বহলুল লোদী

সুলতান বহলুল লোদী প্রসঙ্গে ডক্টর ত্রিপাঠীর অভিমত, সিংহাসনে আরোহন, জাগির বিতরণ, সার্বভৌম ক্ষমতা লাভে ব্যর্থ, মুলতান জয় ও জাগীরদারদের দমন সম্পর্কে জানবো।

সুলতান বহলুল লোদী

ঐতিহাসিক চরিত্রবহলুল লোদী
রাজত্বকাল১৪৫১-১৪৮৯ খ্রি
বংশলোদী বংশ
মৃত্যু১৪৮৯ খ্রিস্টাব্দ
উত্তর সূরিসিকান্দার লোদী
সুলতান বহলুল লোদী

ভূমিকা :- সৈয়দ বংশ -এর পর দিল্লীর সিংহাসনে লোদী বংশের শাসন স্থাপিত হয়। লোদীরা ছিল জাতিতে আফগান। লোদী বংশের শাসকরা মোট ৭৫ বছর রাজত্ব করেন।

লোদী শাসনের সম্মুখে সমস্যা

লোদী বংশের শাসকেরা দিল্লীতে মজবুত ও স্থায়ী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। কয়েকটি বাধা লোদী শাসনকে দুর্বল করে ফেলে। যথা –

(১) প্রতিবেশী আক্রমণ

ভারত -এর অন্যান্য অঞ্চলের স্বাধীন শাসকরা দিল্লীতে লোদী বংশের আধিপত্য মানতে চায়নি। এজন্য লোদীদের সর্বদা প্রতিবেশী আক্রমণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়।

(২) বংশানুক্রমিক জাগীরদারদের বিদ্রোহ

তুঘলক বংশ ও সৈয়দ আমল থেকে যে সকল জাগীরদার বংশানুক্রমে ক্ষমতা ভোগ করত তারা দিল্লীতে কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতার সুযোগে প্রায় স্বাধীনভাবে শাসন করত। লোদী সুলতানরা কেন্দ্রীকরণের চেষ্টা করলে তারা বিদ্রোহী হয়।

(৩) আফগান অভিজাতদের বিদ্রোহ

লোদীদের সহায়ক যে সকল আফগান অভিজাত ছিল তারা ইব্রাহিম লোদীর কেন্দ্রীকরণ নীতির বিরোধিতা করে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

লোদী বংশ সম্পর্কে ত্রিপাঠীর অভিমত

  • (১) ডঃ ত্রিপাঠীর মতে, আফগান সর্দাররা তাঁদের ওপর কোনও সুলতানদের সার্বভৌম অধিকার স্বীকার করতেন না। কাজেই দিল্লীর ওপর আধিপত্যভোগী কোনও লোদী শাসককে তাঁরা তাদের প্রভু বলে বশ্যতা জানাতে রাজী ছিলেন না।
  • (২) লোদী সুলতানরা আফগান সর্দারদের এই উপজাতীয় চিন্তাধারার বাধা দূর করতে ব্যর্থ হন। এই তিন প্রকার বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির আক্রমণে লোদী সুলতানির পতন ঘটে।

বহলুল লোদীর সিংহাসনে আরোহণ

সুলতান বহলুল লোদী ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন এবং নিজ নামে খুতবা ঘোষণা করেন। তিনি রাজ্য বিস্তার করা অপেক্ষা আভ্যন্তরীণ সংগঠনের দিকেই বেশী নজর দেন।

বহলুল লোদী কর্তৃক জাগীর বিতরণ

তিনি নিজ শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য আফগান সেনাপতি ও অভিজাতদের বহু জাগীর দেন এবং তাদের আনুগত্য পাওয়ার চেষ্টা করেন।

সার্বভৌম ক্ষমতা লাভে বহলুল লোদীর ব্যর্থতা

  • (১) তারিখ-ই-দাউদীর বিবরণ অনুসারে আফগান উপজাতীয় সর্দারদের আনুগত্য লাভের জন্য তিনি দিল্লীতে একটি সুশোভিত মঞ্চ নির্মাণ করেন। এই মঞ্চে তিনি অন্যান্য আফগান সর্দার সহ বসেন।
  • (২) এই আমন্ত্রিত সর্দারদের মসনদ-ই-আলা উপাধি দান করা হয়। বাহলুল লোদী এই সর্দারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সর্দার রূপে শাসনভার পান। কাজেই তুর্কী যুগের সার্বভৌম ক্ষমতা তিনি লাভ করতে পারেন নি।

বহলুল লোদীর মূলতান জয়

বহলুল লোদীর সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব ছিল জৌনপুর জয়। তিনি জৌনপুরের সুলতান মহম্মদ শাহ শার্কিকে পরাস্ত করে দিল্লীর নিকটে অবস্থিত এই পরাক্রান্ত রাজ্যটি গ্রাস করেন।

বহলুল লোদী কর্তৃক জাগীরদারদের দমন

তিনি মেওয়াট ও গোয়ালিয়রের জাগীরদারদের দমন করেন। কাম্পিল্য, পাতিয়ালি, মুলতান ও শিরহিন্দের জাগীরদারদের বিদ্রোহ তিনি দমন করেন।

উপসংহার :- ১৪৮৯ খ্রিস্টাব্দে বহলুল লোদীর মৃত্যু হয়। এরপর দিল্লি সুলতানির সিংহাসনে বসেন তার পুত্র সিকান্দার লোদী।

(FAQ) সুলতান বহলুল লোদী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. লোদী বংশের সময়কাল কত?

১৪৫১-১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ।

২. লোদী বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?

বহলুল লোদী।

৩. বহলুল লোদীর রাজত্বকাল কত?

১৪৫১-১৪৮৯ খ্রিস্টাব্দ।

৪. বহলুল লোদীর মৃত্যুর পর কে সিংহাসনে আরোহণ করেন?

সিকান্দার লোদী।

Leave a Comment