দিল্লী সুলতানির সৈয়দ বংশ -এর প্রতিষ্ঠাতা খিজির খাঁ, শ্রেষ্ঠ সুলতান মোবারক খান, শেষ সুলতান আলাউদ্দিন আলম শাহ সম্পর্কে জানবো।
দিল্লী সুলতানির সৈয়দ বংশ
বিষয় | সৈয়দ বংশ |
শাসনকাল | ১৪১৪-১৪৫১ খ্রি |
প্রতিষ্ঠাতা | খিজির খান |
শ্রেষ্ঠ সুলতান | মোবারক খান |
শেষ সুলতান | আলাউদ্দিন আলম শাহ |
ভূমিকা :- তুঘলক বংশ -এর পতনের পর দিল্লী সুলতানির ইতিহাসে সৈয়দ বংশের শাসনকাল শুরু হয়। সৈয়দ বংশ ১৪১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করে।
সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা খিজির খাঁ (১৪১৪-১৪২১ খ্রি:)
- (১) তৈমুর ভারত ছাড়ার আগে খিজির খাঁকে মূলতান, লাহোর ও দীপালপুরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। খিজির খাঁ ছিলেন খুবই উচ্চাকাঙ্খী। তিনি সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক -এর আমলে মুলতানের শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়েছিলেন।
- (২) ফিরোজের মৃত্যুর পর তিনি দিল্লীর সিংহাসন লাভের চক্রান্তে যোগ দেন। তৈমুরকে তিনি সাহায্য করায় তৈমুর তাকে প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করেন। খিজির খাঁ এরপর ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে দিল্লী অধিকার করেন এবং দোয়াব পর্যন্ত তাঁর অধিকার বিস্তার করেন। ফলে খিজির খানের আমলে দিল্লীর অধীনে মূলতান, দীপালপুর লাহোর, দিল্লী ও দোয়াব অঞ্চল ছিল।
- (৩) খিজির খাঁ নিজে সুলতান উপাধি নেন নি। তিনি তৈমুরের বংশের প্রতি তাঁর আনুগত্য জানাতেন। তিনি মসনদ-ই-আলা উপাধি নেন এবং তৈমুরের উত্তরাধিকারী শাহরুখের কাছে বার্ষিক কর নিয়মিতভাবে পাঠাতেন। তিনি সোনা ও রূপার অভাব বশতঃ তুঘলকদের নামাঙ্কিত মুদ্রা চালু রাখেন।
- (৪) তিনি ১৪১৪-১৪২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন। খিজির খাঁ নিজেকে হজরত মহম্মদ -এর বংশধর বলে দাবী করতেন। এই অর্থে তিনি ছিলেন সৈয়দ। কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
- (৫) খিজির খানের শাসন স্থায়ী ও দৃঢ় হয়নি। তিনি তুর্কী অভিজাতদের জাগীর বহাল রাখলেও, তারা তাকে সহ্য করতে পারত না। এজন্য রাজ্যের সর্বত্র বিদ্রোহ চলতে থাকে। খিজির খাঁকে হিজির সর্বদা বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত থাকতে হয়।
- (৬) তিনি অভিজাতদের ক্ষমতা কমাবার জন্য ইক্তাগুলিকে শিক্ বা জেলায় ভাগ করেন। কিন্তু জেলা কর্মচারীরা স্থানীয় স্বার্থের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে খিজির খানের নির্দেশ অমান্য করতে থাকে। এজন্য তিনি শাসন ব্যবস্থা দৃঢ় করতে পারেন নি।
সৈয়দ বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান মোবারক খান (১৪২১-৩৪ খ্রি:)
- (১) খিজির খানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মোবারক খান দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। তিনি নিজ নামে খুৎবা ঘোষণা করেন এবং ‘শাহ’ উপাধি নেন। তিনি নিজ নামে মুদ্রা চালু করেন। মোট কথা, তিনি দিল্লীর স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
- (২) ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দে উজির শারওয়ার-উল-মুলকের চক্রান্তে মোবারক শাহ নিহত হন। তিনি ছিলেন সৈয়দ বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান। কিন্তু তাঁর অভিজাত কর্মচারীরা ছিল স্বার্থপর ও ষড়যন্ত্রপরায়ণ। মোবারক শাহের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে ইয়াহিয়া-বিন-শিরহিন্দি তার বিখ্যাত তারিখ-ই-মুবারকশাহী গ্রন্থ রচনা করেন।
দিল্লী সুলতানির সৈয়দ বংশের সুলতান মহম্মদ শাহ (১৪৩৪-৪৫ খ্রি:)
মোবারক খান বা শাহের মৃত্যুর পর তার ভ্রাতুষ্পুত্র মহম্মদ শাহ উপাধি নিয়ে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন সৈয়দ বংশের অপদার্থ উত্তরাধিকারী। তার নৈতিক চরিত্র ছিল নিম্ন মানের। সাম্রাজ্য-এ যখন বিদ্রোহের আগুন জ্বলছিল, তখন তিনি ইন্দ্রিয়পরায়ণতা ও পানদোষে মত্ত হন। মহম্মদ শাহ তার মন্ত্রী শারওয়ার-উল-মুলকের হাতের পুতুলে পরিণত হন।
সৈয়দ বংশের শেষ সুলতান আলাউদ্দিন আলম শাহ (১৪৪৫-৫১ খ্রি:)
- (১) মহম্মদ শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র আলাউদ্দিন আলম শাহ দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন সৈয়দ বংশের সর্বাপেক্ষা অযোগ্য শাসক। তার মন্ত্রী হামিদ খাঁ তার নামে সকল ক্ষমতা অধিকার করে।
- (২) আলম শাহ তাঁর মন্ত্রীকে দমন করতে না পেরে বিরক্ত হয়ে দিল্লী ছেড়ে বাদাউনে চলে যান। তিনি বাদাউন অঞ্চলে নিজ আধিপত্য স্থাপন করে এই স্থানেই সৈয়দ বংশের ক্ষমতা স্থাপন করেন। হামিদ খাঁ অনুভব করেন যে, দিল্লীতে তার অবস্থা নিরাপদ নয়।
- (৩) প্রতিবেশী প্রাদেশিক শক্তিগুলি দিল্লী অধিকারের চেষ্টায় ছিল। এজন্য হামিদ খাঁ, লাহোর ও মূলতানের শাসনকর্তা বহলুল লোদীর সাহায্য চান। বহলুল লোদী অনেক দিন ধরে দিল্লী অধিকারের চেষ্টায় ছিলেন। তিনি দিল্লীতে এসে হামিদ খাঁকে বন্দী করে হত্যা করেন এবং ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দে সকল ক্ষমতা নিজ হাতে নেন।
- (৪) তবে তিনি বাদাউনে আলাউদ্দিন আলম শাহকে আক্রমণ করতে বিরত থাকেন। ১৪৬৭ খ্রিস্টাব্দে আলম শাহের মৃত্যু হলে সৈয়দ বংশের পতন হয়। অবশ্য আলম শাহের জীবিতকালেই দিল্লী হাতছাড়া হয়েছিল।
উপসংহার :- ডঃ নিজামীর ভাষায়, সৈয়দ বংশ মূলতান থেকে উত্থিত হয়ে, বাদাউনে পতিত হয়। ৩৭ বছর ধরে এরা দিল্লীতে এক অপদার্থ, অকিঞ্চিৎকর শাসন ব্যবস্থা স্থাপন করে।
(FAQ) সৈয়দ বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৪১৪-১৪৫১ খ্রিস্টাব্দ।
খিজির খান।
মোবারক শাহ বা মোবারক খান।
আলাউদ্দিন আলম শাহ।