জার্মান সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক হলেন যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (১৭৪৯-১৮৩২)। তাঁর রচনা ইউরোপীয় রোমান্টিসিজমের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। গ্যেটের বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম “ফাউস্ট” বিশ্বসাহিত্যের একটি ক্লাসিক এবং তাঁর কবিতা, উপন্যাস ও নাটকে মানব প্রকৃতি, জীবনদর্শন ও সৃজনশীলতার জটিল দিকগুলি প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি “স্টর্ম অ্যান্ড স্ট্রেস” আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ এবং তাঁর বিজ্ঞানচর্চা ও দর্শন চিন্তাধারা আধুনিক জ্ঞানচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সাহিত্যিক যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
ঐতিহাসিক চরিত্র | যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে |
জন্ম | ২৮ আগস্ট ১৭৪৯ খ্রি |
জন্মস্থান | ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানি |
পেশা | কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক |
সাহিত্যিক অবদান | রোমান্টিসিজমের অন্যতম পুরোধা |
বিখ্যাত রচনা | “ফাউস্ট,” “দ্য সরোজ অফ ইয়াং ওয়ের্থার,” “উইলহেল্ম মাইস্টার্স অ্যাপ্রেন্টিসশিপ” |
বিষয়ভিত্তিক রচনা | মানব প্রকৃতি, অস্তিত্ব, জীবনদর্শন |
বিজ্ঞানের অবদান | রঙের তত্ত্ব (Theory of Colours), উদ্ভিদবিদ্যা |
উপাধি | জার্মান ক্লাসিকাল সাহিত্যের জনক |
মৃত্যু | ২২ মার্চ, ১৮৩২; ওয়েমার, জার্মানি |
ভূমিকা :- যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (Johann Wolfgang von Goethe) ছিলেন জার্মান সাহিত্যের ইতিহাসে এক অসামান্য প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব, যিনি কবিতা, উপন্যাস, নাটক, দর্শন, এবং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। ১৭৪৯ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টে জন্মগ্রহণকারী গ্যেটে ইউরোপীয় নবজাগরণ বা রেনেসাঁর পরবর্তী যুগে রোমান্টিসিজম ও মানবতাবাদ-এর জাগরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম যেমন “ফাউস্ট,” “দ্য সরোজ অফ ইয়াং ওয়ের্থার,” এবং অসংখ্য কবিতা মানব প্রকৃতির গভীরতা, অস্তিত্বের জটিলতা, এবং সৃজনশীলতার নানা দিক তুলে ধরেছে। গ্যেটে কেবল একজন লেখকই ছিলেন না, তিনি একজন বিজ্ঞানী ও দার্শনিক হিসেবেও পরিচিত, যাঁর চিন্তাভাবনা আধুনিক জ্ঞানচর্চার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। ১৮৩২ সালে মৃত্যুর পরেও গ্যেটের সাহিত্য ও দর্শনের উত্তরাধিকার বিশ্বসাহিত্যে চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের জন্ম
জার্মান সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভাধর পুরুষ গোটের জন্ম জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট শহরে। ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে আগস্ট।
কবি উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের পরিবার
সামান্য এক দর্জির ঘরে জন্মে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অধ্যবসায় বলে গোটের বাবা যোহান ক্যাসপার নিজেকে উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী রূপে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সুপন্ডিত ও শৃঙ্খলাপরায়ণ। গ্যেটের মা ছিলেন সহজ সরল ও উদারহহৃদয় মহিলা। গ্যেটে লিখেছিলেন, পিতার প্রভাবে জীবন সম্বন্ধে দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছিল তাঁর। আর সৃষ্টির প্রেরণা লাভ করেছিলেন মায়ের কাছে।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের শিক্ষা
চার বছর বয়সে গ্যেটেকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু স্কুলের চার দেওয়ালের মধ্যে অল্পদিনেই হাঁপিয়ে উঠলেন তিনি। স্কুলের নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলা তাঁর ধাতে সইত না। অচিরেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাধ্য হয়ে তাঁকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাড়িতে গৃহশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হল। পড়াশুনায় গভীর আগ্রহ ছিল বালক গ্যেটের। গৃহশিক্ষকের কাছে তিনি শিখতে লাগলেন ল্যাটিন, গ্রীক, ইতালিয়ান, ইংরাজি প্রভৃতি ভাষা। সেই সঙ্গে চলল গান শেখা ও ছবি আঁকা।
কবি উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের পর্যবেক্ষণ
প্রকৃতির প্রতি সহজাত আকর্ষণ ছিল গোটের। তাই পড়াশুনার অবসরে তিনি দু’চোখ ভরে উপভোগ করতেন প্রকৃতির শোভা। এই ভাবেই মানুষজন, তাদের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করার অভ্যাস তৈরি হয়েছিল তাঁর। একবার যা তিনি দেখতেন, তা স্মৃতিতে অক্ষয় হয়ে থাকত। কৈশোরের এই অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে তাঁর রচনাকে পুষ্ট ও সমৃদ্ধ করেছে।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের সহজাত কবিপ্রতিভা
দশ বছর বয়স থেকেই গোটে কবিতা লিখতে শুরু করেন। সেই বয়সেই তিনি অনুভব করতেন তাঁকে বড় কিছু মহৎ কিছু সৃষ্টি করতে হবে। বস্তুতঃ সহজাত কবিপ্রতিভা নিয়েই জন্মেছিলেন তিনি। তাই তাঁর জীবন ও ভাবনা চিন্তার প্রকৃতি ছিল সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। গ্যেটের সত্তার সঙ্গে মিশে ছিল কবিতা ও প্রকৃতিপ্রেম।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের প্রথম প্রেম
কিশোর গ্যেটে একবার এক বন্ধুর সঙ্গে সরাইখানায় গেছেন। সেখানে সরাইওয়ালার কিশোরী কন্যা মার্গুরিতকে প্রথম দর্শনেই ভালবেসে ফেললেন তিনি। যদিও মার্গুরিত ছিলেন তাঁর চাইতে বছর কয়েকের বড়। দুজনেই পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং দুজনের মধ্যে সৃষ্টি হল প্রণয়। কিশোর বয়সের এই প্রেমের মধ্যেই গ্যেটে সন্ধান পেলেন পবিত্র ও মহত্তম এক সৌন্দর্যের জগতের। কিশোর প্রেম কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হল না। মার্গুরিত তাঁর পিতার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে চলে গেলেন। বিচ্ছেদ বেদনায় সাময়িক ভাবে মুষড়ে পড়লেন গ্য়েটে।
লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
পিতা যোহান ছিলেন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী। তাই তাঁর ইচ্ছা ছিল গ্যেটেও হবেন তাঁরই মত রাজকর্মচারী। এই উদ্দেশ্যে তিনি ছেলেকে আইন পড়াবার জন্য লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন। আইনের প্রতি কোনই আকর্ষণ বোধ করতেন না গ্যেটে। পিতার পীড়াপীড়িতে অনিচ্ছা নিয়েই তাঁকে ভর্তি হতে হয়েছিল আইনের ক্লাশে। ফলে কচিৎ তাঁকে ক্লাশে দেখা যেত। পথে প্রান্তরে বাজারে মানুষের ভিড়ে ঘুরে বেড়াতেই তিনি বেশি আনন্দ পেতেন। তিনি মনে করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসঘরের মধ্যে যা শিখতে পারবেন তার চেয়ে অনেক বেশি জানার সুযোগ রয়েছে উন্মুক্ত পৃথিবীর মানুষজন ও জীবনের নানা রূপের মধ্যে।
নাটক রচনায় উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
মাত্র সতেরো বছর বয়সেই এই জীবনবোধে উত্তীর্ণ হয়েছিল তাঁর কবিমন। এই সময়েই তিনি রচনা করলেন Lover’s Quarrels এবং The fellow sinners নামে দুটি নাটক। ক্রমে যৌবনে পা দিলেন গ্যেটে। সুদর্শন ও প্রাণসম্পদে ভরপুর এই তরুণের মধ্যে ছিল একটা স্বাভাবিক আকর্ষণশক্তি। যে কেউ তাঁর সংস্পর্শে আসত, মুগ্ধ হয়ে যেত।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের দ্বিতীয় প্রেম
গ্যেটের জীবনে দ্বিতীয় প্রেম এলো লিপজিগ শহরে। তাঁর পরিচয় হল বাড়িওয়ালার মেয়ে এনেৎ-এর সঙ্গে এবং যথারীতি তাঁর প্রেমে পড়লেন। কিন্তু এবারেও এল ব্যর্থতা এনেতের আচরণে মনে নিদারুণ আঘাত পেলেন তিনি এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেন। কিন্তু এবারেও কিছুদিনের মধ্যেই সামলে উঠলেন। তাঁর জীবনীশক্তি ছিল অফুরন্ত। বেদনার ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় সেই প্রাণশক্তি লাভ করল সৃষ্টির প্রেরণা।
অ্যালকেমির প্রতি আকৃষ্ট উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
আইনের ক্লাশে ভর্তি হয়েও গ্যেটে হলেন কবি। ক্লাশে ইস্তফা দিয়ে তিনি ফিরে এলেন ফ্রাঙ্কফুটে। গ্যেটের পরিবর্তন তাঁর মাতা-পিতার চোখ এড়াল না। তাঁরা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এই সময় গ্যেটের মায়ের এক আত্মীয় তাঁকে অ্যালকেমির প্রতি আকৃষ্ট করে তোলেন। এই প্রাচীন রসায়ন শাস্ত্রের সাহায্যে নিকৃষ্ট ধাতুকেও সোনায় রূপান্তরিত করা যেত। এই বিদ্যাকেই পরবর্তীকালে গ্যেটে রূপ দিয়েছেন তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্য ফাউস্তে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
আইনের পাঠ অসমাপ্ত রেখেই লিপজিগ থেকে ফিরে এসেছিলেন তিনি। পিতা যোহান তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। ছেলে আইনজ্ঞ না হয়ে অ্যালকেমিস্ট হবে, এ তিনি মেনে নিতে পারলেন না। ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে তাই ছেলেকে তিনি পাঠালেন স্ট্যাটসবুর্গে। ভর্তি করিয়ে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ক্লাশে। এখানে আসার পর গ্য়েটের বন্ধুত্ব হল কয়েকজন ডাক্তারির ছাত্রের সঙ্গে। তিনিও আকৃষ্ট হলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি। আইনের বদলে তিনি শুরু করলেন শরীরতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা।
শিক্ষিত সমাজের অন্যতম ব্যক্তিত্ব উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
স্ট্যাটসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই গ্য়েটে হাতে পেলেন বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখকদের রচনা। এক নতুন জগতের সন্ধান পেয়ে তার মধ্যে ডুবে গেলেন তিনি এবং অল্প দিনের মধ্যেই হয়ে উঠলেন স্ট্যাটসবুর্গের শিক্ষিত সমাজের অন্যতম ব্যক্তিত্ব।
প্রকৃত প্রেমের স্বাদে উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
- (১) যেই ঘরে তিনি বাস করতেন তার পাশের ঘরেই থাকতেন ওয়েল্যান্ড নামে চিকিৎসাশাস্ত্রের এক ছাত্র। তাঁর সঙ্গে গ্য়েটে একদিন গেলেন এক গ্রাম্য যাজকের বাড়িতে। সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হল যাজকের আঠারো বছরের সুন্দরী কন্যা ফ্রেডরিক রিয়নের। মুখে গ্রাম্য সরলতা মাখানো, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার তরুণীটি গ্যেটের মন হরণ করল। রিয়নেরও ভাল লাগল গ্যেটেকে। দুজনেই বাঁধা পড়লেন প্রেমের বাঁধনে।
- (২) এই প্রথম গ্যেটে অনুভব করলেন প্রকৃত প্রেমের স্বাদ। জীবনের গভীরে এক নতুন জগতের সন্ধান পেলেন তিনি। কিন্তু প্রেম গভীর হলেও বিবাহের প্রশ্নে পিছিয়ে আসতে হল গ্যেটেকে। সামাজিক কারণেই রিয়নের সঙ্গে বিবাহ সম্ভব ছিল না। আবার বিচ্ছেদবেদনা নেমে এলো তাঁর জীবনে। এই সময় আইন পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হল এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন তিনি। বাবার আহ্বান পেয়ে তাঁকে ফিরে যেতে হল ফ্রাঙ্কফুটে।
- (৩) গ্যেটের দীর্ঘজীবনে প্রেম বারবার এসেছে। বহু নারীর সঙ্গ লাভ করেছেন তিনি। কিন্তু ফ্রেডরিকের সঙ্গে ভালবাসার বন্ধন তাঁর আমৃত্যু অটুট ছিল। ফ্রেডরিকও সমস্ত জীবন অবিবাহিতই থেকেছেন। যে মন তিনি গ্যেটেকে দিয়েছিলেন, জীবনে তা আর কাউকে দিতে পারেন নি।
আইন ব্যবসায় উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
গ্যেটের পিতা চেয়েছিলেন পুত্র আইনের জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুক। তাই ফ্রাঙ্কফুটে ফিরে এসে গ্যেটেকে সুপ্রীম কোর্টে আইন ব্যবসায় আরম্ভ করতে হল। কিন্তু আদালতের পরিবেশ দেখে অল্পদিনের মধ্যেই আইন ব্যবসায়ের প্রতি তিনি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠলেন। এই সময়েই গোটে জীবনের লক্ষ্যপথ নিয়ে স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। সাহিত্যকেই করলেন জীবনের একমাত্র অবলম্বন।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত
সুপ্রীম কোর্টে কাজ করার সময় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন গ্যেটে। সেই পরিবারের কুড়ি বছরের সুন্দরী কন্যা লটির সৌন্দর্য তাঁকে মোহমুগ্ধ করল। কিন্তু প্রেমের সূত্রপাতেই তিনি জানতে পারলেন লটি অন্য পুরুষের বাগদত্তা। লটি তাঁর সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেছে এই আঘাত বড় তীব্র হয়ে বাজল গ্যেটের হৃদয়ে। অসহ্য বেদনায় তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু সৌভাগ্যবশতঃ অল্পসময়ের মধ্যেই আত্মস্থ হলেন তিনি। ধীরে ধীরে মানসিক সুস্থতা ফিরে পেলেন।
দার্শনিক উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের অবিস্মরণীয় উপন্যাস
লটির প্রতি ব্যর্থ প্রেম, তার ভালবাসার ছলনা গ্যেটের হৃদয়ে গভীর বেদনার সঞ্চার করেছিল। সেই বেদনার প্রেরণায় মাত্র চার সপ্তাহের মধ্যে তিনি রচনা করলেন তাঁর অবিস্মরণীয় উপন্যাস The sorrows of werther গোটের বয়স তখন মাত্র চব্বিশ। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই জার্মানী জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হল। আর অখ্যাত যুবক গ্যেটে লাভ করলেন দেশজোড়া খ্যাতি। অল্পদিনেই তাঁর খ্যাতি দেশের সীমা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়ল সমস্ত ইউরোপ-এ।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের কাহিনীর নায়ক
- (১) গ্যেটের কাহিনীর নায়ক ভের্টর এক স্বপ্নবিলাসী ছন্নছাড়া যুবক। বারবার প্রেমের আঘাত পেয়ে সে বেদনায় ভেঙ্গে চুরমার হয়। ব্যর্থতার গ্লানি বুকে নিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে আসে ভের্টর। নতুন জীবনের সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে থাকে মাঠে প্রান্তরে। মুক্ত প্রকৃতির সান্নিধ্যে মুগ্ধ ভের্টর প্রিয়বন্ধু হেলমকে চিঠি লিখতে বসে। তার পর পর চিঠি সাজিয়েই সৃষ্টি হয়েছে উপন্যাস।
- (২) শেষ পর্যন্ত হতাশায় দীর্ণ-হৃদয় ভের্টর আত্মহত্যা করে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়। উপন্যাসের নায়ক ভের্টরের বেদনা, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন মানুষের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করল। কল্পনার চরিত্র হয়েও ভের্টর হয়ে উঠল জীবন্ত মানব। সে হয়ে উঠল তরুণ-তরুণীদের আদর্শ। তার পোশাক নীল কোট, হলদে ওয়েস্ট কোট হয়ে উঠল তাদের প্রিয় পোশাক।
- (৩) মেয়েরা সাজ নিল নায়িকার মতো সাদা পোশাক আর পিঙ্ক বো। বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসে অগণিত জীবন্ত ভের্টর ছড়িয়ে পড়ল জার্মানীতে, ইউরোপের পথে পথে। এখানেই শেষ হল না। ভের্টরের জীবনের সঙ্গে একাত্ম হবার জন্য দলে দলে যুবক-যুবতী আত্মহননে মেতে উঠল।
কবি উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের আইন-ব্যবসা ত্যাগ
বাস্তববাদীর দৃষ্টিতে গ্যেটের উপন্যাস অর্থহীন আবেগলিপ্ত কাহিনী মাত্র হলেও, জীবনসন্ধানী তরুণ সমাজের কাছে এই উপন্যাসের আবেদন চিরকালীন। প্রথম উপন্যাসের অসামান্য সাফল্যে অনুপ্রাণিত গ্যেটে আইন-ব্যবসা ছেড়ে সাহিত্যকেই করলেন জীবনের একমাত্র অবলম্বন। ব্যর্থ নায়ক ভের্টরে-এর প্রেরণায় এই সময় থেকেই সম্ভবতঃ গ্যেটের মনে ফাউস্তের কল্পনা অঙ্কুরিত হতে শুরু করে।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের প্রিয় লেখক
গ্যেটের প্রিয় লেখক ছিলেন শেক্সপীয়র। তাঁর অনুকরণে তিনি ইতিপূর্বে একটি পঞ্চম অঙ্কের নাটক লিখেছিলেন। কিন্তু সেই রচনার সাহিত্যমূল্য বিশেষ ছিল না। ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি লিখলেন আর একটি নাটক Clavigo। এই নাটকের বিষয়বস্তু তিনি সংগ্রহ করেছিলেন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান থেকে। Clavigo তাঁর খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তুলল।
ওয়েমারে উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
এই সময়ে শিল্প, সংস্কৃতি শিক্ষার পৃষ্ঠপোষক যুবরাজ লুডউইগ গ্যেটেকে ওয়েমারে আমন্ত্রণ জানালেন। সানন্দে এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন তিনি। ছাব্বিশ বছর বয়স থেকে অবশিষ্ট জীবন তিনি ওয়েমারেই অতিবাহিত করেন। রাজোদ্যানে প্রাসাদের কাছেই একটি বাড়িতে গ্যেটের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। গুণমুগ্ধ যুবরাজ তাঁকে অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে মনোনীত করলেন। নতুন এই দায়িত্ব প্রত্যাখ্যান করতে পারলেন না গ্যেটে। সাহিত্য জীনের সঙ্গে রাজনীতিকেও মেনে নিতে হল।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের রাজশক্তির প্রতি চরম আনুগত্য
নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন ছিলেন গ্যেটে। তাই সমস্ত কাজকে দুই ভাগে ভাগ করে নিলেন। একদিকে রইল সাহিত্য, অপর দিকে রাজনীতি। রাজশক্তির প্রতি চরম আনুগত্য ছিল গ্যেটের। তাই তিনি তরুণ যুবরাজকে নানা বিষয়ে উপদেশ পরামর্শ দেবার সময়, প্রয়োজন হলে নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠিত হতেন না। অমর সুরস্রষ্টা বিঠোভেন ও গ্যেটে একদিন রাজপথে হাঁটছিলেন। সেই সময় যুবরাজও সেই পথে আসছিলেন। তাঁকে দেখে সকলে রাজপথ থেকে সরে দাঁড়াল। বিঠোভেন কোনো দিকে ভ্রূক্ষেপ করলেন না। তিনি নিজের মনে যুবরাজের সামনে দিয়ে পথ পার হয়ে গেলেন। গ্যেটে কিন্তু মাথার টুপি খুলে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। গ্যেটের এই আনুগত্য ছিল কৃতজ্ঞতার প্রকাশ মাত্র। সাহিত্য সংস্কৃতি ছিল তাঁর প্রাণ। রাজানুগ্রহে, যুবরাজেরে সভাসদ হলেও, তাঁর করণীয় কাজ বিশেষ কিছু ছিল না। জ্ঞানের চর্চার অফুরন্ত সুযোগই তিনি লাভ করেছিলেন।
ওয়েমারে উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের প্রেম
ওয়েমারের জীবনেই গ্যেটের পরিচয় হয় এক অভিজাত পরিবারের সুন্দরী তরুণী লিলি স্কোনিমার সঙ্গে। আলাপ অন্তরঙ্গতায় পরিণত হতে বেশিদিন লাগল না। বিয়ের প্রস্তাব দিলেন গ্যেটে। কিন্তু লিলির পরিবারের কাছে গ্যেটের প্রতিষ্ঠা যথেষ্ট বলে মনে হল না। ক্ষোভে অপমানে এই সম্পর্ক ছেদ করলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে ফাউস্তের বহু দৃশ্যেই এই প্রেম রূপ লাভ করে কালজয়ী হয়ে আছে।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের অফুরন্ত জ্ঞানস্পৃহা
ইতিপূর্বে ফাউস্ত রচনায় হাত দিয়েছেন গ্যেটে। একদিকে তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে গভীর পড়াশুনা-জ্ঞান সাধনা, অন্যদিকে সাহিত্য সাধনা। ওয়েমারের কৃষি, সাময়িক উন্নয়ন ও খনিজ উত্তোলনের কাজে উন্নতি বিধানের জন্য বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে পড়াশুনার সঙ্গে ইতিহাস, দর্শন, চিত্রকলার চর্চা করতেন গ্যেটে। বস্তুতঃ তাঁর জ্ঞানস্পৃহা ছিল অফুরন্ত। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র ফাউন্তের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে এই জ্ঞান অন্বেষা।
লেখক উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের উইলেম মেস্তার উপন্যাস
ফাউস্ত রচনা চলাকালীনই আমেরিকার বিপ্লবের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্যেটে রচনা করলেন এগর্মত নামে নাটক। এরপর রচনা করলেন উইলেম মেস্তার নামে উপন্যাস। নিজের জীবনকেই যেন তিনি তাঁর এই উপন্যাসে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলেন। জীবনে অনেক নারীরই সান্নিধ্যে এসেছিলেন গ্যেটে। ভালবেসেছিলেন প্রত্যেককে। কিন্তু জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাননি কাউকেই। প্রেমের ব্যর্থতার বেদনা তাঁকে বারবার হতাশাগ্রস্ত করেছে। কিন্তু সেই হতাশা ও বেদনা কখনও তাঁর চলার পথকে রুদ্ধ করতে পারে নি। নিজের জীবনের আলোকেই গ্যেটে চিত্রিত করেছেন তাঁর উপন্যাসের নায়ক মেস্তারের জীবন। বারবার প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সেও বেদনায় বিধ্বস্ত হয়েছে, হতাশায় নুয়ে পড়েছে। কিন্তু নিজের চলার পথ থেকে কখনো বিচ্যুত হয় নি। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বিষয়বস্তু আহরণ করলেও মেস্তার সার্থক উপন্যাস হয়ে উঠতে পারেনি একাধিক কারণে। গ্যেটের সার্থক উপন্যাস হল কাইন্ডার্ড বাই চয়েস বা সিলেকটিভ অ্যাফিনিটি।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের লিটল থিয়েটার
নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন ছিলেন গ্যেটে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন নাটক রচনাতেই তিনি অধিকতর স্বতঃস্ফূর্ততা বোধ করেন। নাটকের মাধ্যমেই তাঁর প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ সম্ভব। এই উপলব্ধি থেকেই উপন্যাস রচনা থেকে সরে এলেন তিনি। গড়ে তুললেন নাটকের দল লিটল থিয়েটার। এরপরে দলের প্রয়োজনেই তিনি রচনা করেছিলেন কয়েকটি অসাধারণ নাটক। পরিণত হয়ে ওঠে তাঁর জীবনবোধ, গভীরতর হয় অন্তর্দৃষ্টি। উপলব্ধি করেন মানুষে মানুষে ভালবাসার অচ্ছেদ্য বন্ধন। মানুষের প্রতি এই ভালবাসাই হয়ে উঠল গোটের সৃষ্টির প্রধান উৎস।
কবি উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের জীবন সঙ্গিনী
ঊনচল্লিশ বছর বয়সে ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে গ্যেটের জীবনে আবির্ভাব হল নতুন এক নারীর। সৌন্দর্যময়ী ক্রিস্টিন ভালপাইন। ভাইয়ের জন্য একটি সুপারিশপত্র নিতে তিনি এসেছিলেন গ্যেটের কাছে। ক্রিস্টিনের সম্ভ্রমপূর্ণ ব্যবহার, শান্ত নম্র স্বভাব মুগ্ধ করল গ্যেটেকে। ক্রিস্টিনকেই সঙ্গিনী করলেন তিনি। দীর্ঘ আঠারো বছর তাঁরা একই সঙ্গে বসবাস করলেন। পরে ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে সন্তানের পরিচয়ের স্বীকৃতিদানের জন্য দুজনে বিবাহিত হলেন।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের জীবনে শোক
একের পর এক ঘটনায় আলোড়িত হয়েছে গ্যেটের জীবন। আশি বছরের সুদীর্ঘ জীবনে একের পর এক শোকের ঘটনা তাঁকে মুহ্যমান করেছে। প্রিয় বন্ধু, স্নেহের বোন, প্রিয়তমা পত্নী, একমাত্র সন্তান-এঁদের হারানোর বেদনা নীরবে সয়েছেন তিনি। শোক দুঃখের আঘাত তাঁর জীবনের গতিকে কখনো প্রতিহত করতে পারে নি। সমস্ত বেদনা, সমস্ত ব্যর্থতাকে তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে রূপান্তরিত করেছেন। বেদনার অশ্রু হয়ে উঠেছে ফুল।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের সুদীর্ঘ জীবনে সব মিলিয়ে ৬০টি বই লিখেছিলেন গ্যেটে। তার মধ্যে ছিল কাব্য, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস, গাথা, গীতিকবিতা ও রূপকথার কাহিনী। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। চিত্রকর, সঙ্গীতজ্ঞ, দার্শনিক, বিজ্ঞানী হিসেবেও তিনি খ্যাতিলাভ করেছিলেন।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের ফাউস্ত কাব্য
যে অবিস্মরণীয় কীর্তির জন্য গ্যেটে হয়েছেন কালজয়ী, সেই ফাউস্ত কাব্য গ্রন্থের প্রথম খন্ড লিখতে সময় লেগেছিল ত্রিশ বছর। পরবর্তী পঁচিশ বছরে সম্পূর্ণ করেছিলেন ২য় খন্ড। ফাউস্ত রচনার কাজে প্রায় সমস্ত জীবন তিনি ব্যাপৃত থেকেছেন। অতি আশ্চর্য প্রতিভার সর্বশ্রেষ্ঠ নির্মাণ হল ফাউস্ত কাব্য। মেঘ-রৌদ্রের বিচিত্র খেলায় মানবজীবন যদি হয় এক মহাকাব্য তাহলে তার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ গ্যেটে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর ফাউস্তের কাহিনীতে। বিশ্ব সাহিত্যের এক মহামূল্যবান সম্পদ তাঁর এই কাব্য।
কবি উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের আত্মজীবনীমূলক রচনা
আত্মজীবনীমূলক একটি রচনা গ্যেটে ফাউস্তের সমসাময়িক সময়েই লেখেন। এই লেখা থেকে তাঁর জীবন সম্বন্ধে অনেক কিছু জানা যায়।
উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের কবিতা
হাফিজের কাব্যপাঠে অনুপ্রাণিত হয়ে জীবনের অন্তিম পর্বে বেশ কিছু কবিতা লেখেন গ্যেটে। বৃদ্ধ বয়সের লেখা হলেও তাঁর মনের তারুণ্যের দীপ্তি উদ্ভাসিত হয়েছে এই লেখাগুলোতে।
নেপোলিয়ন ও উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
গ্যেটের প্রতিভার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতেন নেপোলিয়ন। জার্মানী দখল করার পর সৈন্যবাহিনীকে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, গ্যেটের মর্যাদার যেন কোনো হানি না ঘটান হয়। তিনি তাঁকে আমন্ত্রণ করে সসম্মানে নিজের প্রাসাদে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁকে তিনি অন্তরের শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন, একজন পরিপূর্ণ মানুষ আপনি, বলে সম্বোধন জানিয়ে।
মহান অভিযাত্রী উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে
বস্তুতঃ মনুষ্যজীবনের চরম আদর্শ-অন্ধকার থেকে আলোকে উত্তরণের সন্ধান রূপায়িত হয়েছিল গ্যেটের জীবনচর্যায়। প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন আলোক-পথিক এক মহান অভিযাত্রী।
যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটের মৃত্যু
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী হয়েছিলেন গ্যেটে। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ২২ মার্চ অপরাহ্ন বেলায় অনুরাগীদের হাত ধরে এসে বসেছিলেন তাঁর লেখার ঘরে। সকলেই বুঝতে পেরেছিলেন, মহান কবিব জীবনের অন্তিম লগ্ন উপস্থিত। দিনের বিলীয়মান আলোর দিকে তাকিয়ে গ্যেটে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন আলোর আকাঙক্ষা জানিয়ে – “আরো আলো, আরো আলো”। নিজের মহাজীবনের আলো বিচ্ছুরিত করে চির আলোর পথিক চলে গেলেন মহালোকের পথে।
উপসংহার :- যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভা, যিনি জার্মান সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে অমর স্থান দখল করেছেন। কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক হিসেবে তিনি মানব প্রকৃতির গভীরতম দিকগুলো উদঘাটন করেছেন। তাঁর কালজয়ী রচনা “ফাউস্ট” এবং “দ্য সরোজ অফ ইয়াং ওয়ের্থার” মানব অস্তিত্বের জটিলতা ও সৃজনশীলতার অন্বেষণের প্রতীক। গ্যেটের বিজ্ঞানচর্চা ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক জ্ঞানচর্চার ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। তিনি যে মানবিকতা, শিল্প ও বিজ্ঞানচর্চার সমন্বয়ের আদর্শ তুলে ধরেছেন, তা আজও বিশ্বজুড়ে পাঠকদের অনুপ্রেরণা জোগায়। গ্যেটের জীবন ও কর্ম মানব ইতিহাসের চিরস্থায়ী আলো।
(FAQ) যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
তিনি জার্মান সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি, নাট্যকার এবং ঔপন্যাসিক। তাঁর রচনা “ফাউস্ট” বিশ্বসাহিত্যের একটি ক্লাসিক এবং তিনি রোমান্টিসিজম আন্দোলনের অগ্রদূত।
তাঁর বিখ্যাত রচনাগুলির মধ্যে “ফাউস্ট,” “দ্য সরোজ অফ ইয়াং ওয়ের্থার,” এবং “উইলহেল্ম মাইস্টার্স অ্যাপ্রেন্টিসশিপ” উল্লেখযোগ্য।
গ্যেটে “রঙের তত্ত্ব” নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন, যা রঙবিজ্ঞান এবং অপটিক্সে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে। তিনি উদ্ভিদবিদ্যায়ও গবেষণা করেছিলেন।
তিনি “স্টর্ম অ্যান্ড স্ট্রেস” (Sturm und Drang) আন্দোলনের অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ, যা জার্মান রোমান্টিসিজমের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
তাঁর রচনায় মানব প্রকৃতি, জীবনদর্শন, আত্মজিজ্ঞাসা, ভালোবাসা, এবং সৃষ্টিশীলতার গভীরতা প্রতিফলিত হয়েছে।
তাঁর রচনা মানুষের অনুভূতি, চিন্তা এবং অস্তিত্বের জটিলতাকে স্পর্শ করে, যা আজও আধুনিক পাঠকদের অনুপ্রাণিত করে।