শ্রীনিকেতন স্থানটি প্রসঙ্গে ভৌগলিক অবস্থান, বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক, কুঠিবাড়ি ক্রয়, পল্লী সংগঠন কেন্দ্র, বিভিন্ন ব্যক্তির যোগ, নামের উল্লেখ, উদ্দেশ্য, বার্ষিক উৎসব, কৃষি মহাবিদ্যালয়, শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, পল্লী সংগঠন কেন্দ্র ও স্বতন্ত্র ভবনের মর্যাদা সম্পর্কে জানবো।
শ্রীনিকেতন
স্থান | শ্রীনিকেতন |
জেলা | বীরভূম |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ভারত |
ভূমিকা :- পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর মহকুমায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত শহর হল শ্রীনিকেতন। শ্রীনিকেতনে বোলপুর-শ্রীনিকেতন সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।
ভৌগোলিক অবস্থান
২৩.৬৬° উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৭.৬৬° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে শ্রীনিকেতন অবস্থিত। এখানকার গড় উচ্চতা ৪৯ মিটার।
বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক
বাহিরি-পাঁচশোয়া, রায়পুর-সুপুর, সরপলেহানা-আলবাঁধা, সিংঘি, কঙ্কালিতলা, রূপপুর, কসবা, সাত্তোর, ও সিয়ান মুলুক পঞ্চায়েত নিয়ে বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক গঠিত হয়েছে।
কুঠিবাড়ি ক্রয়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১২ সালে রায়পুরের জমিদার কর্নেল নরেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহের নিকট সুরুল গ্রাম সন্নিহিত কুঠিবাড়িটি দশ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। এই গ্রামটি ছিল শান্তিনিকেতন থেকে তিন কিমি দূরে।
পল্লীসংগঠন কেন্দ্র
১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় স্থাপনের পর থেকেই রবীন্দ্রনাথ পল্লিসংস্কার নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। সুরুল কুঠিবাড়িটি ক্রয় করার পর থেকে সেই মত কাজও শুরু হয়। ১৯২১ সালের শেষ দিকে রবীন্দ্রনাথ এখানে “পল্লীসংগঠন কেন্দ্র” স্থাপন করেন।
বিভিন্ন ব্যক্তির যোগ
লিওনার্ড নাইট এলমহার্স্ট ১৯২২ সালে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে এসে পল্লীসংগঠন সংস্থার পরিচালনভার গ্রহণ করেন। তার সঙ্গে যোগ দেন কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সন্তোষচন্দ্র মজুমদার, গৌরগোপাল ঘোষ, কালীমোহন ঘোষ, সচ্চিদানন্দ রায় প্রমুখ শিক্ষক এবং সুবীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কুলপ্রসাদ সেন, দেবব্রত ভট্টাচার্য, হরিহরণ প্রমুখ শান্তিনিকেতনের ছাত্র। এই সময় এটিকে বলা হত শান্তিনিকেতনের কৃষিকেন্দ্র।
নামের উল্লেখ
১৯২৩ সাল থেকে শ্রীনিকেতন নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। পল্লীসংগঠন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালেই। অবশ্য সুরুল সমিতির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আগেই।
উদ্দেশ্য
বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় শিক্ষাপ্রাঙ্গন হল শ্রীনিকেতন। এর কাজের উদ্দেশ্য ছিল কৃষির উন্নতি, রোগ নিবারণ, সমবায় প্রথায় ধর্মগোলা স্থাপন, চিকিৎসার সুব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে গ্রামবাসীদের সচেতন করে তোলা।
বার্ষিক উৎসব
শ্রীনিকেতনের বার্ষিক উৎসব পালিত হয় প্রতি বছর ৬-৯ ফেব্রুয়ারি।
বিস্তার লাভ
পল্লী সংগঠন বিভাগ থেকে শিল্পভবন, শিক্ষাসত্র ও শিক্ষাচর্চা সদন বিভিন্ন কর্মকাণ্ড শান্তিনিকেতনের পাশাপাশি শ্রীনিকেতনেও বিস্তার লাভ করে।
শিক্ষাসত্র
১৯২৪ সালে শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষাসত্র। এই শিক্ষাসত্রটি ১৯২৭ সালে শ্রীনিকেতনে উঠে আসে।
লোক শিক্ষা সংসদ
দরিদ্র সাধারণের শিক্ষার সুযোগকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১৯৩৬ সালে স্থাপিত হয় লোক-শিক্ষা সংসদ। পরের বছর গ্রামীণ স্কুল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য চালু হয় শিক্ষাচর্চা।
কৃষি মহাবিদ্যালয়
শ্রীনিকেতনে ১৯৬৩ সালে একটি কৃষি মহাবিদ্যালয় পল্লীশিক্ষাসদন এবং ১৯৭৭ সালে পল্লীচর্চাকেন্দ্র স্থাপিত হয়।
শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র
সরকারি সহযোগিতায় শ্রীনিকেতনে ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র।
পল্লীসংগঠন বিভাগ
১৯৫১ সালে পল্লী সংগঠন কেন্দ্র ও শিল্পসদন সংযুক্ত হয়ে পল্লীসংগঠন বিভাগ গঠিত হয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প-প্রশিক্ষণ ও উৎপাদন, গো-পালন ইত্যাদি ছিল এই বিভাগের অন্তর্গত।
পাঠভবনের অনুরূপ
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষাসত্র বিদ্যালয়টি শান্তিনিকেতনের পাঠভবন বিদ্যালয়ের অনুরূপে একটি বিদ্যালয়ে পরিণত হয় এবং পল্লীসংগঠন বিভাগের অধীনে আসে।
পল্লীসংগঠন বিভাগের অধীন
বর্তমানে পল্লী সম্প্রসারণ কেন্দ্র, শিল্পসদন, পল্লীচর্চাকেন্দ্র, সংগীত বিভাগ ও গ্রামীণ গ্রন্থাগার পল্লীসংগঠন বিভাগের অধীনে রয়েছে।
স্বতন্ত্র ভবনের মর্যাদা
পল্লীশিক্ষাভবন একটি স্বতন্ত্র ভবনের মর্যাদা পেয়েছে। এছাড়াও রয়েছে শিক্ষাসত্র, শিক্ষাচর্চা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান ও অঙ্গনওয়াড়ি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
উপসংহার :- ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথের ক্রয় করা কুঠিবাড়িটি বর্তমানে সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে এই বাড়িতেই রয়েছে শ্রীনিকেতন জনসংযোগ দপ্তর, ডাকঘর ও পল্লীচর্চাকেন্দ্রের দপ্তর।
(FAQ) শ্রীনিকেতন স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯২৩ সাল।
বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের কাছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।