খলজি বংশ প্রসঙ্গে জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি, আলাউদ্দিন খলজি, শিহাবুদ্দিন উমর, মালিক কাফুর, কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি, খসরু শাহ সম্পর্কে জানবো।
খলজি বংশ
বিষয় | খলজি বংশ |
সময়কাল | ১২৯০-১৩২০ খ্রি |
প্রতিষ্ঠাতা | জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি |
শ্রেষ্ঠ সুলতান | আলাউদ্দিন খলজি |
শেষ সুলতান | কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি |
ভূমিকা :- ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আইবক প্রতিষ্ঠিত দাস বংশের পতন ঘটে। এরপর জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি, দিল্লী সুলতানির সিংহাসনে আরোহন করলে শুরু হয় খলজি বংশের শাসন।
জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি
- (১) জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সুলতানি সিংহাসন অধিকার করেন। কাইকোবাদের আমলে তিনি শির-ই-জান্দার, আরিজ-ই-মামালিক ও মুলতানের শাসনকর্তার পদে নিযুক্ত হয়ে নিজ যোগ্যতার পরিচয় দেন।
- (২) শাসন ও যুদ্ধবিদ্যা উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর যোগ্যতা স্বীকৃত হয়। তিনি যখন সিংহাসনে বসেন তখন তার বয়স ছিল ৭০ বৎসর। সিংহাসনে বসার পর তিনি তাঁর পূর্বতন সক্রিয় শাসন নীতি ছেড়ে উদারপন্থী নীতি নেন।
- (৩) জালালউদ্দিনের শাসন জাতি বৈরতার ওপর প্রতিষ্ঠিত ইলবারী তুর্কী শাসনের অবসান ঘটায় এবং ভারতীয় মুসলিমদের সংহতিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করে। জালালউদ্দিনের উদারপন্থী রোমান্সবাদী নীতি এজন্য বিশেষ কার্যকরী ছিল এতে সন্দেহ নেই।
- (৪) জালালউদ্দিন তার প্রভু বলবনের বংশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার দ্বারা সিংহাসন লাভ করেন। তিনি বৈধ উত্তরাধিকার অপেক্ষা ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খাকে গুরুত্ব দিয়ে এক কুদৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তাঁরই প্রদর্শিত নীতি নিয়ে তার প্রিয় ভ্রাতুষ্পুত্র আলাউদ্দিন তাকে নিহত করে সিংহাসন দখল করেন।
আলাউদ্দিন খলজি
খলজি বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান হলেন আলাউদ্দিন খলজি। তাঁর প্রকৃত নাম আলি গুরুশাস্প। তাঁর উপাধি ছিল ‘সিকান্দর-ই সানি বা “বিশ্ববিজেতা’। তার রাজত্বের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) রাজতান্ত্রিক আদর্শ
আলাউদ্দিনের রাজতান্ত্রিক আদর্শ হল তিনি রাজার দৈবস্বত্ব ও সীমাহীন স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন, আর রাজনীতিকে ধর্মের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে উলেমাদের প্রভাব অস্বীকার করেন এবং দরবারে মদ্যপান নিষিদ্ধ করেন। ন্যায় ও পক্ষপাতহীন বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তন করাই হল আলাউদ্দিনের রাজনৈতিক আদর্শের মূল কথা।
(২) উত্তর ভারত জয়
আলাউদ্দিন উত্তর ভারতের বেশ অয়েকটি রাজ্য জয় করেন। তার মধ্যে গুজরাট (১২৯৯ খ্রি), রণথম্ভোর (১৩০১ খ্রি), চিতোর (১৩০৩ খ্রি), মালব (১৩০৫ খ্রি), মারোয়াড় (১৩০৮ খ্রি) এবং জালোর (১৩১১ খ্রি) উল্লেখযোগ্য।
(৩) দক্ষিণ ভারত জয়
আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য হল দক্ষিণ ভারতে সুলতানি সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটানো এবং দাক্ষিণাত্যের রাজাগুলির ব্যাপক ধনসম্পদ লুণ্ঠন করা।
(৪) বাজারদর নিয়ন্ত্রণ
বাজারদর নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাউদ্দিনের পদক্ষেপগুলি হল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়। রেশনিং ব্যবস্থা চালু হয়। এইসব বিষয় তারকি করার জন্য শাহানা-ই-মাণ্ডি’ ও ‘দিওয়ান-ই-রিয়াসৎ’ নামে কর্মচারী নিযুক্ত করেন।
শিহাবুদ্দিন উমর
১৩১৬ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিনের মৃত্যুর আগেই তাঁর অনুচর মালিক কাফুরের প্রভাবে তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র খিজির খাঁর দাবী উপেক্ষা করে, কনিষ্ঠ পুত্র বালক শিহাবুদ্দিন উমরকে তার উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেন।
মালিক কাফুর
- (১) আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পর কাফুর বালক শিহাবুদ্দিন উমরের অভিভাবক সেজে সকল ক্ষমতা করায়ত্ত করেন। কাফুর শিহাবুদ্দিনের মাতা আলাউদ্দিনের বিধবা পত্নীকে বিবাহ করেন। তিনি আলাউদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্র খিজির খান ও তার ভ্রাতা শাদি খানকে অন্ধ করে গোয়ালিয়র দুর্গে বন্দী করেন।
- (২) সকল প্রভাবশালী আলাই অভিজাতদের বন্দী অথবা হত্যা করার তিনি চক্রান্ত করেন। আলাউদ্দিনের অপর এক পুত্র মোবারক খলজীকে হত্যার জন্য কাফুর চেষ্টা করলে, মোবারক সেনাদল ও ওমরাহদের সাহায্যে কাফুরকে নিহত করেন। কাফুর ৩৫ দিন বেনামী রাজত্ব করার পর প্রাণ হারান।
কুতুউদ্দিন মোবারক খলজি (১৩১৬-২০ খ্রি)
মালিক কাফুরকে নিহত করার পর কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি কিছুকাল তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা শিহাবুদ্দিন খলজীর অভিভাবকের পদ নেন। দুমাস পরে তিনি অভিজাতদের নিজ পক্ষে এনে শিহাবুদ্দিনকে অন্ধ করে গোয়ালিয়র দুর্গে বন্দী করেন এবং নিজে সুলতানের পদ নেন (১৩১৬ খ্রি)।
নাসিরুদ্দিন খসরু শাহ (১৩২০ খ্রি)
- (১) প্রভু কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজিকে হত্যা করে ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে ৯ই জুলাই খসরু শাহ দিল্লীর সিংহাসন দখল করেন। খসরু ছিলেন ভূতপূর্ব হিন্দু। ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তিনি ইসলামের স্বার্থবিরোধী কাজ করেন নি।
- (২) কিন্তু একজন ধর্মান্তরিত হিন্দু সিংহাসনে বসায় তুর্কী ও আফগান অভিজাতরা অসন্তুষ্ট হয়। তারা আশঙ্কা করে যে, এর ফলে তাদের আধিপতা নষ্ট হবে। এজন্য তুর্কী বিরোধিতা খসরু শাহের বিরুদ্ধে বহু অপপ্রচার চলে এবং তাকে ‘প্রচ্ছন্ন পৌত্তলিক’ ‘ইসলামের শত্রু’ প্রভৃতি আখ্যা দেওয়া হয়।
উপসংহার :- খসরু শাহ বেশীদিন রাজত্ব করতে পারেন নি। তুর্কী ও আফগান আমীররা তাকে সিংহাসনচ্যুত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই সুযোগে উত্তর-পশ্চিমের শাসনকর্তা তুঘলক গাজী মালিক তাকে প্রথমে সরস্বতীর যুদ্ধে ও পরে ইন্দ্রপ্রস্থ বা লাইরাবাটের যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করেন। এর পরে গাজী মালিক গিয়াসুদ্দিন তুঘলক নাম নিয়ে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। শুরু হয় তুঘলক বংশের শাসন।
(FAQ) খলজি বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১২৯০-১৩২০ খ্রিস্টাব্দ।
জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি।
আলাউদ্দিন খলজি।
কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি।