গুরু গোবিন্দ সিংহ প্রসঙ্গে গুরু গোবিন্দের উপলব্ধি, গুরু গোবিন্দের সংগঠন, পাহুল ও খালসা, পঞ্চ ক ধারণ, দশম পাদশা কি গ্ৰন্থ, গুরুমত, মসন্দ প্রথা লোপ, স্পার্টার হপলাইট বাহিনীর অনুকরণ, আনন্দপুরে কেন্দ্র গঠন, খালসা বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল, মুঘলদের সঙ্গে যুদ্ধ, বাহাদুর শাহ পক্ষ গ্ৰহণ ও গুরু গোবিন্দ সিংহের হত্যা সম্পর্কে জানবো।
দশম শিখ গুরু গুরু গোবিন্দ সিংহ
ঐতিহাসিক চরিত্র | গুরু গোবিন্দ সিংহ |
সময়কাল | ১৬৭৫-১৭০৮ খ্রি |
মুঘল সম্রাট | ঔরঙ্গজেব |
কৃতিত্ব | খালসা বাহিনী গঠন |
গ্ৰন্থ | দশম পাদশা কি গ্ৰন্থ |
মৃত্যু | ১৭০৮ খ্রি: |
ভূমিকা :- গুরু তেগ বাহাদুরের হত্যার পর তার পুত্র গোবিন্দ সিংহ ১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দে গুরুর পদে বসেন। তিনি শিখ শক্তিকে সাংগঠনিক দৃঢ়তা প্রদান করেন।
গুরু গোবিন্দ সিংহের উপলব্ধি
তেগ বাহাদুরের শোচনীয় মৃত্যু গোবিন্দ সিংহের মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তিনি বুঝতে পারেন যে, মুঘলের আক্রমণে শিখ জাতির নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সশস্ত্র প্রতিরোধ ও দৃঢ় সংগঠন ছাড়া শিখ জাতি আত্মরক্ষা করতে পারবে না।
গুরু গোবিন্দ সিংহের সংগঠন
- (১) তিনি শিখপন্থকে নতুন করে সংগঠন করেন। শিখ জাতির এক বিরট সম্মেলন ডেকে গুরু গোবিন্দ ৫ জন শিখকে মনোনয়ন করেন। তাদের নাম হয় “পঞ্চপিয়ারে”। এই ৫ শিখ নেতা তাদের ধর্ম রক্ষার জন্য জীবন দানের প্রতিশ্রুতি দেন।
- (২) গুরু সম্মিলিত শিখদের এখন থেকে আত্মবিশ্বাস ও আত্ম প্রচার দ্বারা নিজ ধর্মকে উঁচুতে তুলে ধরতে নির্দেশ দেন। বিনয় ও আত্মসমর্পণ দ্বারা শত্রুর হৃদয় জয় করা যাবে না বলে তিনি জানিয়ে দেন।
গুরু গোবিন্দ সিংহ কর্তৃক পাহুল ও খালসা প্রথা প্রবর্তন
তিনি ‘পাহুল’ বা দীক্ষা প্রথা চালু করেন। যে সকল শিখ সামরিক বৃত্তি নিয়ে পন্থের সেবায় জীবন উৎসর্গ করবে তারাই খালসা নামে অভিহিত হবে। ‘খালসা’ কথাটির অর্থ হল পবিত্র। পঞ্চপিয়ারে তাদের পাহুল দ্বারা মালসা ব্রতে দীক্ষা দেন। গুরু গোবিন্দ ঘোষণা করেন যে, এখন থেকে “খালসাই হবে গুরু এবং গুরু হবেন খালসা”।
গুরু গোবিন্দ সিংহ কর্তৃক পঞ্চ ক ধারণের নির্দেশ
শিখদের মধ্যে সামরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন দৃঢ় করার জন্য গুরু গোবিন্দ শিখদের পঞ্চ “ক” কার ধারণ করতে নির্দেশ দেন। এই পাঁচ “ক” ছিল কাচ্ছা বা চোস্ত পাজামা, কড়া বা হাতে লোহার বালা, কৃপাণ বা তরবারি, কাঙ্গা বা চিরণী, কেশ বা মাথায় চুল ও মুখে দাড়ি।
গুরু গোবিন্দ সিংহ কর্তৃক রচিত দশম পাদশা কি গ্ৰন্থ
তিনি গুরু গ্রন্থ সাহেবকেই একমাত্র শিখধর্ম গ্রন্থ ও খালসাকেই শিখ পন্থের কর্তা বলে ঘোষণা করেন। তিনি গুরুবাণী সম্বলিত একটি পরিপূরক গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থের নাম ছিল “দশম পাদশা কি গ্রন্থ” (দশম পাদশাহের গ্রন্থ)।
গুরু গোবিন্দ সিংহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গুরুমত
তিনি নির্দেশ দেন যে, তার অবর্তমানে যখনই শিখ জাতিকে কোনো সমস্যার সমাধান করতে হবে তারা সমবেত হয়ে ৫ জনকে নির্বাচন করবে। এই ৫ ব্যক্তির সিদ্ধান্তই হবে তাদের কাছে ‘গুরুমত’ বা গুরুর নির্দেশ। এই নির্দেশ উপস্থিত শিখ সংঘ মেনে নেবে। তিনি বলেন যে, ভবিষ্যতে খালসারাই হবে শিখ পন্থের কর্তা।
গুরু গোবিন্দ সিংহ কর্তৃক মসন্দ প্রথা লোপ
দশম শিখ গুরু গুরু গোবিন্দ ‘মসন্দ’ প্রথা লোপ করেন। কারণ, মসন্দ পদে নিযুক্ত শিখ কর সংগ্রাহকরা অত্যাচারী হয়ে উঠেছিল। তিনি নির্দেশ দেন যে, এখন থেকে প্রতি শিখ স্বেচ্ছায় গুরুকে অর্থদান করতে পারবে।
গুরু গোবিন্দ সিংহ কর্তৃক স্পার্টার হপলাইট বাহিনীর অনুকরণ
শুরু গোবিন্দের সংগঠন শিখ জাতিকে নববলে বলীয়ান করে। প্রাচীন গ্রীস -এর স্পার্টায় যেরূপ কঠিন শৃঙ্খলায় বেঁধে স্পার্টার ‘হপলাইট’ বাহিনী গড়া হত। গুরু গোবিন্দ সেরূপ কঠিন শৃঙ্খলায় খালসা বাহিনী গড়েন। এই বাহিনীকে ধর্মভাবে উদ্দীপিত করে তিনি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমুখী ও চেতনাযুক্ত বাহিনীতে পরিণত করেন।
আনন্দপুরে গুরু গোবিন্দ সিংহের কেন্দ্র গঠন
গুরু গোবিন্দ বুঝতে পারেন যে, পাঞ্জাবের এমন অঞ্চলে তাঁর কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে যেখানে মুঘল শক্তি দুর্বল। তিনি পাঞ্জাব ও জম্মুর পার্বত্য অঞ্চল এজন্য বেছে নেন এবং আনন্দপুরে তাঁর শিবির স্থাপন করেন।
খালসা বাহিনীর ওপর গুরু গোবিন্দ সিংহের নির্ভরশীলতা
পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতি প্রধানদের সাহায্য নিয়ে তিনি খালসা বাহিনী গড়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এই উপজাতীয় শাসকরা বুঝতে পারে যে, শিখ গুরুর শক্তি বাড়লে তিনি তাদের পদানত করবেন। সুতরাং তারা সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সহায়তা চায় এবং গুরুকে আত্মরক্ষার জন্য এখন থেকে খালসা বাহিনীর ওপরেই নির্ভর করতে হয়।
মুঘলদের সঙ্গে গুরু গোবিন্দ সিংহের যুদ্ধ
- (১) ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে আনন্দপুরের যুদ্ধে গোবিন্দ সিংহ পরাস্ত হন। তাঁর দুই পুত্র অজিত সিং ও জুবার সিং যুদ্ধে নিহত হয়। অপর দুই পুত্র শিরহিন্দের মুঘল শাসনকর্তা ওয়াজির খাঁর হাতে বন্দী হয়ে নিহত হয়।
- (২) গুরু এতে না দমে যুদ্ধ চালিয়ে যান। তিনি কোটকাপরার যুদ্ধে জয়লাভ করেন। তিনি পাতিয়ালার বহু জাঠকে শিখধর্মে দীক্ষিত করেন। এদের দ্বারা তিনি নতুন করে খালসা বাহিনী গড়ে তুলেন।
গুরু গোবিন্দ সিংহ কর্তৃক আদি গ্ৰন্থ সম্পূর্ণ করণ
পাঞ্জাবের তালবন্দীতে অবস্থানের সময় গুরু গোবিন্দ আদিগ্রন্থে আরও ১১৬টি স্তোত্র যোগ করে গ্রন্থটি সম্পূর্ণ করেন। তাঁর দশম পাদশা কি গ্রন্থ ছিল গুরুমুখী ভাষায় রচিত। তালবন্দীর অপর নাম দেওয়া হয় ‘দমদমা সাহিব’।
গুরু গোবিন্দ সিংহের প্রতি ঔরঙ্গজেবের আহ্বান
দমদমা সাহিব থেকে তিনি সম্রাট ঔরঙ্গজেবকে উদ্দেশ্য করে তাঁর বিখ্যাত খোলা চিঠি ‘জাফর নামা’ রচনা করেন। ঔরঙ্গজেব তাকে দরবারে আমন্ত্রণ করেন। গোবিন্দ সিংহ যখন দিল্লীতে আসেন তার আগেই ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়।
গুরু গোবিন্দ সিংহের বাহাদুর শাহ পক্ষ গ্ৰহণ
শিখ গুরু গুরু গোবিন্দ সম্রাট বাহাদুর শাহ-এর পক্ষ নেন এবং তার সঙ্গে জাজু ও রাজপুতানার যুদ্ধ শিবিরে যান। তিনি বাহাদুর শাহের কাছে পাঞ্জাবের সুবাদার উজির খাঁর নামে অভিযোগ করেন। কিন্তু বাহাদুর শাহ তাতে কান দেন নি।
গুরু গোবিন্দ সিংহের হত্যা
সম্রাট গুরু গোবিন্দকে তাঁর সঙ্গে দক্ষিণে যেতে আদেশ দেন। দক্ষিণে যাওয়ার সময় নর্মদা নদীর তীরে উজির খাঁর নিযুক্ত এক পাঠান আততায়ী ১৭০৮ খ্রিস্টাব্দে গুরু গোবিন্দ সিংহকে হত্যা করলে এই বিখ্যাত গুরুর মৃত্যু হয়।
উপসংহার :- গুরু গোবিন্দ সিংহ ছিলেন শিখ জাতির শেষ গুরু। তার সাংগঠনিক ক্ষমতা শিখ শক্তিকে যথেষ্ট শক্তিশালী করেছিল। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে শিখজাতির গুরুর পদ লুপ্ত হয়।
(FAQ) গুরু গোবিন্দ সিংহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
গুরু গোবিন্দ সিংহ।
গুরু গোবিন্দ সিংহ।
গুরু গোবিন্দ সিংহ।
ঔরঙ্গজেব।