্নী ছিলেন সুলতান জালালুদ্দিনের কন্যা। তার এই পত্নী আলাউদ্দিনকে হেয় জ্ঞান করতেন এবং বাক্যবাণে বিদ্ধ করতেন। আলাউদ্দিনের শ্বাশুড়ী অর্থাৎ সুলতান জালালুদ্দিনের পত্নীও আলাউদ্দিনের প্রতি খারাপ ব্যবহার করতেন।
- (২) একমাত্র জালালুদ্দিন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র বা জামাতাকে অন্ধস্নেহ দেখাতেন। সুতরাং জালালুদ্দিনের পরিবারের লোকেদের প্রতি আলাউদ্দিনের অনুরাগ থাকা সম্ভব ছিল না। আলাউদ্দিনের তিন কনিষ্ঠ ভ্রাতার মধ্যে একমাত্র আলামাস বেগের কথা জানা যায়।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা
আলাউদ্দিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার মূলে ছিল তাঁর নিজ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। আলাউদ্দিন মনে করতেন যে এর ফলে তিনি তাঁর পত্নীর কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হতে পারবেন।
যোগ্যতা প্রর্দশন
মালিক চাজ্জুর বিদ্রোহের সময় আলাউদ্দিন তাঁর যোগ্যতা দেখিয়ে অযোধ্যার কারা মানিকপুরের শাসকর্তার পদ পান। এরপর ভিলসা, চান্দেরী ও পরে দেবগিরি অভিযান দ্বারা আলাউদ্দিন প্রচুর ধনরত্ন লাভ করেন। এই সম্পদ দ্বারা তিনি একটি শক্তিশালী বাহিনী গড়েন।
বাংলার সুলতান হওয়ার বাসনা
আলাউদ্দিন প্রথমে স্থির করেছিলেন যে, তিনি লক্ষ্মণাবতী বা বাংলা জয় করে বাংলার স্বাধীন সুলতান হিসেবে দিল্লী থেকে দূরে থাকবেন। কিন্তু পরে তিনি মত পালটে
উপসংহার :- আলাউদ্দিন খুল্লতাত জালালুদ্দিনকে হত্যা করে দিল্লীর সিংহাসন দখল করতে মনস্থ করেন। এর পর তিনি ছলনা দ্বারা সুলতান জালালুদ্দিনকে কৌশলে কারা বা অযোধ্যার গঙ্গাতীরে তাকে নিহত করেন।