বাঁকুড়া শহর

বাঁকুড়া শহর প্রসঙ্গে ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, নামের উৎপত্তি, নামের বুৎপত্তি, জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ সম্পর্কে জানবো।

বাঁকুড়া শহর

শহর বাঁকুড়া
জেলা বাঁকুড়া
রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ
দেশ ভারত
বাঁকুড়া শহর

ভূমিকা :- ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা হল বাঁকুড়া।

ভৌগোলিক অবস্থান

২৩.২৫° উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৭.০৭° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বাঁকুড়া শহরটি অবস্থিত। সমুদ্র সমতল থেকে শহরের গড় উচ্চতা হল ৭৮ মিটার।

জনসংখ্যা

বর্তমানে বাঁকুড়া জেলার জনসংখ্যা ১৮ লক্ষেরও অধিক। এখানে সাক্ষরতার হার ৮১ শতাংশ যা সারা ভারতের সাক্ষরতার হার থেকে বেশি।

নামের উৎপত্তি

প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতে বাঁকুড়া সুহ্নভূমি নামে পরিচিত ছিল। ষষ্ঠ শতকে ‘লাঢ়’ বা ‘রাঢ়’ নামটি প্রচলিত হয়। প্রাচীন অস্ট্রিক ভাষায় ‘rarha’ বা ‘rarho’ কথাটির অর্থ ‘লাল মাটির দেশ’।

নামের বুৎপত্তি

  • (১) বাঁকুড়া নামের ব্যুৎপত্তি সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে। কোল, মুন্ডাদের ভাষায় ওরাহ বা রহ মানে বাসস্থান। রাহের অনেক জায়গার নামের শেষে রাহ যোগ করা আছে। জেলার অন্যতম প্রভাবশালী দেবতা ধর্মঠাকুরকে বাঁকুড়া রায় বলা হয়। তার নাম থেকেই নামটি আসতে পারে।
  • (২) ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন যে নামটি এসেছে বাঙ্কা শব্দ থেকে এবং এর অপভ্রংশ বাঙ্কু, যার অর্থ অত্যন্ত সুন্দর, এবং যাকে পূজা করা উচিত। ১৯৭৯ সালে রেনালের মানচিত্রে “বাঙ্কুরাহ” শব্দটি পাওয়া যায়। ১৮৬৩ সালে গ্যাস্ট্রেল এই অঞ্চলটিকে বানকুন্ডা হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।
  • (৩) বীর হাম্বির ছিলেন মল্ল রাজবংশের ৪৯ তম রাজা। বীর বাঁকুড়া ছিলেন তাঁর দুই পুত্রের একজন। রাজা বীর হাম্বির তার রাজ্যকে ২২ টি তরফ বা বৃত্তে বিভক্ত করেন এবং তার প্রতিটি পুত্রকে একটি করে দেন। বীর বাঁকুড়ার ভাগে পড়ল তরফ জয়বেলিয়া। তিনি তার তরফে একটি শহর গড়ে তোলেন এবং এর প্রতিষ্ঠাতার নাম অনুসারে শহরটির নামকরণ করা হয় ‘বাঁকুড়া’।

জলবায়ু

গ্রীষ্মকালে বাঁকুড়ার জলবায়ু খুব গরম এবং শীতকালে মাঝারি তাপমাত্রা থাকে। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১৫০ সেমি।

শিক্ষা

এই শহরে অবস্থিত বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ চিকিত্‍সা সেবা প্রদান ও পঠনপাঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালে এই শহরে বাঁকুড়া ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে বাঁকুড়া খ্রীস্টান কলেজ, বাঁকুড়া সাম্মিলনি কলেজ, বাঁকুড়া উন্নয়নি ইন্সিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, বড়জোড়া কলেজ সালডিহা কলেজ, কে জি ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সিটিউট, সোনামুখি কলেজ, খাতরা আদিবাসী কলেজ, পাঁচমুডা কলেজ, মল্লভূম ইন্সিটিউট অফ টেকনোলজি, রাইপুর সরকারি পলিটেকনিক, বাঁকুড়া জেলা সারাদামনি মহিলা মহাবিদ্যাপিঠ রামানন্দ কলেজ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

স্বাস্থ্য

বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল হল বাঁকুড়া শহর তথা জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল যা সমস্ত প্রধান বিভাগ এবং ডায়াগনস্টিক সুবিধা দিয়ে সজ্জিত। বাঁকুড়া মহকুমা হাসপাতাল একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। এতে একটি পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ড, রক্ত পরীক্ষা এবং ওটি রয়েছে।

যোগাযোগ

বাঁকুড়া জেলার একটি প্রধান রেল স্টেশন হল বাঁকুড়া জংশন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়গপুর-আর্দ্রা শাখায় বাঁকুড়া স্টেশন অবস্থিত। শহরের একপ্রান্তে সরকারি অধিগৃহিত দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার একটি ডিপো অবস্থিত। তবে সরকারি বাসের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ও অন্য জেলায় যাতায়াতের জন্য সাধারণত বেসরকারি বাস ব্যবহৃত হয়।

উপসংহার :- রাঙামাটির শহর “বাঁকুড়ার” অতুলনীয় সৌন্দর্য সমস্ত ভারতবর্ষের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

(FAQ) বাঁকুড়া শহর সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বাঁকুড়া জেলার সদর কোথায়?

বাঁকুড়া শহরে।

২. বাঁকুড়া শহরের নিকটবর্তী পাহাড়ের নাম কি?

শুশুনিয়া পাহাড়।

৩. বাঁকুড়া শহরের পাশ দিয়ে কোন কোন নদী প্রবাহিত হয়েছে?

দ্বারকেশ্বর ও গন্ধেশ্বরী।

৪. মহাভারতে বাঁকুড়া কি নামে পরিচিত ছিল?

সুহ্নভূমি।

Leave a Reply

Translate »