ফিরোজ শাহ তুঘলক

ফিরোজ শাহ তুঘলক প্রসঙ্গে জনহিতকর কার্যাবলী, সেচ পরিকল্পনা, কর ব্যবস্থা, দার-উল-সাফা, দেওয়ান-ই-খয়রাত, মুদ্রা সংস্কার, নগর নির্মাণ, সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা ও সুলতানি যুগের আকবর সম্পর্কে জানবো।

সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক

ঐতিহাসিক চরিত্রফিরোজ শাহ তুঘলক
রাজত্ব১৩৫১-১৩৮৮ খ্রি
বংশতুঘলক বংশ
রাজধানীফিরোজাবাদ
তুলনাআকবর, অগাস্টাস
বিশেষ খ্যাতিজনহিতকর কার্যাবলী
সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক

ভূমিকা :- ভারত -এ সেচ পরিকল্পনার জনক হলেন ফিরোজ তুঘলক। মহম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন তার খুল্লতাত। তাকে সুলতানি যুগের আকবর’ও বলা হয়। তাকে রোমান সম্রাট অগাস্টাসের সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে।

ফিরোজ শাহ তুঘলকের জনহিতকর কার্যাবলি

ফিরোজ শাহ তুঘলকের উল্লেখযোগ্য জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি হল কৃষির উন্নতির জন্য জলাধার, খাল, কূপ খনন। ২৪ রকম করের বদলে, ৪ রকম কর প্রবর্তন করেন। বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান এবং দরিদ্রদের জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন।

ফিরোজ শাহ তুঘলকের সেচ পরিকল্পনা

সেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ফিরোজ তুঘলক ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সেচ খাল খনন করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৫০ মাইল দীর্ঘ যমুনা খাল এবং ৯৬ মাইল দীর্ঘ শতদ্রু-ঘর্ঘরা খাল। এছাড়াও দেড় শতাধিক কূপ খনন করে সেচ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করেন।

সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের কর ব্যবস্থা

ফিরোজ তুঘলক অন্যায়মূলক বহু কর প্রত্যাহার করেন এবং কোরাণে নির্দেশিত চার রকমের কর ধার্য করেন। এগুলি হল ‘খরাজ’ অর্থাৎ কৃষিজাত পণ্যের ১/১০ অংশ, ‘খামস’ অর্থাৎ যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের ১/৫ অংশ, ‘জাকাত’ অর্থাৎ ধনী মুসলমানদের ওপর ধার্য সম্পত্তি কর, ‘জিজিয়া’ অর্থাৎ অনুসলমানদের দেয় এক প্রকার ধর্ম কর।

ফিরোজ শাহ তুঘলক কর্তৃক দার-উল-সাফা স্থাপন

সুলতান ফিরোজ তুঘলক ‘দার-উল-সাফা’ নামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় দিল্লীতে স্থাপন করেন। দরিদ্র মুসলমানদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণের জন্য এই দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপিত হয়েছিল।

ফিরোজ শাহ তুঘলক কর্তৃক দিওয়ান-ই-ইস্তিহক স্থাপন

দেশের যোগ্য ও গুণী ব্যক্তিদের অর্থ সাহায্য করার জন্য সুলতান ফিরোজ তুঘলক ‘দিওয়ান-ই-ইস্তিহক’ নামে একটি সরকারি দপ্তর স্থাপন করেন।

ফিরোজ শাহ তুঘলক কর্তৃক দেওয়ান-ই-খয়রাত স্থাপন

ফিরোজ শাহ তুঘলক দিল্লীতে দেওয়ান-ই-খয়রাত নামে সরকারি দপ্তর স্থাপন করেন। এখানে অনাথ ও দুঃস্থ বিধবাদের এবং দরিদ্র পরিবারের বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিবাহে অর্থ সাহায্যের উদ্দেশ্যে সুলতান এই দপ্তর স্থাপন করেন।

সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের মুদ্রা সংস্কার

দরিদ্র প্রজাদের ব্যবহারের সুবিধার জন্য তিনি ‘আধা’ (১/২ জিতল) ও ‘বিখ’ (১/৪ জিতল) নামে স্বল্পমূল্যে ধাতুমুদ্রা চালু করেন।

নগর নির্মাণে ফিরোজ শাহ তুঘলকের অবদান

ফিরোজ তুঘলক যেসব নগর নির্মাণ করেছিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ফিরোজাবাদ, হিসার, জৌনপুর, ফিরোজপুর। এর মধ্যে ফিরোজাবাদ নগরটি দিল্লির নিকট যমুনা নদীর তীরে নির্মিত হয় এবং এখানে রাজধানী স্থাপিত হয়।

ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা

ফিরোজ তুমলাকের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরনি ও শামস-ই-সিরাজ আফিফ। জিয়াউদ্দিন বরনির রচিত গ্রন্থ হল তারিখ-ইফিরোজশাহি। ফিরোজ তুঘলকের নির্দেশে পণ্ডিত আজিজ উদ্দিন খালিদ সংস্কৃত ভাষার ৩০০টি পুঁথি ফারসি ভাষায় অনুবাদ করেন। ফিরোজ তুঘলকের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হল ফারসি ভাষায় রচিত ফুতুহাত-ই ফিরোজশাহি।

সুলতানি যুগের আকবর ফিরোজ শাহ তুঘলক

ফিরোজ তুঘলকের নম্রতা, দয়া, ইসলাম ধর্মের প্রতি অনুরাগ, সত্যনিষ্ঠা প্রভৃতি ব্যাক্তিগত গুণাবলি এবং বহুবি জনহিত কার্যাবলির জন্য তাকে অনেক ঐতিহাসিক প্রজাহিতৈষী স্বৈরাচারী শাসক ও সুলতানি যুগের আকবর বলে অভিহিত করেছেন।

সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনে ফিরোজ শাহ তুঘলকের দায়িত্ব

দিল্লির সুলতানির পতনের জন্য ফিরোজ তুঘলককে অনেকাংশে দায়ী করা যায়। কারণ, তাঁর শাসননীতি ছিল দুর্বল। ইক্তাগুলিকে বংশানুক্রমিক করে দেওয়ায় সেনা সংগঠনগুলি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাঁর অনুদার ধর্মীয় নীতি হিন্দু প্রজাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

উপসংহার :- জনহিতকর কাজের জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ-এর মতে ফিরোজের মধ্যে আকবরের চারিত্রিক ঔদার্য, সর্বভারতীয় আদর্শ, প্রশাসনিক দক্ষতা, রণনৈপুণ ছিল না। তাই তাকে সুলতানি যুগের আকবর বলা যায় না।

(FAQ) সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সুলতানী যুগের আকবর কাকে বলা হয়?

ফিরোজ শাহ তুঘলক।

২. কোন সুলতান ভারতে সেচ পরিকল্পনার জনক ছিলেন?

ফিরোজ শাহ তুঘলক।

৩. ফিরোজ শাহ তুঘলক কোথায় রাজধানী স্থাপন করেন?

ফিরোজা বাদ।

৪. সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের রাজত্বকাল কত?

১৩৫১-১৩৮৮ খ্রিস্টাব্দ।

Leave a Comment