গজনী রাজ্য

গজনী রাজ্য প্রসঙ্গে ইয়ামিনি বংশ, আলপ্তগীন, গজনভী বংশ, ইসাখ ও বলকাতিগীন, পিরাই, সবুক্তগীন, সবুক্তগীন ও জয়পালের যুদ্ধ, জয়পালের ব্যর্থতা, সবুক্তগীনের সাফল্য ও ইসমাইল সম্পর্কে জানবো।

গজনী রাজ্য

বিষয় গজনী রাজ্য
রাজধানী গজনী
গজনভী বংশ আলপ্তগীন
খাইবার দখল সবুক্তগীন
ভারত অভিযান মামুদ
গজনী রাজ্য

ভূমিকা :- ইয়ামিনি বংশের আলপ্তগীন জাবুল রাজ্যের রাজধানী গজনী দখল করে নিজের রাজধানী সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকেই গজনভী বংশ ও গজনী রাজ্য ইতিহাসে উঠে আসে।

ইয়ামিনি বংশ

ইয়ামিনি বংশ আদিতে পারসিক জাতিভুক্ত ছিল। পারস্যে আরব আক্রমণের সময় ইয়ামিনি বংশের পূর্ব পুরুষ তুর্কীস্থানে পালিয়ে যায়। দীর্ঘকাল তুর্কীস্থানে বসবাসের ফলে ইয়ামিনি বংশ তুর্কী বলেই পরিচিত হয়। তুর্কী জাতি দিগ্বিজয়ে বেরিয়ে পারস্য দখল করে।

আলপ্তগীন

ইয়ামিনি বংশীয় আলপ্তগীন, যিনি তুর্কী বলেই পরিচিত ছিলেন আফগানিস্থানের একাংশ বা জাবুল রাজ্যের আরব শাসক আবু বকরকে পরাজিত করে জয় করেন (৯৬২ খ্রি)। জাবুলের রাজধানী গজনী তাঁর হাতে এলে এই নগরকে তিনি নিজ রাজধানীতে পরিণত করেন।

গজনভী বংশ

আলপ্তগীন গজনীকে নিজের রাজধানী করার পর এই বংশ গজনভী বংশ বলে পরিচিত হয়। আলপ্তগীন গজনীতে যে রাজ্য স্থাপন করেন তা ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম। এজন্য তিনি সুলতান উপাধি নেন।

ইসাখ ও বলকাতিগীন

আলপ্তিগীনের পর ইসাখ নামে এক ব্যক্তি গজনীর সিংহাসনে তিন বছর অধিষ্ঠিত থাকেন। ইসাখের পর তুর্কী সেনাপতি বলকাতিগীন গজনী সিংহাসন অধিকার করেন।

পিরাই

৯৭২ খ্রিস্টাব্দে বলকাতিগীনের মৃত্যু হলে তাঁর ক্রীতদাস ‘পিরাই’ গজনীর সিংহাসনে বসেন। পিরাই ছিলেন খুব অত্যাচারী রাজা। তাঁর বিরুদ্ধে প্রজা বিদ্রোহ ও শত্রু আক্রমণ হলে পিরাই সিংহাসনচ্যুত হন।

সবুক্তগীন

  • (১) এই সুযোগে আলপ্তগীনের জামাতা সবুক্তগীন নিজ বাহু বলে বৈদেশিক আক্রমণ ও বিদ্রোহ দমন করে ৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে গজনীর সিংহাসনে বসেন। সবুক্তগীন ছিলেন যুদ্ধবিশারদ ব্যক্তি। তিনি লামখান ও সিস্তান জয় করেন। এরপর পূর্ব সীমান্তে ভারতের দিকে তিনি দৃষ্টি দেন।
  • (২) এই সময় ভারতের সীমান্তে হিন্দু শাহী বংশ রাজত্ব করত। শাহী জয়পালের রাজ্য মূলতান থেকে সরহিন্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সবুক্তগীন জয়পালের সীমান্তের দুর্গ, নগর ও গ্রামগুলি আক্রমণ করলে, জয়পাল তাকে ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা নেন। এইভাবে শাহী বংশের সঙ্গে গজনীর সুলতানদের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরম্ভ হয়।

সবুক্তগীন ও জয়পালের যুদ্ধ

জয়পাল একটি শক্তিশালী সেনাদল নিয়ে ৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে গজনী আক্রমণের জন্য এগিয়ে যান। যুজাক নামে একটি স্থানে উভয় পক্ষের সেনা মুখোমুখি হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে প্রবল তুষার ঝড়ে জয়পালের সেনাদল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। জয়পাল একটি সন্ধি দ্বারা তাঁর রাজ্যের কিছু অংশ ও কয়েকটি রণহস্তী সবুক্তগীনকে ছেড়ে দিতে প্রতিশ্রুতি দেন।

জয়পালের পদক্ষেপ

জয়পাল উপরোক্ত সন্ধি স্বাক্ষর করে নিরাপদে নিজ রাজ্যে ফিরে আসেন। এর পর তিনি সন্ধির শর্তগুলি নাকচ করে দেন। জয়পাল গজনীর বিরুদ্ধে অন্যান্য রাজপুত রাজাদের সাহায্যে এক জোট গড়েন। তিনি তাঁর সহকারী রাজাদের তুর্কী আক্রমণের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করতে সক্ষম হন।

সবুক্তগীনের লামঘান আক্রমণ

জয়পাল সন্ধি ভাঙায় তার শাস্তি হিসেবে, সবুক্তগীন লামঘান আক্রমণ করেন। লামখান ছিল শাহী জয়পালের সীমান্ত ঘাঁটি। এর প্রতিকারের জন্য জয়পাল দ্বিতীয়বার তার জোটসহ গজনী অভিযান করেন। এই জোটে আজমের, কনৌজ ও কালিঞ্জরের রাজারা যোগ দেন। গজনীর বিরুদ্ধে এই দ্বিতীয় আক্রমণে জয়পাল শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। জয়পাল দ্রুত পিছু হঠতে বাধ্য হন। সবুক্তিগীন লামঘান থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত অঞ্চল দখল করেন।

জয়পালের ব্যর্থতা

জয়পালের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিনি তাঁর রাজ্যের ভেতর দিয়ে খাইবার পর্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগের জন্য রাস্তা তৈরি করতে বাধ্য হন। পরবর্তী সময়ে এই রাস্তা ধরে সুলতান মামুন ভারত আক্রমণ করেন। তুর্কী সেনা পশ্চিম পাঞ্জাবে ঢুকে পড়ে।

সবুক্তগীনের সাফল্য

৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে সবুত্তগীনের মৃত্যু হয়। জয়পালের বিরুদ্ধে সবুক্তিগীনের জয় এবং তার খাইবার গিরিপথ অধিকার ছিল ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। খাইবার গিরিপথ ছিল সেই যুগের ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের প্রধান দরজা। সবুক্তগীন এই দরজা অধিকার করায় গজনী থেকে সুলতান মামুদ সহজে ভারতে অভিযান চালাতে পারেন।

জয়পালের পরাজয়ের কারণ

  • (১) কোনো কোনো লেখক জয়পালের পরাজয়ের কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের সুরক্ষার অভাবকে বড় করে দেখান। কিন্তু একটু গভীর ভাবে ভাবলে দেখা যাবে যে জয়পাল তাঁর রাজ্য সীমা রক্ষার জন্য অবহেলা করেন নি।
  • (২) ভারতের বেশ কয়েকজন রাজাও তার পক্ষে যোগ দেন। জয়পাল ভারতের তৎকালীন অন্যান্য রাজা অপেক্ষা অনেক বড় সেনাপতি ছিলেন। আসলে তিনি তুর্কীদের উন্নত কলাকৌশল এবং সবুক্তগীনের পরাক্রমের কাছে নতজানু হতে বাধ্য হন।

ইসমাইল

সবুক্তগীন তার মধ্যম পুত্র ইসমাইলকে তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেন। ইসমাইল ৭ মাস সিংহাসনে বসেন। ইতিমধ্যে সবুক্তগীনের জ্যেষ্ঠপুত্র মাহমুদ বা মামুদ তার কনিষ্ঠ ভ্রাতাকে বিতাড়িত করে ৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে গজনীর সিংহাসন দখল করেন।

উপসংহার :- সবুক্তগীনের এই জ্যেষ্ঠ পুত্রই ছিলেন ইতিহাস খ্যাত সুলতান মামুদ। তাঁর পুরো নাম ছিল আবদুল কাসেম মাহমুদ। তিনি নিজ অধিকারকে বৈধ করার জন্য খলিফার কাছ থেকে ফর্মান লাভ করেন।

(FAQ) গজনী রাজ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. গজভী বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?

আলপ্তগীন।

২. শাহী রাজা জয়পাল কে পরাস্ত করেন কে?

সবুক্তগীন।

৩. ভারত আক্রমণকারী সুলতান মাহমুদ কার পুত্র ছিলেন?

সবুক্তগীন।

৪. সবুক্তগীনের মৃত্যু হয় কখন?

৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Reply

Translate »